গোসল-খাওয়ার পানি সংকট, বাথরুম মাঠে
Published: 9th, February 2025 GMT
‘বৃষ্টি নামলে পোলাপাইন নিয়ে ঘরের এক কোনায় ঘাপটি মেরে বসে থাকি, কখন বৃষ্টি থামবে। বৃষ্টি না থামলে কখনও কখনও সারারাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে হয়। খাওয়া-গোসলের পানি নেই। বাথরুম করতে হয় খোলা মাঠে।’ কথাগুলো বলেন পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের শিমুলেরটেক আশ্রয়ণ প্রকল্পের এক বাসিন্দা।
২০০৪ সালে সান্তানপাড়া গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নির্মাণ করে ভূমি ও গৃহহীন ১৩০টি পরিবারকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১৩টি ব্যারাকের প্রতিটিতে ১০টি পরিবার বসবাস করে। কয়েক বছর আগে ৭টি ব্যারাকের কিছু টিনের চাল মেরামত করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত ৬টি ব্যারাকের ৬০টি পরিবারের ঘর মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দীর্ঘদিন মেরামত না হওয়ায় ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রায় ১২০০ মানুষ বাস করছে। বিশুদ্ধ পানি সংকট, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনসহ নানা সমস্যায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঘরগুলোর খুঁটি মরিচা ধরে খসে পড়ছে। সামনে থেকে ঘরগুলোর অবস্থা মোটামুটি ভালো দেখা গেলেও ভেতরে ঢুকলে দেখা যায় মাথার ওপর টিনের চালে মরিচা ধরে ছিদ্র হয়ে গেছে। ঘরের দরজা-জানালা ও বেড়া ভাঙা। সামান্য বৃষ্টি হলেই চালের ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে।
কয়েকজন বাসিন্দা জানান, খাওয়া-দাওয়া ও গোসল করার জন্য সরবরাহ করা নলকূপে এক ফোঁটা পানিও ওঠে না। তাদের গোসল ও মাছ চাষের জন্য একটি পুকুর খনন করা হয়েছিল, তাও শুকিয়ে গেছে। আলেয়া বেগম নামে এক গৃহবধূ আক্ষেপ করে বলেন, ‘বাথরুমের সমস্যার কথা আর কী বলব! খোলা মাঠে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। খোলা বিলের মধ্যে গোসল করে কাপড় পাল্টানো যে কী লজ্জার, তা নারী না হলে কেউ বুঝবে না। এমনই পোড়া কপাল নিয়ে জন্ম নিয়েছি; রোদে পুড়ি, বৃষ্টিতে ভিজি, তারপরও আমাদের খবর নেয় না কেউ।’
আশ্রয়ণের বাসিন্দা বাউছার ও হাবিবুর জানান, অভাবের সংসারে পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগাড় করাই কঠিন। এর পর ভাঙা ঘর মেরামত করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ অবস্থায় রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে বসবাস করতে হচ্ছে।
কথা হয় আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ; দিন আনি দিন খাই। সরকার আমাদের আশ্রয় দিয়েছে। এখানে হয়েছে দুর্ভোগের আরেক নাম। ঘরগুলোর টিনের চাল মরিচা ধরে ছিদ্র হয়ে আছে। আমাদের বাথরুমগুলোর অবস্থা খুব খারাপ; ময়লা যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। বাথরুমের দুর্গন্ধে আমরা ঘরে থাকতে পারি না।’
তাঁর ভাষ্য, এই আশ্রয়ণ যখন নির্মাণ করা হয়, তখন এখানে খাওয়ার পানি ও গোসল করার জন্য ১৩টি নলকূপ ও একটি পুকুর করে দেওয়া হয়েছিল। ওই পুকুর এখন শুকিয়ে গেছে। ১০টি নলকূপ নষ্ট হয়ে আছে। বাকি তিনটি নলকূপেও ঠিকমতো পানি ওঠে না। প্রশাসনের কোনো লোক আসে না এখানে। সরকারি কোনো অনুদানও দেওয়া হয় না।
শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘এবারের শীতে আমরা বাচ্চাদের নিয়ে অতি কষ্টে দিন পার করলেও একটি সরকারি কম্বলও আমাদের ভাগ্যে জোটেনি। নির্বাচন-ভোটের সময় হলে আমাদের এখানে প্রার্থীরা আসেন। ভোট শেষ হলে আমাদেরও সবাই ভুলে যান। নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা আমাদের দুর্ভোগের কথা শুনে সমাধান করার আশ্বাস দিলেও পরে আর কোনো খবর নেন না।’
ইউএনও মাসফিকা হোসেন জানান, প্রকল্পটি পরিদর্শন করে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম দ র পর ব র নলক প
এছাড়াও পড়ুন:
মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে তা হবে নির্বাচনের গণহত্যা: জামায়াত আমির
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। মৌলিক কিছু সংস্কার করা না গেলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। এই অবস্থায় নির্বাচন দেওয়া হলে, তা হবে নির্বাচনের জেনোসাইড বা নির্বাচনের গণহত্যা। আমরা এটা চাই না। আমরা চাই, সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির পর নির্বাচন।
রোববার বিকেলে জামায়াতের সিলেট মহানগর শাখা আয়োজিত শিক্ষা উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কখনও একটু ভালো, কখনও খারাপ হয়েছে। কিন্তু খুব ভালো কখনও ছিল না। খুব ভালো কখনও হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতাদের সিদ্ধান্ত সঠিক না হবে। ওই সিদ্ধান্ত যখন সঠিক হবে, সততা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হবে, তখন শুধু আইনশৃঙ্খলা নয়; সবকিছুর উন্নতি হবে।
নির্বাচিত সরকার সব সময় ভালো হয় না মন্তব্য করে জামায়াত আমির বলেন, নির্বাচিত সরকার দাবি করে গত ১৫ বছর ফ্যাসিস্টরা ক্ষমতা আঁকড়ে ছিল। তারাই তো দেশের এই অবস্থা করে গেছে। সরকার নির্বাচিত হলেই যে ভালো হবে, তা বলা যাবে না। ভালো সরকার হতে হলে ভালো মানুষের দ্বারা সরকার গঠিত হতে হবে। যাদের অতীত ও বর্তমান ভালো, তাদের দিয়েই ভবিষ্যৎ ভালো হবে– এটা আশা করা যায়।
এর আগে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ সোলেমান হলে সিলেট মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়। নগর জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি শাহজাহান আলীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দৈনিক জালালাবাদ সম্পাদক মুকতাবিস-উন-নূর, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুলতান আহমদ, আব্দুস সালাম আল মাদানী প্রমুখ।