জাতিসংঘে রাশিয়ার পাশে যুক্তরাষ্ট্র
Published: 26th, February 2025 GMT
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের তৃতীয় বর্ষপূতিতে জাতিসংঘে ভোটাভুটি হলে তাতে দু’বার রাশিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা কাউন্সিলে রাশিয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে। এর মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান আবারও সামনে এলো। সেই সঙ্গে ট্রাম্প যে তাঁর পূর্বসূরি জো বাইডেনের উল্টো পথে হাঁটছেন, সেটাও পরিষ্কার হলো। ওয়াশিংটনের এ অবস্থানকে সমর্থন জানিয়েছে মস্কো।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ইউক্রেনের অখণ্ডতার সমর্থন ও মস্কোর কার্যক্রমের নিন্দা জানিয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব আনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। যুক্তরাষ্ট্র এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া ও বেলারুশের সঙ্গে ভোট দেয়। পরে আরেকটি প্রস্তাবে মস্কোকে সমর্থন জানায় ওয়াশিংটন। প্রস্তাবটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে উত্থাপন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র উত্থাপিত ওই প্রস্তাবে ইউক্রেনে যুদ্ধের অবসান চাওয়া হলেও সেখানে রাশিয়ার কোনো সমালোচনা ছিল না। এ প্রস্তাবটি নিরাপত্তা কাউন্সিলে পাস হয়েছে। কিন্তু এতে যুক্তরাষ্ট্রের দুই গুরুত্বপূর্ণ মিত্র– যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ভোটদান থেকে বিরত থাকে।
গতকাল মঙ্গলবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এমন সময়ে জাতিসংঘের এসব প্রস্তাব তোলা হয়েছে, যখন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ হোয়াইট হাউস সফর করছেন। আগামী বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারেরও নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা কথা রয়েছে। ট্রাম্প ওভাল অফিসে প্রবেশের পর ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব বেড়েছে। ইউরোপকে পাশ কাটিয়েই মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াচ্ছেন ট্রাম্প।
গত সোমবার ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মার্কিন কূটনীতিক রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে প্রাণহানি নিয়ে শোক প্রকাশ করেন এবং শিগগির যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানান। কিন্তু ইউরোপের কূটনীতিকরা পুরো ঘটনার জন্য রাশিয়াকে দোষারোপ করেন। সাধারণ পরিষদে রাশিয়ার নিন্দা জানিয়ে তাদের তোলা প্রস্তাব ৯৩টি ভোট পায়। বিস্ময়করভাবে যুক্তরাষ্ট্র ভোটদান থেকে বিরত না থেকে বিরোধিতায় ভোট দেয়। রাশিয়া, ইসরায়েল, উত্তর কোরিয়া, সুদান, বেলারুশ, হাঙ্গেরি ও আরও ১১টি দেশের সঙ্গে ভোট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ৬৫ দেশ ভোটদান থেকে বিরত ছিল।
অন্যদিকে, জাতিসংঘের শক্তিশালী ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা কাউন্সিলে ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্রের তোলা শিরোনামহীন প্রস্তাবের পক্ষে ১০টি ভোট পড়ে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, গ্রিস ও স্লোভানিয়া ভোটদান থেকে বিরত থাকে। জাতিসংঘে মার্কিন দূত ডরোথি ক্যামিলে শিয়া এ প্রস্তাবকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে বর্ণনা করেছেন। রুশ বার্তা সংস্থা তাস জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘে রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভ্যাসিলি বেবেনজিয়া। তিনি বলেন, এটাকে সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে অধিকতর চেষ্টার সূচনা হিসেবে দেখছে রাশিয়া।
এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার দখলকৃত এলাকায় মূল্যবান খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রবেশের অনুমোদন দিতে তিনি সম্মত। এমন এক সময় পুতিন এ প্রস্তাব দিলেন, যখন ইউক্রেনকে সমর্থন জানানোর জন্য ট্রাম্প কিয়েভের কাছে কিছু খনিজ পদার্থ নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। ইউক্রেনের এক মন্ত্রী জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে।
ফক্স নিউজ জানায়, চলমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সফররত ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে একটি চুক্তি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই হতে পারে। হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলাপ থেকে তিনি এ তথ্য জানান। তবে মাখোঁ এও বলেছেন, তিনি আরও ৩০ জন ইউরোপীয় নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন, যারা ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চেয়েছেন। সংঘাত বন্ধে শান্তি প্রতিষ্ঠা মানে ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ করা নয়– বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র বল ছ ন ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
হালাল-হারাম বুঝেশুনে ইবাদত করতে হবে
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভালোবেসে কুল মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন। জিন ও ইনসান বানিয়েছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। (সুরা-৫১ জারিয়াত, আয়াত: ৫৬) মানুষকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন খেলাফতের দায়িত্ব দিয়ে। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৩০) যাঁরা সে দায়িত্ব সঠিকভাবে প্রতিপালন করবেন, তাঁদের সম্মানিত করা হবে বেলায়াত বা বন্ধুত্বের মর্যাদায়। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৫৭)
এ কারণে সব কাজে আল্লাহর নির্দেশ তথা মাকাসিদুশ শরিয়াহ ও নবীজি (সা.)-এর সুন্নাহ তথা আদর্শ বা দর্শন অনুসরণ করতে হবে। তাই আমরা সব কাজের শুরুতে বলি, ‘পরম করুণাময় অতীব দয়ালু আল্লাহর নামে।’ (সুরা-২৭ নমল, আয়াত: ৩০)
আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দেন, প্রতিটি আহ্বানে সাড়া দেন, সব আবেদন মঞ্জুর করেন, সব দোয়া কবুল করেন। (মিশকাত শরিফ)
আমরা সুরা ফাতিহায় যখন বলি, ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’ (সকল প্রশংসা বিশ্বজগতের রব আল্লাহর জন্য)। তখন আল্লাহ তাআলা জবাব দেন, ‘হামিদানি আবদি’ (আমার বান্দা আমার প্রশংসা করল)। আমরা যখন বলি, ‘আর রাহমানির রাহিম’ (তিনি পরম করুণাময় অসীম দয়ালু), তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আছনা আলাইয়া আবদি’ (আমার বান্দা আমার বিশেষ প্রশংসা করল)। আমরা যখন বলি, ‘মালিকি ইয়াওমিদ্দিন’ (তিনি বিচারদিনের মালিক)। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মাজ্জাদানি আবদি’ (আমার বান্দা আমাকে সম্মানিত করল)। যখন আমরা বলি, ‘ইয়াকা নাবুদু ওয়া ইয়াকা নাস্তাইন’ (শুধু আপনারই ইবাদত করি আর শুধু আপনার কাছেই সাহায্য চাই)। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হাজা বাইনি ওয়া বাইনা আবদি’ (এই সিদ্ধান্তই ফয়সালা হলো আমার ও আমার বান্দার মাঝে—বান্দা আমার ইবাদত ও আনুগত্য করবে, আমি তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করব)। আমরা যখন বলি, ‘ইহদিনাস সিরাতল মুস্তাকিম, সিরাতাল্লাজিনা আনআমতা আলাইহিম, গয়রিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়া লাদ-দললিন!’ (আমাদের সঠিক পথ দেখান, তাদের পথ, যাদের আপনি নিয়ামত দিয়েছেন, তাদের পথ নয়, যারা অভিশপ্ত [ইহুদি]; আর যারা পথভ্রষ্ট [খ্রিষ্টান])। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘লিআবদি মা ছাআল’ (আমার বান্দা যা চায়, তার জন্য তা-ই)। (মুসলিম শরিফ: ৭৬৪ [আ. ন. ৩৯৫])
আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য ইবাদত ও সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করতে হবে। কোরআন মজিদের ঘোষণা, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য করো, আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের অবস্থান দৃঢ় করবেন।’ (সুরা-৪৭ মুহাম্মদ, আয়াত: ৭)
‘যদি কোনো সম্প্রদায় নিজের অবস্থার পরিবর্তন না করে, তবে আল্লাহ এমন নন যে তিনি তাদের পরিবর্তন করবেন; এবং নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা-৮ আনফাল, আয়াত: ৫৩) ‘এবং আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে।’ (সুরা-১৩ রাআদ, আয়াত: ১১)
‘হালাল’ অর্থ বৈধ, ‘হারাম’ অর্থ অবৈধ। যা নিষিদ্ধ, তা হারাম, যা নিষিদ্ধ নয়, তা হালাল। সুতরাং কোনো কিছু হালাল বা বৈধ হওয়ার জন্য সুস্পষ্ট বর্ণনা প্রয়োজন নেই; কিন্তু হারাম বা অবৈধ হওয়ার জন্য সুস্পষ্ট বিবরণ থাকতে হবে।
কোরআন কারিমে আদেশ ও নিষেধসংক্রান্ত পাঁচ শ আয়াত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হালাল সুস্পষ্ট, হারামও সুস্পষ্ট।’ (বুখারি: ১৪৭) তবে উপকারী, কল্যাণমূলক ও ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টিকারী কাজ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যারা ইসলামে কোনো উত্তম প্রথার প্রচলন বা প্রবর্তন করল, তাদের জন্য তার সওয়াব রয়েছে এবং যারা পরবর্তীকালে এর ওপর আমল করবে তার সওয়াবও পাবে; কিন্তু আমলকারীর সওয়াব কমানো হবে না। আর যারা ইসলামে কোনো মন্দ বিষয় প্রচলন বা প্রবর্তন করবে, তারা তার বিনিময় পাবে পরবর্তীকালে যারা এই পথে চলবে, তার বিনিময়ও পাবে; কিন্তু আমলকারীর প্রতিদান কমানো হবে না।’ (সহিহ্ মুসলিম)
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]