আমার সব সময় মনে হয়, সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত ব্যবসা-বাণিজ্য। কিন্তু সব সরকারই এই জায়গা থেকে কমবেশি দূরে সরে যায়। কিন্তু মনে রাখা উচিত, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো না হলে অর্থনীতি ভালো হবে না; অর্থনীতি ভালো না হলে কর্মসংস্থান হবে না। সেটা না হলে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে না।

ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমরা ক্রমেই বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছি। প্রথমত, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে যাচ্ছে। ঋণের সুদহার যদি ১৬ শতাংশে উঠে যায়, তাহলে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। দ্বিতীয়ত, ছয় মাস আগের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে ঠিক, কিন্তু তা এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে আসেনি। সমস্যা আছে। একদিকে উচ্চ সুদ, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন অনিশ্চয়তা, এ বাস্তবতায় দেশে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। নতুন করে কেউ বিনিয়োগ করতে চাইবেন না। সেই সঙ্গে যাঁরা বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরাও বিনিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকবেন।

এদিকে গতকাল শুক্রবার ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া নীতি সুদহার হ্রাস করেছে। সেখানে এখন ঋণের সুদহার ৭ থেকে ৮ শতাংশ। এ বাস্তবতায় আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আরও মার খাচ্ছে। অথচ এখন দরকার ছিল, আমাদের রপ্তানি সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

সরকারের কাজে একধরনের দীর্ঘসূত্রতা আছে। তাদের কথা শুনে মনে হয়, অনেক সময় যেন পড়ে আছে। বেসরকারি খাতে যে সমস্যার সমাধানে হয়তো এক ঘণ্টা সময় লাগে, সরকারি পর্যায়ে সেই সমস্যার সমাধানে অনেক সময় লেগে যায়। মনে রাখতে হবে, সময় আছে, সরকার এটা মনে করলেও দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী কিন্তু এত সময় না–ও দিতে পারে। তাঁরা ভালো চাকরি চান, উন্নত জীবন চান; তাঁদের সেই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে না।

এই যখন বাস্তবতা, তখন সরকার হঠাৎ বিভিন্ন পণ্যে ভ্যাট বৃদ্ধি করল। এমনকি খাদ্যপণ্যেও। বিশ্বের কোথাও খাদ্যপণ্যে সম্পূরক শুল্ক নেই, কিন্তু বাংলাদেশে আছে। বিস্কুটের ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হলো। কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য ও বেভারেজে ভ্যাট নেই। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে ২০ থেকে ২৫ টাকার পণ্যে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হচ্ছে, এ বাস্তবতায় কীভাবে ব্যবসা হবে। কোম্পানিগুলো কত রাখবে, সরকারকেই–বা কী রাজস্ব দেবে।

আমি মনে করি, সরকারের উচিত করভার হ্রাস করে পণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা। সেটা হলে অর্থনীতিতে গতি আসবে। সরকারও রাজস্ব পাবে, কিন্তু তা না করে সরকার উল্টো ভ্যাট বৃদ্ধি করল।

অনেক কিছু সম্পর্কেই আমরা টুকরা টুকরা খবর পাই, যেমন আইএমএফের পরামর্শে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। সংবাদমাধ্যমকেও পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেওয়া হয় না। সেটা হলে আমরা সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে পারি। অথচ আমাদের জানানো হলে আমরাও সরকারকে সহায়তা করতে পারতাম।

আহসান খান চৌধুরী: চেয়ারম্যান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব স তবত সরক র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষার্থী নয়, বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙচুরের পেছনে সন্ত্রাসীরা: হর্ষবর্ধন শ্রিংলা

সম্প্রতি রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার ও সাবেক পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা নয় বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙচুরের পেছনে রয়েছে সন্ত্রাসীরা।

শনিবার বিধাননগরে ‘ইন্ডিয়া'স ফরেন পলিসি রোডম্যাপ উইথ ফোকাস অন ইমিডিয়েট নেইবারহুড’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি কেবল শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িই নয় এটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক, আর্কাইভ ও নথি ছিল। আমার মনে হয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করার একটা প্রচেষ্টা এটি। এর পেছনে কোন শিক্ষার্থী ছিল না, যারা ছিল-তারা সবাই সন্ত্রাসী। ব্যাপারটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য একেবারেই সুখকর নয়।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নিরাপদ থাকাটা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশের। তাই দেশটিতে অস্থিরতা বা প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তার প্রভাব আমাদের দেশেও পড়বে।’

সম্প্রতি বাংলাদেশে একটা পরিবর্তন ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ ন্যারিটিভ বদলে গেছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ