বগুড়া শহরের সাতমাথায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কার্যালয় বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর জায়গা দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে শহরের একটি পরিবারের বিরুদ্ধে। আজ শনিবার সকালে পরিবারটি জমির মালিকানা দাবি করে সেখানে ডিজিটাল প্যানা টানিয়ে দেয়।

ওই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর বিকেলে সেখানে সমাবেশ করে জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে ডিজিটাল প্যানা টানিয়ে দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় গুঁড়িয়ে দেওয়া জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের জায়গায় গণশৌচাগার নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে সাতমাথায় জেলা জাসদ, জেলা আওয়ামী লীগ, সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়ন, টাউন ক্লাব ছাড়াও বেশ কিছু কার্যালয় বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাতমাথায় জেলা জাসদের কার্যালয় থাকা জমিটি খাস খতিয়ানভুক্ত। সরকারি জমিতে ইজারা নিয়ে রাজনৈতিক কার্যালয় করা হয়। পরে এ সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে বিভিন্ন পক্ষ আদালতে মামলাও করে। ওই জায়গায় জেলা জাসদের কার্যালয় ছিল। গত বৃহস্পতিবার রাতে বুলডোজার দিয়ে সেই কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। দুই দিনের মাথায় আজ সকালে জায়গাটি ব্যক্তিমালিকানাধীন দাবি করে সেখানে ডিজিটাল প্যানা টানিয়ে দেয় শহরের জ্বলেশ্বরীতলা এলাকার একটি পরিবার। পরে বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লোকজন সেখানে উপস্থিত হয়ে সেই প্যানা খুলে মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে আরেকটি প্যানা ঝুলিয়ে দেন।

এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা সেখানে সমাবেশ করেন। সমাবেশে বক্তব্য দেন চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল সানি। তিনি জাসদের কার্যালয়ের জায়গায় শহীদ আবু সাঈদের নামে মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে বলেন, সাতমাথায় সরকারি জায়গা এত দিন আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা দখলে রেখেছিল। বগুড়ায় আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের কোনো স্থান হবে না। এ জায়গায় শহীদদের স্মরণে মসজিদ নির্মাণ হবে। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা এখনো ঘরে ফেরেনি। বগুড়ায় কোনো ছাত্র-জনতার ওপর আঘাত এলে এখানে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘর একটিও থাকবে না। আওয়ামী লীগের শিকড় উপড়ে ফেলা হবে।

জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেছেন, বুলডোজার দিয়ে কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর আজ জায়গার মালিকানা দাবি করে অবৈধভাবে জবর-দখলের চেষ্টা করে সুযোগসন্ধানী কিছু ব্যক্তি। প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের এ সরকারি সম্পত্তি এত দিন জাসদ আগলে রেখেছিল। এখন সম্পত্তি গ্রাস করতে নানা চক্রান্ত চলছে। তাঁরা এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

মালিকানা দাবি করা পরিবারের পক্ষে শেখ তৌসিফুর রহমান বলেন, সম্পত্তির মালিকানার পক্ষে তাঁদের কাছে যাবতীয় নথি আছে। এত দিন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জাসদ জায়গাটি দখলে রেখেছিল। ছাত্র-জনতা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর তাঁরা সেটি দখলে নেন। তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পি এম ইমরুল কায়েস বলেন, সাতমাথায় সরকারি জায়গাতেই এত দিন জাসদের কার্যালয় ছিল। সরকারি মালিকানার যাবতীয় নথি ভূমি কার্যালয়ে আছে।

বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা প্রথম আলোকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা ভবন ভেঙে যে জায়গা খালি করেছে, তার মালিকানা দাবি করে কতিপয় ব্যক্তির দখলের খবর পেয়ে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মালিকানা সরকার কিংবা কোনো ব্যক্তির, যা–ই হোক, আপাতত ওই জায়গা কাউকে দখল করতে দেওয়া হবে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত র জনত পর ব র এত দ ন দখল র সরক র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিশোধ নিতেই বড় শাহীনকে খুন, নারীকে দিয়ে পাতা হয় ফাঁদ

৫ আগস্টের পর বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর এবং বাবা-মাকে মারধরের প্রতিশোধ নিতেই শীর্ষ চরমপন্থি নেতা শেখ শাহিনুল হক শাহিন ওরফে বড় শাহিনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তার শিষ্য শাহনেওয়াজ পারভেজ রনি। হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী হীরা ঢালিকে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করেন রনি। হীরার প্রেমের ফাঁদে পড়েই গত ১৫ মার্চ রাতে দৌলতপুর থেকে নগরীর বাগমারায় যান বড় শাহীন। সেখানেই মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় বড় শাহীনকে। 

গতকাল শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য স্বীকার করেছেন শাহনেওয়াজ পারভেজ রনি ও হীরা ঢালী। গত ৭ এপ্রিল তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জবানবন্দি গ্রহণের পর আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। 

গত ১৫ মার্চ রাতে খুলনা নগরীর বাগমারা খালপাড় রোডের ফাঁকা রাস্তার উপর দুর্বৃত্তরা গুলি করে বড় শাহিনকে হত্যা করে। শাহীনের বিরুদ্ধে খুলনা নগরীর দৌলতপুরের আলোচিত শহীদ ওরফে হুজি শহীদ হত্যাসহ একাধিক মামলা ছিল। হত্যার ঘটনার শাহীনের মা রহিমা বেগম বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে খুলনা সদর থানায় মামলা করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা সদর থানার এসআই মনির হোসেন বলেন, ১৫ বছর পূর্বে শাহনেওয়াজ পারভেজ রনি পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা শাহীন ওরফে বড় শাহীনকে পুলিশে ধরিয়ে দেন। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর প্রতিশোধের সুযোগ খুঁজতে থাকেন শাহীন। গত বছর ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পর এলাকায় ফিরে শাহীন লোকজন নিয়ে মহেশ্বরপাশায় রনির বাড়িতে হামলা চালায়। ওইদিন রনির বাবা-মাকে মারধর করে তারা। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন রনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী রনি তার দ্বিতীয় স্ত্রী হীরাকে ব্যবহার করেন। 

তিনি জানান, গত ডিসেম্বর থেকে শাহীনের গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকে রনি। জানুয়ারি মাসে শাহীনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ শুরু করেন হীরা। এক সময়ে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। বাগমারা এলাকার একটি বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন হীরা। সেখানেও যাতায়াত ছিল শাহীনের। শাহীনের যাবতীয় খবরাখবর রনির কাছে আদান প্রদান করতে থাকেন হীরা। বিষয়টি টের পাননি শাহীন। গত ১৫ মার্চ দৌলতপুর ছিলেন শাহীন। রাতে হীরা ঢালীর ভাড়া বাড়িতে ডেকে আনা হয় শাহীনকে। রাত সোয়া ১১টার দিকে সুযোগ বুঝে হীরা ঢালী এবং তার স্বামী রনির উপস্থিতিতে আরও কয়েকজন সন্ত্রাসী খুব কাছ থেকে শাহীনের মাথায় দুটি গুলি করেন। ঘটনাস্থলে শাহীনের মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে রনি মোবাইল ফোন বন্ধ করে খালিশপুর চলে যান এবং স্ত্রী হীরা ঢালী ঘরেই অবস্থান করেন।

তদন্ত কর্মকর্তা জানান, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনাস্থলে হীরা ঢালী এবং রনির উপস্থিতি পাওয়া যায়। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য হীরাকে কেউ যাতে সন্দেহ না করে সেজন্য বাগমারার ভাড়া বাসাটি ছাড়েননি হীরা। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করার জন্য পুলিশ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে। 

খুলনা সদর থানার ওসি হাওলাদার সানোয়ার হুসাইন মাসুম জানান, গত ৭ এপ্রিল নগরীর মহেশ্বরপাশা এলাকা থেকে রনিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আমিনুর এবং হীরা ঢালীকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আদালতে স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি প্রদান করতে চান রনি এবং হীরা ঢালী। শুক্রবার বিকেলে খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের খাস কামরায় হত্যাকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন তারা দু’জন। জবানবন্দি পরবর্তী আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন। বড় শাহীন হত্যাকাণ্ডে এ পর্যন্ত ছয়জন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ