বুধবার রাত্রি হইতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী যেই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি চলিতেছে, উহা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কেহই সমর্থন করিতে পারে না। ইহারই প্রতিফলন ঘটাইয়া বিএনপিসহ দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে এহেন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টিকারীদের নিন্দা জানাইবার পাশাপাশি দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করিয়াছে। আমরা দেখিয়াছি, বিলম্বে হইলেও অন্তর্বর্তী সরকারও বিগত সরকারসংশ্লিষ্ট যেই কাহারও স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হইতে বিরত থাকিবার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানাইয়াছে।
দুর্ভাগ্যবশত, সরকারের সেই আহ্বান উপযুক্ত সাড়া পায় নাই। সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনসূত্রে জানা যাইতেছে, শুক্রবার রাত্রিতেও ধসাইয়া দেওয়া হইয়াছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় এবং মনিরামপুর এলাকায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। পাশাপাশি শক্তিপুর এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার সড়কের নামফলকসহ উপজেলা সদরের কয়েকটি সড়কের নামফলকও ভাঙিয়া ফেলা হইয়াছে।
অন্যদিকে গাজীপুরে সাবেক এক মন্ত্রীর বাড়িতে কথিত হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘিরিয়া উদ্ভূত সংঘাতময় পরিস্থিতি শনিবারও স্বাভাবিক হয় নাই। এই আশঙ্কা অমূলক নহে যে, সরকার চলমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারিলে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি আরও ছড়াইয়া পড়িবে। উহা কাহারও জন্য কল্যাণকর হইবে না। আমরা জানি, গত ছয় মাসে একাধিক ঘটনায় সিদ্ধান্তহীনতা কিংবা শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণে দ্বিধার কারণে ইতোমধ্যেই প্রশ্ন দেখা দিয়াছে। বিভিন্ন অপরাধে জড়িতরা অনেকাংশে দায়মুক্তি পাইবার কারণে জানমালের নিরাপত্তা দুর্বলতর হইতেছে। এই অবস্থায় সংকটগ্রস্ত অর্থনীতির পুনরুদ্ধারও কঠিন হইয়া পড়িতে পারে। বিশেষত দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বন্ধ হইবার কারণে সামাজিক অস্থিরতার শঙ্কা বৃদ্ধি পাইতে পারে। সর্বোপরি, বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হইবার নেতিবাচক প্রভাব বৈদেশিক বাণিজ্যকে সংকুচিত করিতে পারে।
আমরা জানি, চলমান নৈরাজ্য আরম্ভ হয় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের ঐতিহাসিক ভবনটি গুঁড়াইয়া দেওয়ার মধ্য দিয়া। ঘটনার অন্তত কয়েক ঘণ্টা পূর্বে উক্ত ধ্বংসযজ্ঞ চালাইবার ঘোষণা দেওয়া হয়। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে বুলডোজার ব্যবহার করিয়া উক্ত কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটানো হয়। স্পষ্টত সরকার যথেষ্ট সময় পাইবার পরও উহা রক্ষায় ইতিবাচক ও দৃঢ় পদক্ষেপ লয় নাই। এই পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত নৈরাজ্য বন্ধে সরকারের সদিচ্ছা লইয়া বিভিন্ন মহলে যেই প্রশ্ন উঠিয়াছে উহা উড়াইয়া দিবার অবকাশ নাই।
ইতোপূর্বে অত্র সম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা বলিয়াছি, যদি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর ‘উস্কানিমূলক’ বক্তব্য উক্ত ক্ষোভের জন্ম দিয়া থাকে, তাহা হইলেও কাহারও আইন স্বীয় হস্তে তুলিয়া লইবার অধিকার নাই। অন্তত কোনও সরকার এহেন নৈরাজ্য অনুমোদন করিতে পারে না। ওই বক্তব্যের ধারাবাহিকতায় আমরা পুনরায় বলিতে চাহি, আইনের শাসনের মৌলিক এই দিকটি প্রতিষ্ঠা করিতে সরকার এখনও উদ্যোগী হইতে পারে। উপরন্তু, ইহা কেবল তখনই সম্ভব হইবে যখন চলমান নৈরাজ্যের সহিত যুক্ত দলমত নির্বিশেষে সকলকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হইবে।
আমরা মনে করি, এই ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলিরও দায়িত্ব কম নহে। এই প্রসঙ্গে শুক্রবার দলের স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত হিসেবে বিএনপি নেতাকর্মীকে বিশৃঙ্খলা ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িত না হইবার যেই নির্দেশনা দিয়াছে, উহাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। শনিবার সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, এই বিষয়ে ইতোমধ্যে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে জরুরি নির্দেশনা পাঠাইয়া বলা হইয়াছে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিরোধী পক্ষের বাড়িঘরে আগুন ও ম্যুরাল ভাঙচুরসহ হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়ানো যাইবে না।
দেশ ও দলের বৃহত্তর স্বার্থে এই নির্দেশ প্রত্যেক নেতাকর্মী অক্ষরে অক্ষরে পালন করিবেন বলিয়া দলীয়ভাবে প্রত্যাশা করা হইয়াছে। আমাদের বিশ্বাস, যদ্রূপ বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এই নির্দেশনার যথাযথ প্রতিপালন নিশ্চিত করিবেন তদ্রূপ অন্য দলগুলিও অনুরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর স থ ত পদক ষ প সরক র হইয় ছ ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
জলবায়ু ন্যায়বিচারের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ সুরক্ষার দাবিতে সমাবেশ
জলবায়ু সুরক্ষা ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ, নবায়নযোগ্য শক্তির সম্প্রসারণ ও টেকসই কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবিতে সমাবেশ করেছেন অসংখ্য তরুণ-তরুণী।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের যুব প্ল্যাটফর্ম অ্যাক্টিভিস্টা বাংলাদেশের সহযোগিতায় আয়োজিত সমাবেশে বিশ্বনেতাদের প্রতি এ আহ্বান জানানো হয়।
সমাবেশ শেষে র্যালি করা হয়। র্যালিটি খামারবাড়ি থেকে আড়ং মোড় ঘুরে জাতীয় সংসদের সামনে দিয়ে আবার খামারবাড়ির সামনে এসে শেষ হয়।
শান্তিপূর্ণ সমাবেশে তরুণ জলবায়ুকর্মীরা স্লোগান, প্ল্যাকার্ড, চিত্রকর্ম, গান, নাটক এবং পোস্টার প্রদর্শনের মাধ্যমে জলবায়ু ন্যায়বিচারের দাবি জানান। ‘ডোন্ট সেল আওয়ার ফিউচার’, ‘ফিক্স দ্য ফাইন্যান্স’, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করো, ‘ক্ষতিকারক কৃষিচর্চায় বিনিয়োগ বন্ধ করো’, ‘ক্লাইমেট জাস্টিস নাউ’ এবং ‘জলবায়ু সহনশীল টেকসই কৃষি চর্চায় বিনিয়োগ করুন’ ইত্যাদি লেখা ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে সমাবেশে যোগ দেন জলবায়ু আন্দোলনকারীরা। তারা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, ক্লাইমেট জাস্টিস’, ‘ব্যাংক তুমি ভালো হয়ে যাও, জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করে দাও’, ‘জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ, ডেকে আনছে আমাদের দুর্যোগ’, ‘বেঁচে থাকার অধিকার, চাই জলবায়ু সুবিচার’, ‘নিড সলিউশন, নট পলিউশন’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
সমাবেশ থেকে টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে জলবায়ুর জন্য ক্ষতিকর ও ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনে চলমান অমানবিক যুদ্ধের প্রতিবাদ ও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়।
সমাবেশে জলবায়ু যোদ্ধারা বলেন, উন্নত দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়নের মাধ্যমে জলবায়ু সংকট সৃষ্টি করছে। তারা নব্য ঔপনিবেশিক শোষণ, যুদ্ধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে এ পৃথিবীকে ধ্বংস করছে। পুঁজিবাদী মানসিকতা নিয়ে সর্বোচ্চ গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমণকারীরা জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়নের মাধ্যমে পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যেখানে মানুষের চেয়ে মুনাফাই মুখ্য। এটি পৃথিবীতে বাস্তুতন্ত্র এবং জলবায়ুকে মারাত্মকভাবে ধ্বংস করছে। ফলে, বিরূপ প্রভাব পড়ছে দক্ষিণের দেশগুলোর তরুণ, কৃষক, নারী এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়গুলোতে। এটি অনুন্নত দেশগুলোর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের কাছে তাদের পরিবেশগত ঋণ বহু গুণ বাড়িয়ে তুলছে। এই অবস্থায় জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে টেকসই প্রকল্প এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আহ্বান এসেছে গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকে।
জলবায়ু সংকট নিরসন, এ বিষয়ে ন্যায়বিচার দাবি ও জনগণকে সচেতন করতে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ ও অ্যাক্টিভিস্টা বাংলাদেশসহ ১৮ জেলার ৩৩টি যুব সংগঠনের ৩ হাজারের অধিক জলবায়ুকর্মী এই স্ট্রাইকে অংশ নেন। একই সময়ে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, নোয়াখালী, কুড়িগ্রাম, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, সিলেট, কুষ্টিয়া, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, পটুয়াখালী, টেকনাফ, বান্দরবান, বরগুনা ও নারায়ণগঞ্জসহ লোকাল রাইটস প্রোগ্রাম (এলআরপি) এবং বেশকিছু লোকাল ইয়ুথ হাবের তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরাও গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকে সংহতি প্রকাশ করেন।
এ সময় ফিলিস্তিনে চলমান অমানবিক যুদ্ধ বন্ধে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়। যুদ্ধে অসংখ্য শিশু, নারী ও বৃদ্ধের মৃত্যুতে গভীর সহানুভূতি ও শোক প্রকাশ করা হয়।
ঢাকা/হাসান/রফিক