Prothomalo:
2025-04-15@18:03:36 GMT

একুশের মহাফেজখানা

Published: 21st, February 2025 GMT

শহীদুল্লা কায়সার (১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯২৭—১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১)। ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক; প্রগতিশীল লেখক। লেখাটি ছাপা হয় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিধ্বনি পত্রিকায়, ১৯৬৪ সালে।

প্রবন্ধ: একুশে ফেব্রুয়ারি

একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে অপরিসীম গুরুত্বের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত। সে শুধু অবাধ, শুধু আবেগজাত নয়—যুক্তি ও বিচারের মাপকাঠিতেও তার তারতম্য হয়।

বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষায় পরিণত করার কর্মসূচি ছিল একুশে ফেব্রুয়ারির একমাত্র লক্ষ্য। এমন কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলনের একটি দিন একটি জাতির ইতিহাসে যুগান্তরের কাল বলে বিবেচিত হলো কেন? তার কারণ এই, ভাষা আন্দোলনের কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত ছিল কতগুলো মূলনীতির প্রশ্ন। সেই মূলনীতিগুলোই আমাদের জাতীয় জীবনে তরঙ্গ তুলছে বারবার, প্রশ্ন তুলেছে, সমাধান খুঁজেছে, মীমাংসা পেয়েছে।

ভাষাগত আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবিতে এ আন্দোলন শুরু হয়েছিল। তার সঙ্গে তাই জড়িত ছিল সাংস্কৃতিক চেতনা, রাজনৈতিক আদর্শ এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ত্যাগ স্বীকারের প্রবৃত্তি। এই দৃষ্টিভঙ্গি তাই কর্মসূচি অতিক্রম করে এ আন্দোলনকে বিশিষ্ট গৌরব দান করেছে।

একুশে ফেব্রুয়ারি একই সঙ্গে সংস্কৃতিচেতনার প্রকাশ ও বিকাশের দিন। তাই ১৯৫২ সালের পর বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যেকোনো চক্রান্তই ব্যর্থ হয়েছে। বাংলা ভাষার জন্য আরবি ও রোমান হরফের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, হরফ সংস্কারের প্রচেষ্টাও সাধারণের সমর্থন পায়নি। অন্যদিকে সংস্কৃতিক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বিরুদ্ধে দেশবাসী সচেতন হয়েছেন। ভাষা ও সাহিত্যের ঐতিহ্য সম্পর্কে এই সদা জাগ্রত মনোভাবই রবীন্দ্রবিরোধী সকল কর্মকৌশলকে পযু‌র্দস্ত করেছে।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও একুশে ফেব্রুয়ারির বিশেষ ভূমিকা আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের প্রশ্নকে সামনে তুলে ধরা। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে দলগত সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব-নিকাশ না করেও বলা যায় যে স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাবই এ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী জনসাধারণের সর্বসম্মত দাবি ছিল। এই সঙ্গে অর্থনৈতিক আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটিও দেখা দিয়েছে। তা-ও হলো ১৯৫২ সালের চেতনার ফল।

অবশ্য এ কথা স্মরণ রাখা দরকার, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সাফল্যের মূলে যা ক্রিয়াশীল ছিল, তা শুধু সাংস্কৃতিক চেতনা নয়, রাজনৈতিক বিক্ষোভ ও অর্থনৈতিক হতাশা। এ জন্যই ১৯৪৮ সালে যে আন্দোলন নিতান্ত সীমাবদ্ধ ছিল, ১৯৫২ সালে তা অমন সর্বব্যাপী হতে পেরেছিল।

কিন্তু এ কথাও সত্য যে একুশে ফেব্রুয়ারিই সেই চেতনা, বিক্ষোভ ও হতাশাকে একটা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য রূপ দিয়েছিল। এদিনের পরীক্ষায় উন্নীত হবার পরই ব্যাকুল জিজ্ঞাসা, অস্পষ্ট উপলব্ধি ও সচেতন দাবিদাওয়া একটা সুস্পষ্টরূপ লাভ করেছিল, জমাট বেঁধেছিল। জনসাধারণের শক্তির পরিচয় যেমন সেদিন পাওয়া গিয়েছিল, তেমনি আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছিল সকলের মনে। নেতাদের দ্বিধা ও জড়তাকে পায়ে দলে জনসাধারণ অগ্রসর হয়েছিল সেদিন এবং জেনেছিল যে
অধিকার অর্জনের অনন্ত সম্ভাবনা তার মধ্যেই নিহিত ছিল।

১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এসব কথা নতুন করে মনে পড়ছে। সেই অনন্ত সম্ভাবনাকে দেশের মানুষ আবার কাজে লাগিয়েছে। নেতৃত্বের দ্বিধা, জড়তা ও অনৈক্যকে পশ্চাতে ফেলে দেশবাসী আবার এগিয়ে গেছে। যে মানুষের ভাষার অধিকার দাবি করে একুশে ফেব্রুয়ারি দেখা দিয়েছিল ১৯৫২ সালে, এখন সেই মানুষের অধিকারের দাবিতে সংগ্রাম সূচিত হয়েছে। সেই আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি—ভাষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে আবার দেখা দিয়েছে। এ সংগ্রামের ব্যাপকতা ও বিস্তার বিস্ময়কর। জনশক্তির এই প্রচণ্ড অভ্যুত্থান, তার সর্বব্যাপী চেতনা, তার সংগ্রামী চরিত্র—এসবের বিশ্লেষণে এ কথা মনে না হয়ে পারে না যে এই আন্দোলনের মূল নিহিত ছিল ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতেই। ১৭ বছরে তা ব্যাপক, বিস্তৃত ও সর্বপরিপ্লাবী হয়েছে। কিন্তু এর মূলনীতি রচিত হয়েছিল সেই কালান্তরের দিনে।

এ জন্যই মনে হয় একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলনের দিন নয়—তা আমাদের আত্মজিজ্ঞাসার দিন, আত্মসাক্ষাৎকারের দিন, আত্মবিশ্বাসের দিন। একুশে ফেব্রুয়ারি সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শুভসূচনার দিন, জনশক্তির বিজয়যাত্রার দিন। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অবিস্মরণীয় রক্তবর্ণ দিন।

আনিসুজ্জামান.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ১৯৫২ স ল র জন ত আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ছোট রান্নাঘর সাজানোর কৌশল

আজকালকার শহুরে জীবন মানে ছোট বাড়ি, ছোট রান্নাঘর। ছোট রান্নাঘরে কাজ করতে গেলে প্রায়ই মনে হয় রান্নার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। এ সংকটে আপনি খুঁজে পেতে পারেন এক স্মার্ট সমাধান এবং সৃজনশীলতা। কিছু সহজ ও কার্যকর কৌশল আপনার ছোট রান্নাঘরকে পরিপাটি রাখতে সাহায্য করবে। 
দেয়ালকে বানান স্টোরেজ স্পেস 
রান্নাঘরের এক কোণে যদি স্টোরেজ বক্স বা ক্যাবিনেট বসানোর সুযোগ না থাকে, তবে দেয়াল হতে পারে আপনার সমাধান। ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ ব্যবহার করে রাখুন ছুরি, কাঁটা চামচ, স্ক্যাবার। এভাবে শুধু জায়গা বাঁচবে না, খাবার তৈরির প্রস্তুতিও হবে আরও সহজ। দেয়ালটি যদি খালি পড়ে থাকে, তাহলে কিছু হুক বা শেলফ বসিয়ে রান্নার সরঞ্জাম, প্লেট বা কাপ সাজিয়ে রাখতে পারেন। যদি আপনার রান্নাঘরের দেয়ালে কাঠ বা মেটাল সুরক্ষা থাকে, তাহলে রান্নাঘরের সজ্জার জন্য শেলফ এবং ছোট বক্সও ব্যবহার করতে পারেন। এতে পুরো কিচেনের ধারণা আরও সৃজনশীল দেখাবে।
মাল্টি-ফাংশনাল ফার্নিচার বেছে নিন
যে কোনো ছোট রান্নাঘরকে কার্যকর এবং ফাংশনাল করা যায় মাল্টি-ফাংশনাল ফার্নিচার দিয়ে। যেমন এক টেবিল যেখানে ড্রয়ার বা সিটের নিচে থাকবে ছোট্ট স্টোরেজ। এতে শুধু রান্নার সময় প্রয়োজনীয় জিনিস পেতে সুবিধা হবে না, পাশাপাশি আপনার ক্যাবিনেটের জায়গাও বাঁচবে। এ ছাড়া ফোল্ডেবল বা অর্গানাইজেবল ফার্নিচারও উপকারী। যেমন ফোল্ডিং চেয়ার বা টেবিল, যা আপনি পরবর্তী সময়ে দরকার অনুযায়ী খুলে ব্যবহার করতে পারেন।
তাছাড়া টেবিলের নিচে ক্যাবিনেট বা টোকেন স্টোরেজ রাখলে রান্নাঘরের ছোট জায়গায় আপনি আরও বেশি আয়োজন করতে পারবেন।
কনটেইনারের জাদু 
পুরোনো শাড়ি, প্লাস্টিকের কনটেইনার বা অন্য ধরনের বাক্সে ব্যবহারিক কিছু জিনিস রাখা সম্ভব। ছোট রান্নাঘরে সবকিছু গুছিয়ে রাখতে বেশ খানিকটা সাহায্য করবে কনটেইনার বা বাক্সগুলো। ট্রান্সপারেন্ট কনটেইনার ব্যবহারের সুবিধা হলো, এটি দিয়ে আপনি সহজে বুঝতে পারবেন কোনো মসলা বা রান্নার উপকরণ কোথায় রাখা আছে। এ ছাড়া প্রতিরোধক ব্যাগ বা ভ্যাকুয়াম সিলিং ব্যবহার করলে খাবার দীর্ঘদিন সতেজ থাকে এবং রান্নাঘরের অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও কমে যায়।
ওপেন শেলফিং এবং ডিসপ্লে
গোছানো রান্নাঘরেও কিছুটা স্টাইল থাকা প্রয়োজন। রান্নাঘরের ওপেন শেলফে আপনার দৈনন্দিন ব্যবহারের আইটেমগুলো রাখলে শুধু তা দেখতে সুন্দরই হবে না, অল্প জায়গায় প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর যথেষ্ট অ্যাক্সেস পাবেন।
গ্লাস, প্লেট, বাটি, মসলা বা বেকিং আইটেমগুলো সজ্জিত করতে ওপেন শেলফের ব্যবস্থা খুব উপকারী। পাশাপাশি, ওপেন শেলফকে ব্যবহার করে আপনি আপনার রান্নাঘরের ব্যক্তিগত টাচও যোগ করতে পারেন।
ওয়ার্ক ট্রায়াঙ্গল বজায় রাখুন
রান্নাঘরের তিনটি মূল জায়গা কুকিং, ওয়াশিং এবং স্টোরেজ। এ তিনটি যদি একসঙ্গে ঠিকভাবে বসানো যায়, তবে রান্না করা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এ ‘ওয়ার্ক ট্রায়াঙ্গল’ কনসেপ্ট অনুসরণ করলে রান্নার জায়গা ও ওয়াশিং অ্যান্ড স্টোরেজের জায়গায় হাঁটার সময় কম হবে এবং সময়ও বাঁচবে।
তাছাড়া যদি রান্নাঘরে স্পেস সীমিত থাকে, তবে কাউন্টারটপ স্পেস ব্যবহার করে এসব কাজের স্থল আরও কার্যকর করতে হবে।
প্রাকৃতিক আলো এবং আয়না ব্যবহার
ছোট রান্নাঘরের জন্য প্রাকৃতিক আলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জানালা দিয়ে আলো প্রবাহিত হোক, এমন ব্যবস্থা করুন। যদি জানালা না থাকে, তবে রান্নাঘরের চারপাশে হালকা রং ও রিফ্লেক্টিভ সারফেস যেমন আয়না বা শাইনিং টাইলস ব্যবহার করুন। এভাবে ছোট জায়গাটি বড় এবং উজ্জ্বল দেখাবে। ছোট রান্নাঘর আরও বেশি পরিপাটি দেখাতে আধুনিক ফ্লোরিং বা লাইটিং ব্যবহার করতে পারেন। রান্নাঘরের আয়না ব্যবহার করার মাধ্যমে জায়গাটাকে দুই গুণ বড় মনে হবে। রান্না শুধু খাবারের ব্যাপার নয়, এটি একটি অনুভূতি, একটি অভিজ্ঞতা। তাই আপনার রান্নাঘরকে যতটা সম্ভব কার্যকর, আনন্দদায়ক এবং স্টাইলিশ করে গড়ে তুলুন। v

সম্পর্কিত নিবন্ধ