ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘে রাশিয়ার পক্ষ নিলো যুক্তরাষ্ট্র
Published: 25th, February 2025 GMT
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের তৃতীয় বার্ষিকীতে জাতিসংঘে ভোটে দুবার রাশিয়ার পক্ষ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যা ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান পরিবর্তনকে তুলে ধরে।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মস্কোর আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে এবং ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সমর্থন করে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ইউরোপীয়-খসড়া প্রস্তাব দেয়া হয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া এর বিরোধিতা করে। যদিও প্রস্তাবটি পাস হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ফ্রান্সে রাশিয়ার কনস্যুলেটে ককটেল হামলা
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শেষ হতে পারে এই সপ্তাহে: হোয়াইট হাউজ
এরপর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দ্বিতীয় প্রস্তাবটি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনে সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়ে মার্কিন-খসড়া প্রস্তাবটি দেয়া হয়। কিন্তু সেখানে রাশিয়ার কোনো সমালোচনা করা হয়নি। এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ওয়াশিংটন ও মস্কো।
তবে প্রস্তাবটি পাস হলেও যুক্তরাষ্ট্রের দুই ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স শব্দ সংশোধনের আহ্বান জানান। তাতে ভেটো দিলে তারা ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে।
যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করতে হোয়াইট হাউজে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর বৈঠক করার সময়টাতে জাতিসংঘে এই প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করা হয়।
আগামী বৃহস্পতিবার, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারও ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।
সোমবার ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ইউক্রেন ইস্যুতে ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই মতভেদ প্রকাশ্যে আসে যখন মার্কিন কূটনীতিকরা ‘রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের’ সময় প্রাণহানির জন্য শোক প্রকাশ করেন এবং এর দ্রুত অবসানের আহ্বান জানিয়ে তাদের সংক্ষিপ্ত প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন।
ইউরোপীয় কূটনীতিকরা রাশিয়াকে তার পূর্ণাঙ্গ আক্রমণের জন্য দায়ী করে এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সমর্থন করে আরো বিস্তারিত একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
ইউক্রেনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিয়ানা বেতসা বলেন, “আমাদের পুনরায় নিশ্চিত করতে হবে যে, আগ্রাসনকে পুরস্কৃত নয় বরং নিন্দা ও অসম্মান করা উচিত।”
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সদস্যরা ইউরোপীয় প্রস্তাবটিকে ৯৩ ভোটে অনুমোদন করে। তবে বিরল ঘটনা হলো, যুক্তরাষ্ট্র এবার ভোটদানে বিরত থাকেনি বরং সরাসরি এর বিপক্ষে ভোট দেয়।
এছাড়া, রাশিয়া, ইসরাইল, উত্তর কোরিয়া, সুদান, বেলারুশ, হাঙ্গেরি এবং আরও ১১টি রাষ্ট্র এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। ৬৫টি দেশ ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে।
সাধারণ পরিষদে মার্কিন প্রস্তাবটিও পাস হয়। যখন ইউক্রেনকে সমর্থন করে ভাষা সংশোধন করা হয়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভোটদান থেকে বিরত থাকে।
অন্যদিকে, ১৫ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘের শক্তিশালী নিরাপত্তা পরিষদে অসংশোধিত মার্কিন প্রস্তাবটি ১০ ভোটে গৃহীত হয়। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, গ্রীস ও স্লোভেনিয়া ভোটদানে বিরত থাকে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, কথিত ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এতটা মতবিরোধের ঘটনা বিরল।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউক র ন ইউক র ন র ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন সন্তানদের
‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।
পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।
এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী ভুবন চাকমার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হলেও তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।