Samakal:
2025-03-15@11:19:53 GMT

জাতিসংঘ প্রতিবেদন আমলে লউন

Published: 13th, February 2025 GMT

জাতিসংঘ প্রতিবেদন আমলে লউন

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমাইতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেইভাবে সরাসরি বল প্রয়োগের নির্দেশ দিয়াছিলেন, উহা ছিল নজিরবিহীন। তাঁহার ক্ষমতা টিকাইবার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই নির্দেশ প্রতিপালনের পরিণতিতেই ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও হতাহতের ঘটনা ঘটে; যেইগুলি ইতোমধ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনে প্রকাশিত।

মঙ্গলবার প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদনেও উহার স্বীকৃতি মিলিবার বিষয়টি অধিকতর তাৎপর্যপূর্ণ বলিয়া আমরা মনে করি। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে স্পষ্ট– বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে মারণাস্ত্র দিয়া গুলি চালানো, গ্রেপ্তার, আটক, নির্যাতন, চিকিৎসাপ্রাপ্তির অধিকার কাড়িয়া লইবার ন্যায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করিয়াছে আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জাতিসংঘ সংগত কারণেই ইহাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলিয়াছে।

বস্তুত গত বৎসরের জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার শুরু হইতেই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে অনুসন্ধানের দাবি উঠিয়াছিল। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল আসিয়া তদনুযায়ী অনুসন্ধান করে এবং ছয় মাস পর হইলেও সংস্থাটি যেই প্রতিবেদন প্রকাশ করিয়াছে, উহাকে আমরা স্বাগত জানাই।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে শেখ হাসিনা, তৎসহিত তাঁহার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে আসাদুজ্জামান খান কামালকেও দায়ী করা হইয়াছে। অপরদিকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী লইয়া জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের স্মরণে রহিয়াছে, আওয়ামী লীগের সময়েই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‍্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াছিল যুক্তরাষ্ট্র। এতদ্ব্যতীত পুলিশ যেইভাবে বিগত সরকারের ‘দলীয়’ বাহিনীর ন্যায় বিরোধীদের দমন এবং জুলাই-আগস্টে যেইরূপে বল প্রয়োগ করিয়াছিল, তাহার পরিণতিতেই সংস্থাটির শীর্ষ নেতৃত্বের অনেককে গা-ঢাকা দিতে হইয়াছে। র‍্যাব-পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর আচরণের কতটা পরিবর্তন হইয়াছে, উহাও প্রশ্নসাপেক্ষ। যদিও সরকার তাহাদের সংস্কারে কমিশন গঠন করিয়াছে এবং ইতোমধ্যে প্রতিবেদনও প্রকাশ পাইয়াছে। কিন্তু জাতিসংঘ ইহাও উল্লেখ করিয়াছে, পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হইলেও কেবল পুলিশের ব্যাপারেই অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবস্থা লইয়াছে।

জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে জাতিসংঘের প্রতিবেদনেই চৌদ্দশত মানুষ নিহত হইবার বিষয়টি আসিয়াছে; যথায় তাহারা উল্লেখ করিয়াছে, অধিকাংশই বিভিন্ন বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারাইয়াছে। এমনকি শিশুরাও তাহাদের হস্ত হইতে নিষ্কৃতি পায় নাই; আন্দোলনের প্রারম্ভে নারীরা আক্রান্ত হইবার বিষয়েও জাতিসংঘের প্রতিবেদন তাৎপর্যপূর্ণ। জাতিসংঘ ও বিশ্বের অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ আমলে লইয়া মানবতাবিরোধী এই সকল অপরাধের বিচার জরুরি হইলেও সেই লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট নহে বলিয়াই প্রতীয়মান। বিশেষত তাহাদের ক্ষমতা গ্রহণের পর যেইভাবে গড়পড়তা মামলা হইয়াছিল, উহাতে যদ্রূপ নিরপরাধ মানুষের হয়রানির উপলক্ষ রহিয়াছে, তদ্রূপ অপরাধীর পার পাইবার শঙ্কাও তৈয়ার হইয়াছে। বিশেষ করিয়া জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে যাহারা শহীদ এবং আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছেন, তাহাদের ন্যায়বিচারের স্বার্থেই অপরাধীদের বিচার করিতে হইবে।

অধিকতর উদ্বেগের বিষয়, জাতিসংঘ প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, সরকারের পরিবর্তন হইলেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অব্যাহত। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, তৎসহিত নিয়মিত আদালতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সহিত জড়িত বিগত সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করিবার উদ্যোগ প্রশংসনীয় হইলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার বিভাগের বিদ্যমান কাঠামোগত ত্রুটির কারণে সরকারের এই সকল প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হইবার যেই আশঙ্কা জাতিসংঘ করিয়াছে, উহা অমূলক নহে।

আমরা বিশ্বাস করি, জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি যদ্রূপ বিচারের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য পথপ্রদর্শক হইবে, তদ্রূপ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও শিক্ষা গ্রহণ করিবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ল ই আগস ট সরক র র কর য় ছ অপর ধ হইয় ছ হইল ও

এছাড়াও পড়ুন:

গুম-খুনে জড়িত সদস্যদের বিচার চেয়ে র‍্যাব কার্যালয়ের সামনে ‘শহীদি মার্চ’ সদর দপ্তরের সাম

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) যেসব সদস্য গত ১৬ বছরে গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিচারের দাবিতে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। রাজধানীর উত্তরায় র‍্যাব সদর দপ্তরের সামনে জুলাই মঞ্চ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম আজ শুক্রবার বিকেলে এই কর্মসূচি পালন করে।

এই কর্মসূচি থেকে জুলাই গণহত্যার বিচার, এই গণহত্যায় জড়িত আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ অঙ্গসংগঠনগুলো নিষিদ্ধ ঘোষণা, গণহত্যায় অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করার দাবিও জানানো হয়েছে।

‘শহীদি মার্চ’ শীর্ষক এই কর্মসূচিতে জুলাই মঞ্চের প্রতিনিধি সাকিব হোসাইন বলেন, র‍্যাব বাংলাদেশে এমন সব কাজ করেছে, যার ফলাফল হিসেবে জাতিসংঘ ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো র‍্যাবকে নিষিদ্ধের পরামর্শ দিয়েছে। র‍্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক নিজে স্বীকার করেছেন, বিগত সময়ে র‍্যাব গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের সঙ্গে জড়িত ছিল। অথচ সাত মাস পার হলেও এখনো র‍্যাবের যে সদস্যরা গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের তালিকা প্রকাশ করেনি র‍্যাব। পাশাপাশি চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে র‍্যাবের যাঁরা গণহত্যায় জড়িত, তাঁদের শাস্তির আওতায় আনা হয়নি।

জুলাই মঞ্চের আরেক প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বর্তমানে প্রশাসন কোনো সহযোগিতা করছে না। যারা স্বৈরাচারের আমলে নিয়োগ পেয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত জুলাই মঞ্চের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

শহীদি মার্চে সংহতি জানিয়ে গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ বলেন, বিগত সরকার র‍্যাবকে দলীয় বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব সদস্য খারাপ নন। যাঁরা আওয়ামী লীগের দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ কিংবা পদোন্নতি পেয়েছিলেন, তাঁরাই হাসিনাকে রক্ষা করতে ছাত্র–জনতার ওপর গুলি চালিয়েছেন। তাঁদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। পুরো বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না।

জুলাই মঞ্চের প্রতিনিধি অর্নব হুসেইনের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে মুতাছিরুল ইসলাম, মুন্তাজুল ইসলাম, সুরাইয়া আন্তা, আব্দুল নুর তালুকদার, ফুহাদ হাসান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুচলেকা দিয়ে জামিন পেলেন এলজিইডির সেই নির্বাহী প্রকৌশলী
  • সিপিবির কার্যালয়ের সামনে সতর্ক অবস্থানে পুলিশ, বিকেলে শোকমিছিল
  • সিপিবি কার্যালয়ে ধর্ষণবিরোধী কর্মসূচি, নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
  • বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা জব্দ: গাইবান্ধার সেই প্রকৌশলী ছাড়া পেলেন মুচলেকায়
  • গুম-খুনে জড়িত সদস্যদের বিচার চেয়ে র‍্যাব কার্যালয়ের সামনে ‘শহীদি মার্চ’ সদর দপ্তরের সাম
  • ন্যায়বিচারই এই নিষ্ঠুরতার একমাত্র জবাব
  • নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ–সমাবেশ
  • বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের মন্তব্য অযাথিত
  • রাজধানীতে ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার ১৯৭
  • আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতটা প্রস্তুত