অপরাধী ধরিতে গদাইলস্করির হেতু কী?
Published: 4th, February 2025 GMT
সোমবার একই দিবসে দেশের দুইটি জিলা– শরীয়তপুর ও লক্ষ্মীপুরে যেইভাবে আট সাংবাদিকের উপর হামলার অঘটন ঘটিয়াছে, উহা ন্যক্কারজনক। ইহাদের মধ্যে শরীয়তপুরে সমকালের জিলা প্রতিনিধি সোহাগ খান সুজনকে ছুরিকাঘাত করিবার কারণে গুরুতর অবস্থায় জিলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হইয়াছে। লক্ষ্মীপুরেও হামলার শিকার সাংবাদিকগণ হাসপাতালে ভর্তি হইয়াছেন। আমরা মনে করি, কেবল স্বাধীন সাংবাদিকতার স্বার্থেই হামলাকারীরা কোনো প্রকারেই ছাড় পাইতে পারে না। উপরন্তু আহতদের ন্যায়বিচার পাইবার প্রশ্নও গুরুত্বপূর্ণ।
সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শরীয়তপুরে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের কারণে স্থানীয় ক্লিনিক ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান শেখ ও তাহার ভ্রাতার নেতৃত্বে সমকালের প্রতিনিধির উপর ছুরি, হাতুড়িসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়া হামলা চালানো হয়। তাঁহাকে উদ্ধারে আগত অন্যান্য সাংবাদিকও হামলার শিকার হইয়াছেন। অন্যদিকে লক্ষ্মীপুরে সংবাদ সংগ্রহ করিতে যাইবার পথে সাংবাদিকদের বাধাদানের উদ্দেশ্যে চার সাংবাদিকের উপর হামলা চালায় মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা। উভয় ক্ষেত্রেই স্পষ্টত যেই সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা হইয়াছে; হামলাকারীরা ছিঁচকে অপরাধী হইতে পারে না। আমরা আশঙ্কা করি, তাহারা বৃহৎ কোনো অপরাধী চক্রের সহিত সংশ্লিষ্ট। দুই জিলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থেই তাহাদের অবিলম্বে আইনি বেষ্টনীতে আনয়ন জরুরি। কিন্তু শরীয়তপুরে হামলার পর মামলা হইলেও পুলিশ এখনও কেন এই ভয়ংকর অপরাধীদের গ্রেপ্তার করিতে অসমর্থ– উহা গুরুতর প্রশ্ন। সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যদিও বলিয়াছেন, হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে তাহারা সক্রিয়; অবিলম্বে গ্রেপ্তার ব্যতীত ভরসা পাইব কী প্রকারে? যাহারা প্রকাশ্য দিবালোকে সাংবাদিকের উপর হামলা চালাইতে পারে, তাহাদের খুঁটির জোর লইয়া সন্দেহ থাকিবার অবকাশ নাই। ঐ অভিন্ন কারণেই পুলিশের গদাইলস্করি চাল কিনা, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে খতাইয়া দেখিতে বলিব।
ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আমলে দেখা গিয়াছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর অপরাধ জনসমক্ষে আনয়নের কারণে সাংবাদিকরা তাহাদের অলিখিত ‘শত্রু’ বলিয়া বিবেচিত হইয়াছিলেন। সাংবাদিকদের উপর হামলা এমনকি হত্যার ঘটনায়ও স্বজনরা বিচার পান নাই। সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ শতাধিকবার পিছাইয়াছে। এমনকি জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানেও সাংবাদিকরা লক্ষ্যবস্তু হইয়াছিলেন। তথাপি সাংবাদিকরা ঝুঁকি লইয়া সংবাদ সংগ্রহ করিয়াছেন এবং ইহাতে সংবাদমাধ্যমের পাঁচজন কর্মী শহীদ হইয়াছেন; আরও প্রায় শত সাংবাদিক আহত। সংগত কারণেই অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট সাংবাদিক সমাজের প্রত্যাশা অধিক। আমরা বিশ্বাস করিতে চাহি, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকাল সাংবাদিকতার জন্য সুবর্ণ সময় হইয়া উঠিবে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের কর্তাব্যক্তিগণ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার অঙ্গীকার করিলেও সাংবাদিকদের উপর হামলা উহার বিপরীত চিত্রই তুলিয়া ধরিতেছে।
আমাদের বক্তব্য, সাংবাদিকদের উপর এহেন হামলা আর চলিতে পারে না। আমরা চাহিব, সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এমন নির্দেশনা প্রদান করুক, যাহাতে এই সকল বিষয়ে তাহারা তৎপর থাকে। শরীয়তপুরে যেইভাবে সমকালের জিলা প্রতিনিধির উপর সন্ত্রাসীরা হামলা করিয়াছে, উহা হত্যাচেষ্টা বৈ কিছু নহে। একজন ক্লিনিক ব্যবসায়ী, যে চিকিৎসকের অপরাধের বিরুদ্ধে সংবাদ করিবার কারণে তাঁহার পক্ষ লইয়া এমন হামলায় নেতৃত্ব দিয়াছে, তাহার খুঁটির জোর কোথায়? হামলার ২৪ ঘণ্টারও অধিক সময় অতিক্রান্ত হইবার পরও কেন তাহাকে গ্রেপ্তার করা যায় নাই, তজ্জন্য স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জবাবদিহি করিতে হইবে।
আমরা দেখিয়াছি, সরকার গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করিয়াছে। এই কমিশন গণমাধ্যম সংস্কার, তৎসহিত সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বিধানেও কার্যকর সুপারিশ করিবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। বিগত সময়ে সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনাগুলি জনসমক্ষে আনয়ন আবশ্যক। সাম্প্রতিক শরীয়তপুর ও লক্ষ্মীপুরে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় বিচার হইবার মাধ্যমেই অন্তর্বর্তী সরকারের সেই সদিচ্ছা প্রমাণ হইবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র র সমক ল র ব দ কর অপর ধ হইয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
পরীক্ষায় নকল সরবরাহের শর্তে টাকা আদায়
মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে। পরীক্ষা নিয়ে এবারও নকল সরবরাহসহ বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছে মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা। শঙ্কায় আছেন অভিভাবকরাও। পরীক্ষায় নকল সরবরাহের শর্তে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী।
জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মমিন মণ্ডল বলেন, যেসব কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ বা আগে অনিয়ম হয়েছে, সেখানে নজরদারি বাড়ানো হবে। কোচিং সেন্টারের শিক্ষকদের পরিদর্শক হিসেবে রাখা যাবে না। নির্দেশনা উপেক্ষা করে কোচিং শিক্ষকদের পরিদর্শক হিসেবে রাখা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে এবার মোট ৯টি বিদ্যালয়ের এক হাজার ৬৫ জন পরীক্ষা দেবে। বিদ্যালয়গুলো হলো– চূহড় উচ্চ বিদ্যালয়, বেতগাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, বিরাহীমপুর উচ্চ বিদ্যালয়, পাইকান উচ্চ বিদ্যালয়, আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, জায়গীর স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং শালমারা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়। কেন্দ্রের আশপাশে জায়গীরহাট গুগল কোচিং সেন্টার, পারফেক্ট স্টাডি কেয়ার, শাহিন কোচিং সেন্টার, টু-ইন-ওয়ান, ম্যাথ প্লাস কোচিং সেন্টার, শালমারা সংকল্প এবং তারাগঞ্জ শাহিন কোচিং সেন্টারের অবস্থান। অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এসব কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত। গত বছর তাদের অনেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করে টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের অনৈতিক সুবিধা দিয়েছেন। এ নিয়ে সমকালে প্রতিবেদন প্রকাশের পর দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড তদন্ত করে। সত্যতা পেয়ে কেন্দ্রসচিব ও প্রতিষ্ঠান প্রধান মাহেদুল ইসলামকে ভর্ৎসনা করা হয়। তাঁকে ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড না করার জন্য নির্দেশ দেয়।
এবারও পরীক্ষা শুরুর আগেই জায়গীরহাট গুগল ও শাহীন কোচিং সেন্টারসহ কয়েকটি সেন্টারের পরিচালক শিক্ষার্থীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে নিশ্চয়তা দিয়েছেন। এ কাজের জন্য তারা মোটা অঙ্কের টাকাও নিয়েছেন। বিশেষ করে ইংরেজি এবং গণিত পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ১ হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
জায়গীরহাট গুগল কোচিং সেন্টারের পরিচালক মওলা মিয়া বলেন, এ ধরনের অভিযোগ সঠিক নয়। তাদের সম্মান ক্ষুণ্ন করতে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। একইভাবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শাহিন কোচিং সেন্টারের পরিচালক শাহিন মিয়াসহ অন্যরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, পায়রাবন্দ কেন্দ্রের নিরাপত্তা এবং সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাড়তি নজরদারিতে থাকবে কেন্দ্রটি।’