ভারতের নয়াদিল্লিতে ১১-১৪ ফেব্রুয়ারি এনার্জি উইক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বেশ কয়েক দিন আগেই সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল, বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এই সম্মেলনে অংশ নেবেন। এ সময়ে সম্মেলনে তাঁর অংশগ্রহণ অনেক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে এখন নানাভাবে টানাপোড়েন চলছে।

গত এক দশকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বাংলাদেশের ভারতনির্ভরতা অনেক বেড়েছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতার ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ ভারতনির্ভর। ভারত থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে বিদ্যুৎ ও ডিজেল।

এ ছাড়া রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রিলায়েন্স এলএনজিভিত্তিক মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্রে রয়েছে ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসি ও রিলায়েন্সের বিনিয়োগ। ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসি অগভীর সমুদ্র ব্লকে ১০ বছর ধরে কাজ করছে। নিউক্লিয়ার প্রকল্পেও ভারত যুক্ত রয়েছে।

শেখ হাসিনার দীর্ঘ স্বৈরাচারী সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যে ভারতনির্ভরতা তৈরি হয়েছে, সেটা বাংলাদেশের জন্য কতটা জনস্বার্থবিরোধী, তা নিয়ে অনেক পর্যালোচনা হয়েছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটা নিয়ে নীতিগত পর্যায়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ভারতনির্ভর এই প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করে সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া এখন জরুরি।

আদানির সঙ্গে জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি

আদানির ঝাড়খন্ড বিদ্যুৎকেন্দ্র (১৬০০ মেগাওয়াট) থেকে বিদ্যুৎ আমদানি নিয়ে বিতর্ক ছিল শুরু থেকেই। ক্রমবর্ধমান ক্যাপাসিটি চার্জ দেশের জন্য আর্থিক বোঝায় পরিণত হওয়ায় হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই নতুন করে আদানির সঙ্গে চুক্তি বাতিলের দাবি উঠেছে।

ঝাড়খন্ডের গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সক্ষমতার ৬২ শতাংশ ব্যবহার করা হয়েছে গত অর্থবছর। ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে ৫ হাজার ৮২৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা, যা মোট ক্যাপাসিটি চার্জের ২০ দশমিক ৩০ শতাংশ।

২০২২-২৩ অর্থবছরে আদানি প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ধরেছিল ১৪ টাকা শূন্য ২ পয়সা, যেখানে দেশে বিদ্যুতের গড় দাম ৮ টাকা ৭৭ পয়সা। নানা প্রশ্ন-বিতর্কের পর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আদানি পাওয়ার প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ধরেছে ১২ টাকা।

আদানি গ্রুপের কাছ থেকে ক্রয়কৃত বিদ্যুৎ আবার বাংলাদেশে ৮ দশমিক ৯৫ টাকায় বিক্রি করে পিডিবি। প্রতিবছর ভর্তুকি বাবদ বাংলাদেশের সরকারকে ব্যয় করতে হয় ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।

আদানির সঙ্গে চুক্তির শর্তগুলো বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থবিরোধী। দাম বাংলাদেশের অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে বেশি। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতার ৩৪ শতাংশের চেয়ে কম বিদ্যুৎ কিনলে পিডিবিকে নির্দিষ্ট অঙ্কের জরিমানা দিতে হবে। বার্ষিক ঘোষিত চাহিদার যত কম বিদ্যুৎ কিনবে, ততটুকু বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কয়লার দাম, জাহাজভাড়া, বন্দরের খরচও দিতে হবে পিডিবিকে।

বাংলাদেশের উৎপাদনক্ষমতা এত বেশি যে আদানির সঙ্গে চুক্তি এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয়। বাংলাদেশকে ২৫ বছর ধরে আদানির করের অন্যায্য বোঝা বহন করতে হবে। এর কারণ হলো, যে ১ বিলিয়ন ডলার কর ভারতীয় সরকার এরই মধ্যে মওকুফ করেছে, চুক্তি অনুযায়ী তা বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হবে।

এই চুক্তি ভবিষ্যৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্প্রসারণের ক্ষেত্রেও বড় বাধা। কারণ, বাংলাদেশ সস্তায় সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে এই সরবরাহ প্রতিস্থাপন করতে চাইলে আদানিকে জরিমানা দিয়ে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র

২০২২ ও ২০২৩ সালে দুটি ইউনিট চালু হওয়ার পর বহুল আলোচিত পরিবেশ–বিধ্বংসী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র যান্ত্রিক ত্রুটি ও কয়লাসংকটে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫ বার বন্ধ হয়েছে। কর্তৃপক্ষ প্রায়ই দাবি করে, রামপালে পরিবেশ ব্যবস্থাপনা মেনে চলা হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, কয়েক বছর আগে মাছ থাকলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য পানিতে ছড়িয়ে পড়ায় মাছ কমতে শুরু করে নদীতে।

এ ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের কারণে চারণভূমির পরিমাণ কমে গেছে, এতে গৃহপালিত পশু পালন কঠিন হয়ে গেছে। জীবিকার বড় একটি ক্ষেত্র নষ্ট হয়ে গেছে, বাধ্য হয়ে দূরদূরান্তে কাজে যেতে হচ্ছে গ্রামবাসীকে।

সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ী কয়লা পরিবহনে দূষিত হচ্ছে সুন্দরবন এলাকার নদী ও বন।

শর্ত ভঙ্গ করে জেটি থেকে উন্মুক্তভাবে খালাস করা কয়লা সরাসরি পড়ছে নদীতে এবং নির্গত পানি পরিশোধন ছাড়াই মিশছে প্রকৃতিতে। এলাকায় বাড়ছে নাইট্রেট, ফসফেট, পারদসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিকের মাত্রা। এতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে জলজ ও বনজ জীববৈচিত্র্যের ওপর।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল না করার পেছনে যুক্তি দেখানো হচ্ছে, বিনিয়োগ হয়ে গেছে, তাই বন্ধ করা যাবে না। এতে দেশের সম্পদের অপচয় হবে। চুক্তি বাতিল করলে ২০ বছরে বিনা লাভে ১৬০ কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করার পক্ষে বাংলাদেশে শক্তিশালী জনমত রয়েছে বাংলাদেশে।

দেশব্যাপী অধিকাংশ মানুষের প্রতিরোধ উপেক্ষা করে পূর্ববর্তী সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এর ফলে যে ঋণের বোঝা জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা পরিশোধ করতে জনগণ বাধ্য নয়।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা কিনতে যে খরচ হয়, তাতে আমদানিনির্ভরই থেকে যায় বিদ্যুৎ খাত। বাতিল করলে প্রতিবছর কয়লা কেনা ও কেন্দ্র পরিচালনার খরচ বাঁচবে। প্রায়ই কয়লার অভাবে উৎপাদন বন্ধ থাকে। তখন বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ জনগণকেই পরিশোধ করতে হয়। পরিবেশ ব্যবস্থাপনার কথা বলা হলেও তা কেবল অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এমনকি ব্যবস্থাপনা নেওয়া হলেও যে ক্ষতি হবে, তা অপূরণীয়। আর্থিক ক্ষতি হয়তো পুষিয়ে নেওয়া যাবে, কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি জনজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল এ বিষয়ে জনগণের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া।

মেঘনাঘাট এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

বাংলাদেশের জন্য আরেকটি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে রিলায়েন্স মেঘনাঘাট এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ভারতীয় ধনকুবের অনিল আম্বানি ও জাপানি কোম্পানি জেরার বিনিয়োগে নির্মিত হয়েছে রিলায়েন্স মেঘনাঘাট এলএনজিভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট। ৭৫০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এলএনজিভিত্তিক প্রকল্পটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। গ্যাসের প্রয়োজনীয় জোগান না থাকায় বিপিডিবির ১ হাজার ৩১৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে।

অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় সবচেয়ে বেশি গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে রিলায়েন্সকে। এটি একটি অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প, যা বাংলাদেশের সংকটের সময় কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না। এমনকি ভবিষ্যতেও অপ্রয়োজনীয় ও ব্যয়বহুল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে চালু হলে জনগণের অর্থে অব্যবহৃত সক্ষমতার কারণে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের দায়ে বাংলাদেশ দায়গ্রস্ত হতে পারে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সরাসরি ভারতনির্ভর না হলেও ভারতের কৌশলগত সম্পৃক্ততা রয়েছে। রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুসারে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনায় মানবসম্পদ উন্নয়নে ভারতের ভূমিকা রাখার কথা রয়েছে। অনেকেই এটাকে শুধুই ভারতের সহযোগিতা হিসেবে দেখেন। এ ক্ষেত্রে ভারতের সুবিধাটা অনেকটাই আড়ালে রয়ে যায়।

ভারতের জন্য দেশের বাইরে (বাংলাদেশে) নিউক্লিয়ার প্রযুক্তিতে জনবল ও পরামর্শ সহায়তা দেওয়ার দৃষ্টান্ত নিউক্লিয়ার সাপ্লাইয়ার গ্রুপে সদস্যভুক্তির পক্ষে ভারতের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াবে। নিউক্লিয়ার সাপ্লাইয়ার গ্রুপ (এনএসজি) পারমাণবিক প্রযুক্তি সরবরাহকারী দেশগুলোর একটি গ্রুপ। এরা পারমাণবিক প্রযুক্তি ও প্রযুক্তিসংক্রান্ত রপ্তানির গাইডলাইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধে কাজ করে। ৪৮টি দেশ এর সদস্য।

ভারত বহুদিন ধরেই এই গ্রুপে সদস্যভুক্তির চেষ্টা করছে। কিন্তু ভারত ‘নিউক্লিয়ার নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি’ স্বাক্ষর করেনি। তাই ভারত এর সদস্য হতে পারেনি। এদিকে রাশিয়া ভারতকে এই গ্রুপে যুক্ত করতে আগ্রহী হলেও চীন এর বিপক্ষে। শান্তিপূর্ণভাবে ভারত পারমাণবিক প্রযুক্তি বা প্রযুক্তিসংক্রান্ত পরামর্শ সরবরাহে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারলে নিউক্লিয়ার সাপ্লাইয়ার গ্রুপে সদস্যভুক্তি বিষয়ে তার অবস্থান জোরদার হয়।

ভারতের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে নিউক্লিয়ার সহযোগিতায় ত্রিপক্ষীয় চুক্তি ভূরাজনৈতিক দিক থেকে কৌশলগতভাবে সুবিধাজনক। রূপপুর প্রকল্পে ভারতের অংশগ্রহণ রাশিয়ার ভারতের নিউক্লিয়ার সাপ্লাইয়ার গ্রুপে সদস্যভুক্তিকে সমর্থন হিসেবে দেখা যেতে পারে। কিন্তু ভারতের সম্পৃক্ততা কৌশলগতভাবে বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

রাশিয়া যেমন ইউক্রেনের নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্র আক্রমণের হুমকি দেয়, তেমনি ভারত কোনো বৈরী পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে আক্রমণের হুমকি দিয়ে বাংলাদেশের জন্য কৌশলগত ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এ ছাড়া ভারত রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র–সম্পর্কিত সংবেদনশীল তথ্য হ্যাক করতে পারে—এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

এ ছাড়া ‘সহযোগিতা চুক্তি’ স্বাক্ষর করলেও ভারতের ‘অসহযোগী’ ভূমিকা পালনের দৃষ্টান্ত রয়েছে। রূপপুর প্রকল্পে ২০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার পেছনে ব্যাংকের নির্ধারিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত খরচে কাজ দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল বলে প্রতীয়মান হয়। বাংলাদেশ এই অতিরিক্ত খরচ বহন করতে রাজি হয়নি। এই ঋণসংক্রান্ত জটিলতায় প্রকল্প বাস্তবায়ন দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ওএনজিসি

ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ওএনজিসি ২০১৪ সালে অগভীর সমুদ্রে গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়। কয়েকবার মেয়াদকাল শেষ হলেও অগভীর সমুদ্র ব্লকে গত ১০ বছরে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।

২০২৪ সালে মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ওএনজিসির নিজস্ব প্রযুক্তি না থাকলেও তারা বিভিন্ন দেশ থেকে পরামর্শক ও সাপ্লাইয়ার নিয়োগ করে তাদের কাজ সম্পন্ন করে।

ওএনজিসির মতো প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দিয়ে বিগত সরকার নিজ দেশে সক্ষমতা তৈরির পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। ভবিষ্যতে এই খরচ বেড়ে কত দাঁড়াবে এবং বাংলাদেশ এই গ্যাস উত্তোলন থেকে আদৌ কোনোভাবে উপকৃত হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী তেল পাইপলাইন দিয়ে এ বছরের শুরুতে ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

ডিজেল কেনা বাবদ বাংলাদেশকে এ বছর পরিশোধ করতে হবে ১ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। নুমালিগড় রিফাইনারি আসামে অবস্থিত ভারতের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি। ভারত সম্প্রতি বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে এর সক্ষমতা বাড়িয়েছে। বাংলাদেশে পরিশোধিত তেল রপ্তানি করতে পারলে নুমালিগড় এই বিনিয়োগ থেকে লাভবান হবে।

অন্যদিকে বাংলাদেশে ইস্টার্ন রিফাইনারির সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা হলেও এই তেল পাইপলাইন নির্মাণের কারণ দেখিয়ে সক্ষমতা বাড়ানোর প্রকল্পটি ঝুলিয়ে রাখা হয়। বিদেশ থেকে অপরিশোধিত তেল এনে দেশের পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধন করে ডিজেল উৎপাদন করা হলে সাশ্রয় হতো ব্যারেলপ্রতি ১১ ডলার। নিজ দেশের সক্ষমতা না বাড়িয়ে ও দীর্ঘ মেয়াদে সাশ্রয় না করে এভাবে ভারতের ওপর নির্ভরতা বাংলাদেশের জ্বালানিনিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে।

আঞ্চলিক সুবিধা বনাম ভারতীয় আধিপত্য

সার্কের প্রস্তাবিত আঞ্চলিক গ্রিড সুবিধা সৃষ্টি করলে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশ তার প্রয়োজন অনুযায়ী বিদ্যুৎ কেনাবেচা করতে পারত। এতে সুফল সব দেশের মধ্যে একটি সমতা ও সমন্বয় হতো। বিশেষ অঞ্চলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন করে গ্রিডে সরবরাহ করে এক অঞ্চলের মানুষ অন্য অঞ্চলে বিদ্যুৎ–সুবিধা পেত। আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রস্তুত না করে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। অতিরিক্ত ভারতনির্ভরতা কৌশলগতভাবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

এই ঝুঁকির দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভারতনির্ভরতা নয়, জ্বালানি খাতে ভারতের ওপর নির্ভরতা বাড়িয়ে, সহযোগিতার নামে অসম চুক্তি ও সুবিধা আদায় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অসম কৌশলগত সম্পর্ক নির্মাণ করেছে।

এসব বিষয়ে ‘সংস্কারপন্থী’ সরকারের একটি সুচিন্তিত অবস্থান থাকা প্রয়োজন ছিল। একটি রোডম্যাপ তৈরি না করে জ্বালানি বিষয়ে কোনো আলোচনা আদৌ জনস্বার্থমুখী হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

ভারত রাষ্ট্রের আধিপত্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান হওয়া উচিত, অসম চুক্তিগুলো পুনর্বিবেচনা ও বাতিল করা। শুধু বাগাড়ম্বর করে এটা সম্ভব নয়; এ ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

মোশাহিদা সুলতানা সহযোগী অধ্যাপক, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এলএনজ ভ ত ত ক ল দ শ র জন য পর শ ধ করত র প রকল প র ফ ইন র ব ত ল কর ম ঘন ঘ ট সরক র র সহয গ ত সরবর হ পর ব শ ব যবহ অবস থ সদস য ন করত আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

এলআরবির ড্রামার রোমেলের নতুন ব্যান্ড

আইয়ুব বাচ্চু মৃত্যুর পর ৭ বছর চলছে। এরপর তাঁর গড়া দলটি আর নেই। ব্যান্ড এলআরবির কার্যক্রম বন্ধ। তবে তাঁর দলের সহযাত্রীরা নানাভাবে সংগীতচর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ নিজের মতো করে গাইছেন। গানও বানাচ্ছেন। এর মধ্যে আজ বুধবার এলআরবির ড্রামার রোমেল জানালেন, তিনি একটি গানের দল তৈরি করেছেন। আইয়ুব বাচ্চুর চিন্তাচেতনাকে ধারণ করেই এই গানের দল নিয়ে এগিয়ে যেতে চান। গানের দলের নাম দিয়েছেন রোমেল অ্যান্ড ফ্রেন্ডস।

নতুন কোনো গান প্রকাশ না করলেও রোমেল অ্যান্ড ফ্রেন্ডস তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। এরই মধ্যে দেশের কয়েকটি স্থানে এই দল নিয়ে স্টেজ শো করেছে। তবে গানের দলের উদ্যোক্তা রোমেল বললেন, ‘আমরা নতুন গান তৈরি করছি। ইচ্ছা আছে আগামী ঈদে নতুন গান প্রকাশের।’

আরও পড়ুননতুন গান নিয়ে এল নতুন এলআরবি১৮ অক্টোবর ২০২১আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে ব্যান্ড এলআরবি সদস্যরা, সবার বামে রোমেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ