Samakal:
2025-02-01@20:54:20 GMT

টাস্কফোর্সের সুপারিশ আমলে লউন

Published: 1st, February 2025 GMT

টাস্কফোর্সের সুপারিশ আমলে লউন

বৈষম্যহীন টেকসই অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বিশেষত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের যেই চিত্র উঠিয়া আসিয়াছে উহা অনাকাঙ্ক্ষিত হইলেও অপ্রত্যাশিত নহে। সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিকট পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ হস্তান্তরিত প্রতিবেদনটিতে বলা হইয়াছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা এবং স্বজন-তোষণ নীতির কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিপর্যয় নামিয়া আসিয়াছে। সেই আমলে চাহিদা না থাকিলেও ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র অতিরিক্ত স্থাপিত হইয়াছে, যাহার ফলে অলস বসিয়া থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিকেও কেবল ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ হিসাবে এক লক্ষ কোটি টাকা দিতে হইয়াছে। অনুরূপভাবে নিছক সরকারঘনিষ্ঠ কোম্পানির মুনাফার লক্ষ্যে আমদানিনির্ভর নীতিমালা বানাইয়া দেশের জ্বালানি খাতকে ঝুঁকির সম্মুখে ঠেলিয়া দেওয়া হইয়াছে। এই দুইয়ের ফলস্বরূপ বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধির খেসারত দিতে হইতেছে সাধারণ ভোক্তাদের বাড়তি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের মাধ্যমে। নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং ভূমি অধিগ্রহণে ব্যাপক দুর্নীতিও ভোক্তাদের স্কন্ধে বাড়তি ব্যয়ের বোঝা চাপাইয়া দিয়াছে। 

বস্তুত ২০১০ সালে বিদ্যুতের অস্বাভাবিক লোডশেডিং দ্রুত সামাল দেওয়ার নামে যখন বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন প্রণয়ন করা হয় তখনই বিশেষজ্ঞরা ওই পদক্ষেপকে লুটপাটের সিংহদ্বার উন্মুক্ত করিবার সহিত তুলনা করিয়াছিলেন। সেই দিক হইতে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে তুলিয়া ধরা চিত্রটি অপ্রত্যাশিত নহে। মূলত ওই আইনটি ব্যবহার করিয়াই তৎকালীন সরকার অনুগত ব্যবসায়ীদের বিনা টেন্ডারে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করিতে দিয়াছে। পাশাপাশি যাচাই-বাছাই ব্যতিরেকে ক্ষেত্রবিশেষে বাজারমূল্য অপেক্ষা অধিক দামে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করা হইয়েছে। শুধু উহা নহে, একই প্রক্রিয়ায় বহু অদক্ষ ও ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দানের পাশাপাশি ওইগুলির চুক্তি বারংবার নবায়ন করা হইয়াছে। সর্বাধিক উদ্বেগের বিষয় হইল, সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত গত আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগী কোম্পানিগুলির হস্তে জিম্মি হইয়া পড়িয়াছে।

বলাই বাহুল্য যে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত যে কোনো দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। এই খাতে বিপর্যয়ের প্রভাব আমাদের জাতীয় অর্থনীতিও এড়াইতে পারে না। যত দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ত্রুটিসমূহ সংশোধন হইবে ততই বিপর্যয়জনিত ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস সম্ভবপর হইবে। এই ক্ষেত্রে টাস্কফোর্স স্বল্প ও দীর্ঘময়াদি যেই সকল সুপারিশ করিয়াছে সেইগুলি গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া আমরা মনে করি। প্রতিবেদন অনুসারে, টাস্কফোর্সের স্বল্পমেয়াদি সুপারিশগুলির মধ্যে রহিয়াছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) শক্তিশালী ও দক্ষ করিয়া তোলা, অদক্ষ ও ব্যয়বহুল কেন্দ্র বন্ধ করিয়া দেওয়া, বেসরকারি কেন্দ্রগুলির সহিত সম্পাদিত চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন, বাস্তবভিত্তিক জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গুরুত্ব প্রদান এবং এই খাতের উত্তম বিনিয়োগকারীদের জন্য কর অবকাশ মঞ্জুর। দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশগুলির মধ্যে রহিয়াছে– একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ তৈরি, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াইতে বিনিয়োগ, নিম্ন আয়ের মানুষের জ্বালানি অধিকার রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ ইত্যাদি। জরুরিভিত্তিতে অসম চুক্তিগুলির অন্যায্য শর্ত লইয়া জোর দরকষাকষিও প্রয়োজন। স্মরণে রাখিতে হইবে, ত্রুটিপূর্ণ চুক্তির কারণে শ্বেতহস্তীসম বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি সচল থাকিলে যদ্রূপ জাতিসমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হইবে, তদ্রূপ সেইগুলিকে অলস বসাইয়া রাখিলেও ক্যাপাসিটি চার্জের ন্যায় অযৌক্তিক ব্যয়ের বোঝা বহন করিয়া যাইতে হইবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হইয় ছ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষের মতো আইনগত অধিকার পেল নিউজিল্যান্ডের পাহাড়

মানুষের মতো আইনগত অধিকার পেল নিউজিল্যান্ডের একটি পাহাড়। বহু বছর পর এমন আইন প্রণয়ন করা হয়। এর মানে তারানাকি মাউঙ্গা (মাউন্ট তারানাকি) নিজের মালিকানা কার্যকরভাবে পাবে। এটি পরিচালনায় একসঙ্গে কাজ করবে স্থানীয় উপজাতি, ইউয়ি এবং সরকারের প্রতিনিধিরা। খবর বিবিসির

এই আইন প্রণয়নের লক্ষ্য উপনিবেশ আমলে তারানাকি অঞ্চলে ভূমি বাজেয়াপ্ত, অবিচারের শিকার হওয়া মাওরিরা ক্ষতিপূরণ দেওয়া।

আলোচনার জন্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী পল গোল্ডস্মিথ বলেছেন, ‘অতীতের ভুলের কারণে যে বেদনা রয়ে গেছে, তা আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। যাতে ইউয়িদের নিজস্ব আকাঙ্ক্ষা ও সম্ভাবনাকে উপলব্ধি করে তাদের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আমরা সহায়তা করতে পারি।’

গত বৃহস্পতিবার জীবন্ত সত্তা ঘোষণার তারানাকি মাউঙ্গা কালেক্টিভ রিড্রেস বিলটি নিউজিল্যান্ডের পার্লামেন্টে পাস হয়। তাতে পর্বতটি একটি আইনি নাম পেয়েছে এবং এর আশপাশের চূড়া ও জমিকে দেওয়া হয়েছে সুরক্ষা।

পর্বত, পূর্বপুরুষ, জীবিত প্রাণীসহ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে যে মাওরি বিশ্বদর্শন রয়েছে, সেটির স্বীকৃতি মিলেছে বিলটি পাসের মধ্য দিয়ে।

রাজনৈতিক দল থে পাথি মাওরির (মাওরি পার্টি) সহ-নেতা ডেবি নারওয়ে-প্যাকা বলেন, ‘আমাদের মাউঙ্গা টুপুনা (পূর্বপুরুষের পর্বত) অবিচার, অজ্ঞতা ও ঘৃণার শৃঙ্খল থেকে আজ মুক্তি পেয়েছে।’

নারওয়ে প্যাকা নিউজিল্যান্ডের পশ্চিম উপকূলে আটজন তারানাকি ইউয়িদের মধ্যে একজন, যার কাছে পর্বতটি পবিত্র। এলাকাটির আরও শত শত মাওরি নাগরিক বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে উপস্থিত হয়েছিলেন বিলটির আইনি রূপান্তর দেখতে।

বিবিসি লিখেছে, পর্বতটি আর আনুষ্ঠানিকভাবে ‘এগমন্ট’ নামে পরিচিত হবে না, যে নামটি ১৮ শতকে দিয়েছিলেন ব্রিটিশ পরিব্রাজক জেমস কুক। এখন এটি ‘তারানাকি মাউঙ্গা’ নামে পরিচিত হবে। আর চারপাশ ঘিরে থাকা জাতীয় উদ্যানটিও পাবে মাওরি নাম।

যে চুক্তির মাধ্যমে নিউজিল্যান্ড একটি দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আদিবাসীরা জমি ও সম্পদের নির্দিষ্ট অধিকার পেয়েছিল; সেই ওয়েটাঙ্গি চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য ক্ষতিপূরণের সর্বশেষ প্রয়াস তারানাকি মাউঙ্গা বন্দোবস্ত।

১৮৬০ এর দশকে তারানাকি পর্বত এবং স্থানীয় মাওরিদের কাছ থেকে ১০ লাখেরও বেশি একর জমি বাজেয়াপ্তের ঘটনায় সরকারের তরফে ক্ষমা প্রার্থনার অংশ হিসেবেও দেখা হচ্ছে এই বন্দোবস্তকে।

পল গোল্ডস্মিথ স্বীকার করেছেন যে, ‘চুক্তি লঙ্ঘনের অর্থ হল হোয়ানু (বৃহত্তর পরিবার), হাপু (উপ-উপজাতি) এবং তারানাকির ইউয়ির ব্যাপক পরিসরের ক্ষতি; যা বহু দশক ধরে অপূরণীয় হয়ে দাঁড়ায়।’

তিনি আরও বলেন, পর্বতটিতে প্রবেশাধিকার আর পরিবর্তন হবে না এবং নিউজিল্যান্ডের সব বাসিন্দা এই জায়গাটি পরিদর্শন করতে পারবে এবং আগামী প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্দান্ত এ জায়গাটি উপভোগ করতে পারবে। 

নিউজিল্যান্ডে এর আগেও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের জীবন্ত সত্তার স্বীকৃতি পাওয়ার নজির রয়েছে। ২০১৪ সালে উরেওয়েরা বন প্রথম এই জাতীয় মর্যাদা অর্জন পায়। এরপর ২০১৭ সালে এমন স্বীকৃতি পায় হোয়াংগানুই নদী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও আর্থসামাজিক সংস্কার
  • ১২ দাবি আদায়ে সম্মেলন করবে রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন
  • মানুষের মতো আইনগত অধিকার পেল নিউজিল্যান্ডের পাহাড়