সাঙ্গু নদীতে চলছে অবাধে বালু উত্তোলন
বান্দরবান প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

বান্দরবানের থানচি উপজেলার সাঙ্গু নদী থেকে অবাধে চলছে বালু উত্তোলন। অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত প্রভাবশালী একটি মহল বালু উত্তোলন করছে। সরকারি ইজারা ছাড়াই প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করে এ কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। তাদের আশঙ্কা, বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে পাড় ভেঙে ফসলি জমি নদীতে বিলীন হতে পারে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে থানচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মালিরাম ত্রিপুরার নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা উচহাই মার্মা, থানচি উপজেলার যুবলীগের সভাপতি ও বলিপাড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য উচনুং মার্মা, ক্রাপ্রুঅং মার্মা ও মো. ইসলামসহ আরো কয়েকজন সাঙ্গু নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন। তারা থানচি আম বাগান পাড়া, থানচি বাজার ঘাট, থানচি হাসপাতালের বিপরীতে সাঙ্গু নদীর ঘাট, জিনিঅং পাড়ার ঘাট, ডাকছৈ পাড়া ঘাটসহ বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন।
বালু উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত কয়েকজন শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাসখানেক ধরে প্রতিদিন ড্রেজার মেশিন দিয়ে সাঙ্গু নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রুথোয়াইচিং মার্মা বলেন, “চক্রটি দিনরাত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এলাকার মানুষজন ভয়ে কেউ তাদের বাধা দেয় না। বালু উত্তোলনের কারণে সাঙ্গু নদীর পাড় এখন ঠিক থাকলেও পরে তা ভাঙতে পারে। ভবিষ্যতে চর ভেঙে গেলে বাদাম চাষিরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন।”
অপর বাসিন্দা মংমে মার্মা বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতারা মিলে গত বছরও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেছেন। এ বছর কয়েকটা স্পট থেকে তারা বালু উত্তোলন করছেন। তাদের কারণে সাঙ্গু নদীর পাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। একইসঙ্গে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।”
বালু উত্তোলনের সত্যতা স্বীকার করে থানচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মালিরাম ত্রিপুরা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের কোনো কাজকর্ম নেই। তাই বাধ্য হয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে হচ্ছে।”
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, “বালু উত্তোলনের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে সরাসরি দায়িত্ব না থাকলেও এই কারণে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এমন কোনো প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
থানচি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত ইউএনও) রাকিব হাসান চৌধুরী বলেন, “বান্দরবানের কোনো এলাকায় বালু উত্তোলনের কোনো অনুমোদন নেই। এর আগেও অবৈধ বালু উত্তোলনের স্পটে অভিযান চালিয়েছি। কয়েকটা ড্রেজার মেশিনসহ বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম আগুনে পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়েছিল।”
তিনি আরো বলেন, “থানচি উপজেলা ছোট এলাকা হওয়ায় অভিযানে যাওয়ার আগেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সঙ্গে যারা জড়িত তারা খবর পেয়ে যান। বালু উত্তোলনের স্পটগুলোতে গেলেও কাউকে পাওয়া যায় না।”
ঢাকা/চাইমং/মাসুদ