সাঙ্গু নদীতে চলছে অবাধে বালু উত্তোলন
Published: 23rd, January 2025 GMT
বান্দরবানের থানচি উপজেলার সাঙ্গু নদী থেকে অবাধে চলছে বালু উত্তোলন। অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত প্রভাবশালী একটি মহল বালু উত্তোলন করছে। সরকারি ইজারা ছাড়াই প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করে এ কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। তাদের আশঙ্কা, বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে পাড় ভেঙে ফসলি জমি নদীতে বিলীন হতে পারে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে থানচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মালিরাম ত্রিপুরার নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা উচহাই মার্মা, থানচি উপজেলার যুবলীগের সভাপতি ও বলিপাড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য উচনুং মার্মা, ক্রাপ্রুঅং মার্মা ও মো.
বালু উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত কয়েকজন শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাসখানেক ধরে প্রতিদিন ড্রেজার মেশিন দিয়ে সাঙ্গু নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
আরো পড়ুন:
নবজাতককে নদীতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ
বছিলা নদীপাড়ে ওয়াকওয়ে অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন
স্থানীয় বাসিন্দা প্রুথোয়াইচিং মার্মা বলেন, “চক্রটি দিনরাত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এলাকার মানুষজন ভয়ে কেউ তাদের বাধা দেয় না। বালু উত্তোলনের কারণে সাঙ্গু নদীর পাড় এখন ঠিক থাকলেও পরে তা ভাঙতে পারে। ভবিষ্যতে চর ভেঙে গেলে বাদাম চাষিরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন।”
অপর বাসিন্দা মংমে মার্মা বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতারা মিলে গত বছরও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেছেন। এ বছর কয়েকটা স্পট থেকে তারা বালু উত্তোলন করছেন। তাদের কারণে সাঙ্গু নদীর পাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। একইসঙ্গে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।”
বালু উত্তোলনের সত্যতা স্বীকার করে থানচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মালিরাম ত্রিপুরা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের কোনো কাজকর্ম নেই। তাই বাধ্য হয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে হচ্ছে।”
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, “বালু উত্তোলনের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে সরাসরি দায়িত্ব না থাকলেও এই কারণে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এমন কোনো প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
থানচি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত ইউএনও) রাকিব হাসান চৌধুরী বলেন, “বান্দরবানের কোনো এলাকায় বালু উত্তোলনের কোনো অনুমোদন নেই। এর আগেও অবৈধ বালু উত্তোলনের স্পটে অভিযান চালিয়েছি। কয়েকটা ড্রেজার মেশিনসহ বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম আগুনে পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়েছিল।”
তিনি আরো বলেন, “থানচি উপজেলা ছোট এলাকা হওয়ায় অভিযানে যাওয়ার আগেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সঙ্গে যারা জড়িত তারা খবর পেয়ে যান। বালু উত্তোলনের স্পটগুলোতে গেলেও কাউকে পাওয়া যায় না।”
ঢাকা/চাইমং/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব শ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
হিজরতের ৫টি শিক্ষা
সাহাবিদের হিজরতের ঘটনাবলি কেবল ইতিহাসের অংশ নয়, বরং তা মুমিন জীবনের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। তাদের হিজরতের ঘটনা ও ত্যাগের আদর্শ থেকে কয়েকটি মৌলিক শিক্ষা উঠে আসে:
১. হিজরত প্রথমত আল্লাহর আদেশ পালনহিজরত কেবল কৌশলগত পরিকল্পনা ছিল না, বরং ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা এক ইবাদতমূলক নির্দেশ। এই কারণে সাহাবিরা সবচেয়ে প্রিয় বস্তু—ঘরবাড়ি, সম্পদ, আত্মীয়স্বজন—সহজে ত্যাগ করতে পেরেছিলেন। (মুহাম্মদ সাইদ রমাদান আল-বুতি, ফিকহুস সিরাহ, পৃষ্ঠা: ১৫৬, দারুল ফিকর, দামেস্ক, ২০০৪)
২. ইমানের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগহিজরত শেখায় যে একটি জাতির ভিত্তি স্থাপন এবং সত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য চরম মূল্য দিতে হয়। সুহাইব তাঁর সব সম্পদ, আবু সালামা তাঁর পরিবার এবং বনু জাহশ (রা.) জন্মভূমি ত্যাগ করে এই মূল্য পরিশোধ করেছিলেন। এই ত্যাগ বিনা মূল্যে অর্জিত হয়নি।
আরও পড়ুনমদিনায় হিজরত: ইসলামের ৬টি মাইলফলক০২ জুলাই ২০২৫৩. ইমানের সম্পর্ক অন্য সব সম্পর্ক থেকে ঊর্ধ্বেওমর (রা.) আইয়াশকে যখন তার মায়ের দোহাইয়ের ফিতনা থেকে সতর্ক করেছিলেন, তা প্রমাণ করে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি আনুগত্যের বন্ধন অন্য সব জাগতিক সম্পর্ক (গোত্র, পরিবার, রক্ত) থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী।
৪. ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সঙ্গে আল্লাহর ওপর ভরসাহিজরত মোটেই বিশৃঙ্খল ছিল না। ওমর (রা.)-এর পরিকল্পনা, কাফেলাবদ্ধ হয়ে যাত্রা এবং কৌশল অবলম্বন—সবই প্রমাণ করে যে আল্লাহর ওপর নির্ভরতার পাশাপাশি মানবীয় প্রচেষ্টা ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ করাও আবশ্যক।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–র হিজরত মদিনায় হলো যে কারণে২৯ জুন ২০২৫৫. আল্লাহর দয়ার বিশালতাএই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ফিতনা ও দুর্বলতা মানুষের জীবনে আসতে পারে। কিন্তু যখন তারা মক্কায় বন্দী হয়ে নিজেদের পাপী মনে করছিলেন, তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াতটি নাজিল করে আশার দরজা খুলে দেন, ‘বলো, “হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ (পাপ করেছ), তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন।”’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৫৩)
এই আয়াতটি ছিল তাঁদের জন্য এক ঐশী ক্ষমা ও নতুন সুযোগের বার্তা।
হিজরত কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়; এটি একটি অক্ষয়–দর্শন—যেখানে ইমান, ধৈর্য এবং আত্মত্যাগের সমন্বয়ে একটি আদর্শ সমাজ গঠনের বীজ নিহিত ছিল। এই দর্শনই মুসলমানদের নতুন এক দিগন্তে পৌঁছে দেয়।
আরও পড়ুনআবিসিনিয়ায় নারী সাহাবিদের দ্বিতীয় হিজরত১৪ নভেম্বর ২০২৫