ট্রাম্পের মস্কোঘেঁষা নীতি উদ্বেগে ইউরোপ
Published: 24th, February 2025 GMT
দুই পেরিয়ে আজ সোমবার তিন বছরে প্রবেশ করছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ যুদ্ধের চরম মাশুল গুনতে হচ্ছে ইউক্রেনের সাধারণ মানুষকে। অস্তিত্ব রক্ষায় এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কিয়েভ। নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেন নিয়ে নরম সুর থাকলেও সম্প্রতি দেশটির প্রতি ট্রাম্পের কঠোর মনোভাব এবং মস্কোঘেঁষা নীতিতে বাঁকবদল হয়েছে যুদ্ধের। উদ্বেগ দেখা দিয়েছে ইউরোপের দেশগুলোতে।
সিনহুয়া জানায়, ট্রাম্পের ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের প্রচেষ্টাকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতারা। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। এ অবস্থায় ইউক্রেনকে ভরসা দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা আজ সোমবার কিয়েভে যাচ্ছেন।
ট্রাম্পের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে বৈঠক করবেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। বৈঠকে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করবেন তিনি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে এক ফোন কলে স্টারমার একথা বলেন। ইউক্রেনের প্রতি ট্রাম্পের কঠোর মনোভাব এবং মস্কোঘেঁষা নীতি নিয়ে ইউরোপে উদ্বেগের মধ্যে স্টারমারের সঙ্গে ওয়াশিংটনে বসতে চলেছেন ট্রাম্প। সেই বৈঠকের আগে শনিবার জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলার সময় ইউক্রেনের প্রতি ফের দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেছেন স্টারমার। বর্ষপূর্তিতে রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা চাপাবেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি। শনিবার যুদ্ধের তিন বছর পূর্তির আগে দিয়ে লন্ডনের পশ্চিমাংশে রুশ দূতাবাস অভিমুখে ইউক্রেনের সমর্থনে পদযাত্রা করেছে ২ হাজার মানুষ।
এদিকে রুশ সেনাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে তাঁর দেশের সেনারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাশিয়ার ভবিষ্যৎ এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় লড়াই করছে। কিয়েভের বিরুদ্ধে মস্কোর অভিযানের তৃতীয় বার্ষিকীর প্রাক্কালে রোববার এক ভিডিও বার্তায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
অন্যদিকে রোববার এক রাতেই ইউক্রেনে আড়াই শতাধিক ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। তিন বছর আগে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এক দিনে এটাই সর্বোচ্চ ড্রোন হামলার ঘটনা। বছর পূর্তির ঠিক আগে ভয়াবহ এ হামলা হলো। বিবিসি বলছে, ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইগনাট বলেছেন, সমন্বিত এক হামলায় ‘রেকর্ড সংখ্যক’ ২৬৭টি রুশ ড্রোন উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। ব্যাপক ড্রোন হামলায় বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞ দেখা গেছে, ভবনে আগুন লেগেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউক র ন ইউক র ন র ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন সন্তানদের
‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।
পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।
এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী ভুবন চাকমার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হলেও তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।