নিশ্চিত করুন প্রকাশকের নিরাপত্তা
Published: 11th, February 2025 GMT
সোমবার অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ‘সব্যসাচী’ নামক এক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের অস্থায়ী বিপণিকেন্দ্রে যেই ঘটনা ঘটিয়াছে, উহা কেবল নিন্দনীয়ই নহে; যথেষ্ট উদ্বেগজনক বটে। সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক দল ব্যক্তি নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখক তসলিমা নাসরিনের বই বিক্রয়ের অভিযোগ তুলিয়া হট্টগোলের সূচনা করে। প্রকাশক শতাব্দী ভব প্রতিবাদ করিলে হট্টগোলকারী জনতা তাঁহার উপর হামলা করিতে উদ্যত হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসিয়া প্রকাশককে স্বীয় জিম্মায় লইয়া বিপণিকেন্দ্রটি বন্ধ করিয়া দেয়। সামাজিক মাধ্যমে বিস্তৃত ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, পুলিশের সুরক্ষা অবস্থাতেই কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি শতাব্দী ভবের উপর হামলা চালায়। গ্রন্থ বিপণনের ফলস্বরূপ এহেন দলবদ্ধ হট্টগোল ও হামলায় আমরা উদ্বিগ্ন না হইয়া পারি না। আমরা মনে করি, যেই কোনো গ্রন্থ লইয়া যে কাহারও ভিন্নমত বা আপত্তি থাকিতে পারে। দেশে সেই ভিন্নমত বা আপত্তি প্রকাশের আইনসংগত রীতিও প্রচলিত। আমরা মনে করি, কোনো অপছন্দনীয় লেখা বা শিল্পকর্মের জবাব লেখনী বা বক্তব্য পেশের মধ্য দিয়া প্রদান করাই উত্তম। তবে কেহ উক্ত বিষয়ে প্রচলিত আইনের আশ্রয় গ্রহণ করিলে আপত্তির কিছু নাই। কারণ সেই ক্ষেত্রে বিষয়টি আদালতে যুক্তি-তর্কের মধ্য দিয়াই ফয়সালা হইবে। কিন্তু আলোচ্য ক্ষেত্রে যেইভাবে প্রকাশকের উপর হামলা করা হইয়াছে; সংবিধানস্বীকৃত মতপ্রকাশের অধিকার বা চিন্তাচর্চার জন্য উহা অশনিসংকেতস্বরূপ।
স্পষ্টত, মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রকাশকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতে ব্যর্থ হইয়াছে। স্মরণ করা যাইতে পারে, একুশে গ্রন্থমেলায় বই বিক্রয়ের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রহিয়াছে। ‘সব্যসাচী’ সেই নির্দেশনা লঙ্ঘন করিলে মেলা কর্তৃপক্ষ তাঁহার বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে পারিত। তাহা না করিয়া কার্যত উক্ত প্রকাশককে উচ্ছৃঙ্খল জনতার হস্তে তুলিয়া দেওয়া হইয়াছে। কারণ, সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তসলিমা নাসরিনের গ্রন্থ বিক্রয়ের জন্য বিপণিকেন্দ্রটি গুঁড়াইয়া দিবার হুমকি পূর্বেই দেওয়া হইয়াছিল। অর্থাৎ গ্রন্থমেলায় সৃষ্ট আলোচ্য পরিস্থিতি মোকাবিলা বা পরিহার কিংবা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করিতে কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সময় পাইয়াছিল। এই সুযোগ কেন গৃহীত হয় নাই– সেই প্রশ্নের জবাব কর্তৃপক্ষকে দিতেই হইবে। স্মরণে রাখিতে হইবে, প্রকাশকের এইরূপ হেনস্তা ও হামলা কেবল একটি বিপণিকেন্দ্রেই সীমাবদ্ধ থাকিবার নিশ্চয়তা কেহ দিতে পারে না; গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রকাশকেরও নির্বিঘ্নে থাকিবার নিশ্চয়তা নাই।
এইবারের বইমেলা অনুষ্ঠিত হইতেছে এমন রাজনৈতিক বাস্তবতায়, যথায় শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পূর্বেকার সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করিয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় হিমশিম খাইতেছে। এই প্রেক্ষাপটে অনাকাঙ্ক্ষিত যেই কোনো পরিস্থিতি পরিহারের লক্ষ্যে অধিকতর সতর্কতা কাম্য ছিল। কেহ যাহাতে আইন স্বীয় হস্তে তুলিয়া লইতে না পারে, সেই বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতা জরুরি ছিল। দুর্ভাগ্যবশত, গ্রন্থমেলা কর্তৃপক্ষ উভয় ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়াছে। অবশ্য সোমবার রাত্রিতে প্রদত্ত বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আলোচ্য ঘটনার কঠোর নিন্দা জানাইয়া বলিয়াছেন, একুশে গ্রন্থমেলা এই দেশের সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, চিন্তক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষের মিলনস্থল। তথায় এই প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা বাংলাদেশের উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চাকে ক্ষুণ্ন করে। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের মর্যাদার প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করে। তিনি পুলিশ ও বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে এই ঘটনার তদন্ত এবং দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনিবার যেই নির্দেশ দিয়াছেন, উহা দ্রুত প্রতিপালিত হইবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন পরিবহন সেবা চালুর প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ
কুমিল্লা নগরীর জাঙ্গালিয়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কুমিল্লা-চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কে ‘আইদি এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি পরিবহন সেবা চালু করা হয়েছে। কিন্তু উদ্বোধনের পরপরই তা বন্ধের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন অন্যান্য পরিবহনের শ্রমিকরা। এতে প্রায় এক ঘণ্টা বাস চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে আইদি এন্টারপ্রাইজের পরিবহন সেবা উদ্বোধন করা হয়। এতে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা জেলা শাখার আহ্বায়ক মুহাম্মাদ সাকিব হুসাইন, কুমিল্লা মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব মুহাম্মদ রাশেদুল হাসান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা জেলা শাখার সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন মুহাম্মদ রুবেল, আইদি এন্টারপ্রাইজের উপদেষ্টা তাজুল ইসলাম সুমন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, উদ্বোধন শেষে কুমিল্লা থেকে চাঁদপুরগামী আইদি এন্টারপ্রাইজের বাস ছেড়ে যাওয়ার পথে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় অবরোধ করেন উত্তেজিত পরিবহন শ্রমিকরা। এলোপাতাড়ি বাস রেখে তারা কুমিল্লা-চাঁদপুর সড়ক বন্ধ করে দেন। এ সময় উভয় পক্ষের বাগ্বিতণ্ডার এক পর্যায়ে পরিবহন শ্রমিকদের হামলায় মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ফারুক নাহিয়ানসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ সময় প্রায় এক ঘণ্টা সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান, নতুন একটি পরিবহন সেবা উদ্বোধনের পর অন্যান্য পরিবহনের শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে সাময়িক যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
আইদি এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর পারভেজ আলমের ভাষ্য, সব নীতিমালা মেনে রুটপারমিটের জন্য আবেদন করা হলেও বাহার (সাবেক এমপি বাহার) সিন্ডিকিটের বিরোধিতার কারণে তারা এতদিন সেবা চালু করতে পারেননি। এতে কয়ক কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
কুমিল্লা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি অধ্যক্ষ কবির আহম্মেদ সমকালকে জানান, রুটপারমিট দেয় জেলা প্রশাসন। এতদিন আইদি বাস সার্ভিস কেন অনুমোদন পায়নি তা জেলা প্রশাসন ভালো বলতে পারবে। তিনি কুমিল্লার বাইরে থাকায় বাসস্টেশনে কী ঘটেছে, তা জানা নেই তাঁর।