যুদ্ধ বন্ধ করতে না পারায় ইউক্রেনকে দুষলেন ট্রাম্প
Published: 19th, February 2025 GMT
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা নিয়ে মঙ্গলবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বৈঠক হয়। চলমান সংঘাতটি ইউক্রেন ও ইউরোপের নিরাপত্তায় অস্তিত্বগত বিষয় হলেও সেই বৈঠকে তাদের কাউকেই রাখা হয়নি। এটিকে অপ্রত্যাশিত বলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এই প্রতিক্রিয়ায় হতাশা জানিয়ে তিন বছর আগে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার আক্রমণের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এ যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মার-এ-লাগো রিসোর্টে এক সংবাদিক জানতে চান, তিন বছর ধরে যুদ্ধে বিপর্যস্ত ইউক্রেনের কোনো প্রতিনিধি রিয়াদের আলোচনায় না থাকা নিয়ে আপনি কোনো বার্তা দিতে চান কিনা।
জবাবে ট্রাম্প বলেন, আমি আসলে হতাশ। তিন বছর ধরে আমি দেখছি এখানে কী ঘটছে। এই যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের আলোচনার বিষয় হওয়াই উচিত ছিল না। তারা আলোচনায় অংশ নিতে না পারা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে। কিন্তু গত তিন বছর ধরেই তাদের জন্য এই সুযোগ খোলা ছিল। খুব সহজেই এই যুদ্ধ বন্ধ করা যেত।
ট্রাম্পের এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, একজন নেতা হিসেবে ট্রাম্পের অবস্থান আমার কাছে অবশ্যই সম্মানের। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট অপতথ্যের জগতে বাস করেন।
ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের মালিকানার বিনিময়ে সামরিক সহায়তা নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি ইউক্রেনকে রক্ষা করছি। আমি আমাদের দেশকে বিক্রি করে দিতে পারি না। প্রস্তাবটির প্রথম খসড়া নাকচ করে দিয়েছি। ওই প্রস্তাব মেনে নিলে যুক্তরাষ্ট্রকে আমাদের খনিজ সম্পদের প্রায় ৫০ শতাংশের মালিকানা দিতে হবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রস্তাবে ইউক্রেনের নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি।
জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকেছে– ট্রাম্পের এমন এক মন্তব্যের জবাবে জেলেনস্কি বলেন, বর্তমানে আমার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। তাই এখন কেউ আমাকে সরাতে চাইলে তা কার্যকর হবে না।
এর আগে রিয়াদে বৈঠকের পর রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার জন্য তারা দল গঠন করতে রাজি হয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, কোনো শান্তি চুক্তির আওতায় ইউক্রেনে ন্যাটোর কোনো সদস্য দেশের সেনা মোতায়েন মেনে নেবে না রাশিয়া।
ইউক্রেনে ইউরোপীয় দেশগুলোর সেনা পাঠানো নিয়ে ট্রাম্প বলেন, যদি তারা তা করতে চায়, তাহলে দারুণ! আমি এটিকে সম্পূর্ণ সমর্থন করি।
রিয়াদে বৈঠকের পর রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ইউক্রেনে অন্য কোনো পতাকার অধীনে ইইউ সশস্ত্র বাহিনী উপস্থিত থাকলেই বিষয়টি বদলে যাবে না। এটি অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার বলেছেন, ইউক্রেন নিয়ে যে কোনো চুক্তির জন্য মার্কিন সমর্থন দরকার হবে, যাতে রাশিয়া আবার আক্রমণ করতে না পারে। তিনি ইউক্রেনে ব্রিটিশ সেনা পাঠানোর সম্ভাবনাও বিবেচনা করছেন। জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করা বর্তমানে পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয়। আর পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কও বলেছেন, সৈন্য পাঠানোর ইচ্ছে নেই তাঁর।
ইউক্রেন নিয়ে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর নেতৃত্বে বুধবার দ্বিতীয়বারের মতো জরুরি বৈঠকে বসছে ইউরোপীয় পক্ষগুলো। প্রায় ১৫টি দেশ এতে অংশ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। দু’দিন আগে ইউক্রেনের জরুরি নিরাপত্তা বৈঠকে ঘোষণা করেন, তারা তাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষায় আরও বেশি ব্যয় করবে এবং ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সম্মত হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউক র ন য দ ধ বন ধ ইউক র ন র ত ন বছর র জন য বল ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন সন্তানদের
‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।
পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।
এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী ভুবন চাকমার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হলেও তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।