পাঁচ ফটোসাংবাদিকের বয়ানে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের গল্প
Published: 25th, February 2025 GMT
রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেনে সর্বাত্মক অভিযান শুরু করার পর গত তিন বছরে শত শত আলোকচিত্রী সম্মুখ যুদ্ধক্ষেত্র ও অসামরিক বিভিন্ন এলাকা ঘুরে যুদ্ধের মানবিক প্রভাবের চিত্র ধারণ এবং সংরক্ষণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির পর থেকে বিবিসিতে প্রকাশিত নিজেদের বিভিন্ন ছবির পেছনের গল্প শুনিয়েছেন।
ভ্লাদা ও কোস্টিয়ানটিন লিবেরভইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে ভ্লাদা ও কোস্টিয়ানটিন লিবেরভ কৃষ্ণসাগরীয় বন্দরনগরী ওডেসায় প্রতিকৃতি এবং বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি তুলতেন। ভ্লাদা জানান, অল্প সময়ের মধ্যে তাঁরা প্রেমের গল্পের বদলে ক্যামেরার ফ্রেমে রাশিয়ার ‘যুদ্ধাপরাধের’ দৃশ্য ধারণ করতে শুরু করেন। তিনি শুরু থেকেই তাঁর কাজের ঝুঁকি সম্পর্কে জানতেন। ২০২৩ সালে দোনেৎস্ক অঞ্চলে ভ্রমণের সময় এক বিস্ফোরণে তাঁর শরীরে বোমার কিছু টুকরা ঢুকে যায়। এসব টুকরা বের করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত জানান চিকিৎসকেরা।
২০২৪ সালের গ্রীষ্মে কোস্টিয়ানটিন লিবেরভের তোলা একটি শক্তিশালী ছবি বিবিসিতে প্রকাশিত হয়েছিল। রাশিয়ার কুরস্ক সীমান্তে ইউক্রেনের হামলাসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছিল। এতে দেখা যায়, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফেরার পর নিহত সহকর্মীর শোকে ভেঙে পড়েছেন এক ইউক্রেনীয় সেনাসদস্য। তাঁকে জড়িয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছেন তাঁর আরেক সহকর্মী।
লিবেরভের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে দেশটির সামরিক বাহিনীর মধ্যকার কিছু বিভ্রান্তির প্রতিফলন ঘটিয়েছে ছবিটি। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনে আমাদের দেশকে রক্ষা করার চেয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে আক্রমণ চালাতে গিয়ে নিজের বন্ধুকে হারানো খুবই কঠিন। আমি এ ছবিটি তুলেছি কারণ, ঘটনাটি আমার ওপর আবেগঘন প্রভাব ফেলেছিল। যুদ্ধের পরিস্থিতি এবং এটি তাঁদের জন্য কতটা কঠিন ছিল, সে ব্যাপারে অনেক কথা বলে ছবিটি।’
এ ছবি স্থানীয় ফটোসাংবাদিকদের ওপরও প্রভাব ফেলেছে। ভ্লাদা বলেন, ‘এটি এতটাই বেদনাদায়ক যে আমরা সহকর্মীরা এ নিয়ে খুব বেশি আলোচনা করি না। আমরা খুব কঠিন পরিস্থিতিতে আছি। কেউ বুঝতে পারছি না, এর সমাধান কী হতে পারে।’
২০২৩ সালে ভ্লাদার তোলা একটি ছবিতে দেখা যায়, আভদিভকা অঞ্চলে রুশ বাহিনী ঢুকে পড়ার আগে শহরটি ছেড়ে যাওয়ার জন্য সেখানকার অবশিষ্ট বাসিন্দাদের একজনকে রাজি করানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছেন ইউক্রেনের হোয়াইট অ্যাঞ্জেলস পুলিশ ইউনিটের এক সদস্য।
আলেকজান্ডার এরমোশেঙ্কোর তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রুশ যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষেপ করা বোমায় ধ্বংস হয়ে গেছে ইউক্রেনের মারিওপোল থিয়েটার.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় আর কত জিম্মি রয়ে গেছেন, কজন জীবিত
যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় গত শনিবার গাজা থেকে আরও ছয় ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণ অঞ্চলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে আড়াই শতাধিক মানুষকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গিয়েছিল।
ওই জিম্মিদের অনেকেই যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় মুক্তি পেয়েছেন। কেউ কেউ গাজায় মারা গেছেন। কয়েকটি মৃতদেহ ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া জিম্মিদের কতজন মুক্তি পেয়েছেন, কতজন মারা গেছেন এবং আর কত জিম্মি এখনো জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে তার একটি হিসাব দিয়েছে আল-জাজিরা।
আল-জাজিরার হিসাব অনুযায়ী সেদিন ইসরায়েল থেকে ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। জিম্মিদের মধ্যে ইসরায়েলি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, নেপালসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিকেরা ছিলেন।
আল-জাজিরা বলেছে, যুদ্ধবিরতির মধ্যে বন্দিবিনিময় এবং অন্যান্য চুক্তির মাধ্যমে ১৩৮ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস।
তার মধ্যে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে সাত দিনের একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি চলে। সে সময় হামাস ১০৫ থেকে ১০৭ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়।
গত বৃহস্পতিবার চার জিম্মির মৃতদেহ ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে হামাস।
গাজা অভিযান চালানোর সময় ইসরায়েলি সেনারা ৪০ জিম্মির মৃতদেহ উদ্ধার করেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ গাজায় ইসরায়েলের অভিযানের সময় ইসরায়েলি সেনাদের হাতে নিহত হন। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী-আইডিএফ তাদের সেই ‘ভুলবশত’ হামলার কথা স্বীকার করেছে।
আরও পড়ুনছয় জিম্মিকে ফেরত পেয়েও ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দিলেন না নেতানিয়াহু৯ ঘণ্টা আগেহামাস দাবি করেছে, গাজায় যেসব জিম্মি নিহত হয়েছেন তাদের বেশির ভাগই ইসরায়েলি হামলার মধ্যে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
গাজায় আরও ৬১ জন জিম্মি থাকার কথা। এই ৬১ জিম্মির মধ্যে ৩১ জনকে মৃত ঘোষণা করেছে ইসরায়েল।
গাজায় অভিযানের সময় ইসরায়েলি সেনারা আট জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করে।
আল–জাজিরার খবরে আরও বলা হয়েছে, গাজায় এখনো যে কজন জিম্মি রয়েছেন তাঁদের মধ্যে পাঁচজন ইসরায়েলের নাগরিক নন। ওই পাঁচজনের মধ্যে তিনজন থাইল্যান্ড, একজন নেপাল এবং একজন তানজানিয়ার নাগরিক। ধারণা করা হয়, জিম্মি থাইল্যান্ডের একজন এবং নেপালের নাগরিক এখনো জীবিত আছেন।
আরও পড়ুনজিম্মিদের একসঙ্গে মুক্তি দিতে ‘রাজি’ হামাস১৭ ঘণ্টা আগেদীর্ঘ প্রায় ১৬ মাস রক্তাক্ত সংঘাতের পর গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় একটি আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপের ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতির সময় ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা হামাসের।
গত শনিবার হামাস ছয় জিম্মিকে মুক্তি দেয়। তাঁরা হলেন এলিয়া কোহেন, ওমের শেম-তোভ, ওমের ওয়েনকার্ট, তাল শোহাম, আভেরা মেনজিসটু ও হিশাম আল-সাইয়েদ। তাঁদের মধ্যে আভেরা ও হিশাম বেসামরিক নাগরিক। এ দুজন প্রায় এক দশক ধরে গাজায় বন্দী ছিলেন।
যুদ্ধবিরতির চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এরই মধ্যে হামাস কয়েকবারে ২৫ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে বলে শনিবার এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুনজিম্মি শিরির মরদেহ কোথায় ছিল, কেন ভুল হয়েছিল, জানাল হামাস৪ ঘণ্টা আগে