০–৩ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে রিয়াল কি সেমিফাইনালে উঠতে পারবে
রিয়াল মাদ্রিদের সেমিফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা কতটুকু? ক্লাবটির সমর্থকদের কথার সুর অনেকটাই এমন—আরে ফিরতি লেগ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আর রিয়াল তো ঘুরে দাঁড়ানোর রাজা! প্রথম লেগে ৩-০ গোলে হারলেও তাই দুশ্চিন্তার কিছু নেই!
কিন্তু আনচেলত্তির কথায় জোর নেই। স্বয়ং রিয়াল মাদ্রিদ কোচই হয়তো খুব একটা আশা দেখছেন না। এমিরেটস স্টেডিয়ামে গতকাল রাতে আর্সেনালের কাছে কোয়ার্টার ফাইনাল প্রথম লেগে ৩-০ গোলে হেরেছে রিয়াল। ফিরতি লেগ আগামী বুধবার রাতে রিয়ালের মাঠ বার্নাব্যুতে।
বার্নাব্যুতে ঘুরে দাঁড়ানোর রাত উপহার দেওয়ার অনেক ইতিহাস আছে রিয়ালের। তবে এবারের চ্যালেঞ্জটি বেশ কঠিন। পাশাপাশি আনচেলত্তির খেলোয়াড়েরাও তেমন একটা ছন্দে নেই। চ্যাম্পিয়নস লিগে আর্সেনালের জালে এমনিতেই গোল নেই রিয়ালের। ২০০৬ সালে এই প্রতিযোগিতায় প্রথম ও সর্বশেষ মুখোমুখিতে রিয়ালের হারে দুই লেগে স্কোরলাইন ছিল ১-০ ও ০-০। প্রায় দুই দশক পর কাল রাতের মুখোমুখিতেও গোল পায়নি রিয়াল। আর্সেনালের ১১ শটের বিপরীতে আনচেলত্তির ছাত্ররা গোলে শট রাখতে পেরেছে মাত্র ৩টি। ভাগ্য ভালো, কোর্তোয়া চার-পাঁচটি দুর্দান্ত সেভ করেছেন। নইলে রিয়ালের হারের ব্যবধান আরও বাড়ত।
ম্যাচ শেষে আনচেলত্তির কথায় তাই তেমন জোর পাওয়া গেল না। তবে ঘুরে দাঁড়ানোর সংকল্প ঠিকই ঝরেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের এই কোচের কণ্ঠে, ‘সাধারণত দলটি ম্যাচের শেষ দিকে খেলার ধার বাড়ায়। এটা হতাশার ও বাজে। আমাদের নিজেদের ভুলগুলো দেখতে হবে এবং পরের সপ্তাহে ঘুরে দাঁড়াতে যা যা করা সম্ভব করতে হবে।’
ইতালিয়ান এই কোচ সরাসরি স্বীকার করেছেন, রিয়ালের সেমিফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে আর্সেনালকেও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, লড়াই এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আর ইতিহাসও বলছে, ২০০৪ সালের পর রিয়াল কোয়ার্টার ফাইনালে হারেনি। তাই বলে যে হারবে না, সেটাও তো না! আনচেলত্তির মনেও কি এ দুশ্চিন্তা উঁকি দিচ্ছে? শুনুন তাঁর মুখেই, ‘সম্ভাবনা খুব কম। কিন্তু আমাদের শতভাগ চেষ্টা করতে হবে। যা যা করা সম্ভব, সব করতে হবে। এটা বাজে ম্যাচ খেলার প্রতিক্রিয়া দেখানোর একটা সুযোগ।’
রিয়াল কি সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে? ইতিহাস বলছে, ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় নকআউট পর্বের প্রথম লেগে ৩ বা ততোধিক গোলের ব্যবধানে জয়ের পর কখনো বাদ পড়েনি আর্সেনাল। চ্যাম্পিয়নস লিগে নকআউট পর্বে প্রথম লেগে ন্যূনতম ৩ গোল ব্যবধানে হারের পর পরের ধাপে যে চারটি দল যেতে পেরেছে, সেখানে রিয়াল নেই। ২০১৭ সালে পিএসজির মাঠে প্রথম লেগে ৪-০ গোলের হার থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতেছে বার্সেলোনা। ২০০৪ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল প্রথম লেগে এসি মিলানের মাঠে ৪-১ গোলে হারের পর ফিরতি লেগে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল দেপোর্তিভো লা করুনিয়া। ২০১৮ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল প্রথম লেগে বার্সেলোনার মাঠে ৪-১ গোলে হারের পর ফিরতি লেগে ঘুরে দাঁড়ায় এএস রোমা। সর্বশেষ নজির ২০১৯ সালের সেমিফাইনালের দুই লেগে। বার্সার মাঠে প্রথম লেগ ৩-০ গোলে হেরেছিল লিভারপুল। ফিরতি লেগ ৪-০ গোলে জিতে ফাইনালে উঠে শিরোপাও জিতেছিল লিভারপুল।
তবে রিয়ালের ইতিহাসেও কিন্তু তিন গোল ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর নজির আছে। সেটি চ্যাম্পিয়নস লিগের পূর্ববর্তী সংস্করণ ইউরোপিয়ান কাপে। ১৯৭৫ সালে ইউরোপিয়ান কাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রথম লেগে ইংলিশ ক্লাব ডার্বি কাউন্টির মাঠে ৪-১ গোলে হেরেছিল রিয়াল। বার্নাব্যুতে ফিরতি লেগ ৫-১ গোলে জিতে পরের রাউন্ডে নাম লেখায় মাদ্রিদের ক্লাবটি। ইউরোপের শীর্ষ এই ক্লাব টুর্নামেন্টের নকআউট পর্বে প্রথম লেগ ন্যূনতম তিন গোল ব্যবধানে হেরেও পরের ধাপে ওঠার এটাই সর্বশেষ নজির রিয়ালের। তবে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতা আমলে নিলে ১৯৮৬ সালের উয়েফা কাপেও (এখন ইউরোপা লিগ) একই ঘটনা ঘটিয়েছে রিয়াল। সেবার তৃতীয় রাউন্ডের প্রথম লেগে বরুসিয়া মনশেনগ্লাডবাখের মাঠে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল রিয়াল। বার্নাব্যুতে ফিরতি লেগ ৪-০ গোলে জিতে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৫ ব্যবধানে সমতায় ফিরলেও অ্যাওয়ে গোল নিয়মের সুবিধা নিয়ে পরের ধাপে উত্তীর্ণ হয় স্প্যানিশ ক্লাবটি।
রিয়ালের আশা তাই ফুরিয়ে যায়নি। শুধু গড়তে হবে চ্যাম্পিয়নস লিগে নতুন ইতিহাস!