উত্তর-ঔপনিবেশিক দেশে ভাষিক সাম্রাজ্যবাদের স্বরূপ
Published: 27th, February 2025 GMT
পৃথিবীর বহু দেশ ভাষিক সাম্রাজ্যের কবলে পড়েছে। এতে জাতীয় আদর্শ পরিপন্থি আদর্শ অনুসরণ করে দেশগুলো নিজেদের ভাষানীতি প্রণয়ন করছে। এই বাস্তবতা থেকে ভাষিক সাম্রাজ্যবাদ ধারণার জন্ম। ভাষিক সাম্রাজ্যবাদ হলো প্রভাবশালী দেশের কোনো ভাষা কোনো অনুবর্তী দেশের জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়াসবিশেষ।
সাম্রাজ্যবাদী রাজনৈতিক শক্তি কর্তৃক অনুবর্তী দেশের জনগণের চাপিয়ে দেওয়ার এই প্রয়াস রাজনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ থেকে উৎসারিত। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর রাজনৈতিক ক্ষমতা, সামরিক ক্ষমতা বা অর্থনৈতিক ক্ষমতার মাধ্যম ভাষিক সাম্রাজ্যবাদিতা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। ইউরোপীয় দেশগুলোর এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার সাবেক উপনিবেশগুলোয় তাদের ভাষা দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রচলনের যে বাস্তবতা, তা মূলত ভাষিক সাম্রাজ্যবাদের বহিঃপ্রকাশ। সমসাময়িককালে আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থা, জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক ইত্যাদি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ভাষিক সাম্রাজ্যবাদীদের ভাষাগুলোকে বিশ্বায়নের ভাষা হিসেবে প্রচলনে তৎপর।
বিশ্বজুড়ে ভাষিক সাম্রাজ্যবাদের বাস্তবতা হলো এই, সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশভুক্ত দেশ যেমন– কেনিয়া, নাইজেরিয়া, ফিলিপাইন, পাপুয়া নিউগিনি ও ভারত; সাবেক ফরাসি উপনিবেশভুক্ত দেশ যেমন– ক্যামেরুন, আইভরি কোস্ট, মাদাগাস্কার, হাইতি, সেনেগাল, বুরকিনা ফাসো, বেনিন ও গিনি, সাবেক স্পেনীয় উপনিবেশভুক্ত দেশ যেমন– ইকুয়েডর, কিউবা, গুয়েতেমালা, হন্ডুরাস, বলিভিয়া, এল সালভাদর, নিকারাগুয়া এবং সাবেক আরব উপনিবেশভুক্ত দেশ যেমন– সুদান, চাদ ইত্যাদি দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেসব দেশের জাতীয় আদর্শ পরিপন্থি ভাষিক আদর্শ অনুসরণ করতে বাধ্য হচ্ছে। এসব দেশ সেখানে বিরাজিত বহুভাষিকতার বাস্তবতার কারণে জাতীয় আদর্শ পরিপন্থি ভাষিক আদর্শ অনুসরণে বাধ্য হচ্ছে। এসব সাবেক ব্রিটিশ, ফ্রান্স ও স্পেনের উপনিবেশভুক্ত দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাদের দেশে কথিত ভাষার চেয়েও যথাক্রমে ইংরেজি, ফরাসি ও স্প্যানিশ ভাষাকে মর্যাদায় প্রতিষ্ঠাকরণে সচেষ্ট। তারা বহুভাষিকতা সমাজভাষিক আদর্শকে পাশ কাটিয়ে যথাক্রমে ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ ও আরবি ভাষাকে আত্তীকরণের নিয়ামক হিসেবে ব্যবহার করে চলেছে এবং এসব ভাষার দেশীয়করণ ত্বরান্বিত করতে গণমাধ্যম ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যবহার করছে। এসব দেশ আন্তর্জাতিকতাবাদ ভাষিক আদর্শের মুলা ঝুলিয়ে ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ ও আরবি ভাষাকে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে এ চারটি ভাষা ব্যাপকভাবে সংজ্ঞাপনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কাজেই এসব দেশে ভাষিক আত্তীকরণ, দেশীয়করণ ও আন্তর্জাতিকতাবাদ– এ তিন ভাষিক আদর্শই যুগপৎভাবে ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ ও আরবি ভাষা প্রচলনে সহায়ক সমাজ ভাষাবৈজ্ঞানিক আদর্শ হিসেবে কার্যকর।
সাবেক ব্রিটিশ, ফরাসি ও স্পেনীয় উপনিবেশভুক্ত দেশগুলোর মধ্য থেকে কয়েকটি সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে, সাম্রাজ্যবাদের অবশেষ হিসেবে প্রাপ্ত ভাষাকে ব্যবহার না করেও অগণতান্ত্রিক ভাষা রাজনৈতিক আদর্শ অনুসরণ করছে। তার মধ্যে অন্যতম ইন্দোনেশিয়া। ইন্দোনেশিয়ার সাম্রাজ্যবাদের অবশেষ হলো ডাচ্ ভাষা। কিন্তু এ দেশটি ডাচ্ বা ইংরেজি ভাষাকে আত্তীকরণের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার না করে, মালয় উপদ্বীপের ভাষাকে দেশীয়করণে সচেষ্ট। অন্যদিকে সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ ব্রিটিশ ভারত থেকে সৃষ্ট দেশ ভারত ও পাকিস্তান ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অবশেষ ইংরেজি এবং রাজনৈতিক অভিজাত শ্রেণির ভাষা যেমন হিন্দি ও উর্দু– এই দুটি ভাষাকেই যুগপৎ আত্তীকরণের নিয়ামক হিসেবে ব্যবহার করে চলেছে।
হিন্দু ও ইসলাম ধর্মীয় আদর্শগত বিভেদজনিত কারণে উদ্ভূত দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত ভেঙে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি বহুভাষিক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। নতুন সৃষ্ট এ দুটি রাষ্ট্রে বহু ভাষা থাকার কারণে দুটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক নেতৃত্ব যথাক্রমে হিন্দি ও উর্দু ভাষাকে কেন্দ্র করে বহুভাষী জনগোষ্ঠীকে একীভূত করতে প্রয়াসী হয়। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই দু’দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাদের দেশে যথাক্রমে হিন্দি ও উর্দু ভাষাকে প্রবর্তনের প্রয়াস চালায়। এ ব্যাপারে ভারত হিন্দি ভাষা প্রবর্তনের ক্ষেত্রে প্রচ্ছন্ন ও ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করে। অন্যদিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক শক্তি প্রথম থেকেই উর্দু ভাষাকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রবর্তনের উদ্যোগ নেয়। ফলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) বাংলা ভাষার অধিকার আন্দোলনের স্ফুরণ ঘটে। বাংলাদেশ নামে নতুন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। আর মূল পাকিস্তানে রয়ে যায় অফুরন্ত ভাষিক সমস্যা। এর ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের নেতৃত্ব উর্দু ও ইংরেজি ভাষাকে সে দেশের জাতীয় ও এজমালি ভাষা হিসেবে প্রবর্তন করে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যীয় ইন্ডিয়ার নেতৃত্ব ইংরেজি ভাষাকে যুক্তরাজ্যীয় দাপ্তরিক ভাষা এবং হিন্দি ভাষাকে ঐচ্ছিক যুক্তরাজ্যীয় ভাষা হিসেবে প্রবর্তন করে। কিন্তু এ পর্যায়ে এসে ভারত হিন্দি ভাষাকে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রবর্তনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
যেহেতু এসব বহুভাষী দেশের লক্ষ্য ছিল ভাষার ভিত্তিতে বহুধাবিভক্ত জনগোষ্ঠীকে একটি এজমালি রাজনৈতিক পরিকাঠামোতে একীভূত করা, কাজেই সেসব দেশ আত্তীকরণের মাধ্যম হিসেবে গৃহীত ইংরেজি, ফরাসি ও স্প্যানিশ ভাষাকে দেশীয়করণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ উদ্যোগের ফলে এসব ভাষা দেশীয়কৃত হয়ে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে; একই সঙ্গে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সামাজিক সংজ্ঞাপনের এজমালি মাধ্যম হিসেবেও প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
ড.
এ বি এম রেজাউল করিম ফকির: প্রাক্তন পরিচালক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত ক ন ত ত ব ভ ষ ক আদর শ র র জন ত ক দ শ য়করণ উপন ব শ ব যবহ র য় আদর শ ব স তবত
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদে এনসিপির কোন নেতা ভোটকেন্দ্রিক কী জনসংযোগ করবেন
ঢাকা-১৩ সংসদীয় আসনের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে সক্রিয় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব আকরাম হুসেইন। তাঁর উদ্যোগে তরুণদের সমন্বয়ে গঠিত বিভিন্ন দল বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের সমস্যা-সংকটের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। তাঁরা এলাকার খাল ও মাঠ রক্ষায় মানববন্ধন করেছেন। ১৫ মার্চ আয়োজন করেছেন ইফতার মাহফিল। ঈদুল ফিতরের সময় জনসংযোগের আরও বিভিন্ন পরিকল্পনা আছে তাঁর।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এত সব তৎপরতা শুরু করেছেন আকরাম হুসেইন। তিনি ঢাকা-১৩ আসন (মোহাম্মদপুর–আদাবর এলাকা) থেকে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। এ আসনে অবস্থিত জেনেভা ক্যাম্পে বসবাসকারী বিহারি জনগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে অনেকের সঙ্গে ইতিমধ্যে যোগাযোগ তৈরি করেছেন আকরাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এই আসনে নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা শুরু করেছেন মাস দুয়েক আগে। এলাকার বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
আকরাম জানান, ঈদের আগে চাঁদরাতে ঢাকা-১৩ আসনে তাঁর উদ্যোগে মিছিল হবে। ঈদের দিন মোহাম্মদপুর এলাকায় জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের কবর জিয়ারত, শহীদ পরিবারগুলোর সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং নির্বাচনী এলাকার মসজিদগুলোতে গিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি।
আকরামের মতো আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তরুণদের নতুন দল এনসিপির আরও অনেকে নিজ নিজ এলাকায় সক্রিয় হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বেশি আলোচিত হয়েছেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই নিজ এলাকা নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনে বেশ সক্রিয় হন তিনি। এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানীয় সমস্যা সমাধানেও তিনি কাজ করছেন। এখন ইউনিয়ন পর্যায়ে সমাবেশ করছেন। ঈদকে কেন্দ্র করে জনসংযোগ জোরদার হচ্ছে বলে জানা গেছে।
আকরাম জানান, ঈদের আগে চাঁদরাতে ঢাকা-১৩ আসনে তাঁর উদ্যোগে মিছিল হবে। ঈদের দিন মোহাম্মদপুর এলাকায় জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের কবর জিয়ারত, শহীদ পরিবারগুলোর সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং নির্বাচনী এলাকার মসজিদগুলোতে গিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি।গত ২৪ মার্চ হাতিয়ায় হান্নান মাসউদ ও তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলা হয়েছে। পরদিন তাঁর সমর্থকেরা সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, মাসউদের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা হামলা করেছেন।
সম্প্রতি শতাধিক গাড়িবহর নিয়ে নিজের জেলায় নির্বাচনী প্রচারাভিযানে গিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী উপজেলা নিয়ে গঠিত পঞ্চগড়-১ সংসদীয় আসন থেকে তিনি সংসদ নির্বাচন করতে চান। এখন নির্বাচনী আসনের বিভিন্ন এলাকায় উঠান বৈঠক করছেন, মানুষের সঙ্গে সংযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। ঈদেও সারজিসের এই তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।
দেবীদ্বার উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৪ আসন থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। গত কয়েক মাসে এলাকায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন হাসনাত। সর্বশেষ উপজেলার সুজাত আলী সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দেবীদ্বার আসনটিকে এনসিপির একক আসন হিসেবে গড়ে তুলতে চান তিনি। হাসনাত নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গেই ঈদ করবেন বলে জানা গেছে।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নির্বাচনী আসনকেন্দ্রিক তৎপরতা এখনো দৃশ্যমান না হলেও ঢাকা-১১ আসন থেকে তাঁর প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। বাড্ডা, ভাটারা, রামপুরা, বনশ্রী এলাকা (ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২১, ২২, ২৩, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ড) নিয়ে গঠিত এই আসনটি। নাহিদের বাড়ি ঢাকার দক্ষিণ বনশ্রীতে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ঢাকা-১৭ আসনে (গুলশান-বনানী ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকা) দলের প্রার্থী হতে পারেন।দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-৪ আসনে প্রার্থী হতে পারেন। নির্বাচনী এলাকায় আখতারের যাতায়াত আছে। ঈদকেন্দ্রিক জনসংযোগেও দেখা যেতে পারে।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী গত ২৬ মার্চ নিজ এলাকা চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় এক ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সেখানে তিনি বলেন, তরুণদের চোখ এখন জাতীয় সংসদের দিকে। ৫ আগস্টের মতো ‘টেকনিক’ (কৌশল) ব্যবহার করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তরুণদের বড় একটি অংশ বিজয়ী হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁদপুর-৫ আসন থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী নাসীরুদ্দীন।
ভোলা সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত ভোলা-১ আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। গত কয়েক মাসে ভোলায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন তিনি। আজ শনিবার ভোলা জেলা সদরে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে ইফতারে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে তাঁর।
ঈদে আমরা জনসংযোগ করব। ঈদে সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দলের নাম যাতে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই চেষ্টা থাকবে আমাদের।এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীবএনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ঢাকা-১৭ আসনে (গুলশান-বনানী ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকা) দলের প্রার্থী হতে পারেন।
ঢাকা-১৪ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান এনসিপির আরেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব। এই আসনটি ঢাকার উত্তর সিটির ৭ থেকে ১২ নম্বর ওয়ার্ড ও সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই আসনের যাঁরা জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে ঈদ উপহার পৌঁছে দেওয়া এবং ঈদের আগে-পরে কিছু বাসায় যাওয়ার কথা ভাবছেন তিনি। পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও লিফলেট বিতরণ করবেন তিনি।
আরিফুল ইসলাম আদীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদে আমরা জনসংযোগ করব। ঈদে সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দলের নাম যাতে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই চেষ্টা থাকবে আমাদের।’
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার নরসিংদী থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী। গত কয়েক মাসে তিনি নরসিংদীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। নরসিংদী-২ আসনেকেন্দ্রিক তৎপরতা তাঁর বেশি। ঈদের দিন তিনি নিজ এলাকায় শহীদ পরিবারগুলোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম দৌলতপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত কুষ্টিয়া-১ আসনে প্রার্থী হতে চান। সেই লক্ষ্যে এলাকার মানুষের সঙ্গে সংযোগ বাড়াচ্ছেন তিনি। ঈদেও এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাঁকে দেখা যেতে পারে।
দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায় দিরাই ও শাল্লা উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। সেই লক্ষ্যে এলাকায় সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি রাখছেন নিয়মিত যোগাযোগ।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহাদী সরাইল ও আশুগঞ্জ নিয়ে গঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী। তিনি ইসলামী ঐক্যজোটের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর দৌহিত্র। মুফতি আমিনী ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। সেই আসন থেকে এনসিপির হয়ে নির্বাচন করতে চাইছেন তাঁর দৌহিত্র।
মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-১ সংসদীয় আসনে এনসিপির প্রার্থী হতে চান এনসিপির উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক অলিক মৃ। তিনিও এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলা নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ-৫ আসন থেকে এনসিপির হয়ে নির্বাচন করতে চান মাহিন সরকার। এনসিপির এই যুগ্ম সদস্যসচিব নিজের এলাকায় ইফতারসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।
বাঁশখালী উপজেলা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১৬ আসন থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মীর আরশাদুল হক। সেই লক্ষ্যে বাঁশখালীতে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন তিনি। সর্বশেষ ২৬ মার্চ তিনি বাঁশখালীতে এক ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ঈদেও বাঁশখালীর মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন এই নেতা।
মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-১ সংসদীয় আসনে এনসিপির প্রার্থী হতে চান এনসিপির উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক অলিক মৃ। তিনিও এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার চিন্তা
এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই পছন্দের নির্বাচনী আসনকেন্দ্রিক যোগাযোগ ও তৎপরতা শুরু করেছেন। আগামী নির্বাচন জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নাকি গণপরিষদ নির্বাচন; নাকি এই দুই নির্বাচন একসঙ্গে হবে—রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন আলোচনা তৈরি করেছে এনসিপি। কিন্তু এর মধ্যেই দলটির নেতারা ভোটকেন্দ্রিক তৎপরতা শুরু করেছেন। যে নির্বাচনই হোক, সেটিতেই তাঁরা অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এনসিপির দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, ‘সেকেন্ড রিপাবলিকের’ (দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র) মতো বিভিন্ন তাত্ত্বিক বিষয়কে সামনে রাখা হলেও এনসিপি এখন ইসিতে নিবন্ধিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক দলীয় কার্যালয় স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছে। রমজান মাসে ইফতার অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক তৎপরতায় ছিলেন দলের নেতা-কর্মীরা। তবে দল গোছাতে এনসিপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা মাঠপর্যায়ে যোগাযোগও শুরু করেছেন। ঈদুল ফিতরের পর পুরোদমে দল গোছানোর কাজ শুরু হবে।
দলের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা বলেন, এনসিপি দলীয়ভাবে এখনো নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেনি। কিন্তু বিএনপিসহ বিভিন্ন দল নির্বাচনের বিষয়টিকে জোরেশোরে সামনে নিয়ে আসায় এনসিপির অনেকের মধ্যে নির্বাচনী আমেজ লেগেছে।
আমরা চাইব, যেকোনোভাবেই হোক ৩০০ আসনেই যেন আমাদের একটা অবস্থান প্রকাশ করা যায়, যাতে এনসিপির নাম প্রত্যেক এলাকায় পৌঁছে যায়।এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিননির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের আসনকেন্দ্রিক সংযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন এনসিপির আরও অনেক নেতা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতা আতিক মুজাহিদ (কুড়িগ্রাম), প্রীতম দাশ (মৌলভীবাজার), আবদুল্লাহ আল আমিন (নারায়ণগঞ্জ), হাসান আলী (চট্টগ্রাম), অর্পিতা শ্যামা দেব (সিলেট), মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন (পটুয়াখালী), ভীম্পাল্লী ডেভিড রাজু (খুলনা), কৈলাস চন্দ্র রবিদাস (নওগাঁ), এহতেশাম হক (সিলেট), সাইফুল্লাহ হায়দার (টাঙ্গাইল), মাহমুদা আলম মিতু (বরিশাল), মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান (চুয়াডাঙ্গা), জয়নাল আবেদীন শিশির (কুমিল্লা), আবদুল্লাহ আল মামুন ফয়সাল (ভোলা), আরিফুর রহমান তুহিন (ঝালকাঠি), মোহাম্মদ আতাউল্লাহসহ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) অনেকেই।
শুধু জয়-পরাজয় নয়, তরুণদের নির্বাচনী অভিজ্ঞতা এবং এলাকায় পরিচিতি অর্জনের জন্য হলেও সব আসনে এনসিপি প্রার্থী দেওয়ার চিন্তা করছে বলে জানান এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের আরেকজন নেতা। তিনি বলেন, ঈদে এ ব্যাপারে অনেকেরই তৎপরতা থাকবে। ঈদের পর থেকে সক্রিয়তা আরও বাড়তে পারে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাইব, যেকোনোভাবেই হোক ৩০০ আসনেই যেন আমাদের একটা অবস্থান প্রকাশ করা যায়, যাতে এনসিপির নাম প্রত্যেক এলাকায় পৌঁছে যায়।’ তবে এনসিপি এখনো গণপরিষদ নির্বাচন চাইছে বলে জানান তিনি।