একমাত্র নৌকা জাদুঘর ভেঙে ফেললেন বিএনপি নেতাকর্মীরা
Published: 1st, February 2025 GMT
বরগুনা শহরে স্থাপিত দেশের একমাত্র নৌকা জাদুঘর ভেঙে ফেলেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এটি জেলা প্রশাসনের অধীন স্থাপনা হলেও গতকাল শনিবার বিএনপি কর্মীরা উচ্ছেদের নামে ভাঙচুর শুরু করেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক নীরব থেকেছেন। নদীবহুল এলাকার ঐতিহ্য ফুটিয়ে তুলতে স্থাপিত এই জাদুঘর ভেঙে ফেলায় পর্যটনপ্রেমীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
জেলা প্রশাসন কার্যালয় সংলগ্ন পুরোনো গ্রন্থাগার চত্বরে ২০২০ সালে স্টিল দিয়ে নৌকার আদলে অবকাঠামো করে জাদুঘরটি করা হয়। নাম দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আন্দোলনকারীরা সেটির ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। এরপর থেকে সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের লোকজন স্টিল কেটে নৌকা অবকাঠামো অপসারণ শুরু করেন। স্থাপনার দুই পাশ কেটে নৌকার কাঠামো অপসারণ করা হয়।
নদীবহুল এলাকার ঐতিহ্য নৌকাকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত এবং দেশি-বিদেশি পর্যটককে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সাগরপাড়ের শহর বরগুনায় জাদুঘর করা হয়। পাকা ভবন ঘিরে স্টিল দিয়ে তৈরি নৌকাটি ১৬৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের। ভেতরে ঐতিহ্যবাহী সাম্পান, বজরা পানসি, কোষা, ময়ূরপঙ্খি, গয়না, ডিঙিসহ বিভিন্ন প্রকার ১০১টি প্রতীকী নৌকা স্থাপন করা হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহর পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধানে স্থাপিত জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হয় ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। বিনোদনপিপাসুদের কাছে এটি ছিল আকর্ষণীয় স্থান।
জাদুঘরটির পাশাপাশি নৌকা গবেষণা কেন্দ্র, আধুনিক লাইব্রেরি, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, শিশুদের বিনোদনের জন্য রাইড, থিয়েটার, ক্ষুদ্র ক্যাফেসহ নানা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের আশ্বাস ছিল। তবে উদ্বোধনের চার বছরে তা বাস্তবায়ন হয়নি।
পর্যটন উদ্যোক্তা আরিফুর রহমান বলেন, বরগুনা উপকূলীয় জেলা। নৌকা আমাদের ঐতিহ্য। একটি রাজনৈতিক দলের প্রতীক হিসেবে না দেখে ঐতিহ্য হিসেবে দেখলে জাদুঘরটি রক্ষা করা যেত। প্রয়োজনে নামের পরিবর্তন করা যেত। জাদুঘরটি জেলা প্রশাসনের অধীনে। অপসারণ, নতুন পরিকল্পনা বা ডিজাইন করার প্রয়োজন হলে তারাই করতে পারত।
বরগুনা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুরাদুজ্জামান টিপন সাংবাদিকদের বলেন, নৌকা জাদুঘরের নামে ১০টা জাদুঘরের চাঁদা উঠানো হয়েছে। সরকারি সম্পত্তি দখল করে এটি করা হয়েছে। তাই জনগণ ভেঙে ফেলেছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম স্বপন বলেন, নৌকা জাদুঘর জনরোষে পড়েছে। তবে পুরোটা ভাঙা হয়নি। দুই পাশে নৌকার ডিজাইন ভাঙা হয়েছে। সেখানে গণপাঠাগার করা হবে।
যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুরাদ খান বলেন, আগে সেখানে পৌরসভার পরিচালনায় গণপাঠাগার ছিল। ২০২০ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক তোষামোদি করতে গিয়ে পাঠাগার বন্ধ করে বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর করেছেন। ৫ আগস্ট জনরোষে সেটি ভাঙচুর এবং সংগৃহীত নৌকা লুটপাট হয়। এরপর সেখানে মাদক কারবারি ও কিশোর গ্যাং আস্তানা গাড়ে। স্থানীয় জনগণ এতে অতিষ্ঠ হয়ে সেটা অপসারণ করে আবার পাঠাগার চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। মুরাদ আরও বলেন, পাঠাগারের পাশাপাশি আরেকটি নৌকা জাদুঘর করার জন্য তারা জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানাবেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ জ দ ঘরট জ দ ঘর বরগ ন ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতি বাতিল চায় না বিএনপি
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতি বাতিলের ব্যাপারে যে কথা বলা হচ্ছে, সেটি যুক্তিসংগত মনে করছে না বিএনপি। দলটির নেতাদের মতে, মুক্তিযুদ্ধ হবে বাংলাদেশের ভিত্তি। এমন মতামত উঠে এসেছে বিএনপির ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ খসড়ায়। সমমনা দলের সঙ্গে আলোচনা ও সম্মতির পর এটা চূড়ান্ত করবে বিএনপি।
বিএনপির ঘোষণাপত্রে ন্যূনতম সময়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে সাংবিধানিক সংস্কার করার কথা বলা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বিগত দিনের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ত্যাগ এবং জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি রয়েছে খসড়ায়।
জানা গেছে, এই খসড়া সমমনা ও জোট ছাড়াও অন্যান্য দলের কাছে পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগির এ বিষয়ে মতবিনিময় করা হবে। সেখানে সবার মতামত ও সম্মতিতে এটা চূড়ান্ত করা হবে। শিক্ষার্থীদের ‘জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র’ খসড়ায় বলা হয়েছে, এটি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে। তবে বিএনপি নেতাদের অভিমত, এটা অপ্রয়োজনীয়। এটাকে ডিক্লারেশন আকারে দিতে হবে। যখন এটা নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য হবে, তখন এটা ঘোষিত হয়েছে বলে গণ্য হবে। ছাত্ররা এটাকে ব্যাকডেটেড প্রক্লেমেশন আকারে দেওয়ার যে কথা বলছে, সেটার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে করছেন না নেতারা। বিএনপির খসড়া ঘোষণাপত্রে গণঅভ্যুত্থানে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সমর্থন বিষয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি। জাতীয় নাগরিক কমিটির ঘোষণাপত্রের খসড়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা থাকলেও, সরকারের করা খসড়ায় তা নেই। বিএনপির ঘোষণাপত্রেও খালেদা জিয়া কিংবা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কিছু নেই।
খসড়ার শেষাংশে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী নিম্নোক্ত রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এই ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করছি।’
সমমনাদের সঙ্গে বৈঠক
জানা গেছে, সমমনা দল ও জোটের মতামত ছাড়া এই খসড়া প্রকাশ করা হবে না। এ বিষয়ে গতকাল অনুষ্ঠিত ১২ দলীয় জোটের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জোটের সমন্বয়ক ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা সমকালকে জানান, বৈঠকে তাদের খসড়া ঘোষণাপত্র দেওয়া হলেও এখনও সেটি দেখেননি। দলগতভাবে এই ঘোষণাপত্র নিয়ে তাঁর তেমন আগ্রহ নেই। তাঁর মূল দাবি– দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনা। তিনি সেদিকেই বেশি গুরুত্ব দিতে চাইছেন।
ঘোষণাপত্র নিয়ে উত্তাপ
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন ঘটে। অভ্যুত্থানের সূত্রপাত করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষণাপত্রের দাবিতে প্রথম সোচ্চার হয় ডিসেম্বরে। ছাত্র নেতৃত্বের রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক কমিটিও একই দাবি তোলে। অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতারা ২৮ ডিসেম্বর একযোগে ঘোষণা দেন বছরের শেষ দিনে শহীদ মিনারে সমাবেশ থেকে ঘোষণাপত্র প্রকাশ হবে। সে সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছিল, এর সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক নেই। তবে এক দিন পর জানায়, সরকার সহযোগিতা করবে। ৩০ ডিসেম্বর ছিল নাটকীয়তা পূর্ণ। সেই রাতে জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণাপত্র তৈরি করবে। মধ্যরাতে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। তা থেকে ঘোষণাপত্র প্রকাশে সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। এ দাবির পক্ষে জনমত গঠনে প্রচারপত্র বিলি ও গণসংযোগ করে ছাত্র নেতৃত্ব। ১৬ জানুয়ারি ‘সর্বদলীয়’ বৈঠক ডাকেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্র তৈরি করতে একমত হন।
যা আছে বিএনপির ঘোষণাপত্রে
বিএনপি ‘জাতীয় ঐকমত্যের রাজনৈতিক ঘোষণাপত্র’ উল্লেখ করে শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছে। ভিন্ন দিকে ছাত্রদের ঘোষণাপত্রে সাতচল্লিশে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি শুরু করে একাত্তরে জনযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা এবং পরবর্তী ঘটনা প্রবাহের বর্ণনা রয়েছে।
বিএনপির খসড়ায় বলা হয়েছে, এই ভূখণ্ডের মানুষ ২৩ বছর পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল। বাংলাদেশের আপামর জনগণ ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই ভূখণ্ডে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বিবৃত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে। তবে ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক ও গণবিরোধী শাসনব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে এবং একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অতি উগ্র বাসনা চরিতার্থ করার অভিপ্রায়ে সংবিধানে অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক পরিবর্তন করা হয়। ফলে এক ব্যক্তির একচ্ছত্র ক্ষমতা ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়। জবরদস্তিমূলক একনায়কতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবৈধ আওয়ামী সরকার দুঃশাসন, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করে এবং সব রাষ্ট্রীয় বা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে।
খসড়ায় বলা হয়, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে তাঁর নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া ও ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিগত সরকার দেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলে। পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য ও জলবায়ুকে বিপন্ন করে। বিদেশি রাষ্ট্রের অন্যায় প্রভুত্ব, শোষণ ও খবরদারির বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে তল্পিবাহক আওয়ামী লীগ সরকার নিষ্ঠুর শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দমন করে। ধারাবাহিক তিনটি নির্বাচনী প্রহসনে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার এ দেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলা হয়, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ আমলে ভিন্ন মতের রাজনৈতিক নেতাকর্মী, শিক্ষার্থী ও তরুণদের নির্যাতন করা হয়। সরকারি চাকরিতে একচেটিয়া দলীয় নিয়োগ ও কোটাভিত্তিক বৈষম্যের কারণে ছাত্র, চাকরিপ্রত্যাশী ও নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাপক দমনপীড়ন ও গণহত্যা চালায়। এর ফলে সারাদেশে দল-মত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতার উত্তাল গণবিক্ষোভ নজিরবিহীন অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। গণঅভ্যুত্থান চলাকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের প্রণীত ৯ দফা দমনে ফ্যাসিস্ট সরকার নির্মমতার আশ্রয় নেয়। ইন্টারনেট বন্ধ করে। কারফিউ জারি করে। ব্লকরেইড করে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে এই অদম্য ছাত্র আন্দোলনে রাজনৈতিক দল, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী ও শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সব স্তরের মানুষ যোগ দেয়। রাজপথে নারী-শিশুসহ দুই সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়। অগণিত মানুষ পঙ্গু ও অন্ধ হয়।
আওয়ামী সরকারের পতনের বিষয়ে বলা হয়, ফ্যাসিবাদের পতনের নিমিত্তে ছাত্র-জনতা তথা সব শ্রেণিপেশার মানুষের তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে অবৈধ, অনির্বাচিত, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। পরে অবৈধ সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে উচ্চ আদালতের মতামতের আলোকে সাংবিধানিকভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে।
বিএনপির খসড়ায় বলা হয়, বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের ফ্যাসিবাদবিরোধী তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়। সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিদ্যমান সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশের জনগণ।
আওয়ামী লীগের বিচার প্রসঙ্গে খসড়ায় বলা হয়, ষোলো বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন- সংগ্রাম এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সংঘটিত গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধের বিচারের দৃঢ় অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে বাংলাদেশের জনগণ।
সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয়ে ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ন্যূনতম সময়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার করতে হবে। এর মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রত্যাশা, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে বাংলাদেশের জনগণ।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গতকাল রাতে সমকালকে বলেন, ‘আমরা সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ঘোষণাপত্র দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ সেখানে দেশ ও জাতির প্রয়োজনের সব আকাঙ্ক্ষা থাকবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।