বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে জ্বালানি সম্পদ অনুসন্ধানে বিদেশি তৈল-গ্যাস কোম্পানি তথা আইওসিসমূহের অনাগ্রহ সম্পর্কে বুধবার সমকাল যেই সংবাদ দিয়াছে, উহা শুধু হতাশাজনক নহে; উদ্বেগজনকও বটে। প্রতিবেদনমতে, অনেক পথ পার হইয়া বঙ্গোপসাগরে তৈল-গ্যাস অনুসন্ধানের লক্ষ্যে গত মার্চে আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করিয়াছিল পেট্রোবাংলা। সাতটি বিদেশি আইওসি দরপত্রের নথি ক্রয়ও করিয়াছিল।
দরপত্র জমা প্রদানের সময়সীমা গত বৎসরের সেপ্টেম্বর হইতে বর্ধিত করিয়া ডিসেম্বর নির্ধারণ করিবার পরও কেহ কোনো প্রস্তাব জমা দেয় নাই। উপরন্তু, এই অনাগ্রহের কারণ জানিতে চাহিয়া সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলিকে প্রেরিত চিঠিরও উত্তর মিলে নাই। স্থলভাগে তৈল-গ্যাস প্রাপ্তির নূতন সম্ভাবনা কম থাকায় দেশের গ্যাস সংকট সমাধানের অন্যতম ভরসা হিসাবে দেখা হয় বঙ্গোপসাগরকে। দর প্রক্রিয়ায় কোনো বিদেশি কোম্পানির অংশগ্রহণ না করা তাই দেশের জ্বালানি খাতের জন্য দুঃসংবাদ। ইহার ফলে একদিকে বিদ্যমান গ্যাস ঘাটতি আরও বৃদ্ধি পাইবে, অন্যদিকে সেই ঘাটতি পূরণের জন্য ব্যয়বহুল এলএনজির উপর অধিকতর নির্ভরশীল হইতে হইবে।
আমরা জানি, বিশ্ববাজারে এলএনজির মূল্য হরহামেশাই উঠানামা করে। উপরন্তু, জাতীয়-আন্তর্জাতিক শক্তিশালী জ্বালানি ব্যবসায়ী লবির কারণে ইহার সরবরাহও বরাবরই গুটিকতক কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করে; গ্রাহকদের পকেট কাটিয়া স্বীয় পকেট ভর্তি করাই যাহাদের মূল বৈশিষ্ট্য। প্রসঙ্গত, দেশে দীর্ঘদিন যাবৎ গ্যাসের সংকট চলমান। বর্তমানে দেশে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা অন্তত ৪০০ কোটি ঘনফুট। ইহার বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ২৭৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। ইহার মধ্যে দেশীয় ক্ষেত্রগুলির গ্যাস গড়ে ১৯০ কোটি ঘনফুট। আমদানীকৃত এলএনজি হইতে মিলিতেছে ৮৫ কোটি ঘনফুট। ২০৩০ সালে গ্যাসের চাহিদা দাঁড়াইবে দৈনিক ৬৬৫ কোটি ঘনফুট। গত দুই বৎসরে প্রায় ৫০ কোটি ঘনফুট দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমিয়াছে। লক্ষণীয়, দৈনিক গ্যাস সরবরাহের মাত্র ২০-২৫ শতাংশ এলএনজি দিয়া মিটানো হয়। তাহাতেই অর্থনীতিতে ব্যাপক চাপ তৈয়ারি হইয়াছে। আগামীতে যদি চাহিদার ৪০-৫০ শতাংশ এলএনজি দিয়া মিটাইতে হয়, তাহা হইলে অর্থনীতিতে বিপর্যয় ঘটিবার আশঙ্কা রহিয়াছে।
এই সংবাদটি এমন সময়ে আসিল, যখন প্রধানত এলএনজির কারণে ব্যবসায় খাতে গ্যাসের মূল্য অত্যধিক বৃদ্ধি করা হইয়াছে। গৃহস্থালি কাজে ক্রমবর্ধমান হারে ব্যবহৃত এলপিজির মূল্যও বাড়ানো হইয়াছে। এমনকি পাইপলাইনে গৃহস্থালি কাজে সরবরাহকৃত সরকারি গ্যাসের মূল্যও বৃদ্ধি পাইতে চলিয়াছে। সকল ক্ষেত্রে গ্যাসের এহেন মূল্যবৃদ্ধি শুধু বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিকেই আরও ঊর্ধ্বমুখী করিবে না, বিনিয়োগে ভাটা সৃষ্টি করিয়া কর্মসংস্থানও সংকোচন ঘটাইবে। যাহার ফলস্বরূপ সামাজিক ও এমনকি রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হইলেও বিস্ময়ের কিছু থাকিবে না। সত্য, বিগত সরকার গত এক দশকও এই অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করিতে পারে নাই। যদিও প্রতিবেশী মিয়ানমার ও ভারত একই সমুদ্র হইতে বহু পূর্বেই গ্যাস উত্তোলন করিতেছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, উক্ত সমুদ্রাঞ্চলে মিয়ানমার যদ্রূপ বিপুল গ্যাস পাইয়াছে তদ্রূপ সম্ভাবনা বাংলাদেশেরও রহিয়াছে। কিন্তু মুখ্যত এলএনজি লবির স্বার্থ চরিতার্থের জন্য বিগত সরকার বঙ্গোপসাগরে তৈল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিলম্ব করিয়াছে। তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ শুনিয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যখন মডেল পিএসসিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনিয়া দরপত্র কার্যক্রমকে অপেক্ষাকৃত আকর্ষণীয় করিয়া তুলে তখন আমরা উহার সাফল্য সম্পর্কে আশাবাদী হইয়াছিলাম। কিন্তু বাস্তবতা সেই আশাবাদ ভঙ্গ করিল। এখন অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু না হইবার কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে সমুদ্র হইতে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা নাই।
বিশিষ্ট ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দরপত র সরবর হ সরক র হইয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রযুক্তি ও গণপূর্ত বিভাগের দুই প্রস্তাবে ব্যয় ৫৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ‘ডিজিটাল সরকার ও অর্থনীতি শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের লট-১: সাপ্লাই, ইনস্টলেশন অ্যান্ড কমিশনিং অব এক্সপানশন অব এক্সিটিং নুটানিক্স প্রাইভেট ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম ইন ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার অ্যাট বিসিসি এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তর নির্মাণ’ প্রকল্পের পূর্ত কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবসহ দুটি অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৫৭ কোটি ৮৭ লাখ ৭৪ হাজার ৪০১ টাকা।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সচিবালয়ে এক ভার্চুয়াল সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে প্রস্তাব দুটিতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় কমিটির সদস্য ও কর্মকর্তারা যোগ দেন। সরকারি কাজে অর্থ উপদেষ্টা বিদেশে অবস্থান করা তিনি সভায় ভার্চুয়ালি অংশ নেন।
সভা সূত্রে জানা গেছে, ‘ডিজিটাল সরকার ও অর্থনীতি শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের লট-১: এর আওতায় সাপ্লাই, ইনস্টলেশন অ্যান্ড কমিশনিং অব এক্সপানশন অব এক্সিটিং নুটানিক্স প্রাইভেট ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম ইন ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার অ্যাট বিসিসি-এর ক্রয় কার্য সম্পাদনের জন্য সিঙ্গেল স্টেজ টু ইনভেলপ পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে মাত্র ১টি প্রস্তাব আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশকৃত একমাত্র রেসপনসিভ দরদাতা প্রতিষ্ঠান ঠাকরাল ইনফরমেশন সিস্টেমস প্রাইভেট লিমিটেড ঢাকার নাম দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ করলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৫১ কোটি ৬৮ লাখ ১১ হাজার ৫৮২ টাকা।
সূত্র জানায়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তর নির্মাণ’ প্রকল্পের ডব্লিউডি-১(ন) লটের পূর্ত কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
জানা গেছে, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনক্রমে ‘র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তর নির্মাণ’ প্রকল্পের বিভিন্ন কাজের জন্য মজিদ সন্স কন্সট্রাকশন লিমিটেডকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কাজের ক্রয় চুক্তি ছিল ১৯২ কোটি ৪ লাখ ৩২ হাজার ৩২৬ টাকা। চুক্তি অনুসারে কাজ চলমান অবস্থায় নির্মাণ কাজের টেন্ডাভুক্ত বহির্ভুত কিছু আইটেম হ্রাস হওয়ায় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৬ কোটি ১৯ লাখ ৬২ হাজার ৮১৯ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
ঢাকা/হাসনাত/এসবি