ইবতেদায়ী শিক্ষকদের ওপর হামলা, প্রতিবাদে বিক্ষোভ
Published: 27th, January 2025 GMT
ঢাকার শাহবাগে ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদ ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে এর জবাবদিহিতা চেয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীর।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ ভবনের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করেন ইবি শাখা বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থান ও কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদতুল্লাহ শেখ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের ইবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল রাহাত, ছাত্রশিবিরের ইবি শাখার ছাত্র অধিকার বিষয়ক সম্পাদক মো.
সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম বলেন, “ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। এটি তাদের ন্যায্য এবং যৌক্তিক অধিকার। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, কোন সরকারই এখন পর্যন্ত তাদের এ দাবি মেনে নেয়নি।”
তিনি বলেন, “অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করা প্রত্যেক নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু এর পরিবর্তে স্বৈরাচারীভাবে শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলা চালানো হয়েছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা এ নির্মম ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। শিক্ষকদের এ যৌক্তিক দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন এবং তাদের প্রতি এমন অমানবিক আচরণ বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।”
এদিকে, সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের জাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ, আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শাহিদুল ইসলাম শাহেদ, সিরাজুল ইসলাম, রসায়ন বিভাগের রাকিব আহমেদ প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, ঢাকায় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্যজোট তারা ছয় দফা দাবি জানিয়ে আসছে। অথচ পুলিশ শিক্ষকদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। এ হামলার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচার দাবি করছি। জাতির বিবেককে লাঞ্ছিত করার অধিকার কারোর নেই। যে কেউ যৌক্তিক দাবি নিয়ে কথা বলার অধিকার আছে। কিন্তু এভাবে স্বৈরাচারীদের মত আবারো আচারণ করল পুলিশ। দাবি মেনে নিয়ে শিক্ষকদের অধিকার ফিরিয়ে দিক রাষ্ট্র।
গতকাল রবিবার (২৬ জানুয়ারি) চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেওয়া ইবতেদায়ি শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করে পুলিশ।
ঢাকা/তানিম/সাইফুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইবত দ য় র স মন ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
গুদাম উন্নত করা দরকার
বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে কিনা, তা নিয়ে নানা শঙ্কার খবর আসছে। প্রতি বছর এই শঙ্কা থাকে, লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয় না। এর পেছনে কিছু সাধারণ কারণ থাকলেও এলাকাভেদে এর ভিন্নতা আছে। তবে দিনের শেষে ফলাফল– চাষির দীর্ঘশ্বাস।
দেশে বোরো ধানের ৪৭ শতাংশ উৎপাদন করেন ক্ষুদ্র চাষিরা। ৩৩ শতাংশ চাষি নগদ টাকায় জমি ভাড়া নিয়ে চাষ করেন, আর ২৬ শতাংশ ভাগচাষি। উৎপাদন খরচ বেশি আর দাম কম হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এই তিন ধরনের চাষি। তারা মূলত ঋণ করে ও পারিবারিক অর্থ বিনিয়োগ করে ধান চাষ করেন। এর পর উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে ধান বেচে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। সরকার প্রতি বছর যে চাল সংগ্রহ করে, তাতে মূলত চালকল মালিকরা লাভবান হন।
এসব কারণে প্রতি বছর ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন তলানিতে থাকে। উপজেলা শহরের খাদ্যগুদামে গিয়ে কৃষকরা ধান বিক্রির ধকল পোহাতে চান না। তাই সরকার নির্ধারিত মূল্যের অনেক কম দামে ব্যবসায়ীদের কাছে ধান বিক্রি করে দেন। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে রাজ্যভেদে কৃষিপণ্যের সরকারি সংগ্রহের পরিমাণ হচ্ছে মোট উৎপাদনের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। উৎপাদন খরচের ওপর তারা ২০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা যোগ করে সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। যদিও কৃষকদের দাবি থাকে ৫০ শতাংশ মুনাফার।
আমাদের দেশে কৃষিকাজে খরচ বেশি, মুনাফা কম। মূল্যস্ফীতির চাপও গ্রামেই বেশি, এতে নাকাল অবস্থায় কৃষক। তাদের চিকিৎসার অভাব, শিক্ষার অভাব। মাঠে তাদের সাপে ছোবল দেয়, বজ্রপাতেও মারা যায়। কিন্তু তার কোনো প্রতিবিধান সচরাচর হয় না। সরকারি সাহায্য-সহায়তার ক্ষেত্রেও তাদের হিস্যা কম। বাংলাদেশের একজন কৃষক বছরে কৃষি উপকরণ ভর্তুকি পায় মাত্র ৯০০ টাকা। চীনে এর পরিমাণ ২০ হাজার টাকা। ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও বলিভিয়ায় কৃষকপ্রতি ভর্তুকির পরিমাণ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। এ বঞ্চনার কথা সবার অনুধাবন করা দরকার। বৈষম্যবিরোধী নীতিমালা প্রণয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা দরকার আমাদের গরিব ও নিরীহ কৃষকদের।
সরকার যদি খাদ্য সংগ্রহের পুরোটা ধান হিসেবে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কিনে নেয়, তাহলে তা কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের জন্য ভালো হবে। সরকারি গুদামগুলোতে কৃষক ধান বিক্রি করতে গেলে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ধানের আর্দ্রতা নিয়ে। কৃষকের বড় অংশ সাধারণত ভেজা ধান বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। কিন্তু সরকার ১৪ শতাংশের বেশি আর্দ্রতা থাকলে তা কিনতে চায় না। এ সমস্যার সমাধান হিসেবে স্থানীয় পর্যায়ে আর্দ্রতা অনুযায়ী ধানের দাম ঠিক করা যেতে পারে।
সরকার চালকলগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ধান সেখানে ভাঙাতে পারে। দেশের বেশির ভাগ বড় চালকলে ধান শুকানোর আধুনিক ব্যবস্থা আছে। ধানের আর্দ্রতা বেশি হলে চালকল মালিক দ্রুত তা সরকারি গুদাম থেকে নিয়ে যাবেন। আর আর্দ্রতা কম থাকলে সরকার তা গুদামে রেখে দিয়ে সুবিধামতো সময়ে ভাঙানোর ব্যবস্থা করবে।
কৃষকের কাছ থেকে ধান সরাসরি কিনতে পারলে সেটা খুবই ভালো কাজ হবে। তাহলে কৃষক দাম পাবেন। কিন্তু তার আগে এত ধান, এত কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কেনার মতো অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রথমেই গুদামগুলোকে উন্নত করতে হবে। ভবিষ্যতে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে অটোরাইস মিলেও বিনিয়োগ করার কথা ভাবতে হবে।
লেখখ : ড. জাহাঙ্গীর আলম খান, কৃষি অর্থনীতিবিদ