ইউক্রেন প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গেছেন ট্রাম্প?
Published: 24th, January 2025 GMT
নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মাত্র কয়েক দিন হলো গদিতে বসেছেন। ইতোমধ্যে ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে তাঁর সুর পরিবর্তন করেছেন। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ শেষ করার বাসনা তুলে ধরেছেন। এমনকি এ নিয়ে নির্বাচনী প্রচারাভিযানও চালিয়েছেন। ঘোষণা অনুযায়ী, ক্ষমতা গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর এ সংঘাত বন্ধ করার কথা। কিন্তু সেটি ঘটেনি এবং ট্রাম্প তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে ইউক্রেনের কথাও উল্লেখ করেননি। বরং এর কিছুক্ষণ পরেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, এই যুদ্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের লাভের চেয়ে ক্ষতির পাল্লা ভারী।
ট্রাম্প বলেছেন, এ নিয়ে পুতিন রোমাঞ্চিত হতে পারেন না। তা ছাড়া তিনি এতটা ভালোও করছেন না। এর পর তিনি পুতিনের নেতৃত্বের সমালোচনা করেন। ‘রাশিয়া ইউক্রেনের চেয়ে বড়। ইউক্রেনকে হারিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের অনেক সৈন্য আছে, কিন্তু এটি দেশ চালানোর কোনো পথ হতে পারে না’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। পরদিন তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল সাইটের একটি পোস্টে ট্রাম্প আরও এগিয়ে যান– ‘যদি আমরা (যুদ্ধ শেষ করতে) চুক্তি না করি, তাহলে শিগগিরই রাশিয়াসহ অন্যান্য শরিক দেশের ওপর উচ্চ কর, শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না।’ ইউক্রেনের যুদ্ধের খবর রাখেন এমন যে কেউ সচেতন– ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেন ইতোমধ্যে এমন অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন। কার্যত তাঁর প্রশাসন সব ধরনের রাশিয়ান পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছিল এবং প্রধান রাশিয়ান সংস্থা ও ব্যক্তিদের ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।
সুতরাং ট্রাম্প কি কেবল বাইডেনের নীতি অব্যাহত রাখারই ইঙ্গিত দিচ্ছেন? রাশিয়া অবশ্য সেটিই মনে করছে। ২৩ জানুয়ারি ট্রাম্পের হুমকির প্রতিক্রিয়ায় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রাশিয়ান মিডিয়াকে বলেছেন, ‘আমরা এখানে নতুন বিশেষ কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না।’ গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি অভ্যন্তরীণ নীতির মতো বদলে যায় না এবং বিদেশে আমেরিকান প্রতিশ্রুতি মূলত প্রেসিডেন্ট পরম্পরায় অব্যাহত থাকে। উদাহরণস্বরূপ ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে বারাক ওবামার মধ্যপ্রাচ্য নীতির ধারাবাহিকতা দেখুন। এ অঞ্চলে মার্কিন তৎপরতা সীমিত রেখে ট্রাম্প কিছুটা ব্যস্ততা দেখিয়েছিলেন। তবে ইউক্রেনের প্রতি ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি অন্তত দুই দিক থেকে বাইডেনের চেয়ে ভিন্ন বলে মনে হচ্ছে। প্রথমত, ট্রাম্প ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করতে ১০০ দিনের পরিমার্জিত লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। আর রাশিয়া ও ইউক্রেনকে আলোচনার টেবিলে আনতে তিনি বিশেষ দূত কিথ কেলগকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির জন্য ইতোমধ্যে ক্রেমলিন যেসব শর্ত প্রতিষ্ঠিত করেছে, সেগুলো ভেঙে দিতে চান বলে মনে হচ্ছে। এই শর্তের মধ্যে রয়েছে– ক্রিমিয়া ও চারটি পূর্ব প্রদেশের ওপর ইউক্রেনের দাবি প্রত্যাহার করে রাশিয়ার কাছে তুলে দেওয়া এবং ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্য না হওয়ার গ্যারান্টি। এ অবস্থায় ট্রাম্প চাপ প্রয়োগ ও রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন রাখার বাইডেন নীতি অব্যাহত রেখেছেন বলে মনে হচ্ছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রাথমিক লক্ষ্য ইউক্রেনকে যুদ্ধে জিততে সাহায্য করা নয়, বরং ফলাফল নির্বিশেষে যুদ্ধ বন্ধ করা।
এর পর ট্রাম্প সুনির্দিষ্ট বিবরণ দেওয়ার আগে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার জন্য উভয় পক্ষকে চাপ দিতে আগ্রহী। সেই সময়ের মধ্যে ট্রাম্প দাবি করতে পারেন, তিনি ইউক্রেনে শান্তি দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য নিম্নলিখিত আলোচনাগুলো এড়িয়ে গেছেন। দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বিবৃতিগুলো ইঙ্গিত দেয়, তিনি রাশিয়ার সঙ্গে এখনও যেসব দেশ ব্যবসা করে সেগুলোকে শাস্তি দিয়ে বাইডেনের চেয়ে আরও এগিয়ে যেতে চাইছেন। এর মধ্যে শুধু ইরান ও উত্তর কোরিয়া পড়বে না, যারা রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা প্রদান করেছে। সম্ভবত চীন ও ভারতের মতো অন্য দেশগুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যারা রাশিয়ার তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান ক্রেতা।
ইউক্রেন ট্রাম্পের শর্তে সম্মত হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি চাপের মধ্যে থাকতে পারে। কারণ দেশটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আজ যদি রাশিয়া তার সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়, তাহলে পুতিনের জন্য রাজনৈতিক ক্ষতি হবে। দেশটিতে অসংখ্য সৈন্য মারা গেছে এবং সে দেশের আর্থিক রিজার্ভ প্রায় নিঃশেষ হয়ে পড়েছে। তবে এটি রাশিয়ার মিডিয়া ও ভিন্নমতের কঠোর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। অন্যদিকে ইউক্রেন ন্যাটোতে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাইছে। এ সিদ্ধান্ত যে কোনো আলোচনায় ইউক্রেনকে সরাসরি রাশিয়ার বিরোধিতার মুখে ফেলে দেয়। আমরা শিগগিরই দেখতে পাব ট্রাম্পের মতো একজন জবরদস্তিমূলক মধ্যস্থতাকারী উভয়ের অবস্থান পরিবর্তনে কী করতে পারেন।
ডেভিড জে.
নিরাপত্তার অধ্যাপক; এশিয়া টাইমস থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!
ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন
গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।
এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’