রক্তাক্ত ক্যাম্পাসের জীবন্ত আয়না
Published: 25th, February 2025 GMT
‘গণরুমের প্রেমবিলাস’ উপন্যাস পড়তে পড়তে বহুদিন পর আবার যেন হারিয়ে গেলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে। উপন্যাসটির শুরুতে তুহিন-মাহিরার রোমান্টিক কথোপকথন আমাকে ক্রমে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল গল্পের গভীরে। দু’জনের জীবনঘনিষ্ঠ আলাপে কৃত্রিমতার ছাপ না থাকায় সবকিছু মনে হচ্ছিল বাস্তব। আর এখানেই লুকিয়ে আছে তরুণ কথাসাহিত্যিক রেজাউল ইসলামের মুন্সিয়ানা।
লেখকের সৃষ্ট তুহিন-মাহিরা জুটির অনবদ্য ও অকৃত্রিম কথোপকথন পড়ে আমি যেন ক্ষণিকের জন্য আবার ফিরে গিয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ, উন্মুক্ত সবুজ চত্বর, শাহবাগ থেকে কলাভবন আর নীলক্ষেতের ব্যস্ত সড়কে।
এই রোমান্টিসিজমের আনন্দযাত্রা আস্তে আস্তে বিষাদে রূপান্তরিত হতে থাকে। তুহিন ও তার সহপাঠী হাসান ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল জীবনের করুণ কাহিনিগুলো বর্ণনা করতে থাকে। আসলে এটি বিষাদে ভরপুর একটি রাজনৈতিক আলেখ্য। কারণ, এই উপন্যাসের প্রধান বিষয়বস্তু হচ্ছে বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে যুগ যুগ ধরে চলে আসা লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির অশুভ চরিত্র। লেখক এখানে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতন-নিপীড়নের একটি সামগ্রিক চিত্র আঁকার চেষ্টা করেছেন।
ক্ষমতাসীন শক্তির ছাত্র সংগঠনের নেতাদের তৈরি ‘গণরুম’, ‘গেস্টরুম’ ও টর্চারসেলের অব্যক্ত ও নিষিদ্ধ গল্পগুলোকে জনসম্মুখে আনতে ঔপন্যাসিক এই পটভূমি নির্মাণ করেছেন। নিষিদ্ধ গল্প এ জন্য বলছি, এ দেশের সাহিত্য অঙ্গনে এ ধরনের স্পর্শকাতর রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে কেউ চর্চা করার সাহস দেখাননি। নির্যাতনের হুবহু বর্ণনা তুলে ধরতে তিনি এই বইয়ে ছাত্রনেতাদের মুখের অশালীন শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা হয়তো সাহিত্যের মানদণ্ডে উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয় না। একটি ঘটনার অবিকৃত ও অবিকল চিত্র অঙ্কন করতে এ ধরনের শব্দ সহনীয় বলে মনে করি।
এ বইয়ের যত গভীরে আমি ঢুকেছি, ততই আমার ড.
বইটি পুরোপুরি পড়ে আমার কাছে মনে হয়েছে, এর শক্তির জায়গা আছে। ঘটনার নিখুঁত বর্ণনা, সঠিক শব্দচয়ন, প্রাণবন্ত ও বুদ্ধিদীপ্ত কথোপকথন, গল্পের প্রবহমানতা, নাটকীয় শুরু ও সমাপ্তি– আমাকে চমৎকৃত করেছে। সব কিছুর পরেও উপন্যাসের প্রধান চরিত্রগুলো অপূর্ণাঙ্গ মনে হয়েছে। এই চরিত্রগুলোকে আরও নিখুঁত ও বৃহৎ পরিসরে ফুটিয়ে তোলার অবকাশ ছিল। এ ছাড়া এই উপন্যাসের প্রধান নারী চরিত্র মাহিরার নামের প্রতি সেভাবে সুবিচার করা হয়নি, যেভাবে করার কথা ছিল। উপন্যাসটির হাসান-নবনীতা জুটির অপূর্ণাঙ্গ চরিত্র চিত্রায়ণও এটির সাহিত্যগুণ কিছুটা ম্লান করে দিয়েছে। সার্বিক বিচারে আমার কাছে মনে হয়েছে, বইটি পাঠকের হৃদয়ে তার মুখ্য বার্তাটি খুব সূক্ষ্মভাবে পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে। আমি উপন্যাসটির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করছি।
গণরুমের প্রেমবিলাস
রেজাউল ইসলাম, রূপসী বাংলা
ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২০ পৃষ্ঠা, ২৮০ টাকা
জামির হোসেন, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সময় টেলিভিশন
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বইম ল উপন য স র র জন ত গণর ম
এছাড়াও পড়ুন:
জিনদের আহার্য
মহানবী (সা.) একবার তার সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.)-কে বললেন কিছু পাথর নিয়ে আসতে। তবে হাড় বা গোবর আনতে নিষেধ করলেন। আবু হুরায়রা (রা.) কাপড়ে করে কিছু পাথর এনে সেগুলো নবীজি (সা.)-এর পাশে রেখে চলে গেলেন। নবীজি (সা.) কাজ সেরে ফিরে আসার পর আবু হুরাইরা জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসুল, হাড় ও গোবরে সমস্যা কী? তিনি উত্তরে বললেন, সেগুলো জিনদের খাবার। নাসিবিন শহরে (সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যে আলজাযিরার একটি নগরী) জিনদের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। তারা সবাই খুব ভালো জিন। আমার কাছে খাবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। আমি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য দোয়া করি। তাই তারা যে হাড় বা গোবরের পাশ দিয়ে যাবে, তাতেই নিজেদের জন্য খাবার খুঁজে পাবে। (বুখারি, হাদিস: ৩,৫৭৮)
আরও পড়ুনইবলিস কি জিন নাকি ফেরেশতা১৬ মার্চ ২০২৫তাই কেউ যদি বিসমিল্লাহ বলে খাবার খায় এবং হাড় থেকে মাংস খাওয়ার পর নাপাক স্থানে না ফেলে, মুমিন জিনেরা সেই হাড় হাতে নিলে তাতে গোশত ফিরে আসবে। (তিরমিজি, হাদিস: ৩,২৫৮)
আর দুষ্ট জিন ও শয়তানরা খায় এমন খাবার, যাতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয় না। যেসব খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হয়, সেগুলো তারা ছুঁয়েও দেখে না।
গোবরে জিনদের পশুদের জন্য খাবার জমা হয়। তার মানে জিনদের পোষা প্রাণী আছে এবং তারা তাতে আরোহণ করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘গোবর বা হাড় নাপাকি পরিষ্কারের কাজে ব্যবহার করো না। কারণ এগুলো তোমাদের ভাই জিনদের খাবার।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৮)
আরও পড়ুনকোরআন শুনে একদল জিন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন০৬ আগস্ট ২০২৩