পাঠ্যবইয়ের মলাটে ‘আদিবাসী’ শব্দ-সংবলিত গ্রাফিতি ব্যবহারের পক্ষে-বিপক্ষে দুইটি সংগঠনের কর্মসূচি ঘিরিয়া জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবনের সম্মুখে সংঘর্ষের বিষয় নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। পাঠ্যপুস্তকের আধেয় বিষয়ে মতপার্থক্য থাকিতেই পারে। উহা লইয়া পরস্পরবিরোধী কর্মসূচিতেও আপত্তি নাই। কিন্তু এক পক্ষ যখন অপর পক্ষের উপর শারীরিকভাবে হামলা করিয়া থাকে, তখন উহা সন্দেহাতীতভাবেই ফৌজদারি অপরাধ। বিশেষত বুধবার রাজধানীর মতিঝিলে যেইভাবে এক পক্ষকে প্রহার ও রক্তাক্ত করা হইয়াছে, উহা সন্ত্রাসী তৎপরতা ব্যতীত কী হইতে পারে! আমরা দেখিতে চাহিব, অবিলম্বে দায়ীদিগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা লওয়া হইয়াছে। বৃহস্পতিবার যদিও অন্তত দুইজন হামলাকারী আটকের খবর পাওয়া গিয়াছে, দায়ী সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা ব্যতীত এই প্রকার অঘটনের আরও শঙ্কা থাকিয়া যায়।
আলোচ্য সংঘর্ষের নেপথ্যে যদিও পার্বত্য চট্টগ্রামকেন্দ্রিক দুইটি সংগঠন যথাক্রমে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা এবং স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির নাম আসিয়াছে এবং উভয় পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ আনিয়াছে; সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে স্পষ্ট– দ্বিতীয় সংগঠনটিরই দায় অধিকতর। হামলার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনীত ব্যক্তিদের মধ্যে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার সদস্য অধিক থাকিবার মধ্য দিয়াও উহা প্রমাণ হয়। এনসিটিবি ভবন এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরাও জানাইয়াছেন, আদিবাসী ছাত্র-জনতার মিছিলটি মতিঝিল সিটি সেন্টারের নিকট পৌঁছাইলে তাহাদের গতিরোধে আগাইয়া যান স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির সদস্যরা। ইহা পায়ে পা লাগাইয়া বিবাদ ব্যতীত আর কী হইতে পারে! সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত আলোকচিত্র ও চলচ্চিত্রেও দেখা গিয়াছে, স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি নামক সংগঠনের সদস্যরা লাঠিতে জাতীয় পতাকা বাঁধিয়া ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছেন। নামের মধ্যে ‘সার্বভৌমত্ব’ থাকিলেও উহার প্রতীক জাতীয় পতাকার এইরূপ নেতিবাচক প্রয়োগ প্রমাণ করে– তাহারা মূলত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগত স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়াছেন। আমরা মনে করি, এইরূপ মারমুখী সংগঠনের নেপথ্যে কাহারা জড়িত– জরুরি ভিত্তিতে খতাইয়া দেখা উচিত।
এই প্রশ্নও সংগত– নবম ও দশম শ্রেণির ‘বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি’ বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ব্যবহৃত আদিবাসী শব্দযুক্ত গ্রাফিতিতে আপত্তি কেন? চিত্রকর্মে বৃক্ষের পাঁচটি পত্রে যেইভাবে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নাম লিখিয়া ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ’ বলা হইয়াছিল, উহা বহুল আকাঙ্ক্ষিত অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের চিত্রই তুলিয়া ধরিয়াছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে জনপ্রিয় হইয়া উঠা এই গ্রাফিতি লইয়া সাড়ে পাঁচ মাস পর আপত্তি গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না। সভরেন্টির দাবির মুখে এনসিটিবি যেইভাবে রবিবার রাত্রেই পাঠ্যপুস্তকের অনলাইন সংস্করণ হইতে ঐ গ্রাফিতি অপসারণ করিয়াছে, উহাও গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না। ইহার অর্থ কি এই যে, গ্রাফিতিটি যথেষ্ট ভাবনা-চিন্তা করিয়া বাছাই হয় নাই? যদি হইয়াই থাকিবে, তাহা হইলে উপযুক্ত যুক্তি প্রদানের পরিবর্তে কেহ চাহিবা মাত্র পরিবর্তন করিতে হইবে কেন?
স্বীকার্য, বুধবারের হামলার পরপরই সরকারের পক্ষ হইতে ঘটনার নিন্দা জানাইয়া আইনানুগ ব্যবস্থা গৃহীত হইয়াছে। কিন্তু মূল প্রশ্নটির উত্তর খুঁজিতে হইবে সরকারকে এবং সেই ক্ষেত্রে আরও বহুদূর যাইতে হইবে। যেই সকল গ্রাফিতি তথা স্লোগান লইয়া জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করিতে সক্ষম হইয়াছিল, সেইগুলি লইয়া বিতর্ক তুলিয়া জাতিকে বিভক্ত করিতে চাহে কাহারা? খোদ ‘আদিবাসী’ শব্দটি লইয়া ক্ষমতাচ্যুত সরকার যেইভাবে আপত্তি জানাইয়া আসিতেছিল, উহাও বিতর্কিত। শব্দটি এখনও ‘নিষিদ্ধ’ হইবার মধ্য দিয়া প্রমাণ হয় যে, ব্যক্তি বদল হইলেও কোথাও কোথাও পুরাতন ব্যবস্থাই বহাল রহিয়াছে। বিগত সময়ের বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা দূর করিতে না পারিলে গণঅভ্যুত্থানের সুফল যে কাহার ঘরে উঠিতে পারে– বুধবারের অঘটনে উহা কিঞ্চিৎ স্পষ্ট।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন ব যবস থ সভর ন ট সদস য আপত ত স গঠন হইয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা
জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ প্রায় আড়াই কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ও তাঁর স্ত্রী ঊষা রানী চন্দের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। দুদকের সহকারী পরিচালক রকিবুল ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান শুভ্র বাদী হয়ে সোমবার দুদকের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন।
রকিবুল ইসলামের দায়ের করা মামলায় আসামি শুধু নারায়ণ চন্দ। এ মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ১ কোটি ৭৯ লাখ ৬৮ হাজার ৩৭৭ টাকার সম্পদ অর্জন করে নিজ মালিকানা ও ভোগ দখলে রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মাহমুদুল হাসান শুভ্রর দায়ের করা মামলায় নারায়ণ চন্দ এবং তাঁর স্ত্রী রাজিবপুর মৈখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ঊষা রানী চন্দকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৬২ লাখ ৪৩ হাজার ২১১ টাকার সম্পদ অর্জন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।