দেশের চাহিদার ৮০ ভাগ ভোজ্যতেল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এতে ব্যয় হয় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। উচ্চ ফলনশীল সরিষা আবাদ করে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমানোর সম্ভাবনা জাগিয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)। পরমাণু শক্তির ব্যবহার করে বিনা উদ্ভাবন করেছে উচ্চ ফলনশীল সরিষার নতুন জাত ‘বিনা সরিষা-১১’। 
বিনা গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিনা সরিষা-১১ জাতটির পডের (ফল দণ্ড) আকার দেশের অন্যান্য সরিষার জাতের তুলনায় অনেক বড়। স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন এ জাতের সরিষা অধিক ফলন দেয়। মাত্র ৮০ দিনে কৃষক ক্ষেত থেকে ফসল সংগ্রহ করতে পারেন।
বিনা’র গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরণ প্রকল্পের অর্থায়নে ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামে বিনা সরিষা-১১-এর সঙ্গে বারি সরিষা-১৪ এবং স্থানীয় একটি জাতের সরিষার পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করা হয়। এতে দেখা যায়, বিনা-১১ সরিষা প্রতি হেক্টরে ১ হাজার ৯৫০ কেজি ফলন দিয়েছে। বারি সরিষা ফলেছে ১২৫০ কেজি স্থানীয় জাতে ফলন হয়েছে মাত্র ৬শ কেজি। 
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাজীপাড়া গ্রামের কৃষক নান্টু মোল্লা বলেন, ‘আমার জমিতে বিনা সরিষা-১১ ব্যাপক ফলন দিয়েছে। ক্ষেতে শুধু সরিষা আর সরিষা। আমার জীবনে এত সরিষা দেখিনি। আমার ক্ষেতের সরিষা দেখে অনেকেই এ জাতের সরিষা আবাদের আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’ 
বিনা গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.

মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘‘ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণে প্রতি বছর দেশে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার তেল আমদানি করতে হয়। তেল আমদানিতে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়, এতে আমাদের রিজার্ভে চাপ পড়ে। আমরা যদি সচেতন হই, কৃষককে যদি সচেতন করতে পারি এবং মিডিয়া যদি এটিকে ব্যাপক আকারে প্রচার করে। তাহলে নিজেদের উদ্ভাবিত এ জাতে ব্যাপক চাষাবাদের মাধ্যমে তেলের উৎপাদন বাড়াতে পারি। তেলের আমদানিও ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনতে পারি।’’ 
বিনা গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৌরভ অধিকারী বলেন, ‘বিনা সরিষা-১১’ এর ১টি পডে ৪০টি সরিষা দানা ফলেছে। বারি সরিষা-১৪ তে ফলেছে ২০-২৫ টি দানা। স্থানীয় জাতের মধ্যে পাওয়া গেছে মাত্র ১০টি দানা। বিনা সরিষা-১১ জাতের দানা মোটা। এ সরিষায় ৪৪ শতাংশ তেল রয়েছে। ভালো পরিচর্যা করা গেলে এ জাতের সরিষা হেক্টরে ২ দশমিক ১ টন ফলন দিতে সক্ষম। সরিষার এ জাত ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমানোর হাতছানি দিচ্ছে। 
বিনা’র গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. মাহবুবুল আলম তরফদার বলেন, দেশে ভোজ্যতেলের মোট চাহিদার সিংহভাগই আমদানিনির্ভর। দেশে উৎপাদিত তেলের মধ্যে শীর্ষে সরিষা। এছাড়া সয়াবিন, তিল, বাদাম,সূর্যমুখীসহ দু-একটি অপ্রচলিত তেলবীজের চাষ হয় সামান্য। বোরো, আমন চাষের মাঝের সময়ে দেশের বড় অংশ জমি পতিত থাকে। এ পতিত জমি ব্যবহারসহ দেশে তেলবীজের উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানিনির্ভরতা অর্ধেকে আনতে ৩ বছর মেয়াদি রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করছে সরকার। রোডম্যাপ বাস্তবায়নে এর মধ্যে বেশ কিছু তেলজাতীয় 
ফসলের সঙ্গে সরিষার আবাদ ব্যাপকভাবে বাড়ানোর প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। এতে সুফলও মিলতে শুরু করেছে। এ বছর সারাদেশে ব্যাপকভাবে বেড়েছে সরিষার চাষাবাদ। 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপ-পরিচালক আ. কাদের সরদার বলেন, স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন বিনা সরিষা-১১ হেক্টরে ২ টনের বেশি ফলন দেয়। এ সরিষার আবাদ লাভজনক। সরিষা কেটে একই ক্ষেতে বোরো ধান আবাদ করা যায়। এছাড়া দুই ফসলি জমিতে বছরে তিনটি ফসল ফলে। এসব কারণে তেলের ঘাটতি পূরণে এ সরিষা আবাদ সম্প্রসারণ করা হবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত ল র আমদ ন ভ জ যত ল র গ প লগঞ জ ফলন দ য়

এছাড়াও পড়ুন:

নিখোঁজের পরদিন শিশুর মুখ ঝলসানো লাশ উদ্ধার

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা থেকে নিখোঁজের এক দিন পর ৭ বছর বয়সী একটি শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশটির মুখ ঝলসানো ছিল। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে নিজ বাড়ির পাশের এক ভুট্টাখেত থেকে পুলিশ বিবস্ত্র লাশটি উদ্ধার করে।
স্থানীয় লোকজনের ধারণা, দুর্বৃত্তরা শিশুটিকে ধর্ষণ করে পরিচয় গোপন রাখার জন্য তার মুখাবয়ব অ্যাসিড দিয়ে ঝলসে দিয়েছে। শিশুটি স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়ত। তার বাবা প্রবাসী।

বড়াইগ্রাম থানা ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, শিশুটি সোমবার বিকেলে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয়। সারা রাত খোঁজার পরও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। আজ সকালে দিনমজুরেরা মাঠে কাজ করতে গিয়ে বাড়ির থেকে ৩০০ গজ দূরের একটি ভুট্টাখেতে শিশুটির মরদেহ দেখতে পান। খবর পেয়ে স্বজনেরা সেখানে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান জানান, শিশুটির লাশ যেখানে পাওয়া গেছে, সেটা পাবনার চাটমোহর উপজেলার মধ্যে। তাই আইন অনুসারে এ বিষয়ে মামলা চাটমোহর থানায় হবে। তবে দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত ও বিচারের আওতায় আনতে বড়াইগ্রাম থানা–পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। ইতিমধ্যে দুর্বৃত্তদের অনুসন্ধানে পুলিশ মাঠে নেমেছে। হত্যার কারণ বা শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে কি না, তা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ