যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ‌‘উত্তপ্ত’ বৈঠকের পর পূর্ব আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলন না করেই হোয়াইট হাউস থেকে চলে গেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে চুক্তিতে সইও করেননি।

জেরুজালেম পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ওভাল অফিসে এ ‌বৈঠকের পর শুক্রবার ভোরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি হোয়াইট হাউস ছেড়েছেন। জেলেনস্কির হোয়াইট হাউস থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ট্রাম্প ও তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন, যেখানে ট্রাম্প ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা সংক্রান্ত বিষয়ে জেলেনস্কিকে ‌‘অকৃতজ্ঞ’ বলে অভিযুক্ত করেন।

ট্রাম্পের এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে জেলেনস্কি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নাম উল্লেখ করে বলেন, একজন খুনিকে কোনো ছাড় দেওয়া উচিত নয়। পুতিনের বিষয়ে ট্রাম্পের নমনীয় অবস্থানের সমালোচনা করেন জেলেনস্কি। একজন খুনির সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতা না করার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

শুধু ট্রাম্প নয়, জেলেনস্কির সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সও। ওভাল অফিসে বসে বিতণ্ডায় জড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জেলেনস্কি অসম্মান করেছেন মন্তব্য করে ভ্যান্স বলেন, ‘আপনি একবারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন না।’ মাথা নেড়ে ভ্যান্সের কথায় সায় দেন ট্রাম্প। এ সময় গলার স্বর উঁচু করে জেলেনস্কি উত্তর দেন, ‘বহুবার বলেছি, আমেরিকার জনগণকে ধন্যবাদ।’

হোয়াইট হাউসে কোনো বিদেশি রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে বৈঠকের পর তাকে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জেলেনস্কির উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পরও হোয়াইট হাউস জানায়, দুই রাষ্ট্রনেতা কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি সংবাদ সম্মেলনে আসবেন। সেখানে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে একটি চুক্তিতেও সই করবেন তাঁরা। কিন্ত এর কিছুক্ষণ পর হোয়াইট হাউস এই সংবাদ সম্মেলন বাতিল করার কথা জানায়। এরপর জেলেনস্কি ও তার সঙ্গে থাকা ইউক্রেনের অন্য কর্মকর্তাদের হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।

জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক শেষে ট্রাম্প তার মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া একে পোস্টে লিখেছেন, জেলেনস্কি ‘যুক্তরাষ্ট্র ও এ দেশের শ্রদ্ধার জায়গা ওভাল অফিসকে (হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয়) অসম্মান’ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘যেদিন তিনি (জেলেনস্কি) শান্তির জন্য প্রস্তুত হবেন, আবার (হোয়াইট হাউসে) ফিরে আসতে পারেন।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন ইউক র ন র

এছাড়াও পড়ুন:

অবৈধভাবে কিডনি বিক্রি, মিয়ানমারের দুই নাগরিক জানালেন তাঁদের অভিজ্ঞতা

‘আমি শুধু একটি বাড়ির মালিক হতে ও ঋণ শোধ করতে চেয়েছিলাম। আর সে কারণেই আমার কিডনি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিই।’ বিবিসিকে কথাগুলো বলছিলেন জেয়া (ছদ্মনাম)। তিনি মিয়ানমারের একটি খামারে কাজ করেন।

মিয়ানমারে ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের জেরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর লড়াই শুরু হয়। এর পর থেকে দেশটিতে পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। এতে নিজের ছোট্ট পরিবারের খরচ চালাতেও হিমশিম অবস্থায় পড়েন জেয়া। পরিবারের সদস্যদের জন্য আবশ্যকীয় খাবারটুকুও ঠিকমতো জোগাড় করতে পারছিলেন না। তখন গ্রামে তাঁরা তাঁর শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। ইয়াঙ্গুন শহর থেকে গ্রামটিতে যেতে কয়েক ঘণ্টা লাগে।

অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে বেকারত্ব বেড়েছে। সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে দেশটির অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সরে গেছেন। ইউএনডিপির তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারে জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছিলেন। ২০২৩ সালের মধ্যে তা বেড়ে অর্ধেকে পৌঁছেছে।

জেয়া (ছদ্মনাম) স্থানীয় এমন কয়েকজনকে চিনতেন, যাঁরা তাঁদের একটি করে কিডনি বিক্রি করেছিলেন। তাঁদের দেখে জেয়ার কাছে সুস্থই মনে হতো। আর সে কারণে তিনিও আগ্রহী হয়ে ওঠেন নিজের কিডনি বিক্রি করতে। পরে এ ব্যাপারে নেওয়া শুরু করেন খোঁজখবর।

বিবিসিকে জেয়া বলেন, তিনিসহ ওই গ্রামের আটজন ভারতে গিয়ে একটি করে কিডনি বিক্রি করেছেন।

অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অবৈধ বাণিজ্য এশিয়াজুড়েই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কীভাবে এ প্রক্রিয়া চলে, তা মিয়ানমারের নাগরিক জেয়া ও মিয়ো উয়িন নামের দুই ব্যক্তির গল্পে তুলে ধরেছে বিবিসি।

যেভাবে চুক্তি

মিয়ানমার ও ভারত দুই দেশেই মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বেচাকেনা করা অবৈধ। তবে জেয়া বলেছেন, কিডনি বিক্রির জন্য ‘দালালের’ খোঁজ পেতে তাঁর বেশি বেগ পেতে হয়নি। কথিত দালাল প্রথমে জেয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। কয়েক সপ্তাহ পর দালাল জানান, একজন সম্ভাব্য কিডনিগ্রহীতার খোঁজ পাওয়া গেছেন। তিনিও মিয়ানমারের নারী। অস্ত্রোপচারের জন্য দাতা ও গ্রহীতা দুজনকেই ভারতে যেতে হবে বলে জেয়াকে জানানো হয়।

ভারতে কিডনি দাতা-গ্রহীতা যদি ঘনিষ্ঠ আত্মীয় না হন, তবে তাঁদের অবশ্যই ঘোষণা দিতে হয়, পরোপকারের অংশ হিসেবে এ দান করা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে কী ধরনের সম্পর্ক, তা-ও জানাতে হয়।

ডব্লিউএইচওর হিসাবে, ২০১০ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের হার ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। বছরে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার প্রতিস্থাপনের ঘটনা ঘটে। তবে প্রতিস্থাপনের জন্য বিশ্বব্যাপী অঙ্গপ্রত্যঙ্গের চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হয়।

অন্যদিকে মিয়ানমারে অঙ্গ দান করার ক্ষেত্রে কোনো পরিবারকে তার সদস্যদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নথিভুক্ত করাতে হয়। জেয়া জানান, ওই দালাল একটি জাল নথি তৈরি করেছিলেন। তাতে জেয়ার নাম কিডনিগ্রহীতার পরিবারের সদস্যদের তালিকায় উল্লেখ করা হয়।

জেয়া বলেন, দালাল বিষয়টিকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছিলেন, যেন তিনি (জেয়া) শ্বশুরবাড়ির কোনো আত্মীয়কে কিডনি দান করছেন। কিডনিগ্রহীতা তাঁর রক্তের কেউ না হলেও দূরসম্পর্কের আত্মীয়।

এরপর জেয়াকে ইয়াঙ্গুনে সংশ্লিষ্ট কিডনিগ্রহীতার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এক ব্যক্তি চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে আরও কিছু কাগজপত্রের কাজ শেষ করেন। ওই ব্যক্তি জেয়াকে সতর্ক করে দেন যে তিনি যদি সিদ্ধান্ত পাল্টান, তবে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

পরবর্তী সময়ে বিবিসি চিকিৎসক পরিচয়দানকারী ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তিনি বলেছেন, কোনো রোগী এ প্রক্রিয়ার উপযোগী কি না, তা যাচাই করাই তাঁর কাজ। দাতা ও গ্রহীতার মধ্যকার সম্পর্ক যাচাই করা তাঁর কাজ নয়।

জেয়া বলেন, কিডনি দান করলে তাঁকে ৭৫ লাখ কিয়াত (মিয়ানমারের মুদ্রা) দেওয়া হবে বলা হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের জন্য তিনি উত্তর ভারতে গিয়েছিলেন। বড় একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়।

ভারতে বিদেশি নাগরিকদের শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত একটি অনুমোদন কমিটির কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। জেয়া বলেন, একজন দোভাষীর সহায়তায় চারজন তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন।

‘তাঁরা আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, আমি স্বেচ্ছায় তাঁকে কিডনি দান করছি, নাকি জোরজবরদস্তি করে নেওয়া হচ্ছে’, বলেন জেয়া। তিনি তাঁদের বোঝাতে সক্ষম হন, গ্রহীতা তাঁর আত্মীয়। পরে তাঁকে কিডনি দানের অনুমতি দেওয়া হয়।

অস্ত্রোপচারের জন্য অচেতন করার আগে চিকিৎসকদের কর্মকাণ্ডগুলো জেয়ার মনে আছে। তিনি বলেন, অস্ত্রোপচারের পর চলাফেরা করতে ব্যথা হচ্ছিল। এ ছাড়া বড় জটিলতা হয়নি। অস্ত্রোপচার শেষে এক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকতে হয় তাঁকে।

আত্মীয় সেজে কিডনি দান করেছেন মিয়ো উয়িনও

জেয়ার মতোই গ্রহীতার আত্মীয় সেজে কিডনি দান করেছেন মিয়ো উয়িন (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ‘দালাল আমাকে এক টুকরা কাগজ দিয়েছিলেন। সেখানে যা লেখা ছিল, সেগুলো আমাকে মুখস্থ করতে হয়েছে।’

উয়িন বলেন, তাঁকে বলতে বলা হয়েছিল যে তাঁর এক আত্মীয়ের সঙ্গে গ্রহীতার বৈবাহিক সম্পর্ক আছে। তা ছাড়া একজনকে তাঁর মা সাজানো হয়েছিল। তথ্য যাচাইকারী ব্যক্তি তাঁর মা ভেবে ওই অন্য নারীকেই ফোন করেছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন, তাঁর সন্তান যে কিডনি দিচ্ছেন, তা তিনি জানেন কি না।

উয়িন জানান, কিডনি দেওয়ার জন্য জেয়ার সমপরিমাণ অর্থই তাঁকে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ওই অর্থের ১০ শতাংশ দালালকে দিতে হয়েছে। জেয়া ও উয়িন দুজনই বলেছেন, তাঁদের এক-তৃতীয়াংশ অর্থ অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল।

উয়িন বলেন, ‘আমি মনঃস্থির করেছিলাম, এটা আমাকে করতেই হবে। কারণ, আগেই আমি তাঁদের কাছ থেকে অর্থ নিয়েছি।’

কিডনি বিক্রি করার সিদ্ধান্তের কারণ সম্পর্কেও জানিয়েছেন এই ব্যক্তি। বলেছেন, ঋণ পরিশোধ ও স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ মেটাতে না পেরে তিনি এমনটা করেছেন।

অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে বেকারত্ব বেড়েছে। সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে দেশটির অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সেখান থেকে সরে গেছেন। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারে জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছিলেন। তবে ২০২৩ সালের মধ্যে তা বেড়ে অর্ধেকে পৌঁছেছে।

উইন বলেন, কিডনি বিক্রি যে অবৈধ, তা দালাল তাঁকে বলেননি। জানলে তিনি তা করতেন না। এ জন্য জেলে যেতে হয় কি না, সেই ভয়ে আছেন তিনি।

সাক্ষাৎকার ও অন্যান্য তথ্য প্রদানকারীর নাম গোপন রাখা এবং তাঁদের নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি বিবিসি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিয়ানমারের আরেকজন বিবিসিকে বলেন, তিনি ভারতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রায় ১০ জনকে কিডনি বেচাকেনায় সাহায্য করেছেন। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় মান্দালয়ের একটি সংস্থা এ বেচাকেনার ব্যবস্থা করেছে।

ভারতে গ্রেপ্তার

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাবে, ২০১০ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের হার ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। বছরে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার প্রতিস্থাপনের ঘটনা ঘটে। তবে প্রতিস্থাপনের জন্য বিশ্বব্যাপী অঙ্গপ্রত্যঙ্গের চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হয়।

মানব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যবসা প্রায় সব দেশেই অবৈধ। ডব্লিউএইচওর এক হিসাব অনুযায়ী, প্রতিস্থাপনকৃত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ৫ থেকে ১০ শতাংশই আসে কালোবাজারে। তবে প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে।

দারিদ্র্যের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেপাল, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, ভারত, বাংলাদেশসহ এশিয়ায় অবৈধভাবে কিডনি বিক্রি বেড়েছে।

চিকিৎসার জন্য বিদেশি পর্যটকদের কাছে ভারত একটি পছন্দের জায়গা। বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন ও পুলিশের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশটিতে কিডনি বিক্রির হার বেড়েছে। আর এ খবরে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।

গত জুলাইয়ে ভারতের পুলিশ বলেছিল, তারা কিডনি বেচাকেনা চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। যার মধ্যে একজন ভারতীয় চিকিৎসক ও তাঁর সহকারীও আছেন।

দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসক বিজয়া রাজাকুমারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, (চক্রের সদস্য হিসেবে) তিনি কয়েক কিলোমিটার দূরে ইয়াথার্থ নামের একটি হাসপাতালে ভিজিটিং কনসালট্যান্ট হিসেবে অস্ত্রোপচার করেছিলেন।

বিজয়ার আইনজীবী বিবিসিকে বলেছেন, অভিযোগগুলো ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’। এগুলোর পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। তিনি শুধু অনুমোদন কমিটির কাছ থেকে অনুমতি পাওয়ার পর অস্ত্রোপচার করেছেন ও সব সময় আইনের সঙ্গে সংগতি রেখে কাজ করেছেন। জামিন আদেশ অনুসারে, তাঁর বিরুদ্ধে জাল নথি তৈরির অভিযোগ নেই।

ইয়াথার্থ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিবিসিকে বলেছে, ভিজিটিং কনসালট্যান্টদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাসহ তাঁদের সব মামলা যেন আইনি ও নৈতিক মানদণ্ড মোতাবেক পরিচালিত হয়, তা তারা নিশ্চিত করবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানিয়েছে তারা।

চিকিৎসক রাজাকুমারী গ্রেপ্তার হওয়ার পর স্থানীয় অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, তিনি একজন ফ্রিল্যান্স কনসালট্যান্ট ছিলেন, যিনি ফি-ফর-সার্ভিস (কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক) ভিত্তিতে নিযুক্ত ছিলেন। অভিযোগ ওঠার পর তাঁর সঙ্গে চিকিৎসাবিষয়ক যোগাযোগ ছিন্ন করা হয়েছে।

তবে চিকিৎসক রাজাকুমারীর বিরুদ্ধে আদালতে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।

অনুশোচনা নেই

গত এপ্রিলে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাজ্যগুলোকে চিঠি লিখে বিদেশিদের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের হার বেড়ে যাওয়া সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় অঙ্গ ও টিস্যু প্রতিস্থাপন সংস্থা এবং মিয়ানমারের সামরিক সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বিবিসি। তবে সাড়া পাওয়া যায়নি।

জেয়ার অস্ত্রোপচারের কয়েক মাস পর বিবিসি তাঁর বক্তব্য শুনেছিল। সে সময় তিনি বলেন, ‘আমি আমার ঋণ পরিশোধ করতে পেরেছি এবং একটি জমি কিনেছি।’ তবে তিনি বাড়ি তৈরি করতে পারেননি।’ জেয়া বলেছিলেন, তিনি পিঠের ব্যথায় ভুগছেন। তবে তাঁর অনুশোচনা নেই।

জেয়া বলেন, ‘আমাকে শিগগির কাজ শুরু করতে হবে। যদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আবার দেখা দেয়, তবে আমাকে তা মোকাবিলা করতে হবে। এ নিয়ে আমার কোনো অনুশোচনা নেই।’

অস্ত্রোপচারের ছয় মাস পর মিয়ো উয়িন বিবিসিকে বলেছেন, তিনি তাঁর ঋণের একটা বড় অংশ শোধ করতে পেরেছেন। তবে পুরোটা পারেননি। অস্ত্রোপচারের পর পেটের কিছু সমস্যায় ভুগছেন বলেও জানালেন। বললেন, ‘আমার চাকরি নেই, একটা পয়সাও হাতে নেই।’

কিডনি বিক্রি করা নিয়ে তাঁর মধ্যেও নেই অনুশোচনা। তবে অন্যদের এটা না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘এটা ভালো নয়।’

আরও পড়ুনবাংলাদেশ-ভারত অবৈধ কিডনি প্রতিস্থাপন চক্র: দিল্লিতে অ্যাপোলোর চিকিৎসক গ্রেপ্তার০৯ জুলাই ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পঞ্চাশোর্ধ ইউক্রেনীয় নাদিয়া এলেন কুমিল্লায়, বিয়ে করলেন ব্যবসায়ীকে
  • গার্দিওলার গুরুকুলে ‘নেক্সট মেসি’
  • রোজার কাজা কী
  • যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ২৯ মাদক কারবারিকে তুলে দিল মেক্সিকো
  • হাতিরঝিলে অস্ত্র ঠেকিয়ে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ‘শুটিংয়ের দৃশ্য’
  • জাতীয় নাগরিক পার্টিকে স্বাগত জানাল ইসলামী আন্দোলন
  • সাইকো কিলার মিষ্টি জান্নাত!
  • বরেণ্য অভিনেতা উত্তম মারা গেছেন
  • অবৈধভাবে কিডনি বিক্রি, মিয়ানমারের দুই নাগরিক জানালেন তাঁদের অভিজ্ঞতা