‘ভালোবাসার টিউবওয়েল’ স্থাপন করে ভালোবাসা দিবসে সৈয়দপুরে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ
Published: 15th, February 2025 GMT
নীলফামারীর সৈয়দপুরে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নিয়েছে ‘আমাদের প্রিয় সৈয়দপুর’ নামের একটি সংগঠন। পানির সংকটে ভুগতে থাকা এলাকায় নলকূপ স্থাপন করেছেন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা। গতকাল শুক্রবার স্থাপন করে আজ শনিবার সকালে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এই নলকূপের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভালোবাসার টিউবওয়েল’।
প্রয়োজনীয় পানির জন্য আর অন্যের বাড়িতে ধরনা দিতে হবে না সুমিয়া (৪৫), হাসিবুন (৪৭) ও আজিয়া বেগমকে (৫২)। গোসলের জন্য দূরেও যেতে হবে না। বিধবা আজিয়া বেগম বলেন, রাতে পানির প্রয়োজন হলে মাঝেমধ্যে অনেক সমস্যায় পড়তেন। বাড়ির সামনে নলকূপ স্থাপন করায় আর কোনো সমস্যা হবে না।
সুমিয়া, নাজমুনসহ অন্য উপকারভোগীরা জানান, গোসলের জন্য মানুষের বাড়ি থেকে পানি আনতে হতো। কিন্তু এখন তাঁদের আর কষ্ট করতে হবে না। তাঁদের বাড়ির পাশেই এখন নলকূপ।
সংগঠনের উপদেষ্টা এসরার আনসারি বলেন, ‘আসলে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ প্রকৃত অর্থে কাদের জন্য হওয়া উচিত, সেটা বোঝানোর জন্যই যেখানে বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন, সেখানে টিউবওয়েল স্থাপন করেছি আমরা। এই এলাকায় বেশ কয়েকটি পরিবারে টিউবওয়েল ছিল না। তা ছাড়া পানির ব্যবস্থা করা অতি সওয়াবের কাজ। এই এলাকার সব মরহুম-মরহুমার ইসালে সওয়াবের নিয়তেই আমরা এই টিউবওয়েল স্থাপন করে দিয়েছি।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জীবনধারণের ভরসা পাহাড়ি ছড়া ও পুকুরের পানি
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার সীমান্তঘেঁষা দুটি ইউনিয়নে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এখানকার মানুষের জীবনধারণের ভরসা পাহাড়ি ছড়া ও পুকুরের পানি।
গতকাল শুক্রবার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের গিলাগড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ি ছড়ায় বালু সরিয়ে গর্ত করে পানি সংগ্রহ করছেন আমেনা খাতুন ও জোসনা বেগম। এ সময় জিজ্ঞাসা করতেই আমেনা বেগম বলেন, ‘আমার কোমর লইয়া খারাইবার পারি না। কষ্ট কইরা এই ঝর্ণার পানি লইয়া খাইয়া বাঁচুন লাগে। সরকার যদি আমাগো একটা ব্যবস্থা করতো, তাইলে বিরাট উপকার অইতো।’
এমন আক্ষেপ শুধু আমেনা বেগমের নয়, ধোবাউড়া এলাকার দক্ষিণ মাইজপাড়া ও ঘোষগাঁও ইউনিয়নের অন্তত ১২টি গ্রামের মানুষের এমন আক্ষেপ দীর্ঘদিনের। সুপেয় পানির জন্য তাদের সংগ্রাম যেন শেষ হবার নয়। মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ছড়ার ময়লা পানি ও পুকুরের ঘোলা পানি দিয়ে গৃহস্থালির কাজ সারতে হয় তাদের। খেতেও হচ্ছে সেই পানি। এতে দেখা দিয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
সরেজমিন দেখা গেছে, দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের গিলগড়া, কাশিপুর, বাকপাড়া, শানখলা, পঞ্চনন্দপুর গ্রাম ও ঘোষগাঁও ইউনিয়নের গোলইভাংগা, চন্দকোনা এলাকা পাহাড়ি অঞ্চল। এসব এলাকায় নলকূপ বসানো যায় না। এসব এলাকায় বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি আর শুকনো মৌসুমে পুকুর ও পাহাড়ি ছড়ার পানি পান করতে হয়। এতে পেটের পীড়া, চর্মসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। এসব গ্রামের হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি থাকায় তাদের পক্ষে গভীর নলকূপ বসানো সম্ভব নয়। গ্রামে দু-একজন অধিক অর্থ ব্যয় করে সাবমারসিবল পাম্প বসালেও বেশির ভাগ মানুষের ভাগ্যে জুটছে না বিশুদ্ধ পানি।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য কার্যালয়ের তথ্যমতে, দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়ন হচ্ছে ধোবাউড়া উপজেলার মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা। এই এলাকা আদিবাসী অধ্যুষিত। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় নলকূপের পাইপ মাটির গভীরে পানির স্তর পর্যন্ত নেওয়া সম্ভব হয় না। ৫০-৬০ মিটার গভীরে গেলেই পাইপ আটকে যায় পাথরে। তাই গভীর নলকূপ বসানো কষ্টসাধ্য। যারা নিজ উদ্যোগে অগভীর নলকূপ বসিয়েছেন, তাদের নলকূপেও শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না।
আদিবাসী নারী ইতি চিসিম ছড়ার পানি সংগ্রহ করতে এসে জানান, তাঁর বাড়িতে নলকূপ না থাকায় পানির জন্য সারা বছরই কষ্ট করতে হয়। তিনি বলেন, ‘আমরার কল (টিউবওয়েল) নাই। আমরা অনেক আগে থাইকা পাহাড়ের ছড়ার পানি খাই। রান্নাবান্নাসহ সব কাজ করি। খালি আমি না, সবারই এই অবস্থা।’
পানির কষ্টের কথা বলতে গিয়ে আক্ষেপ করেন ঘোষগাঁও ইউনিয়নের গোলইভাঙ্গা সীমান্ত এলাকার আমির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বাবারে, আমরা শুষ্ক মৌসুমে হিসাব করে পানি পান করি। টিউবওয়েলে পানি উঠে না। পুকুর আর ছড়াই আমাদের ভরসা।’
দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির জানান, তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার পর তিন বছরে সীমান্ত এলাকায় ১০টি গভীর নলকূপের ব্যবস্থা করেছেন। ওই এলাকার কেউ আবেদন করেননি। আবেদন করলে বিকল্প পদ্ধতিতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী শফিউল আজমের দাবি, সীমান্ত এলাকায় দুটি নলকূপ দেওয়া হয়েছে। কিছু এলাকায় নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। এবার নতুন প্রকল্প সব প্রতিষ্ঠানভিত্তিক।
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিনের ভাষ্য, পাহাড়ি এলাকায় পাথরের কারণে গভীর নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। পাহাড়ি এলাকায় পানি সংকট নিরসনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করতে চাইছেন তারা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ওই গ্রামগুলোতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে।