রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পদক্ষেপে ইউরোপের নেতাদের মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। চলতি মাসের শেষ দিকে ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। এই আলোচনা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে আছেন ইউরোপের নেতারা। তারা মনে করেন, ইউক্রেনের ভবিষ্যতের সঙ্গে ইউরোপের স্বার্থ যে জড়িত, তা ট্রাম্পকে অবহিত করা জরুরি। এ নিয়ে তারা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে সোমবার প্যারিসে বসে জরুরি শীর্ষ সম্মেলন। এতে অংশ নেয় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, পোল্যান্ড, স্পেন ও ডেনমার্ক।
অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে আজ মঙ্গলবার সৌদি আরবের রিয়াদে বৈঠকে বসছে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া। মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দিচ্ছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। অনেক বছর পর দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রথম উচ্চ পর্যায়ের সরাসরি আলোচনা এটি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইতোমধ্যে রিয়াদে পৌঁছেছেন। তাঁর সঙ্গে আছেন মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ। 

ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে চলতি মাসের শেষের দিকে বৈঠক করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই বৈঠকের ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও বলেছেন, এই আলোচনা হবে শান্তি প্রতিষ্ঠার আলোচনা। আর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের একার সিদ্ধান্ত কিয়েভ কখনও মেনে নেবে না। তিনি ইউরোপকে নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। ইউরোপকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সামরিকভাবে স্বাধীন হওয়ার আহ্বানও জানান জেলেনস্কি।

ইউরোপের নেতারা চাচ্ছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধাবসানের আলোচনায় যাতে ইউক্রেন ও ইউরোপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় অগ্রাধিকার পায়। এ জন্য তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। তারা চান, ইউক্রেনে যুদ্ধাবসানের আলোচনায় ইউক্রেনকে অবশ্যই যুক্ত করতে হবে। ইউরোপীয় নেতারা মনে করেন, ইউক্রেন যেন মনে না করে তারা একা। এমন পরিস্থিতিতে আজ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার বলেছেন, ইউক্রেনে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে প্রয়োজনে তাঁর দেশ সেনা পাঠাতে প্রস্তুত।

এদিকে প্যারিস জরুরি সম্মেলনের পর কেয়ার স্টারমার ওয়াশিংটন সফর করার পরিকল্পনা করছেন। বিবিসি বলছে, এই সফরটি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি নতুন সেতুবন্ধ তৈরি করতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের প্রধান মার্ক লিওনার্ড বলেছেন, ইউরোপীয় নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাজ্য একটি দায়িত্বশীল অংশীদার– এ বিষয়টি উপস্থাপন করতে পারেন স্টারমার। এতে ইউক্রেনে যুদ্ধাবসানে আলোচনার ক্ষেত্র প্রসারিত হতে পারে।
   
শিগগির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন ট্রাম্প  

ট্রাম্প রোববার বলেছেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শিগগির দেখা করবেন। তবে কোনো সময় নির্ধারণ হয়নি বলে তিনি জানান। তিনি বিশ্বাস করেন, পুতিন যুদ্ধ শেষ করতে চান। ট্রাম্প বলেন, রাশিয়ার একটি শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। তারা হিটলার ও নেপোলিয়নকে পরাজিত করেছে। এখনও তারা যুদ্ধ করে যাচ্ছে। আমার মনে হয়, পুতিন এখন লড়াই বন্ধ করতে চান। পুতিন সমগ্র ইউক্রেন দখল করতে চান মনে করেন কিনা– সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, তাই যদি হয় তাহলে এটা আমার জন্য একটি বড় সমস্যা।
 
রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া আলোচনায় কী থাকবে  

আলজাজিরা জানিয়েছে, সৌদিতে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার আলোচনা সম্পর্কে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ কিছু মন্তব্য করেছেন। এতে আলোচনার বিষয়বস্তু ফুটে উঠেছে। এক সংবাদ সম্মেলনে ল্যাভরভ বলেন, দুই দেশের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন পারস্পরিক উত্তেজনার অবসান চান পুতিন-ট্রাম্প। দুই দেশের মধ্যে আলোচনা আবার শুরু হওয়া দরকার এ ব্যাপারে দুই প্রেসিডেন্ট একমত। তবে ইউক্রেনে যুদ্ধাবসানের আলোচনায় ইউক্রেনকে আঞ্চলিকভাবে কোনো ছাড় দেওয়ার চিন্তা রাশিয়ার নেই।
 
মস্কো নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের মনোভাবে দিশেহারা ন্যাটো

ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদরদপ্তরে ১২ ফেব্রুয়ারি একটি বৈঠক হয়েছিল। কাগজে-কলমে ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা এবং নতুন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বাগত জানানোই ছিল ওই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু বাস্তবে এটি ছিল এমন একটি দিন, যখন ট্রাম্প প্রশাসন প্রায় তিন বছর চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতি ন্যাটোর দৃষ্টিভঙ্গিকে পুরোপুরিভাবে উল্টে দিয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসন এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি সামনে এনেছে, যা মস্কোর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবির পক্ষে যাবে বলেই মনে হচ্ছে। ন্যাটোর জন্য সামনের দিনগুলো যে মসৃণ হবে না, আগে থেকেই তার স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল। ইউক্রেনের অনুকূল শান্তি চুক্তির প্রত্যাশায় জল ঢেলে দিয়ে ট্রাম্প তাঁর কূটনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সপ্তাহের শুরু করেছেন।

রাশিয়ার প্রধান তেল পাইপলাইনে ড্রোন হামলা

রাশিয়ার প্রধান তেল পাইপলাইনে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। সাতটি বিস্ফোরকভর্তি ড্রোন কাস্পিয়ান পাইপলাইন কনসোর্টিয়ামের একটি পাম্পিং স্টেশনে আঘাত করেছে। এই পাইপলাইনে কৃষ্ণসাগরের মধ্য দিয়ে পশ্চিম ইউরোপসহ দক্ষিণ রাশিয়াজুড়ে তেল রপ্তানি করা হয়। কিয়েভ তিন বছরের যুদ্ধে প্রায়ই রাশিয়ার জ্বালানি অবকাঠামো টার্গেট করে হামলা চালিয়ে আসছে। ইউক্রেনের লক্ষ্য, জ্বালানি বিক্রি করে যাতে মস্কো বাণিজ্য অব্যাহত রাখতে না পারে। এর আগে রাশিয়া জানিয়েছিল, রুশ বাহিনী দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে ৯০টি ইউক্রেনের ড্রোন ভূপাতিত করেছে।  

অন্যদিকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইউক্রেনে ড্রোন হামলা অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া। রাতভর রুশ হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্র বিধ্বস্ত হয়েছে।


 

 
 
 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন পরর ষ ট রমন ত র ইউর প র ন ত ইউক র ন য ইউক র ন র বল ছ ন মন ত র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন সন্তানদের

‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।

পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। 

অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।

এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে। 

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী ভুবন চাকমার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হলেও তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।

ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ