ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা নিয়ে মঙ্গলবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বৈঠক হয়। চলমান সংঘাতটি ইউক্রেন ও ইউরোপের নিরাপত্তায় অস্তিত্বগত বিষয় হলেও সেই বৈঠকে তাদের কাউকেই রাখা হয়নি। এটিকে অপ্রত্যাশিত বলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এই প্রতিক্রিয়ায় হতাশা জানিয়ে তিন বছর আগে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার আক্রমণের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এ যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মার-এ-লাগো রিসোর্টে এক সংবাদিক জানতে চান, তিন বছর ধরে যুদ্ধে বিপর্যস্ত ইউক্রেনের কোনো প্রতিনিধি রিয়াদের আলোচনায় না থাকা নিয়ে আপনি কোনো বার্তা দিতে চান কিনা। 
জবাবে ট্রাম্প বলেন, আমি আসলে হতাশ। তিন বছর ধরে আমি দেখছি এখানে কী ঘটছে। এই যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের আলোচনার বিষয় হওয়াই উচিত ছিল না। তারা আলোচনায় অংশ নিতে না পারা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে। কিন্তু গত তিন বছর ধরেই তাদের জন্য এই সুযোগ খোলা ছিল। খুব সহজেই এই যুদ্ধ বন্ধ করা যেত। 

ট্রাম্পের এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, একজন নেতা হিসেবে ট্রাম্পের অবস্থান আমার কাছে অবশ্যই সম্মানের। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট অপতথ্যের জগতে বাস করেন। 

ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের মালিকানার বিনিময়ে সামরিক সহায়তা নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি ইউক্রেনকে রক্ষা করছি। আমি আমাদের দেশকে বিক্রি করে দিতে পারি না। প্রস্তাবটির প্রথম খসড়া নাকচ করে দিয়েছি। ওই প্রস্তাব মেনে নিলে যুক্তরাষ্ট্রকে আমাদের খনিজ সম্পদের প্রায় ৫০ শতাংশের মালিকানা দিতে হবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রস্তাবে ইউক্রেনের নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। 

জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকেছে– ট্রাম্পের এমন এক মন্তব্যের জবাবে জেলেনস্কি বলেন, বর্তমানে আমার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। তাই এখন কেউ আমাকে সরাতে চাইলে তা কার্যকর হবে না। 

এর আগে রিয়াদে বৈঠকের পর রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার জন্য তারা দল গঠন করতে রাজি হয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, কোনো শান্তি চুক্তির আওতায় ইউক্রেনে ন্যাটোর কোনো সদস্য দেশের সেনা মোতায়েন মেনে নেবে না রাশিয়া। 

ইউক্রেনে ইউরোপীয় দেশগুলোর সেনা পাঠানো নিয়ে ট্রাম্প বলেন, যদি তারা তা করতে চায়, তাহলে দারুণ! আমি এটিকে সম্পূর্ণ সমর্থন করি। 

রিয়াদে বৈঠকের পর রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ইউক্রেনে অন্য কোনো পতাকার অধীনে ইইউ সশস্ত্র বাহিনী উপস্থিত থাকলেই বিষয়টি বদলে যাবে না। এটি অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। 
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার বলেছেন, ইউক্রেন নিয়ে যে কোনো চুক্তির জন্য মার্কিন সমর্থন দরকার হবে, যাতে রাশিয়া আবার আক্রমণ করতে না পারে। তিনি ইউক্রেনে ব্রিটিশ সেনা পাঠানোর সম্ভাবনাও বিবেচনা করছেন। জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করা বর্তমানে পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয়। আর পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কও বলেছেন, সৈন্য পাঠানোর ইচ্ছে নেই তাঁর। 

ইউক্রেন নিয়ে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর নেতৃত্বে বুধবার দ্বিতীয়বারের মতো জরুরি বৈঠকে বসছে ইউরোপীয় পক্ষগুলো। প্রায় ১৫টি দেশ এতে অংশ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। দু’দিন আগে ইউক্রেনের জরুরি নিরাপত্তা বৈঠকে ঘোষণা করেন, তারা তাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষায় আরও বেশি ব্যয় করবে এবং ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সম্মত হয়েছে। 


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন য দ ধ বন ধ ইউক র ন র ত ন বছর র জন য বল ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পের চিঠির জবাব দিয়েছে ইরান

পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে নতুন চুক্তির আহ্বান জানিয়ে ইরানকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিঠির জবাব দিয়েছে তেহরান। ওমানের মাধ্যমে এই জবাব দেওয়া হয়। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এ কথা জানিয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনার বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক নিবন্ধে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ট্রাম্পের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের জবাব ‘ওমানের মাধ্যমে যথাযথভাবে পাঠানো হয়েছে’।

আরাগচি বলেন, ‘সর্বোচ্চ চাপ ও সামরিক হুমকির মধ্যে থাকা অবস্থায় সরাসরি আলোচনায় যুক্ত না হওয়ার আমাদের নীতি এখনো বহাল আছে। তবে অতীতের মতো পরোক্ষ আলোচনা চলতে পারে।’

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জবাবের মধ্যে একটি চিঠি রয়েছে, যেখানে বর্তমান পরিস্থিতি ও ট্রাম্পের চিঠির বিষয়ে আমাদের অভিমত বিস্তারিত তুলে ধরেছি।’

আরও পড়ুনইরানের নেতাকে ট্রাম্পের চিঠি০৭ মার্চ ২০২৫

‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের’ নীতির অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৮ সালে তাঁর প্রথম মেয়াদে ইরানের সঙ্গে হওয়া পারমাণবিক চুক্তি থেকে একতরফা সরে আসেন এবং দেশটির ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার শর্তে ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে ওই চুক্তি করেছিল ইরান।

৭ মার্চ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় বসতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে তিনি চিঠি লিখেছেন। তেহরান আলোচনায় বসতে রাজি না হলে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাধ্যমে ওই চিঠি দেওয়া হয়েছিল। চিঠিতে আলোচনায় বসার জন্য ইরান দুই মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

সম্পর্কিত নিবন্ধ