বয়ঃসন্ধি একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে শিশুর শরীরে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরের লক্ষণ দেখা দেয় এবং সে প্রজননে সক্ষমতা লাভ করে। শিশু স্বাভাবিক নিয়মে বড় না হয়ে সময়ের আগে পূর্ণতা পেলে তার নাম প্রিকোসিয়াস পিউবার্টি অথবা অকাল বয়ঃসন্ধি। এটি এক ধরনের শারীরিক সমস্যা।
বয়ঃসন্ধি শুরু হয় মস্তিষ্ক থেকে গোনাডে (ছেলেদের ক্ষেত্রে শুক্রাণু, মেয়েদের ক্ষেত্রে ডিম্বাশয়) সংকেত যাওয়ার মাধ্যমে। এ সংকেত এস্ট্রাডিওল গেলে হরমোন উৎপাদন শুরু হয়। এ হরমোনের প্রভাবে বয়ঃসন্ধির লক্ষণ প্রকাশ পায়। সাধারণত মেয়েশিশুর ক্ষেত্রে ৯ বছর বয়সে আর ছেলেশিশুর ১১ বছর বয়সে এ পরিবর্তন দেখা দেয়।
মেয়েশিশুর বেলায় ৮ বছরের আগে আর ছেলেশিশুর ৯ বছরের আগে বয়ঃসন্ধির লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের প্রিকোসিয়াস পিউবার্টি বেশি দেখা যায়।
কারণ কী?
অকাল বয়ঃসন্ধির দুটি ভাগ আছে– সেন্ট্রাল আর পেরিফেরাল। সেন্ট্রাল বয়ঃসন্ধির কারণে অকাল সংকেত প্রদান, যা মস্তিষ্ক থেকে গোনাডে গিয়ে হরমোন তৈরি করে।
পেরিফেরাল বয়ঃসন্ধির কারণে যৌনগ্রন্থির (অণ্ডকোষ বা ডিম্বাশয়) টিউমার, থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা বা অ্যাডরেনাল গ্রন্থির সমস্যা হয়।
অকাল বয়ঃসন্ধির ৭৫ শতাংশ সেন্ট্রাল আর ২৫ শতাংশই পেরিফেরাল। কারও কারও ক্ষেত্রে আংশিক বয়ঃসন্ধি দেখা যেতে পারে। লক্ষণগুলো কোন গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা মা-বাবাকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। একই সঙ্গে তীব্র মাথাব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, বমি ভাব আছে কিনা সেদিকে নজর রাখতে হবে।
অকাল বয়ঃসন্ধি কীভাবে শিশুর জন্য সমস্যা হতে পারে?
আপনার সন্তানের আচার-আচরণে সমস্যা দেখা যেতে পারে। সে অল্পতেই রেগে যেতে পারে। পড়ালেখায় মন নাও বসতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত শিশুর যৌন আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যেতে পারে, যা তাদের যৌন নির্যাতনের হুমকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে।
এ ধরনের শিশুর প্রথম দিকে উচ্চতা বৃদ্ধি পেলেও পরবর্তী সময়ে হরমোনের কারণে তাদের হাড়ের বৃদ্ধি কমে যায়, উচ্চতায় খাটো হয়। তাদের ডায়াবেটিস, স্থূলতা, স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। তাই সময় থাকতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সম্প্রতি এ সমস্যা অনেক গুণ বেড়ে গেছে। উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার, প্লাস্টিক প্যাকেটজাত খাবার গ্রহণ করা এবং কীটনাশকযুক্ত খাবার গ্রহণ করা প্রিকোসিয়াস পিউবার্টির জন্য দায়ী হতে পারে। তাই শিশুর খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর রাখুন। বয়ঃসন্ধির সময় তার পাশে থেকে বন্ধুর মতো আচরণ করুন।
লেখক : কনসালট্যান্ট (অবস এবং গাইনি), মনোয়ারা হাসপাতাল (প্রা.
) লিমিটেড ঢাকা।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কুয়েট শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের প্রতিবাদে কুবিতে মানববন্ধন
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ৩৭ জন শিক্ষার্থীর বহিষ্কারের প্রতিবাদে এবং উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) মানববন্ধন করা হয়েছে।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ মানববন্ধন করেন কুবি শিক্ষার্থীরা।
এ সময় গণিত বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হান্নান রহিম বলেন, “কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে যে বহিষ্কার আদেশ দিয়েছে, তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর যে বর্বরোচিত হামলা হয়েছে, তা আমরা সবাই জানি। সেখানে কারা হামলা করেছে, তাও সবার জানা। তারপরও কুয়েটের উপাচার্যের এমন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।”
আরো পড়ুন:
কুবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ
কুবি শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ফ্যাসিবাদমুক্ত নববর্ষ
তিনি আরো বলেন, “কুয়েট কি বাংলাদেশের গাজা? গাজায় যেমন বর্বরোচিত হামলা চলছে, কিন্তু ভুক্তভুগীরা বিচার পাচ্ছে না। ঠিক তেমনি কুয়েটেরও একই অবস্থা। আমরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কুয়েটের শিক্ষার্থীদের পাশে আছি। কুয়েট প্রশাসনের কাছে দাবি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু তদন্ত করে বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে এবং কুয়েটের উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে হবে।”
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবির বলেন, “কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীর দায় স্বীকারের পরো তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো সাধারণ শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা হয়েছে। কুয়েটের উপাচার্যের এমন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমি কুয়েট প্রশাসনের কাছে দাবি জানাবো, এমন বিচারের নামে প্রহসন বন্ধ করুন।”
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জামাল হোসেন রাজু বলেন, “আমরা দেখছি ঢাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যেভাবে ফ্যাসিস্ট আচরণ করছে, কুয়েট উপাচার্য একই আচরণ করছে। আমরা আশা করবো, তিনি তার ফ্যাসিস্ট আচরণ পরিহার করবে। নতুন বাংলাদেশের সঙ্গে মানিয়ে নেবেন, অন্যথায় পদত্যাগ করবেন। আমরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা জানাই।”
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী