Prothomalo:
2025-03-26@00:26:21 GMT

একুশের মহাফেজখানা

Published: 21st, February 2025 GMT

শহীদুল্লা কায়সার (১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯২৭—১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১)। ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক; প্রগতিশীল লেখক। লেখাটি ছাপা হয় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিধ্বনি পত্রিকায়, ১৯৬৪ সালে।

প্রবন্ধ: একুশে ফেব্রুয়ারি

একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে অপরিসীম গুরুত্বের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত। সে শুধু অবাধ, শুধু আবেগজাত নয়—যুক্তি ও বিচারের মাপকাঠিতেও তার তারতম্য হয়।

বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষায় পরিণত করার কর্মসূচি ছিল একুশে ফেব্রুয়ারির একমাত্র লক্ষ্য। এমন কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলনের একটি দিন একটি জাতির ইতিহাসে যুগান্তরের কাল বলে বিবেচিত হলো কেন? তার কারণ এই, ভাষা আন্দোলনের কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত ছিল কতগুলো মূলনীতির প্রশ্ন। সেই মূলনীতিগুলোই আমাদের জাতীয় জীবনে তরঙ্গ তুলছে বারবার, প্রশ্ন তুলেছে, সমাধান খুঁজেছে, মীমাংসা পেয়েছে।

ভাষাগত আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবিতে এ আন্দোলন শুরু হয়েছিল। তার সঙ্গে তাই জড়িত ছিল সাংস্কৃতিক চেতনা, রাজনৈতিক আদর্শ এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ত্যাগ স্বীকারের প্রবৃত্তি। এই দৃষ্টিভঙ্গি তাই কর্মসূচি অতিক্রম করে এ আন্দোলনকে বিশিষ্ট গৌরব দান করেছে।

একুশে ফেব্রুয়ারি একই সঙ্গে সংস্কৃতিচেতনার প্রকাশ ও বিকাশের দিন। তাই ১৯৫২ সালের পর বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যেকোনো চক্রান্তই ব্যর্থ হয়েছে। বাংলা ভাষার জন্য আরবি ও রোমান হরফের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, হরফ সংস্কারের প্রচেষ্টাও সাধারণের সমর্থন পায়নি। অন্যদিকে সংস্কৃতিক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বিরুদ্ধে দেশবাসী সচেতন হয়েছেন। ভাষা ও সাহিত্যের ঐতিহ্য সম্পর্কে এই সদা জাগ্রত মনোভাবই রবীন্দ্রবিরোধী সকল কর্মকৌশলকে পযু‌র্দস্ত করেছে।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও একুশে ফেব্রুয়ারির বিশেষ ভূমিকা আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের প্রশ্নকে সামনে তুলে ধরা। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে দলগত সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব-নিকাশ না করেও বলা যায় যে স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাবই এ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী জনসাধারণের সর্বসম্মত দাবি ছিল। এই সঙ্গে অর্থনৈতিক আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটিও দেখা দিয়েছে। তা-ও হলো ১৯৫২ সালের চেতনার ফল।

অবশ্য এ কথা স্মরণ রাখা দরকার, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সাফল্যের মূলে যা ক্রিয়াশীল ছিল, তা শুধু সাংস্কৃতিক চেতনা নয়, রাজনৈতিক বিক্ষোভ ও অর্থনৈতিক হতাশা। এ জন্যই ১৯৪৮ সালে যে আন্দোলন নিতান্ত সীমাবদ্ধ ছিল, ১৯৫২ সালে তা অমন সর্বব্যাপী হতে পেরেছিল।

কিন্তু এ কথাও সত্য যে একুশে ফেব্রুয়ারিই সেই চেতনা, বিক্ষোভ ও হতাশাকে একটা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য রূপ দিয়েছিল। এদিনের পরীক্ষায় উন্নীত হবার পরই ব্যাকুল জিজ্ঞাসা, অস্পষ্ট উপলব্ধি ও সচেতন দাবিদাওয়া একটা সুস্পষ্টরূপ লাভ করেছিল, জমাট বেঁধেছিল। জনসাধারণের শক্তির পরিচয় যেমন সেদিন পাওয়া গিয়েছিল, তেমনি আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছিল সকলের মনে। নেতাদের দ্বিধা ও জড়তাকে পায়ে দলে জনসাধারণ অগ্রসর হয়েছিল সেদিন এবং জেনেছিল যে
অধিকার অর্জনের অনন্ত সম্ভাবনা তার মধ্যেই নিহিত ছিল।

১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এসব কথা নতুন করে মনে পড়ছে। সেই অনন্ত সম্ভাবনাকে দেশের মানুষ আবার কাজে লাগিয়েছে। নেতৃত্বের দ্বিধা, জড়তা ও অনৈক্যকে পশ্চাতে ফেলে দেশবাসী আবার এগিয়ে গেছে। যে মানুষের ভাষার অধিকার দাবি করে একুশে ফেব্রুয়ারি দেখা দিয়েছিল ১৯৫২ সালে, এখন সেই মানুষের অধিকারের দাবিতে সংগ্রাম সূচিত হয়েছে। সেই আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি—ভাষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে আবার দেখা দিয়েছে। এ সংগ্রামের ব্যাপকতা ও বিস্তার বিস্ময়কর। জনশক্তির এই প্রচণ্ড অভ্যুত্থান, তার সর্বব্যাপী চেতনা, তার সংগ্রামী চরিত্র—এসবের বিশ্লেষণে এ কথা মনে না হয়ে পারে না যে এই আন্দোলনের মূল নিহিত ছিল ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতেই। ১৭ বছরে তা ব্যাপক, বিস্তৃত ও সর্বপরিপ্লাবী হয়েছে। কিন্তু এর মূলনীতি রচিত হয়েছিল সেই কালান্তরের দিনে।

এ জন্যই মনে হয় একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলনের দিন নয়—তা আমাদের আত্মজিজ্ঞাসার দিন, আত্মসাক্ষাৎকারের দিন, আত্মবিশ্বাসের দিন। একুশে ফেব্রুয়ারি সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শুভসূচনার দিন, জনশক্তির বিজয়যাত্রার দিন। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অবিস্মরণীয় রক্তবর্ণ দিন।

আনিসুজ্জামান.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ১৯৫২ স ল র জন ত আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

এস আলম দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

এক হাজার ৫৩৯ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীনের নামে আলাদা মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গতকাল মঙ্গলবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ দুদকের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান মামলা দুটি করেন। পরে কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মামলা দুটি করা হয়েছে।’

গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ২৪ আগস্ট ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের অবৈধ সম্পদের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক।

মামলায় সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, ৭৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৪ টাকা মূল্যের সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করে ভোগদখল করে আসছেন তিনি। এজাহারে আরও বলা হয়, সাইফুল আলম ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান একজন পাবলিক সার্ভেন্ট। আয়কর নথি অনুযায়ী করবর্ষ ২০১০-১২ এর রিটার্ন দাখিলের আগ পর্যন্ত তাঁর আগের সঞ্চয় ছিল ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ৮৯ হাজার ৭ টাকা।

২০১১-১২ থেকে ২০২৩-২০২৪ করবর্ষ পর্যন্ত অতীত সঞ্চয়সহ সাইফুল ইসলামের গ্রহণযোগ্য আয় ২৫৬ কোটি ৩৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৭৫ টাকা। এ সময় তাঁর মোট ব্যয় ৯৭ কোটি ৩২ লাখ ৭ হাজার ৯৪০ টাকা।

অনুসন্ধানে দুদক দেখতে পেয়েছে, সাইফুল আলম ৯৫৫ কোটি ৩১ লাখ ৯৩ হাজার ৪৫৯ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। ব্যয়সহ তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৫২ কোটি ৬৪ লাখ ১ হাজার ৩৯৯ টাকা। গ্রহণযোগ্য আয় বাদ দিলে তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ৭৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৪ টাকা।

অন্যদিকে, সাইফুল আলমের স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ, তিনি ৭৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৪৫৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ফারজানার স্থাবর-অস্থাবর, ব্যয়সহ মোট সম্পদের পরিমাণ ৭৫৯ কোটি ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ১৩ টাকা। তাঁর অতীত সঞ্চয়সহ গ্রহণযোগ্য আয় ১৬ কোটি ৩০ লাখ ৭৫ হাজার ৫৬৫ টাকা। বাকি ৭৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৪৫৩ টাকার সম্পদের বৈধ কোনো উৎস নেই, যা তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে আরও বলা হয়, সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রীর নামে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সম্পদ রয়েছে। সিঙ্গাপুর, সাইপ্রাস, ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া আইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশেও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে আয়কর নথিতে তা অন্তর্ভুক্ত না থাকায় এ সম্পদকে পাচার বলছে দুদক। বিদেশে সম্পদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার ওপর নির্ভর করে মামলার তদন্তে তা যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ