যুদ্ধের অন্তরালের দৃশ্য আঁকার চেষ্টা
Published: 12th, February 2025 GMT
আগ্রাসন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যুদ্ধের মূল কারণ। এটা কি সব সময় কোনো জাতির চিরলালিত সমন্বিত লালসা, ধর্ষকামের প্রতিফলন থেকে উৎসারিত, নাকি নিরাপত্তাহীনতার কথিত বয়ান সেখানে প্রাসঙ্গিক? যুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা কি মানব সমাজের শাশ্বত প্রবৃত্তি? এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে ‘রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ: সত্য-মিথ্যার লড়াই’ গ্রন্থে। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে হলেও এতে চলমান বিশ্বের ভূরাজনৈতিক নানা বিষয়ে লেখক বদরুল আলম খান তাঁর মত দিয়েছেন। উঠে এসেছে সাম্প্রতিক বিশ্ব ইতিহাসের খণ্ডাংশ।
বইটিতে যুদ্ধের সূত্রপাতে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। কীভাবে দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার লড়াইয়ের ক্ষেত্র হয়ে উঠল ইউক্রেন এবং সেখানে কীভাবে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটল, তার বিশ্লেষণ পাওয়া যায় এই বইয়ে। এতে এ যুদ্ধের রাজনৈতিক, সামাজিক ও ভূকৌশলগত প্রেক্ষাপট তুলে ধরার চেষ্টা রয়েছে। সেই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যাতেও আলোকপাত করা হয়েছে।
বইটিতে সব মিলিয়ে রয়েছে আটটি অধ্যায়। প্রথম অধ্যায় ‘বিভক্ত ইউক্রেন’-এ লেখক ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ সামাজিক-সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বকে তুলে ধরেছেন। দেশটির পূর্বাঞ্চলের মানুষ রাশিয়ার দিকে এবং পশ্চিমাঞ্চল কীভাবে ইউরোপের দিকে ঝুঁকে ছিল, তার বিবরণ রয়েছে। এ বিভাজনের অন্যতম কারণ ভাষা ও সংস্কৃতি। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকার প্রধান ভাষা রুশ।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে ‘যুদ্ধের পটভূমি’ উল্লেখ করে এর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোকে দায়ী করা হয়। তৃতীয় অধ্যায়ে ইউক্রেনের স্বাধীনতার প্রসঙ্গ এসেছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার ৯ দিন আগে ১৯৯১ সালে স্বাধীন হয় দেশটি। চতুর্থ অধ্যায়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সংঘাতের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে জাতীয়তাবাদ। এ অধ্যায়ের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘দুই জাতীয়তাবাদের সংঘাত’। পঞ্চম অধ্যায়ের শিরোনাম ‘ফ্যাসিবাদী ক্যু ও মার্কিন ষড়যন্ত্র’। ২০১৪ সালে রাশিয়া কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী ইউক্রেনে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে। ওই বছর থেকে পরবর্তী ১০ বছরের ঘটনা প্রবাহ এ অধ্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে।
বইটির ষষ্ঠ অধ্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার ছায়াযুদ্ধের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। এ অধ্যায়ে লেখক দেখাতে চেষ্টা করেছেন, মার্কিন ষড়যন্ত্রের কারণে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। সপ্তম অধ্যায়ে যুদ্ধ শুরু এবং সেখানে ইউরোপ, ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াল, সে বর্ণনা আছে। অষ্টম অধ্যায়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নীতির সমালোচনা। এতে এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের সাদ্দাম হোসেনের পতন প্রসঙ্গ।
বইটিতে লেখক কিছু ক্ষেত্রে ভ্রমণ কাহিনির আদলে বর্ণনা করে গেছেন, যা সহজ ও সুপাঠ্য। সেখানে রুশ ঐতিহ্যসহ নানা দিক ফুটে উঠেছে। ইতিহাস উঁকি দিয়েছে জীবন্ত হয়ে। ইউক্রেন ও বেলারুশের সঙ্গে রাশিয়ার ঐতিহাসিক সম্পর্কের দিকও রয়েছে। বইটিতে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্ণনার ভেতর দিয়ে ভূরাজনীতির চিত্র ফুটে উঠেছে। এসেছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের নানা সংকটের কথাও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র ‘নিজের স্বার্থে’ একটি বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলেছে এবং ডলারকে একমাত্র বৈশ্বিক বিনিময় মুদ্রা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে, সে বিষয়ও রয়েছে। বইতে চীনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিংয়ের উত্থানের প্রসঙ্গ এসেছে।
বদরুল আলম খান পড়াশোনা করেছেন রাশিয়ায়। এ কারণে রাশিয়া ও ইউক্রেনের ইতিহাস-সংস্কৃতি কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে তাঁর। বিশ্লেষণের ধরন অনেকটা রুশ বয়ান থেকে উৎকলিত। সে ক্ষেত্রে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে বারবার কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলেও রাশিয়াকে তেমন দোষারোপ করা হয়নি। স্বাধীন দেশে আগ্রাসনকারী রাশিয়াও যে আরেকটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, বইটি পাঠকালে অবশ্যই সেটা মাথায় রাখা জরুরি। সর্বোপরি বইটি থেকে পাঠক ভূরাজনীতির নানা প্রেক্ষাপট সম্পর্কে মূল্যবান ধারণা পাবেন।
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ: সত্য-মিথ্যার লড়াই ।। বদরুল আলম খান ।। প্রবন্ধ ।। প্রকাশক: বাতিঘর ।। প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা ।। পৃষ্ঠা: ১৬৮ ।। মূল্য: ৪৫০ টাকা
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বইম ল র শ ইউক র ন য দ ধ ইউক র ন র প রসঙ গ র জন ত বইট ত
এছাড়াও পড়ুন:
মডেল মেঘনাকে কারাগারে পাঠানোর নিন্দা এমএসএফের
মডেল মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। তারা বলেছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও মামলা ছাড়া কাউকে আটক রাখা আইন পরিপন্থী ও মানবাধিকার লঙ্ঘন।
আজ শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই নিন্দা জানায় এমএসএফ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট কোনো মামলা না করে মেঘনা আলমকে দুই দিন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হেফাজতে রেখে তৃতীয় দিন আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এমএসএফ মনে করে, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী, ক্ষতিকর কাজ থেকে বিরত রাখতে সরকার যেকোনো ব্যক্তিকে আটক রাখার আদেশ নিতে পারে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে মিথ্যাচার ছড়ানোর মাধ্যমে আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক অবনতির চেষ্টা করা এবং দেশকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে মেঘনাকে হেফাজতে রাখা হয়েছে। কিন্তু তিনি কী ধরনের ষড়যন্ত্র করেছেন, তা ডিএমপির পক্ষ থেকে পরিষ্কার করে বলা হয়নি।
আরও পড়ুনবিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ, মডেল মেঘনা কারাগারে১১ এপ্রিল ২০২৫উল্লেখ্য, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী আজ প্রথম আলোকে বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি ক্ষতিকর কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, সে ক্ষেত্রে ক্ষতিকর কাজ থেকে তাঁকে নিবৃত্ত রাখার জন্য আটক করতে পারেন। মডেল মেঘনা আলম ক্ষতিকর কাজের সঙ্গে যুক্ত। যে কারণে তাঁকে গতকাল রাতে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে আটক রাখার আবেদন করে পুলিশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুযায়ী আদালত তাঁকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিন আটক রাখার আদেশ দেন।
আরও পড়ুনমডেল মেঘনা আলমকে ‘নিরাপত্তা হেফাজতে’ রাখার কারণ হিসেবে যা বলল পুলিশ১১ এপ্রিল ২০২৫