আইভিআর কলের মাধ্যমে বাড়ছে প্রতারণার ঘটনা
Published: 9th, February 2025 GMT
প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে প্রতারকদের প্রতারণার কৌশলও পাল্টাচ্ছে। সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ হাতিয়ে নিতে প্রতারকেরা নতুন নতুন উপায় বের করছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দেশের ব্যাংক ও সরকারি সংস্থার ইন্টারঅ্যাকটিভ ভয়েস রেসপন্স (আইভিআর) প্রযুক্তি ও কার্যক্রম নকল করে প্রতারণার ঘটনা বেড়েছে। এই ভুয়া আইভিআর কল প্রতারণার মাধ্যমে সহজেই যেকোনো ব্যক্তি আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারেন।
আইভিআর হলো একটি স্বয়ংক্রিয় ফোনব্যবস্থা, যা সাধারণত বিভিন্ন ব্যাংক, মোবাইল অপারেটর ও গ্রাহকসেবাকেন্দ্র ব্যবহার করে থাকে। এ প্রযুক্তিসুবিধার মাধ্যমে গ্রাহকেরা নিজেদের ফোনের কিপ্যাড চেপে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য ও সেবা নিতে পারেন। যেমন ‘১ চাপুন ইংরেজির জন্য’ বা ‘২ চাপুন ব্যালেন্স জানার জন্য’। প্রতারকেরা এখন এই প্রযুক্তির নকল সংস্করণ তৈরি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করছে। তারা ব্যাংক বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে ভুয়া আইভিআর কল করে গ্রাহকদের সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ করছে। অনেকে বুঝতেই পারেন না, যে স্বয়ংক্রিয় কণ্ঠ শুনছেন, সেটি আসল না নকল।
এ ধরনের প্রতারণার জন্য সাধারণত আসল আইভিআর সিস্টেমের আদলে নকল স্বয়ংক্রিয় ফোনকল করা হয়। এরপর গ্রাহকদের বোকা বানিয়ে তাদের কাছ থেকে ব্যাংকিং তথ্য, ওটিপি বা কার্ড নম্বর হাতিয়ে নেয় প্রতারকেরা। প্রথমত, কলার আইডি স্পুফিংয়ের মাধ্যমে ফোনকল করায় নম্বরটি ব্যাংক বা সরকারি সংস্থার আসল নম্বরের মতো দেখায়। এতে গ্রাহকেরা সহজেই প্রতারিত হন।
দ্বিতীয়ত, ভয়েস ক্লোনিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা আসল আইভিআর সিস্টেমের মতো স্বয়ংক্রিয় কণ্ঠস্বর তৈরি করে। ফলে গ্রাহকেরা সহজে প্রতারণার ফাঁদে পড়েন। তৃতীয়ত, ভয় দেখানোর মাধ্যমে বিভ্রান্ত করে প্রতারিত করা হয়। অ্যাকাউন্ট দুই ঘণ্টার মধ্যে ব্লক হয়ে যাবে বা একটি অননুমোদিত লেনদেন শনাক্ত করা হয়েছে এমন বার্তা দিয়েও গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করা হয়। ফলে আতঙ্কিত হয়ে অনেকে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতারিত হন।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র হকদ র
এছাড়াও পড়ুন:
ঈশ্বরদীর অর্ধেকেরও বেশি গাছে আসেনি লিচুর মুকুল
লিচুর রাজধানীখ্যাত পাবনার ঈশ্বরদীতে এবার অর্ধেকেরও বেশি গাছে আসেনি মুকুল। চাষিরা বলছেন, ফাল্গুন মাসে যখন লিচুর মুকুলের ম-ম গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার কথা বাগানগুলোয়, তখন গাছে গাছে দেখা যাচ্ছে কচিপাতা। ফলে এবার লিচুর উৎপাদনে ধস নামার শঙ্কায় তারা। লিচুর মুকুলের এমন করুণ দশা গত পাঁচ দশকে দেখা যায়নি। তবে গাছে মুকুল কম আসার জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
ঈশ্বরদীর ‘লিচু গ্রাম’ বলে পরিচিত উপজেলার মানিকনগর, মিরকামারী, চরমিরকামারী, কদিমপাড়া ও আওতাপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, বহু বাগানের গাছেই মুকুল নেই। কৃষকরা বলেন, এই সময়ে গাছে নতুন পাতা গজালে মুকুল আসে না। লিচুচাষি আমিরুল ইসলাম সরদার জানান, তাঁর বাগানে ১০০টি গাছ থাকলেও মাত্র ১০-২০টিতে মুকুল এসেছে। মুকুলের পরিমাণও অনেক কম। নিকট অতীতে এত কম মুকুল আর দেখা যায়নি। এ বছর কেন এমন হলো বুঝতে পারছি না। আবহাওয়ার কারণে এ বছর মুকুলের বিপর্যয় হতে পারে বলে তারা ধারণা করেছেন।
সাহাপুর গ্রামের লিচুচাষি সহিদুল ইসলাম বলেন, এত কম লিচুর ফলন আগে কখনও দেখিনি। এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষ লিচু চাষের ওপর নির্ভরশীল। আমার বাগানের অর্ধেকেরও বেশি গাছে এবার মুকুল আসেনি। লিচু বেচে সারা বছর আমরা সংসারের খরচ চালাই। এবার কীভাবে চলব বুঝতে পারছি না।
লিচুর আবাদ করে জাতীয়ভাবে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ঈশ্বরদীর কৃষক আব্দুল জলিল কিতাব। তিনি বলেন, ৪৫ বছর ধরে লিচুর আবাদ করছি– এমন বিপর্যয় আগে কখনো হয়নি। পুরো এলাকাতেই এ অবস্থা। পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে আগামীতে লিচুর ভালো আবাদ আর হবে কিনা সন্দেহ আছে। এ বছর লিচুর ১০ শতাংশও ফলন পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। লিচু আবাদের সঙ্গে এই অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এরা সবাই এবার বিপদের সম্মুখীন হবেন।
উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর কারিগরপাড়া গ্রামের লিচুচাষি শামসুল আলম বলেন, আমার প্রায় ১২ বিঘা জমিতে লিচুর বাগান আছে। এ বছর এত কম মুকুল এসেছে, যা আগে কখনও দেখিনি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এখলাছুর রহমান বলেন, ‘লিচুগাছে সমানভাবে প্রতিবছর মুকুল আসে না। কখনও বেশি বা কখনও কম হয়। তবে এবার তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক গাছে মুকুল এসেছে। এটি প্রাকৃতিক কারণে হতে পারে। এ বছর যেহেতু কম হয়েছে, তাই ধারণা করা যায় আগামী বছর মুকুলের পরিমাণ সব গাছেই বেশি এবং ভালো ফলন হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, ঈশ্বরদীতে এবার ৩১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। তবে এ বছর গাছগুলোয় মুকুলের পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক কম। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে বলে অনুমান করছি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ঈশ্বরদী পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামের জমিতে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০টি লিচু গাছ রয়েছে। বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ১৫টি গাছ অর্থাৎ এক একর জমিতে ৪২টি, এক হেক্টর জমিতে ৯০টি গাছ আছে। ছোট-বড় বাগান মিলিয়ে ১১ হাজার ২৭০টি গাছে লিচুর বাগান রয়েছে। উপজেলায় লিচু আবাদি কৃষকদের সংখ্যা ৯ হাজার ৬২০ জন। বাণিজ্যিক আকারে লিচু বাগান রয়েছে ২৬০০ হেক্টর জমিতে। বিচ্ছিন্নভাবে বসতবাড়িতে আবাদ হয়েছে ৫০০ হেক্টরে। ফলন্ত আবাদি জমির পরিমাণ ২৮৩৫ হেক্টর। প্রতিবছর এ উপজেলায় ৫০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়।