ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের সহজতম মাধ্যম হচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং। ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের রয়েছে সফলতার ইতিহাস। বাংলাদেশ ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করার জন্য ২০১৩ সালে প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হয়।

ইসলামী ব্যাংক শুরুতে পরীক্ষামূলকভাবে পাঁচটি আউটলেট খোলার অনুমতি পায়। রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্স পালন করে ইসলামী ব্যাংক ২০১৭ সালে ঢাকা জেলার সাভারের বিরুলিয়ায় পরীক্ষামূলকভাবে ব্যাংকের প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। কার্যক্রম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ব্যাপক সাড়া পেয়ে ব্যাংকটি আউটলেট বাড়াতে থাকে। আট বছরের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৮৩টি, যা বর্তমানে দেশের মোট এজেন্ট আউটলেটের ১৩ শতাংশ। বর্তমানে ৩১০টি শাখার আওতায় এ বিপুল সংখ্যক আউটলেট পরিচালিত হচ্ছে। 
দেশের সর্বদক্ষিণ জনপদ সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন চরাঞ্চল যেমন– উড়িচর, মনপুরা, দ্বীপ যেমন– হাতিয়া, সন্দ্বীপ ও সুন্দরবন, পাহাড়ি অঞ্চলের বাঘাইছড়ি উপজেলাসহ বিভিন্ন দুর্গম অঞ্চলে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। বর্তমানে দেশের ৪৭২টি উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৫০ লাখ গ্রাহক ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। এ হিসাবগুলোতে মোট জমার পরিমাণ ১৬ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। ২০২৪ সালে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেট ২ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে।
এজেন্ট আউটলেটে গ্রাহক হিসাব খোলা, টাকা জমা-উত্তোলন, রেমিট্যান্সের অর্থ প্রদান, বিদ্যুৎ বিল জমা, অ্যাকাউন্ট ব্যাল্যান্স জানা ও সংক্ষিপ্ত বিবরণী প্রদান, ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা, চেক বই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, ক্লিয়ারিং চেক ও ঋণের আবেদন গ্রহণ, বিতরণ ও কিস্তি সংগ্রহ সুবিধাসহ সব ধরনের সুবিধা পাচ্ছেন। অর্থাৎ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদিত প্রায় সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা এজেন্ট আউটলেটে দেওয়া হয়।  

ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। ব্যাংকটি ইতোমধ্যে ১৩৮টি এজেন্ট আউলেটে বিনিয়োগ কার্যক্রম শুরু করেছে। ২০২৪ সালে এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে ৩৬৫ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ বিতরণ করা হয়। বিনিয়োগ আদায়ের হার প্রায় ৯৯ শতাংশ। বর্তমানে এ মাধ্যমে বিতরণ করা বিনিয়োগের বর্তমান স্থিতি প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। 
ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে এসএমই বিনিয়োগ সম্প্রসারণসহ নানা জনকল্যাণমূলক বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়েছে। কৃষি ও অকৃষি খাতে সব ধরনের বৈধ ও ইসলামী শরিয়াহ অনুমোদিত ব্যবসায় মোট ৩২০ প্রকারের পণ্যে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এসএমই বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া বিনিয়োগ কার্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য, ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ খাতে বিভিন্ন কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার পরিকল্পনা নিয়েছে। 
এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরণেও ইসলামী ব্যাংক শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। ২০২৪ সালে এ সেবার মাধ্যমে ১৭ হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স সংগ্রহ ও বিতরণ করা হয়েছে, যা দেশে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আহরিত রেমিট্যান্সের ৫৬ শতাংশ। ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেট রেমিট্যান্স সংগ্রহ ও বিতরণের মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। 
বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে দেড় লাখ গ্রাহক ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে সেবা নিচ্ছেন। পিওএসের মাধ্যমে নগদ টাকা উত্তোলন, আই-ব্যাংকিং রেজিস্ট্রেশন, সেলফিনের মাধ্যমে ক্যাশ-ইন ক্যাশ-আউট, আরটিজিএস ও এটিএমের মাধ্যমে লেনদেন ইত্যাদি বহুমুখী সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘরের পাশে ব্যাংকের সব সুবিধা নিয়ে ব্যয় সাশ্রয়ী ব্যাংকিং সেবাও ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ। 

স্থান গুরুত্ব বিবেচনায় ব্যাংকটির অনেক এজেন্ট আউটলেটের সঙ্গে এটিএম বুথের ব্যবস্থা থাকায় গ্রাহকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়ে গেছে। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব নিয়মকানুন মেনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। যেমন বাংলা কিউ আর কোডের মাধ্যমে সেবা নিশ্চিত করা, গ্রাহকদের শতভাগ ডিজিটাল কানেক্টিভিটি, ফাস্ট মুভিং কনজুমার গুডস কোম্পানি ও অন্যান্য কোম্পানির এপিআইকেন্দ্রিক অনলাইন লেনদেনের উদ্যোগসহ বিভিন্ন প্রকল্প এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহকদের মাঝে জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ। তা ছাড়া টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশনের মাধ্যমে লেনদেন নিশ্চিতকরণ, জাতীয় পরিচয়পত্র, ওটিপি ও বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে গ্রাহকের আমানত ও লেনদেন শতভাগ নিরাপদ করায় গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসল ম ব য ক ব ল দ শ ল ম ট ড গ র হকদ র ব তরণ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য জাপানের ৩.২ মিলিয়ন ডলার সহায়তা

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) ২০২৪ সালে ঘূর্ণিঝড় রেমাল এবং পরপর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়গুলোর খাদ্য নিরাপত্তা বাড়াতে জাপান সরকারের পক্ষ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ইয়েন (প্রায় ৩.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) সহায়তা গ্রহণ করেছে।

রবিবার (২ মার্চ) জাপানের বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত এইচ.ই. মি. সাইদা শিনিচি এবং WFP-এর প্রতিনিধি ও দেশের পরিচালক ডোমেনিকো স্কালপেলির মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

এসময় রাষ্ট্রদূত সাইদা বলেন, “আমি আশাবাদী যে এই প্রকল্পটি বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় দ্বারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা সমূহের অবকাঠামো পুনর্বহাল করতে সাহায্য করবে। এই প্রকল্পটি জীবন রক্ষাকারী সহায়তা এবং পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টাকে বাড়ানোর জন্য মৌলিক। জাপান টেকসই সমাধানের দিকে কাজ করতে থাকবে এবং WFP-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে সহযোগিতা করবে।”

রাষ্ট্রদূত বলেন, “এই সহায়তা তাত্ক্ষণিক খাদ্য প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামো পুনর্নির্মাণে সহায়তা করবে। এর মধ্যে রয়েছে রাস্তা, বাঁধ এবং ছোট আকারের সেতু, যা ঘূর্ণিঝড় রেমাল ও ২০২৪ সালের মারাত্মক বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, একটি অনন্য জলবায়ু জরুরি পরিস্থিতির বছর, যা দেশজুড়ে প্রায় ১৮ মিলিয়ন মানুষকে প্রভাবিত করেছে।”

এই সহায়তা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা - খুলনা, সাতক্ষীরা, কুমিল্লা, বরগুনা, মৌলভীবাজার ও কুড়িগ্রামে পাঁচ লাখ মানুষের উপকারে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

WFP-এর বাংলাদেশে দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক ডোমেনিকো স্কালপেলি বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো সম্প্রদায়গুলোর বাজার ও অপরিহার্য সেবাগুলোর অ্যাক্সেসকে বাধাগ্রস্ত করেছে, যা পুনরুদ্ধারকে ধীর করেছে এবং মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করেছে। তাদের খাদ্য নিরাপত্তাকে সমর্থন করে এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ করে আমরা তাত্ক্ষণিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করব এবং তাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সক্ষমতা বাড়াব।”

ঘূর্ণিঝড় রেমাল এবং সিলেট, যমুনা অববাহিকা ও পূর্বাঞ্চলের বন্যার পরে, WFP বাংলাদেশে ১২টি বন্যা-প্রভাবিত জেলায় প্রায় ১,৫০,০০০ পরিবারের তাত্ক্ষণিক সহায়তা প্রদান করেছে।

গত সেপ্টেম্বর থেকে, জাপান UNHCR এবং UNICEF-এর মাধ্যমে বন্যা-প্রভাবিত এলাকাগুলোতে ১ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্রদান করেছে এবং পূর্ব বাংলাদেশে জরুরি ত্রাণ প্রদান করতে জাপান প্ল্যাটফর্মের জন্য ২ মিলিয়ন ডলারের জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়েছে, যা জাপানি এনজিওগুলোর একটি প্ল্যাটফর্ম। এছাড়াও, ঢাকা থেকে জাপানি বাণিজ্য ও শিল্প সমিতি এবং ঢাকা জাপানী সমিতি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারগুলোর সহায়তার জন্য মোট ২ লাখ টাকা দান করেছে। জাপান এই সপ্তাহে বন্যা প্রতিক্রিয়া ও পুনরুদ্ধারের জন্য IOM-এর সাথে ৩.২ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

ঢাকা/হাসান/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভর্তিতে নতুন কোটা বাতিলের দাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের
  • সাবেক মেয়র সূচনার ফ্ল্যাট ও ব্যাংক হিসাব জব্দ
  • জাপানে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছেন ওয়ারেন বাফেট
  • কোটা নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র অধিকার পরিষদ
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে কোটা পাবেন জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতদের সন্তানরা
  • ভর্তিতে কোটা পাবেন জুলাই অভ্যুত্থানের যোদ্ধা-শহীদদের সন্তানরা
  • ভর্তিতে কোটার সুবিধা পাবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরাও
  • ২০২৪ সালে দেড় লাখেরও বেশি মানুষের বীমা দাবি নিষ্পত্তি করেছে গার্ডিয়ান লাইফ
  • বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য জাপানের ৩.২ মিলিয়ন ডলার সহায়তা
  • সুইট নেশনের সপ্তম শাখা উদ্বোধন