Samakal:
2025-01-31@12:08:59 GMT

সময়ে এক ফোঁড় দিন

Published: 15th, January 2025 GMT

সময়ে এক ফোঁড় দিন

বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে জ্বালানি সম্পদ অনুসন্ধানে বিদেশি তৈল-গ্যাস কোম্পানি তথা আইওসিসমূহের অনাগ্রহ সম্পর্কে বুধবার সমকাল যেই সংবাদ দিয়াছে, উহা শুধু হতাশাজনক নহে; উদ্বেগজনকও বটে। প্রতিবেদনমতে, অনেক পথ পার হইয়া বঙ্গোপসাগরে তৈল-গ্যাস অনুসন্ধানের লক্ষ্যে গত মার্চে আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করিয়াছিল পেট্রোবাংলা। সাতটি বিদেশি আইওসি দরপত্রের নথি ক্রয়ও করিয়াছিল।

দরপত্র জমা প্রদানের সময়সীমা গত বৎসরের সেপ্টেম্বর হইতে বর্ধিত করিয়া ডিসেম্বর নির্ধারণ করিবার পরও কেহ কোনো প্রস্তাব জমা দেয় নাই। উপরন্তু, এই অনাগ্রহের কারণ জানিতে চাহিয়া সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলিকে প্রেরিত চিঠিরও উত্তর মিলে নাই। স্থলভাগে তৈল-গ্যাস প্রাপ্তির নূতন সম্ভাবনা কম থাকায় দেশের গ্যাস সংকট সমাধানের অন্যতম ভরসা হিসাবে দেখা হয় বঙ্গোপসাগরকে। দর প্রক্রিয়ায় কোনো বিদেশি কোম্পানির অংশগ্রহণ না করা তাই দেশের জ্বালানি খাতের জন্য দুঃসংবাদ। ইহার ফলে একদিকে বিদ্যমান গ্যাস ঘাটতি আরও বৃদ্ধি পাইবে, অন্যদিকে সেই ঘাটতি পূরণের জন্য ব্যয়বহুল এলএনজির উপর অধিকতর নির্ভরশীল হইতে হইবে।

আমরা জানি, বিশ্ববাজারে এলএনজির মূল্য হরহামেশাই উঠানামা করে। উপরন্তু, জাতীয়-আন্তর্জাতিক শক্তিশালী জ্বালানি ব্যবসায়ী লবির কারণে ইহার সরবরাহও বরাবরই গুটিকতক কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করে; গ্রাহকদের পকেট কাটিয়া স্বীয় পকেট ভর্তি করাই যাহাদের মূল বৈশিষ্ট্য। প্রসঙ্গত, দেশে দীর্ঘদিন যাবৎ গ্যাসের সংকট চলমান। বর্তমানে দেশে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা অন্তত ৪০০ কোটি ঘনফুট। ইহার বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ২৭৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। ইহার মধ্যে দেশীয় ক্ষেত্রগুলির গ্যাস গড়ে ১৯০ কোটি ঘনফুট। আমদানীকৃত এলএনজি হইতে মিলিতেছে ৮৫ কোটি ঘনফুট। ২০৩০ সালে গ্যাসের চাহিদা দাঁড়াইবে দৈনিক ৬৬৫ কোটি ঘনফুট। গত দুই বৎসরে প্রায় ৫০ কোটি ঘনফুট দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমিয়াছে। লক্ষণীয়, দৈনিক গ্যাস সরবরাহের মাত্র ২০-২৫ শতাংশ এলএনজি দিয়া মিটানো হয়। তাহাতেই অর্থনীতিতে ব্যাপক চাপ তৈয়ারি হইয়াছে। আগামীতে যদি চাহিদার ৪০-৫০ শতাংশ এলএনজি দিয়া মিটাইতে হয়, তাহা হইলে অর্থনীতিতে বিপর্যয় ঘটিবার আশঙ্কা রহিয়াছে। 

এই সংবাদটি এমন সময়ে আসিল, যখন প্রধানত এলএনজির কারণে ব্যবসায় খাতে গ্যাসের মূল্য অত্যধিক বৃদ্ধি করা হইয়াছে। গৃহস্থালি কাজে ক্রমবর্ধমান হারে ব্যবহৃত এলপিজির মূল্যও বাড়ানো হইয়াছে। এমনকি পাইপলাইনে গৃহস্থালি কাজে সরবরাহকৃত সরকারি গ্যাসের মূল্যও বৃদ্ধি পাইতে চলিয়াছে। সকল ক্ষেত্রে গ্যাসের এহেন মূল্যবৃদ্ধি শুধু বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিকেই আরও ঊর্ধ্বমুখী করিবে না, বিনিয়োগে ভাটা সৃষ্টি করিয়া কর্মসংস্থানও সংকোচন ঘটাইবে। যাহার ফলস্বরূপ সামাজিক ও এমনকি রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হইলেও বিস্ময়ের কিছু থাকিবে না। সত্য, বিগত সরকার গত এক দশকও এই অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করিতে পারে নাই। যদিও প্রতিবেশী মিয়ানমার ও ভারত একই সমুদ্র হইতে বহু পূর্বেই গ্যাস উত্তোলন করিতেছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, উক্ত সমুদ্রাঞ্চলে মিয়ানমার যদ্রূপ বিপুল গ্যাস পাইয়াছে তদ্রূপ সম্ভাবনা বাংলাদেশেরও রহিয়াছে। কিন্তু মুখ্যত এলএনজি লবির স্বার্থ চরিতার্থের জন্য বিগত সরকার বঙ্গোপসাগরে তৈল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিলম্ব করিয়াছে। তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ শুনিয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যখন মডেল পিএসসিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনিয়া দরপত্র কার্যক্রমকে অপেক্ষাকৃত আকর্ষণীয় করিয়া তুলে তখন আমরা উহার সাফল্য সম্পর্কে আশাবাদী হইয়াছিলাম। কিন্তু বাস্তবতা সেই আশাবাদ ভঙ্গ করিল। এখন অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু না হইবার কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে সমুদ্র হইতে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা নাই।

বিশিষ্ট ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড.

বদরুল ইমাম যথার্থই বলিয়াছেন, কোনো প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা না দেওয়ায় সাগরে অনুসন্ধান কার্যক্রম পিছাইয়া গেলেও ইহার পশ্চাতে লাগিয়া থাকিতে হইবে। কারণ, দেশের জ্বালানি সংকট মিটাইতে এই গ্যাস খুবই দরকার। এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখিবার বিকল্পও নাই।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দরপত র সরবর হ সরক র হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

থাই হাসপাতাল ছাড়ছে মিয়ানমারের শরণার্থীরা

বিদেশে মার্কিন সহায়তা স্থগিত করতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্বজুড়ে। ইতোমধ্যেই দেশটির অর্থায়নে চলমান প্রকল্পের কাজ বন্ধ বা স্থগিত করা হয়েছে। এ অবস্থায় বন্ধ করা হয়েছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার কার্যক্রম।

এর প্রভাবে থাইল্যান্ড-মিয়ানমার সীমান্তে লাখ লাখ শরণার্থীকে চিকিৎসা দেওয়া স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি (আইআরসি)। বাধ্য হয়ে থাই কর্মকর্তারা এখন কেন্দ্রগুলোর গুরুতর অসুস্থ রোগীদের অন্য হাসপাতালে সরিয়ে নিচ্ছেন।

স্থানীয় এক কর্মকর্তা ও ক্যাম্প কমিটির দুই সদস্যের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ক্লিনিকগুলোতে অর্থ দেওয়া আইআরসি আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সীমান্তের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো বন্ধ করতে বলেছে। এ প্রসঙ্গে মন্তব্য চাইলেও আইআরসি তাতে সাড়া দেয়নি।

বিশ্বজুড়ে বৈদেশিক সহায়তায় পরিমাণের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান সর্বোচ্চ। কিন্তু আমেরিকা ফার্স্ট নীতিকে প্রাধান্য দেওয়া ট্রাম্প ক্ষমতায় যাওয়ার প্রথম দিনেই প্রায় সব বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি স্থগিত করার নির্বাহী আদেশ জারি করেন। তাঁর এ স্থগিতাদেশ বৈশ্বিক সহায়তা খাতকে ব্যাপক অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেয়। 

মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ট্রাম্পের স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও জীবনরক্ষাকারী মানবিক ত্রাণ সহায়তা বন্ধ থাকবে না। তাদের এই ছাড়ে থাই-মিয়ানমার সীমান্তের হাসপাতালগুলো চালু থাকবে কিনা, কিংবা লাখ খানেক লোককে আশ্রয় দেওয়া ৯টি ক্যাম্পের কতটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র উপকৃত হবে, তাৎক্ষণিকভাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সীমান্তের এসব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারের লাখ লাখ লোককে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছিল।

থাইল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলীয় তাক প্রদেশের থা সং ইয়াং জেলার মায়ে লা ক্যাম্পের শরণার্থী কমিটির সদস্য বুয়েহ সে ও স্থানীয় এক স্কুলশিক্ষক বুধবার জানান, আইআরসি ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো থেকে অনেক রোগীকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি তারা অন্তঃসত্ত্বা নারী ও অক্সিজেন ট্যাঙ্কের ওপর নির্ভরশীল শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীদের সরঞ্জাম ও ওষুধ সরবরাহও বন্ধ করে দিয়েছে। ক্যাম্পের পানি সরবরাহ ও আবর্জনা নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় সংস্থাটির সহায়তাও বন্ধ বা সংকুচিত হচ্ছে, বলেছেন তারা। 

সহায়তা স্থগিতে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে শরণার্থী ক্যাম্পগুলোর মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা ক্ষতিগ্রস্ত হবে– এমন উদ্বেগ বাড়ছে, বলেছেন দক্ষিণ মিয়ানমারের সংগঠন হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন অব মোনল্যান্ডের (হারফম) প্রকল্প পরিচালক নাই অয়ে মোন।

তাক প্রদেশের গভর্নর চুচিপ পংচাই থাই  বলেছেন, গুরুতর অসুস্থ রোগীদের স্থানীয় প্রাদেশিক হাসপাতালগুলোতে স্থানান্তর করা হবে। থাই কর্মকর্তারা আইআরসির কাছে তাদের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অনুমতিও চেয়েছেন। থা সং ইয়াং হাসপাতালের পরিচালক ড. তাওয়াতচাই ইংতাউইসাক বলেছেন, রোগীদের অবস্থা খতিয়ে দেখতে তিনি শরণার্থী শিবিরে যাচ্ছেন। কোন কোন রোগী বাড়ি যেতে পারবেন, কাদের অক্সিজেন এবং অন্যান্য সহায়তা লাগবে তা পর্যালোচনা করতে হবে।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের পর জাতিসংঘ সংস্থাগুলো তাদের বৈশ্বিক সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ করতে শুরু করেছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন, ১৩৬টি দেশের বাস্তুচ্যুত ১২২ মিলিয়ন মানুষকে জীবনরক্ষাকারী সহায়তা প্রদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মার্কিন তহবিল স্থগিত হওয়ায় এ কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে বলে দেশগুলোকে ই-মেইলের মাধ্যমে জানানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাতক্ষীরার সাবেক সিভিল সার্জনসহ ২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  • কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সয়াবিনের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা 
  • চড়া চালের দাম, কমেছে মুরগি ও আলুর
  • মানুষকে স্বস্তি দিন
  • থাই হাসপাতাল ছাড়ছে মিয়ানমারের শরণার্থীরা
  • ঢাবিতে কমল মেডি এইডের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প 
  • ‘ডিসি-থানা সব বুক করে ফেলছি, আমাগো কথা ছাড়া পুলিশ আইলে বাইন্দা থুমু’
  • ট্যাংক-লরি শ্রমিকদের কর্মবিরতি স্থগিত, জ্বালানি তেল উত্তোলন শুরু 
  • ট্যাংকলরি শ্রমিকদের কর্মবিরতি স্থগিত, জ্বালানি তেল উত্তোলন শুরু 
  • ‘পানিযুদ্ধের’ পথে চীন-ভারত, ঝুঁকিতে বাংলাদেশ