Samakal:
2025-04-06@17:11:13 GMT

মূল্য হ্রাসে দিন মনোযোগ

Published: 24th, January 2025 GMT

মূল্য হ্রাসে দিন মনোযোগ

চাউলের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি বিভিন্ন পদক্ষেপ সত্ত্বেও এই প্রধান খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি যথেষ্ট উদ্বেগজনক সংবাদ। গত কয়েক মাসব্যাপী চাউলের বাজার তপ্ত। ভোক্তা অধিকার লইয়া কর্মরত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং সচেতন মহলের অব্যাহত দাবির মুখে অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে শুল্ক হ্রাস, আমদানিসহ বেশ কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছে। কিন্তু সকলই গরল ভেল। শুক্রবার সমকাল যদ্রূপ জানাইয়াছে, আমদানির খবরে মাঝে দুই-এক টাকা হ্রাস পাইলেও পুনরায় মূল্য বৃদ্ধি পাইয়াছে সকল প্রকার চাউলের। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে মানভেদে বিভিন্ন প্রকার চাউলের মূল্য কেজিতে ২ হইতে ১০ টাকা অবধি বৃদ্ধি পাইয়াছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার সরেজমিন পরিদর্শনের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, ভোক্তা পর্যায়ে মধ্যবিত্তের মধ্যে জনপ্রিয় প্রতি কেজি সরু বা মিনিকেট চাউল মানভেদে ৭৮ হইতে ৮২ টাকা, নাজিরশাইল মানভেদে ৮০ হইতে ৯০ টাকায় বিক্রয় হইতেছে। অথচ মাসখানেক পূর্বেও মিনিকেট ৬৮ হইতে ৮০ এবং নাজিরশাইল ৮০ হইতে ৮৫ টাকা দরে বিক্রয় হইয়াছে। এমনকি সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের ব্যবহৃত মাঝারি বা ব্রি-২৮ ও পাইজাম জাতের চাউলের কেজি এখন ৬০ হইতে ৬৬ টাকা। নিম্ন আয়ের মানুষ যেই মোটা বা গুটি স্বর্ণা জাতের চাউলের ভোক্তা, তজ্জন্য ক্রেতাকে কেজিতে গুনিতে হইতেছে ৫৪ হইতে ৫৮ টাকা। অথচ এক মাস পূর্বে মাঝারি মানের চাউলের কেজি ছিল ৫৮ হইতে ৬৪ টাকা এবং মোটা চাউল কেজিপ্রতি ৫২ হইতে ৫৫ টাকায় বিক্রয় হইয়াছিল। অধিকতর শঙ্কার বিষয়, চাউল ব্যবসায়ীদের অভিমত, আগামী দিনগুলিতে মূল্য আরও বৃদ্ধি পাইতে পারে।  

বিগত বৎসরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দফায় দফায় সংঘটিত বন্যায় চাউলের দ্বিতীয় প্রধান উৎস আমন ধানের ফলন বেশ ক্ষতিগ্রস্ত, উহা আমরা জানি। ইহার নেতিবাচক প্রভাবে চাউলের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি অস্বাভাবিক নহে। কিন্তু বিষয়টা ‘বাবু অপেক্ষা পারিষদদল তাহার শত গুণ’ বলিতেছে কিনা– উহাও ভাবিতব্য। কতিপয় ব্যবসায়ীর অসহযোগিতা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার উদাসীনতায় গত বৎসর সরকার প্রত্যাশানুযায়ী ধান-চাউল সংগ্রহে ব্যর্থ হইয়াছিল, উহা আমরা জানি। সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের মজুত যথেষ্ট না থাকিবার অর্থ বেসরকারি চাউল ব্যবসায়ীদের কারসাজির সমূহ সুযোগ মিলিয়া যাওয়া– তাহাও কাহারও অজ্ঞাত নহে। যাহা দুঃখজনক, বর্তমান সরকারও পূর্বসূরিদের ন্যায় এই বিষয়ে যথেষ্ট নজরদারি নিশ্চিত করিতে ব্যর্থ হইয়াছে।

বেসরকারি চাউলকল মালিকগণ কতটা ক্ষমতাবান, তাহা সর্বজনবিদিত। ক্ষুদ্র ও মধ্যমানের ব্যবসায়ীদের উপর ক্ষণে ক্ষণে ব্যাঘ্রের ন্যায় ঝাঁপাইয়া পড়া জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চাউলকল মালিকদিগের সম্মুখে কতটা বিড়াল বনিয়া যায়, তাহাও আমরা জানি। এমনকি ইহাদের বিরুদ্ধে দেশে মজুতদারি বন্ধে ২০১২ সালে প্রণীত প্রতিযোগিতা আইনও অদ্যাবধি প্রয়োগ হয় নাই। তবে আশার দিক, সরকার আমদানির মাধ্যমে নিজস্ব চাউলের মজুত বৃদ্ধি, তৎসহিত বেসরকারি পর্যায়েও উহা আমদানিতে উৎসাহ প্রদান করিতেছে, যাহা না হইলে হয়তো চাউলের মূল্য আক্ষরিক অর্থেই গগনচুম্বী হইত।
বিশেষজ্ঞদের ন্যায় আমরাও তাই মনে করি, যেই কোনো মূল্যে চাউলের আমদানি চালাইয়া যাইতে হইবে অন্তত আসন্ন মৌসুমে বোরো ধান উঠা অবধি। শুধু উহাই নহে, ইতোমধ্যে অজ্ঞাত কারণে বন্ধ করিয়া দেওয়া টিসিবির বিশেষ কার্ডধারীদের মধ্যে তো বটেই, ওএমএস তথা ওপেন মার্কেট সেল কর্মসূচির আওতায় ভর্তুকি মূল্যে চাউল বিক্রয় কার্যক্রমও পুনরায় শুরু করিতে হইবে, যাহা সমগ্র দেশেই চলিবে। মনে রাখিতে হইবে, বিভিন্ন কারণে অর্থনীতি সংকুচিত হইবার ফলে বিশেষত সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষের আয়-রোজগার ইতোমধ্যে হ্রাস পাইয়াছে, যাহাদের পক্ষে প্রতিদিনের ক্ষুন্নিবৃত্তিই অসম্ভব হইয়া পড়িয়াছে। অন্তত একটু সুলভে চাউল পাইলে সমাজের এই সকল অংশের মানুষ কোনোক্রমে জীবন নির্বাহ করিতে পারিবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব সরক র ব যবস য় আমদ ন হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

বউমেলায় বেশির ভাগ ক্রেতা নারী

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ফুলজোড় নদীতীরের ভূঞাগাঁতী এলাকায় বউমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার দিনব্যাপী এ মেলায় নানা বয়সী-নারীদের পাশাপাশি ভিড় জমিয়েছিল শিশু-কিশোরেরা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অষ্টমী স্নানোৎসবের পরের দিন উপজেলার ঘুড়কা ইউনিয়নের ভূঞাগাঁতী এলাকায় এ মেলা বসে। তবে মেলায় আসা বেশির ভাগ ক্রেতা বিভিন্ন ধর্মের গৃহিণী ও নারী।

স্থানীয় কয়েকজন জানালেন, অষ্টমী স্নানের পরের দিন এলাকার নানা বয়সী নারীদের জন্য এই মেলার আয়োজন করা হয়। স্নানের দিন যে বারোয়ারি মেলা বসে, সেখানে বাড়ির কাজ ফেলে তাঁদের যাওয়া হয় না। তাই অনেক বছর হলো নিয়ম মেনে বউমেলা বসে। এদিন গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় নানা জিনিস, মাটির হাঁড়িপাতিলের পাশাপাশি বাহারি পণ্য কেনেন নারীরা। এ ছাড়া শিশুদের খেলনা ও বিভিন্ন স্বাদের মিষ্টান্ন বেশ বিক্রি হয়।

রায়গঞ্জ উপজেলা সদরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিদ্যুৎ কুমার মোদক বলেন, ‘প্রথমবারের মতো বউমেলায় এসেছি। মেলার সার্বিক দিক দেখে অনেক ভালো লেগেছে।’

বউমেলা উপলক্ষে বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের ভিড় জমে। ভূঞাগাঁতী এলাকার দুজন গৃহবধূ জানান, অনেক কিছুর পরিবর্তন হলেও বউমেলা আগের মতোই আছে। এ মেলা থেকে সংসারের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক কিছু কিনেছেন তাঁরা। মেলা উপলক্ষে বাড়িতে অনেক কুটুম এসেছেন। তাঁদের খাওয়ানো ও মেলায় ঘুরানো হয়।

মুরারীপাড়া থেকে কয়েকজন নারী এসেছেন মাটির হাঁড়িপাতিল কিনতে। তাঁরা বললেন, খই-মুড়ি ভাজার বাসন সারা বছর পাওয়া যায় না। তাই মেলা থেকে এসব কিনতে এসেছেন। স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষার্থী বলেন, ‘আগে মা-পিসিদের সঙ্গে বউমেলায় আসতাম। এবার বান্ধবী ও বোনদের সঙ্গে বউমেলায় এসেছি। বছরের এক দিন খুব মজা করে কাটাই আমরা।’

উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সহসভাপতি শংকর কুমার দাস বলেন, যুগের পরিবর্তনে অনেক কিছু পাল্টে গেছে। তবুও আবহমান বাংলার বৈচিত্র্যময় এই মেলায় মানুষের বিশেষ করে নারীদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। আগে বউমেলায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই নারী ছিল। তবে এখন তার কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ