ঠাকুরগাঁওয়ে শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে পেঁয়াজবীজ চাষিদের সর্বনাশ

শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে পেঁয়াজবীজের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে চাষিরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। রোববার ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মধ্য চাড়োল গ্রামেছবি: প্রথম আলো

পরাগায়ণ-সংকটের পর শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকায় পেঁয়াজবীজের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে চাষিরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। রোববার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর, আখানগর এবং বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ও পারুয়া এলাকা ঘুরে পেঁয়াজবীজ চাষিদের ক্ষয়ক্ষতি ও সর্বনাশের চিত্র দেখা যায়। মাঠে মাঠে পেঁয়াজবীজের খেত মাটিতে নুয়ে পড়েছে। ফুলের ডাঁটাগুলো পড়েছে ভেঙে। ফুলের মধ্যে থাকা দানা ঝরে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন পেঁয়াজবীজ চাষি জানান, এ বছর পেঁয়াজের ফুলে মৌমাছি না বসায় পরাগায়ণে সমস্যা হয়। এতে ফুলগুলো শুকিয়ে ঝরে যেতে থাকে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে তাঁরা খেতে কৃত্রিমভাবে মৌমাছি চাষ শুরু করেন। এতে পরাগায়ণের সমস্যা কেটে যেতে থাকে। গত কয়েক দিনে এলাকায় ঝড়বৃষ্টি হলেও খেতের তেমন ক্ষতি হয়নি। কিন্তু গত শনিবার রাতে শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখীতে পেঁয়াজবীজের সর্বনাশ হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫৪৭ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজবীজ চাষ হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৬১২ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মধ্য চাড়োল গ্রামের পেঁয়াজবীজ চাষি রাজিউর রহমান বলেন, ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে খেত লন্ডভন্ড হয়ে যায়। এখন খেত থেকে ১০ কেজি বীজও পাবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন। এ বছর তাঁর কয়েক লাখ টাকা লোকসান হবে।
একই উপজেলার পতিলাভাষা গ্রামের আসাদুর রহমান তাঁর এক ভাইকে সঙ্গে নিয়ে তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজবীজ আবাদ করেছেন। সেখান থেকে প্রায় ৯০০ কেজি পেঁয়াজবীজ পাওয়ার আশা করেছিলেন তিনি।

পেঁয়াজবীজের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র দেখাচ্ছেন এক কৃষক। রোববার ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মধ্য চাড়োল গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

সদর উপজেলার আখানগর গ্রামের মতিউর রহমান এ বছর দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজবীজের চাষ করেছিলেন। নিয়মিত পরিচর্যায় জমিতে পেঁয়াজের থোকাও ফুটেছিল বেশ ভালো। কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে তাঁর পুরো খেত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তাঁর প্রায় দুই লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

রহিমানপুর এলাকায় কথা হয় পেঁয়াজবীজের চাষি পরিমল দাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, চলতি বছর তিনি দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজবীজের আবাদ করেছিলেন। মৌমাছি কম আসায় ফুলে পরাগায়ণ ঘটাতে চারজন শ্রমিক রাখেন। তাঁরা প্রতিদিন হাতের স্পর্শে এক ফুলের সঙ্গে অন্য ফুলের পরাগায়ণ ঘটান। কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেছে। এখন ঋণ করা টাকা কীভাবে শোধ করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না।

সদর উপজেলার দাসপাড়া গ্রামের সনাতন বর্মণ দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজবীজের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, বাজারে পেঁয়াজবীজের যে চড়া দাম, তাতে পেঁয়াজবীজের চাষ এখন তাঁর কাছে সোনা চাষের মতো। লাভজনক হওয়ায় কয়েক বছর ধরে চাষিরা পেঁয়াজবীজ উৎপাদনে ঝুঁকেছেন। কিন্তু এ বছর অনেক চাষির সর্বনাশ হয়ে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) আলমগীর কবির বলেন, পেঁয়াজবীজ চাষ করে এখানকার চাষিরা প্রতিবছরই লাভবান হন। এবার প্রথম দিকে পরাগায়ণের সমস্যা দেখা দেয়। পরে কৃত্রিমভাবে পরাগায়ণ ঘটিয়ে সে সমস্যা তাঁরা কাটিয়ে ওঠেন। কিন্তু শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে অনেক চাষির ফলন নষ্ট হয়ে গেছে। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে কী পরিমাণ জমির পেঁয়াজবীজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা নিরূপণে কাজ চলছে।