গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগ্বিতণ্ডার ঘটনাটি ঘিরে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।
এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এই উদ্বেগের কারণ ট্রাম্পের রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার চেষ্টা বলেন বিবিসির সাংবাদিক জেরেমি বোয়েন।
ইউক্রেনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ভ্লাদিমির ফেসেঙ্ক এএফপিকে বলেছেন, ইউক্রেনকে নিয়ে মার্কিন মনোভাব কী হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে ভালো কিছু হবে, এটা ধারণা করাও ঠিক হবে না। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির বাগ্বিতণ্ডার পর মার্কিন প্রশাসন হয়তো ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতা কমিয়ে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্পর্কের প্রকাশ্য ভাঙন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সমস্যা তৈরি হওয়ারও ইঙ্গিত দিচ্ছে।
শুক্রবারের ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
জেরেমি বোয়েন মনে করেন, ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে ইউক্রেনের ওপর বড় ধরনের চাপ দিচ্ছেন। অথচ পুতিনকে বড় ছাড় দিচ্ছেন। যার মূল্য হয়তো ইউক্রেনকেই দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকারের তালিকা থেকে ইউক্রেনের নিরাপত্তা এখন অনেকটা নিচে নেমে গেছে। যেটি আগে অগ্রাধিকার ছিল। এই ঘটনার পর ইউরোপীয় দেশগুলোও তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
বোয়েন বলেন, এটি শুধু খনিজ সম্পদবিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরের অস্বীকৃতির কারণে ঘটেনি। ইউক্রেনীয়রা বিশ্বাস করে, তারা জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যুদ্ধ করছে এবং পুতিনকে প্রতিহত না করা হলে তিনি যুদ্ধ শেষ করার যে কোনো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন। এই কারণেই জেলেনস্কি বারবার মার্কিন নিরাপত্তা নিশ্চয়তার দাবি জানিয়েছেন।
ব্রিটেনের রাজনৈতিক নেতা নাইজেল ফারাজ হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে গণমাধ্যমের সামনে তর্কাতর্কির ঘটনাটিকে দুঃখজনক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই প্রকাশ্য বিরোধ আসলে একটি পূর্বপরিকল্পিত রাজনৈতিক কৌশল।
সাংবাদিক মুস্তাফা নাইয়েম বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন গোপন চুক্তি ও কূটনৈতিক হাত মেলানোর পথে সবচেয়ে বিরক্তিকর বাধা মনে করে ইউক্রেনকে।
সাংবাদিক ডেনিস কাজানস্কি বলেছেন, জেলেনস্কিকে এমন এক পরিস্থিতিতে ফেলা হয়েছিল, যেখানে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তাঁকে অকৃতজ্ঞ হিসেবে অভিযুক্ত করেছিলেন।
সামরিক বিশ্লেষক মাইকোলা বিয়েলিয়েস্কোভ বলেন, এমন অবস্থার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক পুনর্গঠন হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ধান লুটের অভিযোগ
কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মারধর করে ১৩ জন কৃষকের ৬৬ একর জমির ধান লুটের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জেলা শহরের রথখলা এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন কৃষকরা। সেখানেই এসব অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষক মো. মাসুদ মিয়া লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। তিনি বলেন, তিনি, নায়েব আলী, মোস্তফা মিয়া ও সাইফুল মিয়াসহ ১৩ জন কৃষক সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের ছোট ভাই আবদুল হকের কাছ থেকে এক বছরের জন্য ৬৬ একর বোরো জমি লিজ নিয়েছিলেন। প্রতি একর জমি ১৩ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে চাষাবাদসহ প্রতি একরে খরচ পড়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। প্রতি একরে ধান হওয়ার কথা ১০০ মণ। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় এক লাখ টাকা। তিনি (মাসুদ মিয়া) লিজ নিয়েছিলেন ৬ একর জমি।
সংবাদ সম্মেলনে মাসুদ মিয়া উল্লেখ করেন, আবদুল হক মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি পলাতক। এ কারণে তাঁর জমি তিনি লিজ দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীরের রাজনৈতিক বিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু কৃষকরা কী দোষ করেছেন। গত শনিবার কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে সমুদয় ধান জাহাঙ্গীরের লোকজন কেটে নিয়ে গেছেন। এতে কৃষক ও তাদের স্বজনরা বাধা দিতে গেলে হামলা চালানো হয়। হামলায় পাঁচজন কৃষক আহত হন।
আহতরা হলেন– মাসুদ মিয়া (৪০), মোস্তফা মিয়া (৪৫), সাইফুল মিয়া (৪০), কাছুম আলী (৫৫) ও জামির হোসেন (৪৩)। গুরুতর আহত মোস্তফা মিয়া ঢাকায় চিকিৎসাধীন।
বিএনপি নেতা জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীরের ভাষ্য, এসব জমির প্রকৃত মালিকরা থাকেন কিশোরগঞ্জ শহরে। তাদের জমি সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের ছোট ভাই আবদুল হক জোরপূর্বক দখল করেছিলেন। ৫ আগস্টের পর তিনি পালিয়ে গেলে প্রকৃত মালিকরাই জমি আবাদ করেছিলেন। তারা নিজেদের জমির ধান কাটার সময় অভিযোগকারীদের ৫ একরের মতো জমির ধান কাটা হয়ে থাকতে পারে। তাঁকে বিতর্কিত করার জন্যই আবদুল হকের লোকজন সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে কয়েকজন জামা খুলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখিয়েছেন। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা মিঠামইন থানায় গেলে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়। কিন্তু জমির মালিকদের তালিকা দেওয়ার পরও জাহাঙ্গীরের প্রভাবে থানা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
এ বিষয়ে মিঠামইন থানার ওসি শফিউল আলম দাবি করেন, জমির ধান কাটার তিন-চার দিন আগে কয়েকজন তাঁর কাছে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানান, তারা ধান কাটার ব্যাপারে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। তখন তিনি তাদের জমির কাগজপত্রসহ অভিযোগ দিতে বলেন। কাগজপত্র দেখে অন্যদের সঙ্গে কথা বলে ধান কাটার ব্যবস্থা করে দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তারা যোগাযোগ করেননি, কোনো লিখিত অভিযোগও দেননি।