স্থাপত্য কেবল ভবন নির্মাণের রূপরেখা নয়; বরং ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মানুষের আবেগের বহিঃপ্রকাশ। পরিচালক উলফ কেজেল গুরের ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ ঠিক এমনই এক সিনেমা, যেখানে স্থাপত্যের আড়ালে মানব জীবনের উত্থান-পতনের গল্প দেখানো হয়েছে। এ সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র হলোকাস্ট থেকে বেঁচে ফেরা এক প্রতিভাবান স্থপতি লাসজলো টোথ [অ্যাড্রিয়েন ব্রডি] ও তাঁর স্ত্রী এরজসেবেট [ফেলিসিটি জোন্স]। তাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে প্রেম, স্বপ্ন এবং এক রহস্যময় শিল্পপতির প্রভাব। তাদের যাত্রা শুরু হয় ইউরোপ থেকে আমেরিকায়।
শুরু হয় নতুন জীবনের স্বপ্ন। কিন্তু সেই স্বপ্ন ধীরে ধীরে এক জটিল বাস্তবতায় রূপ নেয়। সিনেমার গল্পে দেখা যায় লাসজলো একজন হাঙ্গেরীয়-ইহুদি স্থপতি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁর স্ত্রী ও ভাগনির কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। যুদ্ধোত্তর সময়ে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন গ্রহণ করেন এবং তাঁর চাচাতো ভাই আটিলার কাছে আশ্রয় নেন। পেশাগতভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই তিনি এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হন।
ধনী শিল্পপতি হ্যারিসন লি ভ্যান বুরেনের সঙ্গে তাঁর দেখা হয় ফিলাডেলফিয়ায়। যেখানে তিনি একটি লাইব্রেরি সংস্কার প্রকল্পে যুক্ত। শুরুতে হ্যারিসন তাঁর কাজের প্রতি তেমন আগ্রহী ছিলেন না, কিন্তু পরবর্তী সময়ে লাসজলোকে আমেরিকান স্থাপত্য জগতের অংশ করে তোলেন। হ্যারিসনের সহযোগিতায় লাসজলো তাঁর স্বপ্নের আধুনিক স্থাপত্য নির্মাণের সুযোগ পান। কিন্তু এ সুযোগের পেছনে ছিল এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতা, যা ধীরে ধীরে তাঁর জীবনকে এক দুঃস্বপ্নে পরিণত করে।
‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ চলচ্চিত্রটি ইতিহাস, স্থাপত্য ও মানবিক সম্পর্কের এক অপূর্ব মেলবন্ধন। সিনেমাটির সিনেমাটোগ্রাফি দর্শকদের ১৯৪০ থেকে ১৯৮০-এর আমেরিকায় নিয়ে যায়, যেখানে অভিবাসীদের স্বপ্ন ও সংগ্রামের বাস্তব চিত্র ফুটে ওঠে। চলচ্চিত্রের প্রথমার্ধে, লাসজলো ও তাঁর পরিবারের পুনর্মিলনের গল্প দেখানো হয়, যেখানে এরজসেবেট শারীরিকভাবে দুর্বল ও হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী, আর তাদের ভাগনি সোফিয়া যুদ্ধের ট্রমায় নীরব।
এখানেই ধীরে ধীরে দর্শক বুঝতে পারেন, লাসজলো ও তাঁর পরিবার শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও এক অসম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ স্বপ্ন ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে, যখন লাসজলো বুঝতে পারেন যে, হ্যারিসন শুধু একজন পৃষ্ঠপোষক নন; বরং তাঁর জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান। লাসজলো যখন হ্যারিসনের ক্ষমতার সীমাহীন প্রভাব বুঝতে পারেন, তখন তিনি নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না।
একদিকে হ্যারিসনের সঙ্গে তার নৈতিক দ্বন্দ্ব, অন্যদিকে পরিবারের প্রতি তার দায়িত্ববোধ তাকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়। তার স্বপ্নের নির্মাণ প্রকল্পটি ধ্বংসের পথে হাঁটে এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ১৯৮০ সালে, এরজসেবেটের মৃত্যুর পর লাসজলো স্থাপত্য জগতে তাঁর অবদানের জন্য স্বীকৃতি পান। সোফিয়া তখন তাঁর স্মৃতিচারণে বলেন, ‘গন্তব্য নয়; বরং যাত্রাই গুরুত্বপূর্ণ।’ এ বক্তব্য পুরো সিনেমার সারসংক্ষেপ বহন করে।
‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ শুধু স্থাপত্য কিংবা অভিবাসনের গল্প নয়; বরং এটি আধুনিক সমাজের ক্ষমতার দখলদারিত্ব, সম্পর্কের জটিলতা এবং স্বপ্নভঙ্গের গল্প। পরিচালক অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে দেখিয়েছেন, কীভাবে যুদ্ধপরবর্তী অভিবাসী জীবন, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং মানবিক সম্পর্কের টানাপোড়েন একজন শিল্পীর মনস্তাত্ত্বিক গঠনে প্রভাব ফেলে।
লাসজলো টোথ চরিত্রটি শুধু একজন স্থপতির প্রতিচ্ছবি নয়, বরং সে যুদ্ধোত্তর পৃথিবীর এক নিঃসঙ্গ যোদ্ধা, যে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য সমাজের বিভিন্ন শক্তির সঙ্গে লড়াই করে। কিন্তু বাস্তবতা সবসময় স্বপ্নের অনুকূলে চলে না; বরং তা ধীরে ধীরে একটি কঠিন বাস্তবতায় রূপ নেয়।
‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ এক বিস্ময়কর সিনেমা, যা দর্শকদের শুধু একটি গল্প নয়; বরং একটি সময়ের ছবি দেখায়। এটি এমন এক চলচ্চিত্র যা স্থাপত্যের নান্দনিক সৌন্দর্যের মাধ্যমে মানব জীবনের সবচেয়ে কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরে। আধুনিক সমাজের আলো-ছায়া, ক্ষমতার লড়াই এবং একজন শিল্পীর স্বপ্নভঙ্গের গল্পে এটি এক অনবদ্য সংযোজন। যারা ইতিহাস, স্থাপত্য ও মনস্তাত্ত্বিক সিনেমার প্রেমী, তাদের জন্য ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ এক দারুণ সিনেমা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব স তবত ক ষমত র জ বন র ল সজল
এছাড়াও পড়ুন:
স্তনের বাঁ পাশে একটা ফোড়ার মতো হয়েছে, সমাধান কী?
প্রশ্ন: আমি একজন নারী। বয়স ৩৪। তিন সন্তানের মা। আমার স্তনের বাঁ পাশে একটা ফোড়ার মতো হয়েছে। আগেও একবার এমনটা হয়ে সেরে গেছে। কিন্তু এবার দুই মাস হয়ে গেল, সারছে না। মাঝেমধ্যে ব্যথা হয়, বাকি সময় খুব একটা ব্যথা নেই। আমার এখন কী করা উচিত?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, লালমনিরহাট
পরামর্শ: নারীশরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল অঙ্গ স্তন। সংবেদনশীল অঙ্গে কোনো জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হয়। আপনার ফোড়াটি দুই মাস পার হতে চলেছে চিকিৎসাহীন। এভাবে চললে সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। জটিলতা কম থাকলে ওষুধে উপকার পাওয়া যায়। কিন্তু জটিলতা বেড়ে গেলে তখন সার্জারি দরকার পড়ে। তাই কোনো সংকোচ না করে, প্রাথমিক করণীয় হিসেবে স্থানীয় ব্রেস্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে পারেন। চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ফোড়ায় পুঁজ থাকলে তাও বের করে নিন। আর আক্রান্ত স্থানে দিনে তিনবার হালকা গরম সেঁক নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কুসুম গরম পানির বোতল কিংবা নরম কাপড় দিয়ে সেঁক নিতে হবে। এই চিকিৎসায় উপশম না হলে যত দ্রুত সম্ভব উন্নতমানের হাসপাতালে এসে একজন ব্রেস্ট সার্জনের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে সুচিকিৎসা গ্রহণ করুন।
আরও পড়ুনব্রেস্ট ফিডিং নিয়ে যা জানা উচিত০২ আগস্ট ২০২২