Samakal:
2025-01-31@20:45:34 GMT

নিন্দাই যথেষ্ট নহে

Published: 31st, January 2025 GMT

নিন্দাই যথেষ্ট নহে

দেশে গত কয়েক দিন যাবৎ বাধা ও হুমকির মুখে একের পর এক নারীকেন্দ্রিক আয়োজন বন্ধ হইবার ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। শুক্রবার সমকালের এক প্রতিবেদন বলিতেছে, মঙ্গল ও বুধবার কথিত তৌহিদি জনতা নামক গোষ্ঠীর হুমকির মুখে জয়পুরহাট ও দিনাজপুরে নারীর ফুটবল খেলা বন্ধ করিয়া দিতে হইয়াছে। দিনাজপুরে উক্ত ‘তৌহিদি জনতা’ মাঠে হামলা-ভাঙচুরও চালাইয়াছে। শুধু উহাই নহে; অতি সম্প্রতি অনুরূপ গোষ্ঠীর হুমকির মুখে প্রথমে টাঙ্গাইলের কালিহাতীর এক অনুষ্ঠানে চিত্রনায়িকা পরীমণি এবং পরবর্তী সময়ে খোদ রাজধানীতে পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠানে আরেক চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস উপস্থিত হইতে পারেন নাই। এমনকি ঢাকায় ‘কওমি উদ্যোক্তা সম্মেলন ২০২৫’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এক নারী সাংবাদিককে সংবাদ সংগ্রহের লক্ষ্যে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশে বাধা প্রদান করা হইয়াছে, যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্ম উপদেষ্টা ড.

আ ফ ম খালিদ হোসেন। এই সকল ঘটনা স্পষ্ট করিয়া দেয়– দেশে ইতোমধ্যে নারীর ক্ষমতায়নে কষ্টার্জিত অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য হইলেও উহা অদ্যাবধি ভঙ্গুর রহিয়া গিয়াছে। প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে খুলনার বটিয়াঘাটায় এক দল মানুষ অনূর্ধ্ব-১৭ খুলনা বিভাগীয় নারী ফুটবল দলের চার সদস্যকে হাফপ্যান্ট পরিধান এবং ‘অনাচারী আচরণ’-এর জন্য আক্রমণ করে। গত বৎসর চট্টগ্রামে এক অভিনেত্রীকে একটি শোরুম উদ্বোধনে বাধা প্রদান করা হয়। আমরা মনে করি, উল্লিখিত ঘটনাগুলির হোতাদের উপযুক্ত শাস্তি বিধানসহ নারী অধিকার হরণের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গঠন করা হইলে হয়তো সাম্প্রতিক অনকাঙ্ক্ষিত ঘটনাবলি আমাদের প্রত্যক্ষ করিতে হইত না।

স্বীয় চরম রক্ষণশীল মত অন্যের উপর চাপাইয়া দিবার আলোচ্য ঘটনাবলি এমন সময়ে ঘটিতেছে যখন আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৯, ২৭ ও ২৮ সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা ও আইনের সমতার কথা বলিতেছে এবং ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ইত্যাদির ভিত্তিতে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টির বিরুদ্ধে বিধান দিয়াছে। তদুপরি, যেখানে সমগ্র জাতি সাম্প্রতিক জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে বিশেষত বহু মত ও বহু সংস্কৃতির সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের নূতন শপথ গ্রহণ করিয়াছে, তথায় নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর উল্লিখিত ঘটনাবলি কোনো প্রকারেই গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না। স্মরণ করা যাইতে পারে, গত পাঁচ মাসের অধিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজার, ওরসে হামলা ও ভাঙচুর হইয়াছে। কোথাও কোথাও বাউল গান, এমনকি কনসার্ট ও সাধারণ গানের আসরেও বাধা প্রদান করা হইয়াছে। সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সূত্রে প্রকাশ, এই সকল বেআইনি ঘটনার পশ্চাতে ওই কথিত ‘তৌহিদি জনতা’র ব্যানার ব্যবহৃত হইয়াছে। অন্যদিকে পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত বৈচিত্র্যের গ্রাফিতি অপসারণ এবং উহার প্রতিবাদে সংঘটিত আদিবাসী ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলার ঘটনায় যাহাদের বিরুদ্ধে আঙুল উঠিয়াছে, তাহারাও অনুরূপ চরম রক্ষণশীল তথা বৈচিত্র্যবিরোধী অংশেরই প্রতিনিধি। এই বিশেষ গোষ্ঠী প্রায়ই রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণেরও বিরোধিতা করিয়া থাকে। এই ঘটনাবলি জাতি-ধর্ম-লিঙ্গভিত্তিক বিধিনিষেধ, সহিংসতা, হয়রানি এবং কলঙ্কের একটি বিশেষ ধরনের প্রকাশ ঘটায়, যাহার বিরুদ্ধে দেশের সচেতন মহল দীর্ঘদিন ধরিয়া সোচ্চার। কিন্তু অতীতের প্রায় সকল আমলে রাষ্ট্রের পরিচালকদের এহেন অপশক্তির প্রতি এক প্রকার আত্মসমর্পণ পরিস্থিতিকে জটিল করিয়া তুলিয়াছে। 
সত্য, সাম্প্রতিক ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে এক বার্তায় সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের অঙ্গীকার করিয়াছে। অনতিবিলম্বে সংগতিপূর্ণ শক্ত পদক্ষেপ গৃহীত না হইলে উক্ত বার্তায় কোনো কাজ হইবে না। জাতিরূপে আমাদের অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টিকারী অপশক্তির বিরুদ্ধে কঠোর হইতে হইবে। ইহারই অংশরূপে সহিংসতা সংঘটনকারী বা উস্কানিদাতাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনয়ন, তৎসহিত স্থানীয় প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি আলোচ্য ঘটনাবলি প্রতিরোধে কেন ব্যর্থ হইল– এই প্রশ্নের সদুত্তর অনুসন্ধানও জরুরি। যেই সকল সামাজিক ও ধর্মীয় নেতা নারীদের অধিকারের পক্ষে কথা বলেন, তাহাদের আরও উচ্চকণ্ঠ হওয়া আজ সময়ের দাবি। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

বাসচাপায় প্রাণ গেল স্বামী-স্ত্রীসহ একই পরিবারের ৩ জনের

সিরাজগঞ্জের ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে বাসচাপায় স্বামী-স্ত্রীসহ একই পরিবারের তিন অটোরিকশা যাত্রী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যার পর সদর উপজেলার মুলীবাড়ী চেকপোস্ট এলাকায় ওই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও তিনজন।

যমুনা সেতু পশ্চিমপাড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম সমকালকে জানান, যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের মুলিবাড়ি চেকপোস্ট এলাকায় সন্ধ্যার পর ৬ জন যাত্রী নি‌য়ে একটি অটোরিকশা মহাসড়ক পার হচ্ছিল। এ সময় উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী নাবিল পরিবহনের একটি বাস অটোরিকশাকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই অটোরিকশার যাত্রী দুজন ও হাসপাতালে নেওয়ার পর একজন মারা যান।

নিহতরা হলেন- সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পুর্ব-বাঐতারা গ্রামের গোলাম হোসেনের স্ত্রী মো. শফিকুল ইসলাম (৪৫), তার স্ত্রী সুমনা খাতুন (৩৮) এবং শফিকুল ইসলামের বোন লাকী খাতুন (২২)। শফিকুল ও তার স্ত্রীর মরদেহ সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। আর শফিকুলের বোন লাকীর মরদেহ স্বজনরা নিয়ে গেছেন। 

ওসি আনোয়ারুল ইসলাম জানান, বাসটিকে ও চালককে শনাক্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। শুক্রবার রাত পৌনে এগারোটা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। তবে মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ