হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প-জেলেনস্কির বাকবিতণ্ডা, বিশ্বনেতাদের নানা প্রতিক্রিয়া
Published: 1st, March 2025 GMT
হোয়াইট হাউসে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠকটি উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় আর বিশৃঙ্খলার মধ্যে শেষ হয়। এ ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। খবর রয়টার্স
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার পরই এক্স পোস্টে জেলেনস্কি বলেন, ধন্যবাদ আমেরিকা, ধন্যবাদ আমাদের সমর্থন করার জন্য, ধন্যবাদ আমাদের দেখে রাখার জন্য। ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেস এবং জনগণের প্রতি। ইউক্রেনের শান্তি দরকার। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক্স পোস্টে বলেন, রাশিয়া অবৈধ এবং অন্যায়ভাবে ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেন সাহস এবং ধৈর্যের সঙ্গে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। তাদের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এই লড়াই আমাদের সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কানাডা সব সময় তার সঙ্গে রয়েছে।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, ইউক্রেনের জনগণের থেকে আর কেউ অধিক শান্তি চাইতে পারে না। এজন্য আমরা একসঙ্গে ন্যায় সংগত শান্তির পথ খুঁজতে যুক্ত হয়েছি। এক্ষেত্রে ইউক্রেন জার্মান এবং ইউরোপের ওপর নির্ভর করতে পারে।
পর্তুগালে সফররত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রো সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়ার ইউক্রেনের ওপর হামলা চালিয়েছে, ফলে দেশটির জনগণ ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। তিন বছর আগে ইউক্রেনকে সহযোগিতা করা এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা আমাদের জন্য কঠিন ছিল। যা এখনও চলছে। সুতরাং আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা এবং জাপানসহ যারা ইউক্রেনকে সহযোগিতা করেছে তাদেরকে অবশ্যই সস্মান করতে হবে। কারণ এসব দেশ ইউক্রেনের স্বাধীনতা, তাদের সম্মান এবং সন্তানদের নিরাপত্তার জন্য লড়াই করছে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, পশ্চিমাদের প্রতিটি বিভাজন আমাদের সবাইকে দুর্বল করে এবং তাদের সুবিধা বাড়ায়, যারা আমাদের সভ্যতার পতন দেখতে চায়। ক্ষমতা বা প্রভাবের নয় বরং সেই নীতিগুলোর— বিশেষ করে স্বাধীনতার। যার ভিত্তিতে আমাদের সভ্যতা গড়ে উঠেছে। এই বিভাজন কারও জন্যই মঙ্গলজনক নয়।
তিনি আরও বলেন, এই সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং মিত্রদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করা উচিত। ইউক্রেনে নিয়ে যে সংকট শুরু হয়েছে, তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের একসঙ্গে কাজ করা উচিত। এ নিয়ে ইতালি দ্রুতই প্রস্তাব রাখবে।’
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের মুখপাত্র বলেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুক্তরাজ্য সব সময় পাশে দাঁড়িয়েছে। শেষ পর্যন্ত কিয়েভের জন্য শান্তির পথ খুঁজে বের করতে আমরা পাশে রয়েছি।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, আমরা যতদিন প্রয়োজন, ততদিন ইউক্রেনের পাশে থাকব। কারণ এটি একটি গণতান্ত্রিক জাতির লড়াই, যা একটি স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে লড়ছে।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে বলেছেন, শক্তিশালী নেতারা শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন, দুর্বলরা যুদ্ধ বাঁধান। আজ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তির জন্য সাহসী অবস্থান নিয়েছেন। ধন্যবাদ, মিস্টার প্রেসিডেন্ট।
ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোককে রাসমুসেন বলেন, এটি ইউক্রেনের জন্য কঠিন আঘাত। বন্ধুদের মধ্যে দৃঢ় আলোচনা হতে পারে, কিন্তু যখন তা ক্যামেরার সামনে ঘটে, তখন একমাত্র বিজয়ী হয় ক্রেমলিন।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন জেলেনস্কিকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, আপনার মর্যাদা ইউক্রেনীয় জনগণের সাহসিকতার প্রতিফলন। আপনি কখনো একা নন, প্রিয় প্রেসিডেন্ট।
মলদোভার প্রেসিডেন্ট মাইয়া সান্দু বলেন, সত্যটা খুব সহজ। রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়েছে। ইউক্রেন তার স্বাধীনতা রক্ষা করছে এবং আমাদেরও। আমরা ইউক্রেনের পাশে আছি।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, প্রিয় জেলেনস্কি, প্রিয় ইউক্রেনীয় বন্ধুরা, আপনারা একা নন।
বিশ্বনেতাদের এই প্রতিক্রিয়া ইঙ্গিত দেয় যে, ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন এখনো সুদৃঢ়, যদিও হোয়াইট হাউসের সাম্প্রতিক ঘটনা নতুন কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউক র ন ইউক র ন র র জন য আম দ র ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
টাঙ্গাইলে বাড়ছে খুন-ডাকাতি-চুরি
টাঙ্গাইলে শিক্ষক মো. ছানোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী সালমা খাতুন শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড হতে অগ্রণী ব্যাংকের কাজ শেষে সিটি ব্যাংকে যাচ্ছিলেন। বুধবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে তারা রাস্তা পার হওয়ার সময় অন্য এক নারী তার স্ত্রীর হাত ধরেন। তাদের সাথে আরো তিন নারী ছিলেন। সিটি ব্যাংকে গিয়ে সালমা খাতুনের ব্যাগে থাকা ২ লাখ ৭৪ হাজার টাকার মধ্যে ১ লাখ টাকা পান। বাকি টাকা ওই নারীরা নিয়ে যান।
ছানোয়ার হোসেন বলেন, “আমার স্ত্রী ওই অজ্ঞাত নারীদের রাস্তা পারাপার করতে সহযোগিতা করতে গিয়ে উল্টো আমাদের টাকা খোয়া গেলো। এ বিষয়ে সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।”
এদিকে, ১০ দিনে ঘাটাইলে তিন ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনা বর্তমান সময়ে ‘টক অব দ্য কান্ট্রিতে’ পরিণত হয়েছে।
আরো পড়ুন:
টঙ্গীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা
ছিনতাইকারী সন্দেহে উত্তরায় ২ ব্যক্তিকে ঝুলানো হয় ওভারব্রিজে
শুধু জেলায় এই কয়েকটি ঘটনা নয়, পুলিশের নথি বলছে, গত ছয় মাসে টাঙ্গাইলে ২০টি ডাকাতি, খুন ৪৫টি ও ১১টি ছিনাতইসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। এসব ঘটনায় ১২২ জনের অধিক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মহাসড়কের যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা বলছেন, নিয়মিত নজরদারি ও প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা জোরদার না করায় মহাসড়কে যত্রতত্র ঘটছে দুর্ঘটনা ও ডাকাতি হচ্ছে।
বগুড়াগামী বাসের চালক একদিল মাহমুদ বলেন, “৫ আগস্টের পর রাতে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ তেমন চোখে পরে না। দিনে তারা গাড়ি সিগন্যাল দিলে কাগজপত্র দেখার নামে তারা উৎকোচ নিয়ে থাকেন। হাইওয়ে পুলিশ দায়িত্বশীল আচরণ করলেও মহাসড়কে ডাকাতি, দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে যাবে।”
বাসের যাত্রী হামিম রহমান বলেন, “নগরজলফৈ বাইপাস এলাকায় রাতে পুলিশ চোখে পড়ে না। ১৫ দিন আগে রাত ১২টার পর বাস থেকে নেমে আদালতপাড়া বাসায় যাওয়ার সময় আমার মুঠো ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। মহাসড়কের গুরত্বপূর্ণ এলাকায় পুলিশি টহল বাড়ানোর পাশাপাশি সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে।”
আফাজ মিয়া বলেন, “দেশে বেকারের সমস্যা বেড়েছে। উঠতি বয়সের যুবকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হলে অনেক অপরাধ কমে যাবে।”
জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, “যানবাহনের চালক ও হেলপারদের বেতন খুবই কম। যে কারণে কোনো কোনো চালক ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।”
পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বেতন বাড়ানোর পাশাপাশি প্রত্যেকটা যানবাহন সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার দাবি করেন তিনি।
টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল আলম বলেন, “দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে অপরাধীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের টার্গেট করে থাকে। দেশে পর্যান্ত পুলিশ সদস্য প্রয়োজন। এছাড়া ৫ আগস্টের পর অনেক পুলিশ সদস্যই যোগদান করেননি। আবার নানা কারণে পুলিশের কাজের প্রতি একটা অনীহা কাজ করছে।”
তিনি বলেন, “অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী অভ্যত্থান পরবর্তী সময়ে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তারা পুনরায় সংঘবদ্ধ হচ্ছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক পরাজিত শক্তির কোনো ইন্ধন থাকতে পারে। পুলিশের সাথে জনগণের যে গ্যাপ সৃষ্টি হয়েছে, সেটি পূরণ করে জনগণের আরো কাছে যেতে হবে পুলিশের। গুরত্বপূর্ণ এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে। এতে অপরাধীরা সংগঠিত হতে পারবে না।”
তিনি আরো বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণের আরো সচেতন হতে হবে। পুলিশের টহল টিম বাড়াতে হবে। ডাকাতি রোধে কোন সড়কের বাস কোন সড়কে যাচ্ছে সেটি খেয়াল রাখতে হবে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে অনেক অপরাধ কর্মকাণ্ড কমে যাবে।”
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. শরিফ বলেন, “ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে দিন দুইটি ও রাতে চারটি টহল টিম দায়িত্ব পালন করছে। আর যাতে কোন যানবাহনে ডাকাতি না হয় সে বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।”
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, “প্রত্যেকটি ঘটনা গুরত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের ২৮টি টিম অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
ঢাকা/এসবি