কুমিল্লার মুরাদনগরে সত্তরোর্ধ্ব মানসিক প্রতিবন্ধী এক বৃদ্ধা তার গাছ থেকে বরই পাড়ার প্রতিবাদ করায় ওই বৃদ্ধার শরীরে গরম পানি নিক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে পলি আক্তার নামে এক তরুণী ও তার ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডুমুরিয়া গ্রামে এ ঘটনায় ওই বৃদ্ধার শরীরের প্রায় ২০ শতাংশ ঝলসে গেছে বলে জানা গেছে।

ওই বৃদ্ধার নাম জাহানারা বেগম (৭১)। তিনি ডুমুরিয়া গ্রামের প্রয়াত মনসুর আলীর মেয়ে। ওই গ্রামেই তিনি বাবার বাড়িতে থাকেন। তার বিয়ে হয়েছিল, তবে কোনো সন্তান নেই। মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় বিয়ের পরপরই স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়েছিল। আর অভিযুক্ত পলি পাশের বাড়ির মোশারফ হোসেনের মেয়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে জাহানারার গাছ থেকে বরই পেড়ে নিয়ে যান পাশের বাড়ির পলি আক্তার ও তার ছোট ভাই। বিষয়টি জানতে পেরে ওই বৃদ্ধা পলি আক্তারকে গালমন্দ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পলি আক্তার ও তার ছোট ভাই ফুটন্ত গরম পানি এনে জাহানারা বেগমের মুখসহ শরীরে নিক্ষেপ করেন। এতে বৃদ্ধার মুখ ও শরীরের বিভিন্ন স্থান ঝলসে যায়। ঘটনা জানাজানি হলে জড়িত দুজন দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পালিয়ে যান। পরে ওই বৃদ্ধার ভাইয়ের পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহানারা বেগমকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন। তবে পরিবারের লোকজন কুমিল্লা না গিয়ে ওই বৃদ্ধাকে ঢাকায় নিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।

মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফারজানা আক্তার বলেন, ‘গরম পানি নিক্ষেপের কারণে ওই বৃদ্ধার মুখের এক পাশসহ শরীরের কয়েকটি স্থানে ঝলসে গেছে। সব মিলিয়ে শরীরের প্রায় ২০ শতাংশ ঝলসে গেছে। আমরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছি।’

এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি। তবে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হচ্ছে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গরম প ন ম র দনগর গরম প ন

এছাড়াও পড়ুন:

মুরাদনগরে আ.লীগকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে

কুমিল্লার মুরাদনগরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এই অভিযোগ নাকচ করে উপদেষ্টা বলেছেন, স্থানীয় একজন চাঁদাবাজের সহযোগীদের রক্ষার জন্য তাঁর ওপর এই দোষারোপ করা হচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার মুরাদনগর উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মোল্লা মজিবুল হক অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়বিষয়ক এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও তাঁর চাচাতো ভাই ওবায়েদ উল্লাহর সহযোগিতায় মুরাদনগরে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতা–কর্মীদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এসব নেতা–কর্মী মুরাদনগরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করছেন। আর এসব কর্মকাণ্ডে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা বাধা দেওয়ায় তাঁদের গ্রেপ্তার ও বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, মুরাদনগরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কমিটিতে উপদেষ্টা আসিফের চাচতো ভাই ওবায়েদ উল্লাহকে আহ্বায়ক করে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতা–কর্মীকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের ঘনিষ্ঠ সহচর গোলাম কিবরিয়াকে জাতীয় নাগরিক পার্টিতে জায়গা করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রমজানের শুরুর দিকে শ্রীকাইল ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি আনোয়ারকে এনসিপির ব্যানারে সজ্জিত গাড়ি দিয়ে এলাকায় আনা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির ২০–২৫ জন নেতা–কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, গত ২৪ মার্চ মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ সিএনজিস্ট্যান্ডে ওবায়েদ উল্লাহ সিরিয়াল ভেঙে সিএনজি নিতে চাইলে অন্য সিএনজিচালকরা বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওবায়েদ উল্লাহ সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজীবসহ তরুণদের ডেকে এনে অন্য সিএনজিচালকদের মারধর করেন ও তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এ ছাড়া সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে কুমিল্লার পুলিশ সুপার পরিবর্তন, নতুন পুলিশ সুপার এসেই মুরাদনগর ও বাঙ্গুরা থানার ওসিকে বদল করে বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর নির্যাতন করছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। এসব ঘটনায় তাঁরা নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান।

মুরাদনগরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা গত ৫ আগস্টের পরও মামলা-হামলার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। তিনি দাবি করেন, মুরাদনগরে এনসিপিতে যাঁরা আছেন, তাঁরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা–কর্মী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি তাঁর নজরে এসেছে। স্থানীয় একজন চাঁদাবাজের সহযোগীদের রক্ষার জন্য তাঁর ওপর এই দোষারোপ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেন, ‘গত ২৪ মার্চ রাতে মুরাদনগরে একজন চাঁদাবাজকে (আবুল কালাম নামে ইউনিয়ন পর্যায়ের এক শ্রমিক দল নেতা) ছাড়াতে থানায় হামলা করেছিল বিএনপি। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে থানায় হামলা করা হয়। থানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, পুলিশ আহত হয়, এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যারা চাঁদাবাজির অভিযোগ করতে থানায় গিয়েছিল, তাঁদেরও আহত করা হয়। থানায় হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। সেই ঘটনায় জড়িতদের পুলিশ খুঁজছে। ওই অপরাধীদের শেল্টার দেওয়ার জন্যই সংবাদ সম্মেলন করে পাল্টা ব্লেম (দোষারোপ) দেওয়া হচ্ছে। অথচ থানায় হামলার ঘটনাটা সারা দেশের মানুষ দেখেছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে হামলার ভিডিওও প্রকাশিত হয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুরাদনগরে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে
  • কুমিল্লার এসপির হাত থেকে বাঁচতে চান বিএনপি নেতাকর্মীরা
  • মুরাদনগরে আ.লীগকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে