ইউক্রেন ‘কোনো এক সময় রাশিয়ার হয়ে যেতে পারে’ বলে ধারণা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমন সময় তিনি এ মন্তব্য করলেন, যখন তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভান্স আগামী সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা করছেন ট্রাম্প। স্থানীয় সময় গত সোমবার ফক্স নিউজে সম্প্রচার হওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই সংঘাত নিয়ে কথা বলেন তিনি।

সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, তারা (ইউক্রেন) একটি চুক্তি করতে পারে, না-ও করতে পারে। তারা একদিন রাশিয়ার হয়ে যেতে পারে কিংবা রাশিয়ার না-ও হতে পারে। ইউক্রেনকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার বিনিময়ে মুনাফা অর্জনের ওপরও জোর দেন ট্রাম্প। এ ক্ষেত্রে দেশটির বিরল খনিজের মতো প্রাকৃতিক সম্পদের বাণিজ্যের বিষয়ে জোর দেন তিনি।

শিগগিরই নিজের ইউক্রেনবিষয়ক বিশেষ দূত কেইথ কেলগকে কিয়েভে পাঠানোর কথা সোমবার নিশ্চিত করেছেন ট্রাম্প। যুদ্ধ বন্ধে কেইথকে একটি রূপরেখা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ট্রাম্পের মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পর ক্রেমলিন বলেছে, ইউক্রেনের উল্লেখযোগ্য অংশ ‘রাশিয়ার অংশ হতে চায়’। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ইউক্রেনের পরিস্থিতি বহুলাংশে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যকেই প্রতিফলিত করে।

২০২২ সালে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল একীভূত করে নেয় রাশিয়া। বিষয়টি তুলে ধরে পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, বাস্তবতা হলো ইউক্রেনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রাশিয়ায় একীভূত হতে চায় এবং ইতিমধ্যে হয়েছেও। এ ধরনের কোনো বিষয়ে হওয়া না হওয়ার ক্ষেত্রে সমান সম্ভাবনা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে যুদ্ধ বন্ধে সম্ভাব্য চুক্তির বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গত রোববার নিউইয়র্ক পোস্ট-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এ ফোনালাপের বিষয়টি স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেনি ক্রেমলিন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র

এছাড়াও পড়ুন:

শত বাগানে ১৩ লাখ গোলাপ, অপেক্ষা ভালোবাসা দিবসের

কক্সবাজার শহর থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়ন। একসময় বরইতলীর বিভিন্ন গ্রামে বরই চাষ হতো। তবে এখন হচ্ছে গোলাপের চাষ। এ কারণে ইউনিয়নটি পরিচিত হয়ে উঠেছে গোলাপ গ্রাম নামে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে মহাসড়কের ওপর দিয়ে যেতে অতিক্রম করতে হয় চকরিয়ার এই বরইতলী এলাকা। মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটার অংশে দুপাশে চোখে পড়ে লাল গোলাপের বাগান। বাতাসের সঙ্গে ভেসে আসা গোলাপের ঘ্রাণ মোহিত করে সড়কের যাত্রীদেরও।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কের দুপাশে বিভিন্ন বাগানজুড়ে ফুটে আছে লাল গোলাপ। দূর থেকে দেখে মনে হয়, কেউ যেন সবুজের ওপর লালগালিচা বিছিয়ে রেখেছে। বেলা ১১টার দিকে সড়কের পূর্বপাশের একটি বাগানে ঢুকে দেখা যায়, সাতজন শ্রমিক বাগান থেকে গোলাপ কাটছেন। দূরে দাঁড়িয়ে গোলাপ কাটার কাজ তদারক করছেন বাগানের মালিক ইদ্রিস আহমদ।

রিপন দে (৪০) নামে বাগানের এক শ্রমিক বলেন, সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় ৮ শতাধিক গোলাপ কেটেছেন (সংগ্রহ) তিনি। রিপন জানান, প্রতিদিন সকালের দিকে গোলাপ কাটেন তিনি। তারপর সেই গোলাপ গাড়িতে করে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম। বাগানের নারী শ্রমিক শিল্পী রানি দে (৫৫) বলেন, তিন ঘণ্টায় তিনি সাত শতাধিক গোলাপ কেটেছেন। ১০ বছর ধরে তিনি বাগানে গোলাপ কাটছেন।

বাগানের মালিক ইদ্রিস আহমদের (৬০) সঙ্গেও কথা হয়। তিনি বলেন, ২৩ বছর ধরে তিনি গোলাপ চাষ করে আসছেন। প্রতিবছর তিনি ৫০ লাখের বেশি গোলাপ বিক্রি করেন। আয় করেন ২৫ লাখ টাকার বেশি। অনেক সময় গোলাপ বিক্রি হয় না, গাছেই নষ্ট হয়। তখন মনটা খারাপ হয়ে যায়। এ ধরনের সময়ে ফুল বিনা মূল্যে বিতরণের জন্যও কাউকে পাওয়া যায় না।

বাগানটির মালিক ও শ্রমিকেরা জানান, ৬ কানির (কানিতে ৪০ শতক) বাগানটিতে গাছ আছে ২৪ হাজার। প্রতিটি গাছে ফুটেছে দুই থেকে পাঁচটি গোলাপ। প্রতিদিন ৬ হাজার গাছ থেকে প্রায় ৩০ হাজার গোলাপ কাটা হয়। তারপর সেই ফুল পাঠানো হয় চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় এলাকার ফুলের দোকানগুলোয়। প্রতিটি গোলাপ সাধারণত পাইকারিতে বিক্রি হয় দেড় টাকায়। ইদ্রিস আহমদ বলেন, গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি করেছেন ১০ টাকা দরে। এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি হতে পারে। ওই দিন তিনি ৬০ হাজার গোলাপ বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ইদ্রিস আহমদের দক্ষিণ পাশে আবদুল মান্নানের তিন কানির আরেকটি গোলাপবাগান। এই বাগানের প্রতিটি গাছে ফুটেছে তিন থেকে চারটি লাল গোলাপ। সকালের কয়েক ঘণ্টায় গাছগুলো থেকে কাটা হয় দেড় হাজারের বেশি গোলাপ। এই ফুলও চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় এলাকায় সরবরাহ করা হবে জানিয়ে আবদুল মান্নান (৫৫) বলেন, একসময় বাগানের এ জমিতে তামাকের চাষ হতো। লাভজনক তামাক চাষ বাদ দিয়ে তিনিসহ গ্রামের ৪০ জন চাষি ৬০ কানি জমিতে ছোট-বড় ১৫টি গোলাপবাগান সৃজন করেন। প্রথম দিকে চাষিরা লাভবান হলেও এখন ফুলের বাজার মন্দা।

গোলাপ বাগানে এক নারী শ্রমিক কাজ করছেন। সম্প্রতি চকরিয়ার বরইতলী ইউনিয়নে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শত বাগানে ১৩ লাখ গোলাপ, অপেক্ষা ভালোবাসা দিবসের
  • বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ কোথাও বেড়েছে, কোথাও কমেছে