নলকূপ অপারেটর নিয়োগে জটিলতায় সেচ বন্ধ
Published: 6th, February 2025 GMT
শাজাহানপুরে গভীর নলকূপের অপারেটর আবু সুফিয়ান সুমনের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হলে অপারেটর নিয়োগে দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিলে সেচ বন্ধ হয়ে যায়। এতে দেড়শ বিঘা জমি অনাবাদি থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিএমডিএ বগুড়া রিজিয়নের উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অভিযোগের পেয়ে খোট্টাপাড়ায় নলকূপের অপারেটর নিয়োগ স্থগিত রয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
২০১৫ সালে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) জালশুকা, খোট্টাপাড়া, জুসখোলা গ্রামে গভীর নলকূপ স্থাপন করে। বেশ কয়েক বছর ধরে এ এলাকার আওতায় নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে ছিলেন খোট্টাপাড়া গ্রামের আবু সুফিয়ান সুমন।
অভিযোগ রয়েছে আবু সুফিয়ান সুমন বিএমডিএর নীতিমালা উপেক্ষা করে জমিতে সেচ দেওয়া শুরু করেন। বিনিময়ে কৃষকদের কাছ থেকে বোরো মৌসুমে চার আনা এবং আমন মৌসুমে দুই আনা ধান নেন। এতে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তারা সামনের বোরো মৌসুমে অপারেটর পরিবর্তনের দাবি জানান। কৃষকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ অপারেটর সুমনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাইফুর রহমান বিএডিসির কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় উভয় পক্ষকে নিয়ে শুনানি হয়। এ সময় আবু সুফিয়ান সুমনকে বাদ দিয়ে নতুন অপারেটর নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। এতে সুমনের লোকজন বাধা দেন। এতে মাহফুজার রহমান মণ্ডল ও আবু সুফিয়ান সুমনের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
জালশুকা গ্রামের কৃষক মাফুজার রহমান মণ্ডল জানান, স্কিমের আওতাভুক্ত ৯১ জন কৃষকের স্বাক্ষর নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বিএমডিএ কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অপারেটর সুমনকে বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু শুনানির সময় সুমনের লোকজন হট্টগোল শুরু করলে অপারেটর নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়।
অভিযোগ অস্বীকার করে আবু সুফিয়ান সুমন বলেন, কৃষকের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে ধান আদায় করা হয়নি। এসব অভিযোগ মিথ্যা। শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাইফুর রহমান জানান, সেচ সংকট নিরসনে শুনানির দিন ধার্য হয়। কিন্তু উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই ফিরে আসতে হয়েছে। তবে অপারেটর নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ফসলি জমি যাতে সেচবিহীন না থাকে, সে বিষয়টি দেখতে বিএমডিএর উপসহকারী প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ফ য় ন স মন র রহম ন ব এমড এ স মন র নলক প উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মুকসুদপুরে হাটবাজারের ভূমি বন্দোবস্ত পেতে এসি ল্যান্ডের ‘সেলামি’ চাওয়ার অভিযোগ
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ও জলিরপাড় ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা রিমন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করেছেন উপজেলার জলিরপাড় এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা। গতকাল শনিবার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বরাবর তাঁরা লিখিত অভিযোগ দেন।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগীরা উপজেলার জলিরপাড় বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি হাটবাজারের একেকজনের জমি বন্দোবস্তের জন্য ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা রিমন বিশ্বাসের মাধ্যমে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা আড়াই লাখ টাকা ‘সেলামি’ চেয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। তবে অভিযুক্ত গোলাম মোস্তফা ও রিমন বিশ্বাস এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জলিরপাড় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ২৫ বছর ধরে পাউবোর জমিতে দোকানঘর তুলে ব্যবসা করেন স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী। পরবর্তী সময়ে ২০১৫ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে জেলা প্রশাসক পাউবোর ওই জমি পুনঃ গ্রহণ (রিজুম) করেন। ২০১৭ সালে পেরিফেরিভুক্ত হয়ে নকশা বের হয়। ২০২৪ সালে ইজারার মাধ্যমে ২৯ জন ব্যবসায়ীকে ওই ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। এর আগে ২০২০ সালে টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হলে সরকারি নির্দেশে সড়কের পাশের পেরিফেরিভুক্ত জমি থেকে দোকানপাট নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নেন ব্যবসায়ীরা। সড়ক প্রশস্ত করার কাজ শেষ হয়েছে। ওই জমি সড়ক বিভাগের কাজে না লাগায় আগের ব্যবসায়ীরা ডিসিআরের নবায়নে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে আবেদন করেন। এ ছাড়া নতুন করে একাধিক ব্যক্তি ওই ভূমি বন্দোবস্ত নিতে আবেদন করেন।
অভিযোগ ওঠে, ১ মার্চ সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মাদ গোলাম মোস্তফা ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা রিমন বিশ্বাসের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের জলিরপাড় ভূমি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে একটি সভা করেন। সভায় তিনি হাটবাজারের ভূমি বন্দোবস্ত নিতে তাঁকে আড়াই লাখ টাকা ‘সেলামি’ দিতে হবে বলে নির্ধারণ করে দেন। যেখানে সরকার নির্ধারিত ফি বছরে মাত্র ১৬০ টাকা। এ নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হলে তাঁরা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
জলিরপাড় বাজারের শহীদুল, তৌহিদ শেখ, লিপি বেগমসহ কয়েকজন বলেন, তাঁরা গরিব মানুষ। ডিসিআর নিয়ে ওই জমিতে ঘর তুলে ব্যবসা করে খাচ্ছিলেন। এর মধ্যে সড়কের কাজ শুরু হলে ঘর ভেঙে ফেলতে বাধ্য হন। এখন ডিসিআর নবায়ন করতে গেলে এসি ল্যান্ড তা করে দেননি। উল্টো তহশিলদারের (উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা) মাধ্যমে ভূমি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে আড়াই লাখ টাকা লাগবে বলে জানান। তাঁরা এত টাকা কোথায় পাবেন। এ ব্যাপারে তাঁরা জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ভুক্তভোগী চুন্নু চোকদার বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। রাস্তার পাশে সরকারি জমি বন্দোবস্ত নিয়ে একটি ছাপরা তুলেছি। এখন নতুন করে বন্দোবস্ত নিতে হবে। এ জন্য এসি ল্যান্ড অফিসে আড়াই লাখ টাকা দিতে হবে। তা না হলে আমার ছাপরা ভেঙে দেবেন বলে হুমকি দিচ্ছে তহশিলদার রিমন বিশ্বাস। আমি এত টাকা কোথায় পাব?’
তবে রিমন বিশ্বাস সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কারও কাছে টাকা চাইনি। আর ডিসিআর দেওয়ার আমি কেউ না। আমরা শুধু এখান থেকে সরেজমিন প্রতিবেদন দিয়ে থাকি। তাঁরা মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।’
মুকসুদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জমি বন্দোবস্তের জন্য আড়াই লাখ টাকা চাওয়ার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমার ডিসিআরের চুক্তি এক বছরের। পরবর্তী সময়ে আমি তাঁদের না-ও দিতে পারি। কোথাও লেখা নেই যে পুনরায় তাঁদের সঙ্গে আমার চুক্তি করতে হবে। আমি তাঁদের সঙ্গে চুক্তি করতে বাধ্য নই। অনেকের দোকানের অস্তিত্ব নেই। যে কারণে যাচাই-বাছাই নতুন করে বন্দোবস্ত দেওয়া হবে। ওখানে বালু ভরাট করা হচ্ছে। একটা বড় ধরনের খরচের বিষয়ও রয়েছে।’
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে লিখিত কিছু অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’