Samakal:
2025-04-18@00:08:18 GMT

পুতিন টেস্ট খেলছেন, আমরা টি২০

Published: 24th, February 2025 GMT

পুতিন টেস্ট খেলছেন, আমরা টি২০

আমার একজন বন্ধু আছেন। তিনি আমেরিকান লেখক। যুদ্ধ বিষয়ে লেখেন। গত কয়েক দশক ধরে তিনি দক্ষিণ সুদান, রুয়ান্ডা, কঙ্গো, আফগানিস্তান, ইরাক, গাজা ও অন্যান্য সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল সফর করেছেন। ইউক্রেনের ব্যাপারে তিনি বলেছিলেন, একটি বিষয় পরিষ্কার– এই যুদ্ধে কারা আক্রমণকারী এবং কারা ঘটনার শিকার। বসনিয়ার পাশাপাশি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতিরোধ এখনও চলছে। তাঁর মতে, এই প্রতিরোধ দুটি সত্যিকারের ন্যায়সংগত যুদ্ধের একটি। পুতিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ন্যায্য যুদ্ধের তিন বছর পর আমরা এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখোমুখি হচ্ছি। অন্যায্য শান্তিচুক্তি হবে। ইউক্রেন জমি হারাবে এবং তার জন্য ক্ষতিপূরণ পাবে না। যুদ্ধাপরাধের শাস্তি হবে না এবং ইউক্রেনীয়দের ভবিষ্যৎ রাশিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার গ্যারান্টিও পাওয়া যাবে না। 

এটি নতুন বিষয় নয়। ২০০৮ সালের রাশিয়ান-জর্জিয়ান যুদ্ধের কথা চিন্তা করুন। রাশিয়া প্রতিবেশী জর্জিয়া আক্রমণ করেছিল, তবুও তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি রাশিয়াকে সন্তুষ্ট করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন এবং জর্জিয়াকে একটি অপমানজনক শাস্তিতে বাধ্য করেছিলেন। সে সময় ফ্রান্স ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতির দায়িত্বে ছিল।
জর্জিয়ার বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের আরেকটি পরিণতি রয়েছে, যা কম পরিচিত। রাশিয়ার বিজয়ের পর ভ্লাদিমির পুতিন পরবর্তীকালে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। জর্জিয়ায় রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতি পশ্চিমা প্রতিক্রিয়া ছিল দুর্বল। এমন অবস্থানে পুতিন বিশ্বাস করেছে– এটি ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও একই রকম প্রতিক্রিয়া দেখাবে। জর্জিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর যুদ্ধ যেমন ২০০৩ সালের পশ্চিমাপন্থি বিপ্লবের প্রতিক্রিয়া ছিল, ইউক্রেনকে ২০০৪ সালের কমলা বিপ্লবের জন্য ‘শাস্তি’ পেতে হয়েছিল, যা ইউক্রেনকে রাশিয়ার কক্ষপথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। পুতিনের পরিকল্পনা ফাঁস হয়েছিল এবং ২০০৯ সালে দুই শীর্ষস্থানীয় ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের এক পত্রিকার নিবন্ধে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ পেয়েছিল। কিন্তু সেই সময় এটি এতই দুর্দান্ত ছিল, খুব কম লোকই কাজটির কৃতিত্ব দিয়েছে।

২০১০ সালে যখন রাশিয়াপন্থি ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতায় আসেন, তখন পুতিনের ভাগ্যে যা-ই হোক না কেন ইউক্রেনকে রেহাই দেওয়া হয়েছিল। ২০১৩ সালে ইয়ানুকোভিচ আশ্চর্যজনকভাবে ইউরোপীয় একত্রীকরণের দিকে ইউক্রেনের যাত্রা সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু যখন সেই বছর ইইউর সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি স্বাক্ষরের কথা আসে, তখন তৎক্ষণাৎ মুখ পাল্টিয়ে প্রক্রিয়াটি বন্ধ করে দেন। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর হঠাৎ তাঁর মনের পরিবর্তন ঘটে। দেশটি পশ্চিমমুখী আন্দোলন অব্যাহত রাখলে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার হুমকি দিয়ে পুতিন ইয়ানুকোভিচকে বাধ্য করেছিলেন বলে জল্পনা ছিল। ইইউ চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে ইয়ানুকোভিচের একতরফা অস্বীকৃতি ২০১৩ সালের নভেম্বরে কিয়েভে শুরু হওয়া বিক্ষোভের একটি নতুন তরঙ্গের সূত্রপাত করে। তা শেষ পর্যন্ত ইউরোমাইদান বিপ্লব হিসেবে পরিচিত হয়।

ইউক্রেনের গৃহযুদ্ধের পরিবর্তে পুতিন দনবাসে একটি কম তীব্রতর যুদ্ধ বাধিয়েছিলেন, যেখানে তিনি জিততে পারেননি। তবুও তিনি জানতেন কীভাবে অপেক্ষা করতে হয়। পুতিনকে যারা ভালো করে চেনেন তারা বলছেন, তিনি যে দর্শনে জীবনযাপন করেন তা জুডো বা জাপানি কুস্তির মতোই, যে খেলা তিনি তাঁর যৌবন থেকে অনুশীলন করছেন। কুস্তিতে আপনি আপনার প্রতিপক্ষের কাছাকাছি থাকেন এবং যতক্ষণ না তারা হাল ছেড়ে দেয় ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের ঠেকিয়ে রাখতে হয়। ২০১৪ সালে লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও পুতিন থেমে যাননি। ২০২২ সালের পূর্ণ মাত্রার আক্রমণের মধ্য দিয়ে সেটি নিশ্চিত হয়। সম্ভবত মানুষের স্বভাব হলো, হুমকি বাস্তবে পরিণত হলেই তারা সংঘবদ্ধ হয়। 

ইয়ারোস্লাভ রিতসাক: ইতিহাসবিদ ও লিভের ইউক্রেনিয়ান
ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক; দ্য গার্ডিয়ান থেকে
সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র কর ছ ল ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন সন্তানদের

‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।

পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। 

অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।

এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে। 

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী ভুবন চাকমার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হলেও তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।

ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ