ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী
Published: 27th, February 2025 GMT
ইউক্রেনে যেকোনো যুদ্ধবিরতি কার্যকরে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করার অনুরোধ জানাতে আজ বৃহস্পতিবার দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করবেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। আর একমাত্র এটিই ইউক্রেনে আবার আক্রমণ করা থেকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বিরত রাখবে বলে মনে করছেন তিনি।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর যুক্তরাষ্ট্র সফরের পর স্টারমার গতকাল বুধবার রাতে ওয়াশিংটনে পৌঁছান। এমন এক সময় তিনি দেশটিতে গেলেন, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে ইউরোপজুড়ে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। ইতিমধ্যে পুতিনের সঙ্গে আলোচনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কমিয়ে দিতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের আলাপ-আলোচনা যদি সফলভাবে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে, তবে ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে ইউরোপের। আর এ–সংক্রান্ত প্রস্তাবে সামনে থেকে কাজ করছে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। বিনিময়ে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দাবি করছে তারা। ইউরোপের উদ্বেগ, ট্রাম্প রাশিয়ার পক্ষ নিচ্ছেন এবং তিনি কয়েক দশকের ট্রান্স-আটলান্টিক জোট ভেঙে দিতে পারেন।
ওয়াশিংটনে যাওয়ার পথে উড়োজাহাজে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘পুতিনকে আটকানোর জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা যথেষ্ট হতে হবে। যদি কোনো রক্ষাকবচ ছাড়া যুদ্ধবিরতি হয়, তবে তিনি (পুতিন) সুযোগের অপেক্ষায় থাকবেন এবং আবার ফিরে আসবেন। কারণ, ইউক্রেন নিয়ে তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা বেশ স্পষ্ট।’
ভবিষ্যতে ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে পাঠানো সেনাদের সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সম্ভাব্য উড়োজাহাজ, গোয়েন্দা তথ্য ও রসদ সেবা চেয়েছে ইউরোপ।
আরও পড়ুনরাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ: পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়াই পাঠানো হচ্ছে সম্মুখসারিতে, প্রাণ হারাচ্ছেন হাজারো মানুষ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ওভাল অফিসের বৈঠকে শান্ত স্বভাবের লেবার নেতা কিয়ার স্টারমার ও বেপরোয়া ট্রাম্পের একেবারে বিপরীতধর্মী ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি দেখা যেতে পারে।
স্টারমার মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনও করবেন। ইউক্রেন ইস্যুতে ট্রাম্প ও ইউরোপের মধ্যে নিজেকে সেতুবন্ধন হিসেবে উপস্থাপন করছেন তিনি।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঢেকে রাখা সেই মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরালে শেখ মুজিবের স্মৃতিচিহ্ন ভেঙে ফেলা হলো
লালমনিরহাট শহরের শিশুপার্ক সংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমঞ্চে স্থাপিত ম্যুরালের কিছু অংশ ভেঙে ফেলেছে জেলা প্রশাসন। ২৬ মার্চ জেলা প্রশাসন ওই ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি ও গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কাপড় দিয়ে ম্যুরাল ঢেকে দেওয়ার ঘটনায় মুখোমুখি অবস্থান নেয় জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম পার না হতেই রোববার জেলা প্রশাসন মুক্তিযুদ্বের স্মৃতিচিহ্ন ম্যুরাল ভাঙার কাজে হাত দেয়।
এর আগে শনিবার দুপুুরে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মঞ্চে দু’টি পক্ষ একই সময়ে সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দুপুর সাড়ে ১১টায় ওই এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করলেও জাতীয় নাগরিক পার্টি করতে পারেননি।
মুক্তিযুদ্ব স্মৃতি মঞ্চে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লালমনিরহাট শাখার প্রধান সমন্বয়ক হামিদুর রহমান ম্যুরাল অপসারণ ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরাতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। এ সময় তিনি দাবি করে বলেন, ‘এই ম্যুরালটি স্বাধীন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস বহন করে না। বাকশাল প্রতিষ্ঠাকারী স্বৈরাচার শেখ মুজিবুর রহমানকে অতিরঞ্জিত উপস্থাপন ও ইতিহাস বিকৃতি করায় এর আগেও ১৬ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসন ম্যুরালটি ঢেকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫২, ৭১ এর সকল সত্য ইতিহাস অক্ষুণ্ণ রেখে অতিরঞ্জিত অংশ ও স্বৈরাচারের চিহ্ন ঢেকে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পুরো দেয়াল ঢেকে দেয়, যা অনাকাঙ্খিত। কিছু স্বৈরাচারের দোসর তাদের ব্যক্তিগত আক্রোশ, স্বার্থ উদ্ধার ও বর্তমান সরকারের কার্যক্রমকে বিতর্কিত করতে জেলা প্রশাসনের কার্যক্রমকে ভুলভাবে প্রচার করতে থাকে এবং বিদ্বেষবশত মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ম্যুরাল ঢেকে দেওয়ার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অবগত ছিল না, তাঁরা এমন কোনো দাবিও করে নাই। স্বৈরাচারের সকল চিহ্ন ও ম্যুরাল অপসারণ ছাত্রজনতার দাবি ও গণআকাঙ্খা।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিসৌধ এলাকায় যান। সেখানে জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, ম্যুরালের মধ্যেই বৈষম্য রয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানে যেমন অবদান রয়েছে তেমনি স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানেরও অবদান রয়েছে। অথচ ম্যুরালে জিয়াউর রহমানের কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। এটা বৈষম্য। এই ম্যুরাল রাখা ঠিক নয়।
শনিবার জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) রাসেল আহমেদ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গেলে তোপের মুখে পড়েন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই ম্যুরালে ৫২ ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার গঠন, চরমপত্র পাঠ, ৭১ এর গণহত্যা, বিজয় উল্লাসে মুক্তিযোদ্ধা, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিচিহ্ন ঢেকে দিয়ে চরম ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছেন জেলা প্রশাসন। পরে তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর দায় চাপিয়েছেন। ৭১ ও ২৪কে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে জাতিকে বিভাজিত করে আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্র চলছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ৭১ এর অস্তিত্ব ধরে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাদ দিয়ে অন্যগুলোর সঙ্গে আমাদের কোনো মতানৈক্য নেই।
২৬ মার্চ বুধবার সকালে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্বাঞ্জলি দিতে গেলে কাপড় দিয়ে মুরাল ঢেকে রাখার বিষয়টি চোখে পড়ে। সনাক সদস্যরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফিরে যান। পরে লালমনিরহাট রেলওয়ে শহীদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্বাঞ্জলি দেন তাঁরা। গত ১৬ ডিসেম্বরও একই রকম ঘটনা ঘটায় জেলা প্রশাসন। ১৪০ ফুট দীর্ঘ ওই ম্যুরালে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকার গঠন, চরমপত্র পাঠ, উদিত সূর্য, ৭১ এর গণহত্যা, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানি, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দারের বক্তব্য জানতে তাঁর ফোনে মেসেজ এবং ফোন দিলে কোনো সাড়া মেলেনি।