রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাধার খবর আমাদের উদ্বিগ্ন না করিয়া পারে না। সমকাল অনলাইনের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিগত ৩১ বৎসর যাবৎ বসন্ত উৎসবের আয়োজন করিয়া আসিতেছে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ। এই বৎসর তাহাদের উদ্যোগে উক্ত অনুষ্ঠান চারুকলা অনুষদের বকুলতলা, পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক ও উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরে হইবার কথা ছিল। তবে বকুলতলা ও বাহাদুর শাহ পার্কে এই উৎসব হইলেও উত্তরায় হয় নাই। বকুলতলায় উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জানাইয়াছেন, পুলিশের অনুমোদন গ্রহণ, সিটি করপোরেশনের ফি পরিশোধসহ নিয়ম অনুযায়ী সকল কিছু সম্পন্ন করিবার পরও উত্তরার কতিপয় ব্যক্তির ‘বাধার মুখে’ অনুষ্ঠানটি তাহারা আয়োজন করিতে পারেন নাই। 
কেবল বসন্ত উৎসব নহে; আমরা দেখিয়াছি সম্প্রতি দিনাজপুর ও জয়পুরহাটে নারীদের ফুটবল খেলায়ও বাধা প্রদান করা হইয়াছিল। গত ১২ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের মধুপুরে লালন স্মরণোৎসবও ‘স্থগিত’ হইয়াছিল। বিশেষত গত পাঁচ মাসের অধিক সময়ে দেশের অন্তত ৯০টি মাজারে হামলা ও ভাঙচুর হইয়াছে। বিভিন্ন এলাকায় বাউল গান, এমনকি কনসার্ট ও সাধারণ গানের আসরেও আসিয়াছে বাধা। পাঠ্যপুস্তক হইতে বৈচিত্র্যের গ্রাফিতি অপসারণ এবং উহার প্রতিবাদে সংগঠিত আদিবাসী ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলার ঘটনাও আমরা দেখিয়াছি। 

আমরা গভীর উদ্বেগের সহিত দেখিয়া আসিতেছি, সাধারণভাবে যাহা কিছু এই দেশের বহুপক্ষীয় ও বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতির অংশ, উহার অনেক কিছুই বর্তমানে বিরোধিতার সম্মুখীন হইতেছে। বিশেষ বৈশিষ্ট্য, স্বীয় রক্ষণশীল মত অন্য সকলের উপর চাপাইয়া দিবার অপচেষ্টা করিয়া যাইতেছে একটি মহল। বিস্ময়কর হইল, আলোচ্য ঘটনাবলি এমন সময়ে ঘটিতেছে, যখন দেশে এমন একটি সরকার রহিয়াছে; যাহারা বিশেষত বহু মত ও বহু সংস্কৃতির সুরক্ষা নিশ্চিত করিবার অঙ্গীকারবদ্ধ। সত্য, অতীতের প্রায় সকল আমলে রাষ্ট্রের পরিচালকরা বিভিন্ন অপশক্তির প্রতি এক প্রকার তোষণ নীতি অনুসরণ করায় পরিস্থিতি জটিল রূপ ধারণ করিয়াছে। অতীতের দোহাই দিয়া পার পাওয়া যাইবে না, ইহাও স্বীকার করিতে হইবে।

বারো মাসে তেরো পার্বণের এই দেশে বসন্ত উৎসব কতটা গুরুত্ব বহন করে, উহা কাহারও অজানা নহে। এই জনপদে সহস্রাধিক বৎসরের ভাব আন্দোলনে মরমি কবি লালন সাঁইজির অবদানও সকলের জানা। ফলে এই সকল বিষয়ে বাধা প্রদান কোনো প্রকারেই মানিয়া লওয়া যায় না। আশার বিষয়, প্রতিবেদন অনুসারে শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এক সমঝোতা বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হইয়াছে যে, মধুপুরের লালন স্মরণোৎসব আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হইবে। যেই সকল পক্ষের বাধায় অনুষ্ঠান স্থগিত ঘোষণা করা হয়, তাহারাও ইহাতে সম্মতি প্রদান করিয়াছে। কিন্তু ইহাও স্মরণে রাখা প্রয়োজন, ইতোপূর্বে দিনাজপুরে যাহারা নারী ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠান পণ্ড করিয়া দিয়াছিল, প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তাহারাও পরবর্তী সময়ে টুর্নামেন্টটি পুনরায় অনুষ্ঠিত হইবার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করিয়াছিল। 

অন্যত্র অনুরূপ এক গোষ্ঠী একই প্রকার ফুটবল অনুষ্ঠানে বাধা প্রদান করিয়াছে। আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকার অনতিবিলম্বে অন্যের অধিকার ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের এইরূপ প্রবণতার বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ না করিলে কাজের কাজ হইবে না। জাতি হিসাবে আমাদের অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টিকারী অপশক্তির বিরুদ্ধে সচেতন মহলেরও ধারাবাহিকভাবে সোচ্চার হইবার 
সময় আসিয়াছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বসন ত উৎসব অন ষ ঠ ন কর য় ছ হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

নাম বদলাতে পারে মঙ্গল শোভাযাত্রার

বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলাতে পারে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। নতুন নামের বিষয়ে আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। সব জাতিসত্তার অংশগ্রহণে এবারের শোভাযাত্রায় নতুন রং, গন্ধ ও সুর পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।

গতকাল রোববার সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ে জাতীয়ভাবে বাংলা নববর্ষ এবং চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর নববর্ষ উদযাপন নিয়ে সভা শেষে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। তিনি বলেন, এবার চারুকলা থেকে যে শোভাযাত্রা বের হবে, এতে সত্যিকার অর্থেই নতুন জিনিস দেখা যাবে। এই শোভাযাত্রা হবে বাঙালি, চাকমা, মারমা, গারো– প্রত্যেকের। এ জন্য মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলাতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি প্রথমে আনন্দ শোভাযাত্রা নামে শুরু হয়েছিল। পরে হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈঠকে সবাই যদি একমত হয়, তবে আবার নাম পরিবর্তন হতে পারে। এবারের শোভাযাত্রাটি আর বাঙালিদের শোভাযাত্রা না। কেন্দ্রীয়ভাবে এটিকে ডাকা হবে, যে নামে সবাইকে একটা ছাতার মধ্যে আনা যায়। 

মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি দেওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন,  ‘ইউনেস্কো আগামীবার জানবে এ শোভাযাত্রা আরও বড় হয়েছে, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়েছে। ইউনেস্কোর এটাতে খুশি হওয়ার কারণ হবে, আপত্তি করার কোনো কারণ নেই। আমরা বরং এতদিন অনেকগুলো জাতি-গোষ্ঠীকে মাইনাস করে এসেছিলাম। এটাকে সংশোধন করছি।’ অনুষ্ঠানটি পুনর্বিবেচিত হয়েছে, তাই এর নামটিও পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বিভিন্ন আয়োজন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে রক কনসার্ট হচ্ছে। যেখানে চাকমা, গারো, মারমা ও বাংলা ব্যান্ড– সবাই পারফর্ম করবে। এ ছাড়া চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে বাউল ও ফকিররা গান গাইবেন। ওদের একটা উৎসব হবে সেখানে। ১৪ এপ্রিল সংসদ ভবনের সামনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ড্রোন শোর আয়োজন করা হবে। চীনের দূতাবাসের সহযোগিতায় ড্রোন শো হবে।‌ বিকেলে গান শুনবেন, সন্ধ্যার পর দেখবেন সংসদ ভবনের ওপর বাংলার আকাশের ড্রোন দিয়ে কিছু ইমেজ তৈরি করা হচ্ছে।’ 

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এবার ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় সুরের ধারার গানের অনুষ্ঠান হবে। মেলার মতো আয়োজনও সেখানে করা হবে। ঢাকার নানান জায়গায় উৎসব ছড়িয়ে যাবে। সূর্যাস্তের মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে– এবার আমাদের নির্দেশনা এটা না। কোন অনুষ্ঠান কখন শেষ হবে, সেটা স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা ঠিক করে নেবে।’ তিনি জানান, এবার প্রতিটি জেলা ও উপজেলার জন্য বরাদ্দ দ্বিগুণ হয়েছে। পাশাপাশি যে জেলাগুলোতে ভিন্ন ভাষাভাষী লোকজন আছেন, সেগুলোতে বরাদ্দ আরও বেশি হবে।

এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, নববর্ষের আয়োজন নিয়ে কাল (আজ) বৈঠক হবে। নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা সময় লাগবে। ঈদের ছুটি শেষে সংবাদ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাম বদলাতে পারে মঙ্গল শোভাযাত্রার
  • অচেনা ফোনকলে ঝুঁকি!
  • উৎসবে ডিজিটাল ক্যানভাস
  • মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলাতে পারে, জানালেন উপদেষ্টা ফারুকী
  • এ বছর জাতীয়ভাবে নববর্ষ পালন হবে অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে
  • এক উৎসবে অনেক দেশ
  • চারদিকে এত এত পুরুষের গল্প
  • সাগরে মাছ নেই, জেলে পরিবারে ঈদ আনন্দ ম্লান
  • ‘কন্যা’ দিয়ে প্রশংসিত সজল
  • হাউস অব বাটারফ্লাই-এর সঙ্গে ‘ঈদের খুশিতে জমবে উৎসব’