শাজাহানপুরে গভীর নলকূপের অপারেটর আবু সুফিয়ান সুমনের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হলে অপারেটর নিয়োগে দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিলে সেচ বন্ধ হয়ে যায়। এতে দেড়শ বিঘা জমি অনাবাদি থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

বিএমডিএ বগুড়া রিজিয়নের উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অভিযোগের পেয়ে খোট্টাপাড়ায় নলকূপের অপারেটর নিয়োগ স্থগিত রয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

২০১৫ সালে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) জালশুকা, খোট্টাপাড়া, জুসখোলা গ্রামে গভীর নলকূপ স্থাপন করে। বেশ কয়েক বছর ধরে এ এলাকার আওতায় নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে ছিলেন খোট্টাপাড়া গ্রামের আবু সুফিয়ান সুমন। 

অভিযোগ রয়েছে আবু সুফিয়ান সুমন বিএমডিএর নীতিমালা উপেক্ষা করে জমিতে সেচ দেওয়া শুরু করেন। বিনিময়ে কৃষকদের কাছ থেকে বোরো মৌসুমে চার আনা এবং আমন মৌসুমে দুই আনা ধান নেন। এতে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তারা সামনের বোরো মৌসুমে অপারেটর পরিবর্তনের দাবি জানান। কৃষকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ অপারেটর সুমনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাইফুর রহমান বিএডিসির কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় উভয় পক্ষকে নিয়ে শুনানি হয়। এ সময় আবু সুফিয়ান সুমনকে বাদ দিয়ে নতুন অপারেটর নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। এতে সুমনের লোকজন বাধা দেন। এতে মাহফুজার রহমান মণ্ডল ও আবু সুফিয়ান সুমনের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। 

জালশুকা গ্রামের কৃষক মাফুজার রহমান মণ্ডল জানান, স্কিমের আওতাভুক্ত ৯১ জন কৃষকের স্বাক্ষর নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বিএমডিএ কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অপারেটর সুমনকে বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু শুনানির সময় সুমনের লোকজন হট্টগোল শুরু করলে অপারেটর নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়। 

অভিযোগ অস্বীকার করে আবু সুফিয়ান সুমন বলেন, কৃষকের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে ধান আদায় করা হয়নি। এসব অভিযোগ মিথ্যা। শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাইফুর রহমান জানান, সেচ সংকট নিরসনে শুনানির দিন ধার্য হয়। কিন্তু উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই ফিরে আসতে হয়েছে। তবে অপারেটর নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ফসলি জমি যাতে সেচবিহীন না থাকে, সে বিষয়টি দেখতে বিএমডিএর উপসহকারী প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।  

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ফ য় ন স মন র রহম ন ব এমড এ স মন র নলক প উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে রাজস্ব কর্মকর্তার স্ত্রীর পুকুর

রাজশাহীর চারঘাটের নিমপাড়া ইউনিয়নে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর খনন করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড খুলনা অঞ্চলের ডেপুটি কমিশনার আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী মুসফিকা আকতার মিম। বিষয়টি জানাজানি হলে উপজেলার ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক বাদী হয়ে মঙ্গলবার চারঘাট মডেল থানায় মাটি ও বালু ব্যবস্থাপনা আইনে মামলা করেন।
২০১৮ সালে উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের জোতকার্তিক হিন্দুপাড়ায় রাকিবুল ইসলাম, রাজু আহমেদ ও সঞ্জু আলী নামে তিন ভাইয়ের সাড়ে আট বিঘা জমি ৭০ লাখ টাকায় কেনেন ডেপুটি কমিশনারের স্ত্রী মুসফিকা আক্তার। জমিটি কেনার সময় সেখানে আমবাগান ছিল। চলতি বছর বাঘা উপজেলার হাবিবুর রহমানের সঙ্গে সেই বাগানে পুকুর খননের জন্য চুক্তি করেন। ২০ জানুয়ারি থেকে সেই জমিতে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করেন। এতে জমির পাশে থাকা বাড়িগুলো ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উদ্বিগ্ন আশপাশের জমির মালিকরা বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ জানুয়ারি সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন। সেখানে কাউকে না পেয়ে মাটি ভেকু মেশিনটি অকার্যকর করে খননকাজ বন্ধ করে দেন। অভিযানের পরদিনই আবারও ভেকু মেশিন মেরামত করে গভীর রাতে মাটি কাটা শুরু করেন মুসফিকা আকতার মিমের লোকজন। অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার জমির মালিক ও খননকারীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী বাসিন্দারা জানান, মুসফিকা আক্তার মিম একজন গৃহিণী। তাঁর বাবা বেল্টু আলী নন্দনগাছী এলাকার কৃষক। তাঁর পক্ষে ৭০ লাখ টাকায় জমি কেনা সম্ভব না। মূলত ডেপুটি কমিশনার আবুল কালাম আজাদ নিজের নামে জমি না কিনে স্ত্রীর নামে কিনেছেন।
স্ত্রীর নামে মামলা ও জমি কেনার বিষয়ে ডেপুটি কমিশনার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘জমিটি আমার স্ত্রী তার বাবার সূত্রে পেয়েছে। জমি কেনার সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। শুনেছি, জমিটি 
এক ব্যক্তিকে লিজ দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু আমি জানি না।’

চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন বলেন, ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রির অপরাধে মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন বলেন, জোতকার্তিক হিন্দুপাড়ায় জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর খনন করা হচ্ছিল। খবর পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে খনন বন্ধ করা হয়। এর পরও গভীর রাতে সেখানে খননকাজ করা হয়। রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নিয়ম নেই। এ কারণে ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।
পদ্মা ও বড়াল অধ্যুষিত রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তিন ফসল আবাদের পাশাপাশি অসংখ্য আমের বাগান রয়েছে। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে এসব এলাকায় উদ্বেগজনক হারে পুকুর খনন হয়েছে। ২০০৭ সালের পর দেড় দশকে শত শত পুকুর খনন হয়েছে। যত্রতত্র পুকুর খননের ফলে বিভিন্ন গ্রামের ফসলি মাঠে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। আশঙ্কাজনক হারে আম, ধান, গম, ভুট্টার মতো খাদ্যশস্য ও সরিষা উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় পুকুর খনন বন্ধে উপজেলার চাষিরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় চারঘাটে এই প্রথম পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে রাজস্ব কর্মকর্তার স্ত্রীর পুকুর