ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের ৬৫ শব্দের নতুন প্রস্তাব
Published: 22nd, February 2025 GMT
রাশিয়া–ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘে ৬৫ শব্দের একটি নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে রাশিয়ার অধিকৃত ইউক্রেনের ভূখণ্ড নিয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। রাশিয়ার হামলারও নিন্দা জানানো হয়নি। একই দিন ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররাও জাতিসংঘে আলাদা আরেকটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে।
আগামী সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এই প্রস্তাব দুটি নিয়ে আলোচনা শেষে ভোটাভুটি হবে। এই দিনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের তিন বছর পূর্ণ হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও নিজেদের প্রস্তাবকে ‘সাদামাটা ও ঐতিহাসিক’ বলে উল্লেখ করে এটাকে সমর্থন জানাতে জাতিসংঘের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সম্প্রতি রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ইউক্রেনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনের প্রতিনিধির উপস্থিতি ‘গুরুত্বপূর্ণ নয়’। এ নিয়ে ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে।
আরও পড়ুনশান্তি আলোচনায় ‘কার্ড’ রাশিয়ার হাতে: বিবিসিকে ট্রাম্প২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ওয়াশিংটনের ৬৫ শব্দের বিবৃতিতে ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা’ হয়েছে। পাশাপাশি ‘সংঘাত দ্রুত শেষ’ করতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘে নিয়োজিত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবকে ‘ভালো পদক্ষেপ’ বলে মন্তব্য করেছেন। তবে, এতে সংঘাতের ‘মূল কারণ’ উল্লেখ করা হয়নি বলে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান উল্টে দিয়ে ট্রাম্পের মুখে রাশিয়ার প্রতিধ্বনি১৮ ঘণ্টা আগেইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের প্রস্তাবে চলতি বছরের মধ্যে যুদ্ধ শেষ করতে কূটনৈতিক চেষ্টা দ্বিগুণ করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এটা শেষ করতে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে, সেগুলোর কিছু বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবটিতে রাশিয়ার নিন্দা জানানো এবং ইউক্রেনের ভূখণ্ডের অখণ্ডতার কথা বলা হয়েছে।
প্রস্তাবটিতে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ২০২২ সালের অক্টোবরে ১৪৩ ভোটে পাস হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধ-সংক্রান্ত একটি পুরোনো প্রস্তাবের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রস্তাবটিতে অধিকৃত ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে কালবিলম্ব না করে সব রুশ সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছিল।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন উত্তেজনার জেরে জেলেনস্কি ও ট্রাম্পের দূতের সংবাদ সম্মেলন বাতিল২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন য দ ধ ইউক র ন র
এছাড়াও পড়ুন:
হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন সন্তানদের
‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।
পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।
এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী ভুবন চাকমার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হলেও তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।