Samakal:
2025-02-23@03:24:36 GMT

অচল আইসিইউ সচলে মনোযোগ দিন

Published: 22nd, February 2025 GMT

অচল আইসিইউ সচলে মনোযোগ দিন

মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসার জন্য অপরিহার্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র তথা আইসিইউ লইয়া দেশে যাহা চলিতেছে তাহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। সরকারি হাসপাতালে শক্ত তদবির ব্যতীত আইসিইউ বরাদ্দ মিলিতেছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লাগিতেছে ঘুষও। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালে এই সেবার নামে কাটা হইতেছে রোগী ও স্বজনের পকেট। উপরন্তু, সমন্বয়হীনতার কারণে সরকারের কোনো উদ্যোগই কাজে আসিতেছে না। এক কথায় আইসিইউ লইয়া দেশের চিকিৎসা খাতে এক নৈরাজ্য চলিতেছে। শনিবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন বলিতেছে, দেশে আইসিইউর শয্যা আছে সর্বমোট প্রায় বারো শত, যাহার ৭৫ শতাংশই রাজধানী ঢাকায়। উপরন্তু, ৩৪ জেলায় কোনো আইসিইউ নাই। তৈলাক্ত মস্তকে তৈল মর্দন সম্ভবত ইহাকেই বলে। ঢাকায় যেহেতু সরকারের শীর্ষ ও উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ থাকেন, পাশাপাশি আছেন দেশের সর্বাধিক অর্থবিত্তসম্পন্ন মানুষেরা, ওই কথাটি নিশ্চয় সচেতন কাহারও নিকট অপ্রাসঙ্গিক ঠেকিবে না। অন্যদিকে ঢাকাকেন্দ্রিক অতি জরুরি চিকিৎসার এই আয়োজনের কারণে সমগ্র দেশের মানুষকে ছুটিয়া আসিতে হয় রাজধানীর দিকে, যাহার ভোগান্তি ভুক্তভোগী তো বটেই, ন্যূনতম মানবিক অনুভূতিসম্পন্ন মানুষেরও টের পাইবার কথা। অধিকতর দুর্ভাগ্যজনক হইল, ঢাকা মহানগরে ৮২৬টির মধ্যে ৩৮৪টি সরকারি হাসপাতালে, বাকি ৪৪২টি বেসরকারি হাসপাতালে। অর্থাৎ আইসিইউ লইয়া রমরমা বাণিজ্যের বিষয়টিও একেবারে স্পষ্ট। সকলেরই জানা থাকিবার কথা, সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার জন্য পৃথক খরচ দিতে হয় না। অন্যদিকে রাজধানীর মাঝারি মানের একটি বেসরকারি হাসপাতালের দৈনিক আইসিইউ শয্যা ভাড়া ১৫ সহস্র টাকা। চিকিৎসক ফি, ঔষধের দাম এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ যুক্ত হইয়া দিনে স্বাভাবিক খরচ দাঁড়ায় ৩০ হইতে ৩৫ সহস্র টাকা। রোগীর অবস্থা জটিল হইলে এই খরচ লক্ষ টাকাও ছাড়াইয়া যায়। অধিকন্তু, যেই হাসপাতাল যত নামি, তাহার আইসিইউর খরচও ততধিক, যাহা খুব কম রোগীর পরিবারই বহন করিতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত খরচের নিচে চাপা পড়িয়া অনেকে মাঝপথে চিকিৎসা গুটাইয়া লইতে বাধ্য হইয়াছেন, এমন নজিরও কম নাই। কোনো কোনো বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে কখনও কখনও রোগীর মৃত্যু ঘটিবার পরও তাহা স্বজনকে না জানাইয়া আইসিইউতে রাখিয়া ‘বিল বাণিজ্য’ করিবার অভিযোগও রহিয়াছে। 

আমরা জানি, ঢাকামুখী রোগীর চাপ কমাইতে বিশেষত বিগত করোনাকালে তৎকালীন সরকার প্রতি জেলায় ১০ শয্যার আইসিইউ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছিল। সেই প্রকল্পের অধীনে ২৭ জেলায় স্থাপনও করা হয় আইসিইউ ইউনিট। সেইগুলির মধ্যে ১৮টিই সচল করা যায় নাই। প্রকল্পের মেয়াদও শেষ হইয়াছে গত ডিসেম্বরে। এহেন জনবান্ধব প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও খামখেয়ালিপনার কারণে প্রকল্প হইতে মুখ ফিরাইয়া লইয়াছে ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। বলা হইয়াছে, করোনার পর এই সকল ইউনিট পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত জনবল ডেপুটেশনে চলিয়া যায়। কিন্তু নূতন করিয়া জনবল সৃষ্টির কার্যক্রমও দৃশ্যমান নহে। অনস্বীকার্য, যেখানে সমগ্র চিকিৎসাব্যবস্থায় পরিকল্পনাহীনতা ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার প্রতিফলন স্পষ্ট সেইখানে আইসিইউ স্থাপনা ও ব্যবস্থাপনা উন্নত হইবার কথা নহে। বিষয়টির সহিত বিগত কয়েক দশক যাবৎ চলমান চিকিৎসা ব্যবস্থার ঢালাও বাণিজ্যিকীকরণের সম্পর্ক আছে বলিয়া আমরা মনে করি। অন্য সকল মৌলিক অধিকারের ন্যায় বিগত সরকারসমূহের জনগণের স্বাস্থ্য অধিকার সম্পর্কে অবহেলাও এই ক্ষেত্রে দায়ী বলিয়া বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে।

জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলিতেছেন, এইভাবে চলিতে থাকিলে পরিস্থিতি অচিরেই আরও জটিল রূপ লইতে পারে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত, এখনই আইসিইউর ব্যাপারে সুচিন্তিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। অন্তত অচল আইসিইউ সচল করিবার বিষয়ে তাহারা তৎপর হইতে পারে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের প্রশ্নটি এই ক্ষেত্রে উঠিতে পারে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের মধ্যে যেই সমন্বয়হীনতার কারণে দেশের অচল আইসিইউ সচলের উদ্যোগ গ্রহণ করা যাইতেছে না বলিয়া প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, উহার প্রতি মনোযোগ দিতে তো আর অর্থের প্রয়োজন নাই। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব সরক র প রকল প হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

কাদা মাটির কারণে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ইমামের মৃত্যু

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) নামে আরেক মোটরসাইকেল আরোহী মারা গেছেন।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত জাহাঙ্গীর আলম খাদিমপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে। তিনি একই গ্রামের পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদের ইমাম ছিলেন।

আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুদুর রহমান জানান, আলমডাঙ্গার ভালাইপুর- আসমানখালী সড়কের খাদিমপুর মোড়ে ইটভাটার জন্য পরিবহনকৃত মাটি পড়ে বৃষ্টিতে ভিজে তা পিচ্ছিল পথে রূপান্তরিত হয়। সে পথে পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদের ইমাম জাহাঙ্গীর আলম মোটরসাইকেল চালিয়ে আসছিলেন। কাদায় পিচ্ছিল থাকা সড়কে এসে তিনি মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছিটকে পড়েন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে দ্রুতগামী মোটরসাইকেল তার মাথার উপর দিয়ে চলে গেলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। 

পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে জাহাঙ্গীর আলমের মরদেহ উদ্ধার করে। পরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় বলে জানান ওসি। 

ঢাকা/মামুন/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ