জেলেনস্কিকে ‘একনায়ক’ বলে কটাক্ষ ট্রাম্পের
Published: 21st, February 2025 GMT
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে একনায়ক বলে কটাক্ষ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার একই বক্তব্যে জেলেনস্কিকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে ট্রাম্প বলেন, শান্তি নিশ্চিতে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পুরো দেশই হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন তিনি। দুই নেতার মধ্যে ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকা বিরোধে শঙ্কায় পড়েছেন ইউরোপীয় নেতারা। এ পরিস্থিতিতেই ট্রাম্পের ইউক্রেন-বিষয়ক দূত কিথ কেলোগের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন জেলেনস্কি। সাম্প্রতিক সব ঘটনার প্রেক্ষাপটে এই বৈঠকটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি ইতোমধ্যে কেলোগের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং ‘ন্যায়সংগত ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি’ নিয়ে আলোচনা করেছেন। এসব তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
এর আগে ইংরেজিতে জেলেনস্কির নামের ভুলভাল বানানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লিখেছেন, জেলেনস্কি হচ্ছেন নির্বাচনবিহীন একনায়ক। যুদ্ধের অবসান ঘটাতে তাঁর দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। নইলে ইউক্রেন আর তাঁর কবজায় থাকবে না। ট্রাম্পের এই বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কিয়েভ। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্দ্রিই সিবিহা এক্সে বলেছেন, নিজ দেশ বিকিয়ে দেওয়ার জন্য অন্য কেউ জোর খাটাতে পারে না। আমাদের আত্মরক্ষার্থে লড়াই করার অধিকার রয়েছে।
রুশ আগ্রাসন শুরুর পর ২০২২ সালে ইউক্রেনে সামরিক আইন জারি করেন জেলেনস্কি। দেশে প্রেসিডেনশিয়াল ও পার্লামেন্টারি নির্বাচন আয়োজন করার পরিস্থিতি না থাকায় ২০২৪ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও ক্ষমতা ধরে রেখেছেন তিনি।
অন্য এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তি আলোচনায় ‘তাস রাশিয়ার হাতেই’, কারণ তারা ইতোমধ্যেই ইউক্রেনের বিশাল ভূখণ্ড দখল করেছে। এ প্রসঙ্গে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, মস্কো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। এ নিয়ে ইউক্রেন ইস্যুতে আক্রমণাত্মক মন্তব্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেন ট্রাম্প। এ বক্তব্যের আগে ২০২২ সালে শুরু হওয়া রুশ আগ্রাসনের জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেছিলেন তিনি।
এদিকে জেলেনস্কিকে স্বৈরাচারী বলায় ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করেছেন ইউরোপের শীর্ষ নেতারা। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির গণতান্ত্রিক বৈধতাকে অস্বীকার করাটা ভুল ও ভয়ংকর কাজ। ট্রাম্পের মন্তব্যের নিন্দা করেছেন সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টেরসনও।
বিবিসি জানায়, ট্রাম্পের বক্তব্যের পরপরই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার সমর্থন জানাতে ফোন করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে। আগামী সপ্তাহে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। যেখানে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে ইউরোপের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার সদস্য লিসা নান্ডি।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের অব্যাহত হুমকির মধ্যেই জেলেনস্কির পাশে দাঁড়িয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি জানিয়েছেন, কানাডা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির পাশে আছে।
ট্রুডো আরও বলেন, ইউক্রেনের মানুষ শুধু তাদের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা রক্ষার পাশাপাশি বিশ্বকে নিরাপদ ও একটি সুন্দর আইনি ব্যবস্থা বহাল রাখতে লড়াই করছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র মন ত র কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
১৮ বছর আগে চাকরিচ্যুত উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা পদে ফিরতে পারবেন কি না, জানা যাবে ২৫ মার্চ
১৮ বছর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চাকরিচ্যুত ৮৫ জন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা চাকরিতে পুনর্বহাল হবেন কি না, তা আগামী ২৫ মার্চ জানা যেতে পারে।
এ-সংক্রান্ত আপিল ও পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদনের ওপর আগামী ২৫ মার্চ রায়ের জন্য তারিখ ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।
পৃথক আবেদনের শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ রায়ের এই তারিখ ধার্য করেন।
প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত বাতিল করে ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের দেওয়া রায়কে কেন্দ্র করে চাকরিচ্যুত ব্যক্তিরা একটি আপিল ও চারটি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন, যার ওপর আজ শুনানি শেষ হলো। এর আগে ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল ৮৫ কর্মকর্তার আপিল মঞ্জুর করে চাকরিতে পুনর্বহালের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন।
আদালতে আপিলকারী পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। পুনর্বিবেচনার আবেদনের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ও মো. রুহুল কুদ্দুস শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া।
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন প্রথম আলোকে বলেন, আপিল ও রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আপিল বিভাগ আগামী ২৫ মার্চ রায়ের জন্য তারিখ ধার্য করেছেন। চাকরিচ্যুত উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা চাকরিতে পুনর্বহাল হবেন কি না, তা সেদিন জানা যাবে।
মামলার পূর্বাপরআইনজীবীদের তথ্যমতে, ২০০৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে ৩২৭ জনকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে অস্থায়ীভাবে নির্বাচিত করা হয়।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ের এই নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক ওঠে। ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৩২৭ জনের মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে ৮৫ জনকে একই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর চাকরিচ্যুত করা হয়। এর বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুত প্রার্থীরা মামলা করলে ২০০৯ সালের ২৩ মার্চ তা খারিজ করে রায় দেন প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল। এর বিরুদ্ধে তাঁরা আপিল করেন। ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল ৮৫ কর্মকর্তার আপিল মঞ্জুর করে চাকরিতে পুনর্বহালের পক্ষে রায় দেন।
প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক চারটি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত ২০১০ সালের ২৯ এপ্রিল আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন, বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে সরকারপক্ষ পৃথক আপিল করে। সরকারপক্ষের করা আপিলগুলো মঞ্জুর করে ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর রায় দেন আপিল বিভাগ। এই রায়ে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল দেওয়া রায় (৮৫ কর্মকর্তাকে চাকরিতে পুনর্বহালের পক্ষে) বাতিল করা হয়।
আপিল বিভাগের ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে ২০২৩ সালে পৃথক পাঁচটি আবেদন করেন চাকরিচ্যুত ব্যক্তিরা। শুনানি নিয়ে একটি রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ গত বছরের ৬ নভেম্বর লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি) মঞ্জুর করে আদেশ দেন। একই সঙ্গে এই আপিলের (রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত) সারসংক্ষেপ চার সপ্তাহের মধ্যে দায়ের করতে আবেদনকারীপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এই আপিলের সঙ্গে অপর চারটি রিভিউ আবেদন শুনানিতে থাকবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় শুনানি হয়।