ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদ নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে চুক্তি করছে কিয়েভ। চুক্তি সই করতে ওয়াশিংটনে গেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হওয়ার কথা। হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান একটি চুক্তিতে সই করবেন।

চুক্তি অনুযায়ী ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন খনিজ সম্পদ থেকে আয়ের অর্ধেক একটি পুনর্গঠন তহবিলে জমা দেবে কিয়েভ। এই তহবিলের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় যৌথভাবে থাকবে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র। এই তহবিলের অর্থ কীভাবে ব্যয় করা হবে এবং কোন কোন খনিজ সম্পদ এর আওতায় থাকবে, সে সম্পর্কে এখনো নির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। তবে বলা হয়েছে, এর মধ্যে খনিজ সম্পদ, জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের পাশাপাশি গ্যাস টার্মিনাল ও বন্দরের মতো অবকাঠামোগুলো এর আওতায় থাকবে।

ইউক্রেনের সঙ্গে এই চুক্তির অর্থমূল্য কেমন হবে, তা এখনো জানা যায়নি। তবে ট্রাম্প জানিয়েছেন, এতে করে শত শত কোটি ডলার পেতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি এমন কোনো চুক্তিতে সই করবেন না, যেখানে তাঁর দেশকে কয়েক প্রজন্ম ধরে ঋণের বোঝা বইতে হবে। দুই রাষ্ট্রনেতা এমন বক্তব্য দিলেও সম্ভাব্য এ চুক্তির শর্ত সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

ট্রাম্পের সমর্থন পাওয়ার আশা

রাশিয়ার সঙ্গে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেন প্রশাসনের কাছ থেকে শত শত কোটি ডলারের অস্ত্রসহায়তা পেয়েছে ইউক্রেন। কিন্তু গত ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পরই পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। জেলেনস্কির সমালোচনা করছেন ট্রাম্প। যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতার তৎপরতাও চালাচ্ছেন তিনি।

ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অবস্থান থেকে সরে আসতে চাইছেন ট্রাম্প। তিনি চাচ্ছেন, যত দ্রুত সম্ভব মস্কোর সঙ্গে একটি শান্তি সমঝোতা করুক কিয়েভ। এ জন্য ইউক্রেনকে চাপ দিচ্ছেন তিনি।

ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ওয়াশিংটনের নজর ইউক্রেনের বিপুল খনিজ সম্পদের মজুতের দিকে। ট্রাম্প ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ উত্তোলন করে তার অর্ধেক নিয়ে নিতে চান। ইউক্রেন তাতেও রাজি। কিন্তু বিনিময়ে কিয়েভের প্রধান চাওয়া ইউক্রেনের নিরাপত্তার মার্কিন নিশ্চয়তা। কিন্তু সেই নিশ্চয়তা এখনো মেলেনি।

কিয়েভের আশা, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে রুশ বাহিনীকে মোকাবিলায় ট্রাম্পের সমর্থনের পাশাপাশি নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পেতে কংগ্রেসে রিপাবলিকানরা ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াবে।

সুর নরম ট্রাম্পের

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় সুর নরম করেছেন ট্রাম্প। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠকে তাঁকে এমন অবস্থান নিতে দেখা যায়। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কির ব্যাপারে সুর নরম করে ট্রাম্প বলেন, ‘তাঁর প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা রয়েছে।’

জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরাচার’ বলে করা মন্তব্যের বিষয়েও নমনীয়তা দেখান ট্রাম্প। এ বিষয়ে ওভাল অফিসে সাংবাদিকেরা তাঁর কাছে জানতে চাইলে পাল্টা প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘আমি এটা বলেছিলাম? আমার মনে হয় না, আমি এটা বলেছি।’

ইউক্রেন নিয়ে বিশেষ সম্মেলন

ইউক্রেন নিয়ে ট্রাম্পের তৎপরতার মধ্যে ইউরোপের নেতাদের নিয়ে একটি বিশেষ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। আগামীকাল রোববার লন্ডনে অনুষ্ঠেয় এই সম্মেলনে ইউক্রেনের শান্তি সমঝোতার বিষয়ে ইউরোপের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা করবেন তাঁরা।

জার্মানির বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজসহ ইতালি, পোল্যান্ডসহ ইউক্রেনের অন্য মিত্রদেশগুলোর নেতাদের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। ওয়াশিংটন সফর শেষে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও এই সম্মেলনে যোগ দেবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র

এছাড়াও পড়ুন:

স্পিডবোটে এসে এলোপাতাড়ি গুলি, পালানোর সময় গণধোলাই ৫ ডাকাতকে

শরীয়তপুরের আঙ্গারিয়া এলাকায় ডাকাত দলের ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের মধ্যে একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

গুলিবিদ্ধরা হলেন- পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার জয়নাল মিয়ার ছেলে ও বাল্কহেড শ্রমিক মাসুম মিয়া, নাজিরপুর উপজেলার কালিকাঠী এলাকার আনিস ফকিরের ছেলে ও বাল্কহেড শ্রমিক আলামিন (১৯ ও শরীয়তপুরের পালং থানার ডোমসার মোল্লা কান্দি এলাকার দলিল উদ্দিনের ছেলে তোতা মিয়া (৩৫)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাতে একটি স্পিডবোটে করে একদল ডাকাত আঙ্গারিয়া এলাকায় প্রবেশ করে। স্থানীয়রা বিষয়টি বুঝতে পেরে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করলে ডাকাতরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে তিনজন গুলিবিদ্ধ হন।

ডাকাতির খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা সতর্ক হয়ে যান। পালানোর সময় ডাকাতরা রামগঞ্জ এলাকা দিয়ে নদীপথে বের হওয়ার চেষ্টা করে। তবে স্থানীয়রা বাল্কহেড দিয়ে নদীপথ আটকে দেয়। বাধা পেয়ে ডাকাতরা স্পিডবোট তীরে রেখে পালানোর চেষ্টা করলে জনতা তাদের ধাওয়া করে পাঁচজনকে ধরে ফেলে এবং গণধোলাই দেয়।

ঘটনার পর আহতদের দ্রুত শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর গুরুতর আহত মাসুম মিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ডাকাতদলের পাঁচ সদস্যকে স্থানীয়দের সহায়তায় আটক করা হয়েছে। তারা বর্তমানে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এছাড়া স্থানীয়রাও আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ