ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভাজকের মির্জাপুর উপজেলার বড় একটি অংশে শাকসবজি চাষ করেছেন স্থানীয়রা। আগে এসব স্থানে ছিল বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা। শাকসবজি চাষে উপকৃত হচ্ছেন স্থানীয়রা। পাশাপাশি মহাসড়ক বিভাজকের সৌন্দর্যও বাড়ছে।
মির্জাপুর বাইপাস বাসস্ট্যান্ডের পূর্ব পাশ, বাওয়ার কুমারজানী, দেওহাটা, ধেরুয়াসহ একটি বড় অংশে মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় শাকসবজি চাষ করা হয়েছে। ভূমিহীন ও উৎসাহী কিছু মানুষ মহাসড়কের বিভাজক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে মরিচ, মুলা, পালংশাক, লালশাক, মিষ্টিকুমড়া, লাউ, শিম, ঢ্যাঁড়শ, ধনেপাতা, মিষ্টি আলুসহ শীতকালীন বিভিন্ন সবজির চাষ করেছেন।
বিভিন্ন জাতের রং-বেরঙের এসব শাকসবজি মহাসড়কের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। শাকসবজি চাষ করে নিজেদের সংসারের সবজির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সবজি বিক্রি করে বাড়তি রোজগারও করছেন চাষিরা। তাদের এই উদ্যোগে খুশি উপজেলা কৃষি অফিসও। তারা বলছে, কৃষকের তালিকা করে সবজির বীজ সরবরাহসহ চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
সবজি চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহাসড়কের বিভাজকের মাটি উর্বর। বৃষ্টির পানি জমে না বলে এখানে শাকসবজি ভালো হচ্ছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাওয়ার কুমারজানী গ্রামের বাসিন্দা মাসুদুর রহমান রঞ্জু। তাঁর বাড়ির পাশে মহাসড়কের বিভাজকে দীর্ঘদিন ধরে শাকসবজি চাষ করছেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাড়ির কাছে মহাসড়কের বিভাজকে খালি জায়গা। এখানকার মাটি উর্বর। বৃষ্টির পানি জমে থাকে না। তাই তিনি শখ করে এখানে শাকসবজি চাষ করেন। তাঁকে দেখে আরও অনেকেই শাকসবজি চাষে এগিয়ে এসেছেন। এখানে চাষ করা শাকসবজিতে তাঁর সংসারের চাহিদা পূরণ হয়। প্রতিবেশীরাও এ শাকসবজি তুলে নেন। তবে তিনি শাকসবজি বিক্রি করেন না। নিজে খান এবং প্রতিবেশীদেরও দেন। তাঁর আগ্রহ দেখে কৃষি অফিস তাঁকে বীজ, সার দিয়ে সহায়তা করে।
তবে মহাসড়কের বিভাজকে শাকসবজি চাষ করার সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। তারা বলছেন, এখানে চাষাবাদ করার সময় কেউ অসতর্ক হয়ে রাস্তা পারাপার হতে গেলে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারে। তখন তো দোষ হবে গাড়িচালকের।
এ ব্যাপারে কথা হয় মির্জাপুর সড়ক ও জনপথ অফিসের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, এলাকার মানুষ মহাসড়কের বিভাজকের খালি জায়গা পেয়ে শাকসবজি চাষ করছেন। এটি মহাসড়কের
জন্য কোনো ক্ষতিকর নয়। তবে তারা যেন সবজি গাছের মাচা না দেন সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। শাকসবজি চাষ
করতে গিয়ে কেউ যেন দুর্ঘটনার শিকার না হন, সেদিকেও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন বলেন, ‘মহাসড়কের বিভাজকের দীর্ঘ অংশজুড়ে বিভিন্ন জাতের শাকসবজির চাষ করছেন কিছু উৎসাহী মানুষ। আমরা এরই মধ্যে এ কৃষকদের তালিকা তৈরি করার পরিকল্পনা করছি। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাদের সবজির বীজ সরবরাহ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক চ ষ কর সবজ র করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
হিজরতের ৫টি শিক্ষা
সাহাবিদের হিজরতের ঘটনাবলি কেবল ইতিহাসের অংশ নয়, বরং তা মুমিন জীবনের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। তাদের হিজরতের ঘটনা ও ত্যাগের আদর্শ থেকে কয়েকটি মৌলিক শিক্ষা উঠে আসে:
১. হিজরত প্রথমত আল্লাহর আদেশ পালনহিজরত কেবল কৌশলগত পরিকল্পনা ছিল না, বরং ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা এক ইবাদতমূলক নির্দেশ। এই কারণে সাহাবিরা সবচেয়ে প্রিয় বস্তু—ঘরবাড়ি, সম্পদ, আত্মীয়স্বজন—সহজে ত্যাগ করতে পেরেছিলেন। (মুহাম্মদ সাইদ রমাদান আল-বুতি, ফিকহুস সিরাহ, পৃষ্ঠা: ১৫৬, দারুল ফিকর, দামেস্ক, ২০০৪)
২. ইমানের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগহিজরত শেখায় যে একটি জাতির ভিত্তি স্থাপন এবং সত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য চরম মূল্য দিতে হয়। সুহাইব তাঁর সব সম্পদ, আবু সালামা তাঁর পরিবার এবং বনু জাহশ (রা.) জন্মভূমি ত্যাগ করে এই মূল্য পরিশোধ করেছিলেন। এই ত্যাগ বিনা মূল্যে অর্জিত হয়নি।
আরও পড়ুনমদিনায় হিজরত: ইসলামের ৬টি মাইলফলক০২ জুলাই ২০২৫৩. ইমানের সম্পর্ক অন্য সব সম্পর্ক থেকে ঊর্ধ্বেওমর (রা.) আইয়াশকে যখন তার মায়ের দোহাইয়ের ফিতনা থেকে সতর্ক করেছিলেন, তা প্রমাণ করে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি আনুগত্যের বন্ধন অন্য সব জাগতিক সম্পর্ক (গোত্র, পরিবার, রক্ত) থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী।
৪. ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সঙ্গে আল্লাহর ওপর ভরসাহিজরত মোটেই বিশৃঙ্খল ছিল না। ওমর (রা.)-এর পরিকল্পনা, কাফেলাবদ্ধ হয়ে যাত্রা এবং কৌশল অবলম্বন—সবই প্রমাণ করে যে আল্লাহর ওপর নির্ভরতার পাশাপাশি মানবীয় প্রচেষ্টা ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ করাও আবশ্যক।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–র হিজরত মদিনায় হলো যে কারণে২৯ জুন ২০২৫৫. আল্লাহর দয়ার বিশালতাএই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ফিতনা ও দুর্বলতা মানুষের জীবনে আসতে পারে। কিন্তু যখন তারা মক্কায় বন্দী হয়ে নিজেদের পাপী মনে করছিলেন, তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াতটি নাজিল করে আশার দরজা খুলে দেন, ‘বলো, “হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ (পাপ করেছ), তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন।”’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৫৩)
এই আয়াতটি ছিল তাঁদের জন্য এক ঐশী ক্ষমা ও নতুন সুযোগের বার্তা।
হিজরত কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়; এটি একটি অক্ষয়–দর্শন—যেখানে ইমান, ধৈর্য এবং আত্মত্যাগের সমন্বয়ে একটি আদর্শ সমাজ গঠনের বীজ নিহিত ছিল। এই দর্শনই মুসলমানদের নতুন এক দিগন্তে পৌঁছে দেয়।
আরও পড়ুনআবিসিনিয়ায় নারী সাহাবিদের দ্বিতীয় হিজরত১৪ নভেম্বর ২০২৫